Published : 08 Apr 2025, 08:31 AM
ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি এগিয়ে নিতে ডিসেম্বরকে লক্ষ্য ধরে ‘কর্মপরিকল্পনা’ সামনে আনছে এএমএম নাসির উদ্দিন কমিশন।
নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা বলছেন, ভোটের অন্তত ছয় মাস আগে দুই ডজন বিষয়ভিত্তিক কাজের ফর্দ তৈরি করে রাখতে হবে। সেজন্য রোডম্যাপের আদলে ‘অ্যাকশন প্ল্যান’ নিয়ে খসড়া তৈরির কাজ চলছে।
নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার সোমবার বলে বলছেন, “ভোটের প্রাথমিক কাজ শেষ করে জুন-জুলাইয়ে ‘কর্মপরিকল্পনা বা অ্যাকশন প্ল্যান’ ঘোষণা করা হবে ইনশাহআল্লাহ।”
এ নির্বাচন কমিশনারের ভাষ্য, ডিসেম্বরে নির্বাচন- এটা ‘আয়নার মত পরিষ্কার’ হয়ে আছে। এখন বিভ্রান্তি দূর করতে জুন-জুলাইয়ের মধ্যে ‘অ্যাকশন প্ল্যান’ প্রকাশ করতে হবে।
গণ অভ্যুত্থানে ক্ষমতার পালাবদলের পর ২০২৪ সালের নভেম্বরে দায়িত্ব নেয় এএমএম নাসির উদ্দিন কমিশন। আসছে মেতে তাদের ছয় মাস পূর্ণ হবে। এর মধ্যেই ভোটার তালিকা হালনাগাদের কাজও শেষ হবে।
আর ডিসেম্বরে নির্বাচন হলে নিজেদের মেয়াদের ১৩ মাসের মধ্যে জাতীয় নির্বাচনের কাজ সারতে হবে এ কমিশনকে।
সরকারের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, চলমান সংস্কার কার্যক্রমের অগ্রগতি সাপেক্ষে ২০২৫ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২৬ সালের প্রথমার্ধের মধ্যে নির্বাচন হতে পারে।
তবে নির্বাচন কমিশন বলছে, এ বছরের ডিসেম্বরেই টার্গেট; সেজন্য জুলাই-অগাস্টের মধ্যে সব প্রস্তুতিমূলক কাজ গুছিয়ে রাখা হবে। মত বিনিময় করা হবে অংশীজনদের সঙ্গে। অক্টোবরের দিকে তফসিল ঘোষণারও পরিকল্পনা রয়েছে ইসির।
আগেও ডিসেম্বরে ভোট করতে নভেম্বরের দ্বিতীয়-তৃতীয় সপ্তাহে তফসিল ঘোষণার নজির রয়েছে।
নতুন দল নিবন্ধন, সীমানা নির্ধারণ, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও), নির্বাচনী আচরণ বিধিমালা, দেশি বিদেশি পর্যবেক্ষক ও সাংবাদিক নীতিমালা, ভোটকেন্দ্র স্থাপন নীতিমালা, প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটাধিকার, নির্বাচনী সরঞ্জাম কেনাকাটাসহ সংশ্লিষ্ট আইন-বিধি সংস্কারের পদক্ষেপও নেওয়া হচ্ছে।
রাজনৈতিক দল, অংশীজনের সঙ্গে মত বিনিময়, আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা, ভোটের বাজেট চূড়ান্ত, আইন শৃঙ্খলাবাহিনী ও মাঠপ্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের বৈঠক, রিটার্নিং ও সহকারী রিটার্নিং অফিসারের ব্রিফিং, নির্বাহী-বিচারিক হাকিম নিয়োগ নির্বাচনী কর্মকর্তাদের প্যানেল প্রস্তুত, প্রশিক্ষণ, ম্যানুয়েল মুদ্রণ, মনোনয়নপত্র মুদ্রণসহ আনুষঙ্গিক বিষয় নিয়ে কাজের শুরু ও শেষ করার সম্ভাব্য সময় পর্যালোচনা করা হচ্ছে।
