‘হাঙর নদী গ্রেনেড’ চলচ্চিত্রে রূপান্তর করা হলেও সেটির মান নিয়ে সন্তুষ্ট নন চলচ্চিত্রবোদ্ধারা।
Published : 25 Mar 2025, 08:32 AM
একাত্তর সালের ১৬ ডিসেম্বর; শহরজুড়ে হচ্ছে বিজয় মিছিল। স্বাধীনতার আনন্দে লাখো মানুষ জড়ো হচ্ছে ঢাকার রেসকোর্স মাঠে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান)।
কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন তখন থাকতেন সায়েন্স ল্যাবরেটরির কলোনিতে। ওইদিন কলোনির সেই বাসায় এসেছিলেন তার শিক্ষক আবদুল হাফিজ। তিনি শুনিয়েছিলেন যুদ্ধকালীন এক মায়ের আত্মত্যাগের গল্প। আর গল্পটি শুনে কেঁদেছিলেন সেলিনা হোসেন।
দুজন মুক্তিযোদ্ধাকে বাঁচানোর জন্য নিজের ঘরে লুকিয়ে রাখেন একজন নারী, আর নিজের সন্তানকে তুলে দেন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতে। ছেলেটিকে পাকিস্তান আর্মি গুলি করে হত্যা করে। সন্তানের জীবনের বিনিময়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা চাওয়া এক মায়ের গল্পই ‘হাঙর নদী গ্রেনেড’, যা পরবর্তীকালে মুক্তিযুদ্ধে নারীর ভূমিকা ইতিহাসে তুলে আনতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে বলে মনে করেন সাহিত্যবোদ্ধারা।
কথাসাহিত্যিক ও নাট্যকার রুমা মোদক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সেলিনা হোসেনের ‘হাঙর নদী গ্রেনেড’ দেশপ্রেম আর জৈবিক মাতৃত্বের দর্শনকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেয়। বলা যায়, পুরো জাতিকে একটা কৈফিয়তের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে এই উপন্যাস৷ ত্যাগ কি কেবল যুদ্ধ করে জীবন দিলেই হয়? একটি স্বাধীন দেশের জন্য কতো মানুষের কত আত্মত্যাগ, তা মনে করিয়ে দেয় উপন্যাসটি।
লেখা আছে অশ্রুজলে বলা হয়ে থাকে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কালোত্তীর্ণ সাহিত্য খুব একটা হয়নি। তবে যা হয়েছে, তা-ও নেহায়েত কম নয়। যুদ্ধকালীন এবং যুদ্ধোত্তর সময়ে রচিত সেই সব কবিতা, গল্প, উপন্যাস ও নাটকের কয়েকটি নিয়ে এই বিশেষ আয়োজন। ষষ্ঠ পর্ব কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেনের ‘হাঙর নদী গ্রেনেড’ উপন্যাস নিয়ে। |
প্রথম পর্ব: পাড়াতলী থেকে কোটি প্রাণে মুক্তি আকাঙ্ক্ষা ছড়িয়েছিল ‘স্বাধীনতা তুমি’
দ্বিতীয় পর্ব: চিরকালীন মুক্তিসংগ্রামের গল্প 'সময়ের প্রয়োজনে'
তৃতীয় পর্ব: জীবনের বাস্তবতাই মূলত 'রাজনৈতিক বাস্তবতা'
চতুর্থ পর্ব: 'পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়'- মুক্তির পদধ্বনি
পঞ্চম পর্ব: 'উচ্চারণগুলি শোকের'- মুক্তিযুদ্ধে স্বজন হারানোর অমোঘ বেদনার চিত্রকল্প
“মুক্তিযুদ্ধ কেবল মহাকাব্যিকই নয় বরং জাতির আত্মপরিচয়ের স্মারক। ৫৪ বছরেও ৭১ এর ওপর শিল্প সাহিত্যের বহুকৌণিক আলো প্রতিফলিত হয়নি। বরং বারবার ভূলুণ্ঠিত করা হয়েছে। ‘হাঙর নদী গ্রেনেড’ বিষয়বস্তুর দিক থেকে একটি অসাধারণ উপন্যাস। মুক্তিযুদ্ধের গ্র্যান্ড ন্যারেটিভের আড়ালে এই যে ছোট ছোট ন্যারোটিভ সাব অল্টার্নদের আত্মত্যাগ, তা আমাদের সাহিত্য কতটা ধরে রাখতে পেরেছে- এই প্রশ্নের মুখোমুখি করে ‘হাঙর নদী গ্রেনেড’।”
