“প্রাথমিক পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, রেমালের প্রভাবে উপকূলের প্রায় ২ লাখ ৪২ হেক্টর এলাকা আক্রান্ত হয়েছে,” বলেন স্পারসোর সদস্য মাহমুদুর রহমান।
Published : 05 Jun 2024, 11:04 PM
ঘূর্ণিঝড় রেমালের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার ব্যাপ্তি উঠে এসেছে বাংলাদেশ মহাকাশ গবেষণা ও দূর অনুধাবন প্রতিষ্ঠানের (স্পারসো) স্যাটেলাইট ম্যাপিংয়ে।
স্পারসোর ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইমরুল ইসলাম প্রাথমিকভাবে রেমালের প্রভাবে প্লাবিত এলাকার স্যাটেলাইট ম্যাপ তৈরি করেছেন।
ঘূর্ণিঝড়টি গেল ২৬ মে সৃষ্টি হয়ে ২৭ মে খেপুপাড়া উপকূল অতিক্রম করে। সেসময় উপকূলীয় এলাকায় কোথাও কোথাও ৭ ফুটের বেশি জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হয়। ঝড়ের রাতে সর্বোচ্চ গতি উঠেছিল ১১১ কিলোমিটার আর ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয় ৩০০ মিলিমিটার।
স্পারসোর সদস্য (প্রযুক্তি-২) মো. মাহমুদুর রহমান বলেন, “প্লাবিত এলাকার এরিয়াটা ধরা পড়েছে ইমেজে। প্রাথমিক পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, রেমালের প্রভাবে উপকূলের প্রায় ২ লাখ ৪২ হেক্টর এলাকা এফেক্টেড হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় হলে ক্ষয়ক্ষতি হবে এটাই স্বাভাবিক।
“আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার ডেটাগুলো পাওয়ায় আমাদের কাজটা সহজ হয়েছে। এ তথ্যটা সরকারের কাজে আসবে, বিভিন্ন পরিকল্পনা ও কাযক্রমে ব্যবহার করবে।”
তিনি বলেন, “স্পারসোর এ কাজটি একেবারে প্রাথমিক। এখানে শুধু প্লাবিত এলাকা তুলে ধরা হয়েছে। এটা আরও চেক করা হচ্ছে। আরও বিশেষ কিছু পেলে যুক্ত করা হবে।”
কৃষিতে ক্ষতি ১০৫৯ কোটি টাকা
ঘূর্ণিঝড়ে কৃষিতে ক্ষয়ক্ষতির হিসাব দিয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বাদল চন্দ্র বিশ্বাস জানান, রেমালের প্রভাবে দমকা ও বৃষ্টিতে প্রায় ৫০টি জেলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আউশ বীজতলা, আউশ আবাদ, বোরো, বোনা আমন, গ্রীষ্মকালীন সবজি, পাট, ভুট্টা, তিল, মুগ, মাসকলাই, আদা, হলুদ, মরিচ, চিনাবাদাম, আম লিচুর ফসলি জমি আক্রান্ত হয়েছে।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. কামরুল ইসলাম ভূইয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী ক্ষতিগ্রস্ত ফসলি জমির পরিমাণ ৬২ হাজার ৭৮৩ হেক্টর। আর্থিক হিসাবে কৃষিতে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১ হাজার ৫৯ কোটি ৫০ লাখ টাকা।
ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ৫ লাখ ৩৭ হাজারেরও বেশি কৃষক।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মহিবুর রহমান ২ জুন সচিবালয়ে ব্রিফিংয়ে জানান, ঘূর্ণিঝড়ে ২০ জেলায় ৬ হাজার ৮৮০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে প্রাথমিক হিসেবে বেরিয়ে এসেছে।
