তাকে মুক্তি না দিলে শুধু বাংলাদেশে না বিশ্বব্যাপী এই আন্দোলন ছড়িয়ে পড়বে, দাবি করেছেন জোটের এক নেতা।
Published : 26 Nov 2024, 09:31 PM
বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাশকে একদিনের মধ্যে মুক্তি দেওয়ার দাবি জানিয়ে জোটের নেতারা চলমান ‘অহিংস আন্দোলন’ আরও জোরালো করার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রাজধানীর ঢাকেশ্বরী মন্দিরে সংবাদ সম্মেলনে তারা রাজধানীর শাহবাগে ও চট্টগ্রামে আদালত চত্বরে সনাতনীদের ওপর হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিও দাবি জানিয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি প্রসেনজিৎ কুমার হালদার বুধবারের মধ্যে চিন্ময় দাশকে মুক্তি দেওয়ার দাবি তুলে ধরেন। তা না হলে সারাদেশে ‘অহিংস আন্দোলন’ আরও বেগবান করার হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
“শুধু বাংলাদেশে না বিশ্বব্যাপী এই আন্দোলন ছড়িয়ে পড়বে বলে আমি মনে করি,” যোগ করেন তিনি।
সংখ্যালঘু নির্যাতন বন্ধসহ আট দফা দাবি আদায়ে নেতৃত্ব দিয়ে আসা চট্টগ্রাম পুণ্ডরীক ধামের অধ্যক্ষ চিন্ময় কৃষ্ণ দাশ ব্রহ্মচারীকে সোমবার শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ।
এরপর রাত থেকে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে তার মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ হয়। এরইমধ্যে মঙ্গলবার বেলা পৌনে ১১টার দিকে কড়া নিরাপত্তার মধ্যে তাকে চট্টগ্রাম আদালতে হাজির করা হয়।
আদালত তার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেয়। এর পর বিক্ষোভ করে সনাতনী সম্প্রদায়ের লোকজন। তাকে পুলিশ-বিজিবি-এপিবিএন সদস্যদের পাহারায় প্রিজন ভ্যানে করে কারাগারে নেওয়ার সময় বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন তারা।
পরে সাউন্ড গ্রেনেড ও কাঁদুনে গ্যাস ছুড়ে পুলিশ বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে তাকে আদালত চত্বর থেকে কারাগারে নিয়ে যায়।
এরপর আদালত এলাকা থেকে নামার সড়কে এবং অদূরে মুসলিম হাই স্কুলের সড়কে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের মধ্যে আহত হয়ে একজন আইনজীবী নিহত হয়েছেন।
এমন ঘটনার প্রেক্ষাপটে ঢাকায় ঢাকেশ্বরী মন্দিরে সংবাদ সম্মেলনে আসেন সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের নেতারা।
এতে জোটের কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি প্রসেনজিৎ কুমার হালদার বলেন, “বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ফলে এই দেশে একটি নতুন সরকার, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আমরা ধরে নিয়েছিলাম, ছাত্র আন্দোলনে অনেক ছাত্ররা বলিদান দিয়েছে। এর মধ্য দিয়ে আমরা নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলাম। কিন্তু সেই স্বপ্ন, আবার আমরা দেখলাম সব কিছুতেই সনাতনী সম্প্রদায়কে বলির পাঠা হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