তফসিলের আগে-পরে ভোটার তালিকা মুদ্রণ, কেন্দ্র ব্যবস্থাপনা, ব্যালট বাক্স সরবরাহ, ব্যালট পেপার ছাপানো থেকে ফলাফল গেজেটে প্রকাশের মত কাজের শতাধিক ফর্দ থাকে অ্যাকশন প্ল্যানে।
নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেন, এটাকে ‘রোডম্যাপ’ না বলে ‘কর্মপরিকল্পনা বা অ্যাকশন প্ল্যান’ হিসেবেই তারা তুলে ধরতে চান।
“ডকুমেন্টারি যে রোডম্যাপটা হয়, সেটা একটা হবেই ইনশাহআল্লাহ। প্রকাশনার মধ্যে থাকবে। আমরা আশ্বস্ত করতে চাই, আমাদের খসড়া কিন্তু মোটামুটি করা। শুধু ডেট, টাইমটা…। শিডিউল ডিক্লারের আগে তো (প্রস্তুতিমূলক কাজ) সব করে ফেলতে হবে। জুলাই-অগাস্টে দিতেই হবে।
“৬০-৭০ দিন আগে অক্টোবরে তফসিলের পরিকল্পনা রয়েছে। ডিসেম্বরে যদি নির্বাচন করি, এটা আয়নার মত পরিষ্কার হয়ে আছে। যাতে আর কোনো কনফিউশন না থাকে, সেজন্য তো জুন-জুলাইয়ে (অ্যাকশন প্ল্যান প্রকাশ) করতে হবে।”
ভোটের পথে তফসিলের আগে-পরে যত কাজ
ইসি যা বলছে
নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সুপারিশ ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের চলমান সংলাপের মধ্যে সরকারের তরফ থেকে আইন-বিধি-নীতিমালা সংস্কারে আশু বাস্তবায়নযোগ্য প্রস্তাব চাওয়া হয়েছে ইসির কাছে।
এ নিয়ে কোনো ধরনের জটিলতা তৈরি হবে না বলেই মনে করছে ইসি।
আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেন, “এটা কোনো সাংঘর্ষিক বিষয় নয়। ইসি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিরপেক্ষ, স্বচ্ছ ভোট উপহার দেওয়া, ভালো নির্বাচনের জন্য ইসি প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেবে। কারো সাথে মুখোমুখি নয়, কারো সাথে সাংঘর্ষিক নয়; সবাই ইসিকে সহযোগিতা করবে, আশু সংশোধনযোগ্য বিষয়গুলো আমরাও সুপারিশ করব।”
তিনি বলছেন, “ডিসেম্বর ধরেই আমাদের প্রস্তুতি এগিয়ে যাচ্ছে। জুনের মধ্যে ভোটার তালিকার কাজ শেষ হবে। ইতোমধ্যে নতুন ও বাদ পড়া মিলিয়ে ৬২ লাখের মত ভোটার যুক্ত হবে তালিকায়; মৃত ভোটার বিদ্যমান তালিকা বাদ যাবে ২০ লাখের মত।
সাড়ে ১২ কোটির বেশি ভোটারের কথা বিবেচনায় নিয়ে ভোটকেন্দ্রসহ যাবতীয় প্রস্তুতি নেওয়ার কথা বলেন এই নির্বাচন কমিশনার।
তিনি বলেন, “রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন সবচেয়ে বেশি আলোচনায় রয়েছে। তফসিল ঘোষণার একমাস আগেই ১০-২০টা দল বা কোনো দল নিবন্ধন চাইলে দেওয়া সম্ভব হবে না। দলের নিবন্ধন গেজেট প্রকাশ তফসিল ঘোষণার আগেই শেষ করতে হবে। এ জন্য যাচাই বাছাই শেষে জুলাই-আগস্টের মধ্যে এটা শেষ করার পরিকল্পনা।”
