দুদকে উপস্থিত হয়ে তাদেরকে এস আলম সুপার এডিবল অয়েল লিমিটেডের অনুকূলে ৮৫০ কোটি টাকা ঋণ বা বিনিয়োগ বিষয়ে বক্তব্য দিতে বলা হয়েছে।
Published : 23 Feb 2025, 06:11 PM
বিদেশে অর্থপাচারের অভিযোগ অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে আলোচিত শিল্পগোষ্ঠী এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান মো. সাইফুল আলমকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
তার সঙ্গে এস আলম ভেজিটেবল অয়েল লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শহীদুল আলমকেও তলব করা হয়েছে।
তাদেরকে আগামী ৫ মার্চ দুদকে হাজির হতে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
সিঙ্গাপুর, ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ড, সাইপ্রাস এবং অন্যান্য দেশে এক বিলিয়ন ডলার পাচারের অভিযোগে সাইফুল আলম এবং তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুদক।
দুদকের উপপরিচালক আবু সাঈদ চিঠি পাঠানোর তথ্য দিলেও এ বিষয়ে বিস্তারিত বলতে চাননি।
দুদকে উপস্থিত হয়ে তাদেরকে এস আলম সুপার এডিবল অয়েল লিমিটেডের অনুকূলে ৮৫০ কোটি টাকা ঋণ বা বিনিয়োগ বিষয়ে বক্তব্য দিতে বলা হয়েছে।
চিঠিতে তাদের জাতীয় পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট এবং টিআইএনসহ প্রয়োজনীয় রেকর্ডপত্র সঙ্গে আনতে বলা হয়েছে।
এর আগে এই অভিযোগ অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে ইসলামী ব্যাংক সংশ্লিষ্ট একাধিক ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদক।
সাইফুল আলমের বিরুদ্ধে সিঙ্গাপুরে অর্থপাচারের বিষয়টি সামনে আসে ২০২৩ সালের অগাস্টে। তখন এ বিষয়ে নিয়ে অনুসন্ধান শুরু হলেও তা আর এগোয়নি।
ওই বছরের ২৪ অগাস্ট সাইফুল আলম ও তার স্ত্রী ফারজানা পারভীনের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ ও দুদকের অনুসন্ধান সম্পর্কিত বিষয়ের ওপর স্থিতাবস্থা জারি করে হাই কোর্ট।
গতবছরের ৫ অগাস্ট ক্ষমতার পালাবদলে পর এস আলম গ্রুপের অর্থ কেলেঙ্কারির অভিযোগে দুদকের অনুসন্ধানে গতি পায়।
চলতি বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি তাদের বিরুদ্ধে অর্থপাচারের অভিযোগের অনুসন্ধান নিয়ে পাঁচ মাস আগে হাই কোর্টের দেওয়া স্বপ্রণোদিত রুল খারিজ করে আপিল বিভাগ।
এরই মধ্যে ইসলামী ব্যাংকের অর্থ কেলেঙ্কারির ঘটনায় এস আলমের ছেলে ও ব্যাংকটির সাবেক চেয়ারম্যান আহসানুল আলমকে আসামি করে তিনটি মামলা করা হয়েছে।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সরকার পতনের পর ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের সুবিধাভোগী হিসেবে পরিচিতি পাওয়া শিল্পগোষ্ঠী এস আলম গ্রুপের বিভিন্ন অনিয়ম সামনে আসে।
চট্টগ্রামভিত্তিক এ গ্রুপের চেয়ারম্যান এস আলমের বিরুদ্ধে ব্যাংক খাতে অনিয়ম, টাকা পাচার, আয়কর ফাঁকির অভিযোগ তদন্ত শুরু করে সরকারের বিভিন্ন সংস্থা। দুদকও ‘অবৈধ সম্পদ’ অর্জনসহ বিভিন্ন অভিযোগ অনুসন্ধানে নামে।
ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা সরকারের সময়ে প্রভাবশালী মহলের সহযোগিতায় এস আলমের বিরুদ্ধে জোরজবরদস্তি করে ইসলামী ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার অভিযোগ বহু পুরনো। পরে তিনি ও তার ব্যবসায়ী গোষ্ঠী শরীয়াহভিত্তিক আরও কয়েকটি ব্যাংকের পর্ষদের নিয়ন্ত্রণ নেন।
এসব ব্যাংক থেকে বিপুল অর্থ নামে ও নাম সর্বস্ব কোম্পানি খুলে অনিয়ম ও জালিয়াতির মাধ্যমে ঋণ নিয়ে বিদেশে পাচার করার অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে।
এরইমধ্যে এস আলম ও তার পরিবারের সদস্যদের ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করা হয়েছে। তাদের বিও অ্যাকাউন্ট অবরুদ্ধ করে শেয়ার লেনদেনও স্থগিত করা হয়েছে।
গত বছরের ২৯ অগাস্ট এস আলমসহ ৭ আলোচিত ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর মালিকানা হস্তান্তর স্থগিতের অনুরোধ জানিয়ে যৌথমূলধনী কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তরকে চিঠি দেয় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
একদিন বাদে সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট জানায়, এস আলম, তার স্ত্রী ফারজানা পারভীন এবং তাদের ছেলে আহসানুল আলম ও আশরাফুল আলমের বিরুদ্ধে প্রাথমিকভাবে ১ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচারের তথ্য পেয়েছে তারা।
সবশেষ রোববার সাইফুল আলম (এস আলম) ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা ৮ হাজার ১৩৩ কোটি টাকার শেয়ার অবরুদ্ধের আদেশ দিয়েছে আদালত।
এর আগে গত ৭ অক্টোবর এস আলম ও তার স্ত্রী ফারজানা পারভীনসহ তার পরিবারের ১২ সদস্যের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে আদালত।
এস আলম পরিবারের আরও ৮ হাজার ১৩৩ কোটি টাকার শেয়ার অবরুদ্ধ