“কোনো কারণে আওয়ামী লীগ জিতলে বিএনপির লোকজন আমাদের উপর অত্যাচার নির্যাতন করে। আবার বিএনপি জিতলে আওয়ামী লীগ বা অন্যান্য দল আমাদের উপর অত্যাচার নির্যাতন করে। সব মিলিয়ে আমাদেরকে একটা ফুটবলের মত ব্যবহার করা হয়। ৫ অগাস্টের পরে অত্যাচার নির্যাতনের পরে প্রধান উপদেষ্টা বিমানবন্দরে নামার পরেই বলেছিল সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচার নির্যাতন হচ্ছে, তা যেন আর না হয়।”
কোনো রাজনৈতিক দলই সংখ্যালঘু নির্যাতন থেকে বের হতে পারছে না দাবি করে প্রসেনজিৎ বলেন, “বাংলাদেশের সনাতনীরা মনে করছি বাংলাদেশে আমাদের কোনো বন্ধু নাই। এই সনাতনী সম্প্রদায়ের উপর যে নির্যাতন, এ থেকে মুক্তির জন্য আন্দোলেনের কোনো বিকল্প নাই, ঐক্যের কোনো বিকল্প নাই।
“চট্টগ্রামে সমাবেশকে কেন্দ্র করে কে বা কারা কোন পতাকা স্থাপন করেছে সেটা আমরা আদৌ জানি না। এটাকে কেন্দ্র করে একটা মামলা করা হয়েছে। আজকে সারা বাংলাদেশের সনাতনী কান্ডারি, শুধু বাংলাদেশের না সারা বিশ্বের সনানতনীদের আইকন চিন্ময় কৃষ্ণ ব্রহ্মচারী প্রভুসহ অনেকের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করা হয়েছিল।”
তার ভাষ্য, “আপনারা জানেন রাষ্ট্রদ্রোহী মামলা করতে গেলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের অনুমতি লাগে, কোনো ব্যক্তি রাষ্ট্রদ্রোহী মামলা করে না।
“আমরা আশা করি আমাদের আট দফা আন্দোলন শুধু সনাতনীর আন্দেলন না, এটা আমাদের সকলের অধিকারের প্রশ্ন। আমাদের আন্দোলন কোন সরকারের বিরুদ্ধে না।”
সোমরার রাতে শাহবাগ ও ডিবি কার্যালয়ের সামনে যাওয়ার প্রসঙ্গ তুলে ধরে তিনি বলেন, “এখন আমরা দেখতে পাচ্ছি আমাদের আন্দোলনকে আওয়ামী লীগের ট্যাগ লাগিয়ে আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। অতীতেও আমাদের আন্দোলনে বিএনপি জামায়াতের ট্যাগ লাগানোর চেষ্টা করা হয়েছে।“
সনাতনীদের ওপর হামলার বিচারের দাবি জানিয়ে প্রসেনজিৎ বলেন, “আমরা শাহবাগে জড়ো হওয়ার পর কিছু দুষ্কৃতকারী আমাদের উপর আক্রমণ করে। এতে আমাদের বেশ কয়েকজন আহত হয়, এর মধ্যে একজন এখন গুরুতর অসুস্থ আইসিইউতে আছেন। টার্গেট করে অনেককে আহত করা হয়েছে। দুই বোনকে পেটানো হয়েছে, শ্লীলতাহানীর চেষ্টা করা হয়েছে।
“আমরা এই হামলার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি এবং যারা হামলায় জড়িত তাদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি। আজকে চট্রগ্রামেও জামিন শুনানির পরে সেখানেও কতিপয় গোষ্ঠী যারা সারাদেশে হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা লাগাতে চায়, এটাকে কেন্দ্র করে আমাদের মধ্যে প্রবেশ করে আমাদের এবং পুলিশকে ভুয়া ভুয়া বলে স্লোগান দিচ্ছিল। পরবর্তীতে গাড়ি ভাঙচুর করেছে।“
চিন্ময় দাশের মুক্তির দাবি করে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “আমাদের কাছে মনে হয়েছে সারাদেশে কিছু সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী আমাদের আন্দোলনকে ভুলন্ঠিত করার জন্য অস্থিতিশীল করার জন্য পাঁয়তারা চালাচ্ছে।“
আরও পড়ুন
ইসকন নিয়ে দেশি-বিদেশি ইন্ধন থাকতে পারে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
চট্টগ্রামে আদালত চত্বরে সংঘর্ষের মধ্যে আইনজীবী নিহত
বিক্ষোভকারীদের হটাতে সাউন্ড গ্রেনেড, চিন্ময় দাশ কারাগারে
চিন্ময় দাশকে গ্রেপ্তারে 'গভীর উদ্বেগ' ভারতের