নির্বাচনী আইন ও আরপিওর সঙ্গে সব বিধি ও নীতিমালা সম্পৃক্ত থাকবে। ‘যথাসময়ে’ সেসব করে গেজেট জারির কথাও বলেন আনোয়ারুল ইসলাম সরকার।
তিনি বলেন, আরপিও সংশোধানসহ অন্যান্য নির্বাচনী আইন সংশোধনের বিষয়ে প্রস্তাব তৈরি হচ্ছে।
প্রবাসীদের ভোট নেওয়ার জন্য ‘প্রক্সি ভোটের’ বিধানটি যুক্ত করতেও আরপিও সংশোধন করতে হবে। আচরণবিধির খসড়াও চূড়ান্ত হয়ে আছে। সীমানা নির্ধারণ সংক্রান্ত সংশোধন প্রস্তাব সরকারের কাছে দেওয়া হছে, নতুন করে সংশোধন করে না এলে আগের সীমানায় ভোট করতে হবে।
নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সুপারিশের সঙ্গে ‘সমন্বয়’ রেখে ইসি কিছু সংস্কার প্রস্তাব রেখেছে বলে জানান আনোয়ারুল ইসলাম সরকার।
তিনি বলেন, “নির্বাচনের জন্য ডিসেম্বরকে টার্গেট ধরে এগোচ্ছি। এর আগে ৬০ স্ট্যান্ডার্ড টাইম ধরলে অক্টোবরে তফসিল করতে হবে। বিশাল লোকবল, প্রশিক্ষণ, দল, সুশীল সমাজ, বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে মতামত নেওয়া; আইন শৃঙ্খলা, প্রশাসন, মন্ত্রণালয়ের মত বিনিময় অগাস্ট-সেপ্টেম্বরের মধ্যে করতে হবে।”
বিরাজমান আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নির্বাচনের জন্য ‘অনুকূল’ বলেই মনে করেন এ নির্বাচন কমিশনার।
তিনি বলেন, “প্রশাসন ও আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্থিতিশীল রয়েছে, নিঃসন্দেহে তুলনামূলক পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। এ কয়মাসে যদি পরিস্থিতির ইমপ্রুভমেন্ট হয়ে যায় এবং ডিসেম্বর পর্যন্ত এ ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে বলে আশা করি। “নির্বাচনের জন্য যে গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টটা, আইন শৃঙ্খলা ও স্থানীয় প্রশাসন; সবার বোধোদয় হয়ে নিরপেক্ষ ও আইন অনুযায়ী থাকতে হবে।”
পুরনো খবর
ডিসেম্বরে নির্বাচন চাইলে অক্টোবরের আগেই প্রস্তুত থাকতে হবে: সিইসি
ডিসেম্বরে নির্বাচন আয়োজনে রোডম্যাপ চায় বিএনপি ও হেফাজত
লক্ষ্য ডিসেম্বর, ইসি কী প্রস্তুতি নিচ্ছে
'রোডম্যাপ ঠিক করেছে নির্বাচন কমিশন'
নির্বাচনের 'রোডম্যাপ' সাজাচ্ছে নতুন ইসি
ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন করতে ২৮০০ কোটি টাকা চায় ইসি
'ভালো' নির্বাচনের ধারায় ছেদ ঘটেছে: শামসুল হুদা
নতুন আচরণবিধিতে সব প্রার্থীর জন্য সমান সুযোগ থাকছে: ইসি আনোয়ারুল
পাঁচ কমিশনের 'আশু বাস্তবায়নযোগ্য' ১২১ সুপারিশ, দ্রুত তালিকা চায় সরকার
তালিকা হালনাগাদ: এবারও বিশেষ হিসাব-নিকাশে তরুণ ভোটাররা
আশু বাস্তবায়নযোগ্য সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে 'কাজ করছে' ইসি
দলগুলো অল্প সংস্কারে রাজি হলে নির্বাচন ডিসেম্বরে: প্রধান উপদেষ্টা