লেখক ও গবেষক সালেক খোকনের মূল্যায়ন এভাবে, “একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ পুরোপুরি ছিল একটি জনযুদ্ধ। সেই যুদ্ধে প্রান্তিক মানুষের অংশগ্রহণও স্বাধীনতার অর্জনকে ত্বরান্বিত করেছে। হাঙর নদী গ্রেনেড উপন্যাসটিতে প্রান্তিক মানুষের লড়াইয়ের কথা যেমন তুলে ধরা হয়েছে তেমনি মূর্ত হয়ে উঠেছে নারীর সাহস, আত্মত্যাগ ও স্বাধীনতার জন্য একজন মায়ের আকুতি।
“পাশাপাশি উপন্যাসটিতে আঞ্চলিক ভাষার ব্যবহারও পাঠককে প্রান্তিকতার নানা ঘটনার সঙ্গে নিবিড়ভাবে সম্পৃক্ত করতে সহায়ক হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের সাহিত্য হিসেবে তৃণমূলের ঘটনা ও নারীর লড়াইয়ের ইতিহাস তুলে ধরার কারণেই জনমানুষের হৃদয়েও ‘হাঙর নদী গ্রেনেড’ উপন্যাসটি স্মরণীয় হয়ে থাকবে।”
সত্য ঘটনা নিয়ে লেখা
১৯৭২ সালে সেলিনা হোসেন লিখলেন গল্প ‘হাঙর নদী গ্রেনেড’, যা প্রথম ছাপা হয়েছিল তরুণ সাহিত্যিকদের পত্রিকা ‘টেরোড্যাকটিল’-এ। কিন্তু গল্প লিখে মন ভরছিল না সাহিত্যিক সেলিনা হোসেনের; তিনি গল্পটিকেই পরে উপন্যাসে রূপান্তর করেন।
আর নব্বইয়ের দশকে ‘হাঙর নদী গ্রেনেড’ থেকে সিনেমাও নির্মিত হয়। সিনেমাটি পরিচালনা করেন চাষী নজরুল ইসলাম এবং জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে সেলিনা হোসেন হন শ্রেষ্ঠ কাহিনীকার।
‘হাঙর নদী গ্রেনেড’ উপন্যাসের রচয়িতা সেলিনা হোসেন বার্ধক্যজনিত রোগে আক্রান্ত। অতীতের অনেক কথা এখন আর ঠিকমতো মনে করতে পারেন না।
একাধিক সাক্ষাৎকার ও লেখায় সেলিনা হোসেন বলেছেন, গল্পটি সত্য ঘটনা নিয়ে লেখা। মুক্তিযুদ্ধে নারীদের ভূমিকা সচেতনভাবেই উপন্যাসে তিনি তুলে ধরেছেন।
তার ভাষ্য, “নারীরা স্বাধীনতার পটভূমিতে নেপথ্য শক্তি হিসেবে কাজ করেছেন। মুক্তিযুদ্ধের পর নারীদের অবদান নিয়ে বলতে গেলে, অনেকেই বলেন ‘দুই লাখ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে দেশ স্বাধীন হয়েছে’। এতে নারীদের অবদান একটি জায়গায় কেবল সীমাবদ্ধ করা হয়। অথচ নারীরা নানাভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছেন, কখনো সরাসরি, আবার কখনো নেপথ্যে।”
গল্পটি লেখার স্মৃতি মনে করে সেলিনা হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাকে এই গল্পটি শুনিয়েছিলেন আমার শিক্ষক আবদুল হাফিজ। তিনি প্রাবন্ধিক, ফোকলোরবিদ। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি বিভিন্ন জায়গায় থেকেছেন। তিনি আমাকে গল্পটি শুনিয়েছিলেন।”
‘হাঙর নদী গ্রেনেড’ নামকরণ প্রসঙ্গে সেলিনা হোসেন বলেন, “হাঙর হলো যে আক্রমণ করে, আর নদী বলতে আমি সারাদেশকে বুঝিয়েছি। আর গ্রেনেড হলো যুদ্ধের অস্ত্র। যে গ্রেনেড দিয়ে শত্রুকে পরাজিত করে স্বাধীনতা অর্জন করা হয়েছে।”
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় যশোরের কালীগঞ্জ গ্রামের এক মায়ের সত্য ঘটনা নিয়ে উপন্যাসটি ১৯৭৪ সালে লেখা হলেও বই আকারে প্রথম প্রকাশ পায় ১৯৭৬ সালে। উপন্যাসটি প্রথম কোন প্রকাশনী থেকে বের হয়েছিল জানতে চাইলে সে কথা মনে করতে পারেননি সেলিনা হোসেন।