জলোচ্ছ্বাসে বাঁধ ভেঙে উপকূলের বহু জনপদ তলিয়ে গেছে। রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি, ও সামাজিক প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতির চিত্র আরো বেশি। মন্ত্রণালয়গুলো আগামী ৯ জুনের মধ্যে ক্ষয়ক্ষতির সব হিসাব জানানোর কথা বলেছে।
ঘূর্ণিঝড় রেমালে ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট, বাঁধ দ্রুত পুনর্গঠনে সরকার কাজ করছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ঘূর্ণিদুর্গত পটুয়াখালীতে গিয়ে ৩০ মে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “যাদের ঘরবাড়ি ভেঙে গেছে, ইতোমধ্যে আমরা খোঁজ নিতে বসেছি। আমরা জানি, এই এলাকা সবসময়ই দুর্যোগপ্রবণ। ইতোমধ্যে যে সমস্ত রাস্তাঘাট ভেঙে গেছে, সেগুলো মেরামত করার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি যে বাঁধগুলো ভেঙে গেছে, সেগুলোও মেরামতের কাজ ইতোমধ্যে আমরা শুরু করে দিয়েছি; যাতে বর্ষার আগেই আমরা বাঁধগুলো নির্মাণ করে জলোচ্ছ্বাস বা পানির হাত থেকে মানুষকে বাঁচাতে পারি।”
‘শঙ্কা’ আছে সামনেও
ঘূর্ণিঝড়ের পরই বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বে উজানে টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে সিলেট অঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় বন্যার সৃষ্টি হয়েছে।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের পানি ও বন্যা ব্যবস্থাপনা ইন্সটিটিউটের অধ্যাপক এ কে এম সাইফুল ইসলাম বলেন, দক্ষিণ পশ্চিম মৌসুমী বায়ু সক্রিয় রয়েছে। রাজশাহী ও ঢাকায় তাপপ্রবাহও বিরাজ করছে। গরমও কমছে না। আর্দ্রতা বেশি থাকায় অস্বস্তিকর গরম অনুভূত হচ্ছে।
“ঘূর্ণিঝড় রেমালের পরে মৌসুমি বায়ু সেট হওয়া শুরু করল। এখন সক্রিয় রয়েছে মৌসুমি বায়ু। এর ফলে প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছে বাংলাদেশ ও উজানে।”
তিনি বলেন, “বন্যার প্রথম প্রভাবটা শুরু হয় ঘূর্ণিঝড় রেমাল এর বৃষ্টি থেকে। প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছে। একই সময়ে ভারতের অববাহিকা থেকে সুরমা, কুশিয়ারায় পানি প্রবাহ বেড়ে যায়। এর ফলে বন্যা দেখা যায়। এখন আবার পানি বের হতে পারছে না।
“বিভিন্ন জায়গায় বৃষ্টি রয়েছে, নদীতেও পানি রয়েছে বেশ। সিলেট শহরে দুদিনে ৪০০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। সিলেটে প্রচুর বৃষ্টির পাশাপাশি পাহাড়ের ঢল আসছে। মেঘালয় থেকে আসছে সুনামগঞ্জে, সিলেটে আসছে সারিগোয়াইন হয়ে, বরাক থেকে সুরমা নদী হয়ে সিলেটে আসছে। আগামী সাত-আট দিন এ পানি নামবে না। ধীর গতিতে নামবে।”
স্বাভাবিকের চেয়ে ভারতে এবার বেশি বৃষ্টি হতে পারে আভাস দিয়ে সাইফুল ইসলাম বলেন, “সেটা হলে আমাদের জন্য ক্ষতির কারণ হবে। মেঘনা, বহ্মপুত্র ও গঙ্গা, তিন অবাবাহিকা হয়ে পানি আসে। সেজন্যে বন্যার শঙ্কা রয়েছে।
“ইতোমধ্যে হিটওয়েভে আক্রান্ত হয়েছি আমরা, এরপর ঘূর্ণিঝড়; আরেকটা হয়ত দুর্যোগ আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে।”
পুরনো খবর-
'ত্রিযোগে' ভয়ঙ্কর রেমাল কী শিক্ষা দিয়ে গেল?
'অপরিকল্পিত' উন্নয়নেই বারবার ডুবছে সিলেট নগরী?
সিলেটে বিপৎসীমার উপরে নদীর পানি