তবে বইটির এখন যে সংস্করণ বাজারে পাওয়া যায়, তা প্রকাশ করেছে অনন্যা প্রকাশনী, তাও অন্তত একযুগ আগে তারা বইটি বাজারে আনে।
অনন্যার প্রকাশক মনিরুল হক বলেন, “সম্ভবত মুক্তধারা প্রকাশনী ‘হাঙর নদী গ্রেনেড’ প্রথম প্রকাশ করেছিল। তবে আমি নিশ্চিত করে বলতে পারছি না। আমরা একযুগেরও বেশি আগে অনন্যা থেকে বইটি প্রকাশ করেছি।”
এ বিষয়ে জানতে মুক্তধারার বিপণন কর্মকর্তা ইন্দ্রজিৎ সেন চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগ করলে, তিনিও নিশ্চিত করে বলতে পারেননি। মুক্তধারার জেনারেল ম্যানেজার কামরুজ্জামানের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন ইন্দ্রজিৎ।
কামরুজ্জামান মুক্তধারা প্রকাশনীর সঙ্গে যুক্ত আছেন ২৬ বছর ধরে, তিনি বলেছেন, মুক্তধারা প্রকাশনীই ১৯৭৬ সালে প্রথম ‘হাঙর নদী গ্রেনেড’ উপন্যাসটি বই আকারে প্রকাশ করেছিল।
সিনেমা বানাতে চেয়েছিলেন সত্যজিৎ রায়
বাংলাদেশের লেখকদের সাহিত্যের বিষয়ে খোঁজ রাখতেন প্রখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা সত্যজিৎ রায়। সেলিনা হোসেনের ‘হাঙর নদী গ্রেনেড’ যখন প্রথম ‘টেরোড্যাকটিল’-এ ছোটগল্প আকারে ছাপা হয়, সেটি পড়ে মুগ্ধ হয়েছিলেন সত্যজিৎ।
গল্পটির মধ্যে একটি ভালো চলচ্চিত্রের সম্ভাবনা দেখতে পেয়েছিলেন তিনি। লোকমুখে বিষয়টি জানতে পেরে
সত্যজিৎকে চিঠি লেখেন সেলিনা হোসেন। সাহিত্যিক হিসেবে সেলিনা হোসেন তখনও নবীন। তার চিঠির উত্তর দিয়েছিলেন সেসময়ের নন্দিত চলচ্চিত্র নির্মাতা সত্যজিৎ।
১৯৭৫ সালের ১৩ অগাস্ট সত্যজিৎ রায় সেলিনা হোসেনকে লিখেছিলেন, “আপনার চিঠি কিছুদিন হলো পেয়েছি। আমার নতুন ছবির কাজ এবং পূজোর লেখা নিয়ে একান্ত ব্যস্ত থাকায় উত্তর দিতে দেরি হয়ে গেল।
“টেরোড্যাকটিল পত্রিকায় প্রকাশিত আপনার ছোটগল্পটি পড়ে আমার যে খুব ভালো লেগেছিল, তা আমি অনেককেই বলেছিলাম। গল্পটি থেকে ভালো চলচ্চিত্র হয়, এ বিশ্বাসও আমার ছিল। কিন্তু তখন আমার হাতে অন্য ছবি আসায় ওটার কথা চিন্তা করতে পারিনি। পরে বাংলাদেশে গিয়ে ছবি করার প্রশ্ন ওঠে আরেকবার; তখন শুনেছিলাম ওদিকের অবস্থা ভালো নয়, কাজে নানা রকম অন্তরায়ের সম্ভাবনা আছে। সুতরাং পরিকল্পনাটি ‘স্থগিত’ থাকে।”
গল্পটি অন্য কারো হাতে সিনেমা হলে কতটা শৈল্পিকভাবে চিত্রায়িত হবে, তা নিয়ে সংশয়ের কথাও জানিয়েছিলেন সত্যজিৎ।
তিনি বলেছিলেন, “এখন আমি আমার অন্য ছবির কাজে জড়িয়ে পড়েছি। কবে মুক্ত হব জানি না। এই অবস্থায় আপনাকেই বা কী করে গল্পটা ধরে রাখতে বলি তাও বুঝতে পারছি না। সংশয় হয় অন্য কারুর হাতে পড়লে এমন চমৎকার গল্পটি হয়তো যথাযথভাবে চিত্রায়িত হবে না।”
গল্পটি নিয়ে যে সেলিনা হোসেন উপন্যাস লিখেছেন, সে খবরও রাখতেন সত্যজিৎ। তিনি লেখেন, “গল্পটি উপন্যাসাকারে প্রকাশিত হলে পড়ার ইচ্ছা রইল।”
পরের বছর উপন্যাসটি বই আকারে প্রকাশ হলে সেলিনা হোসেন সত্যজিৎকে পাঠিয়েছিলেন। তার উত্তরে সত্যজিৎ আরেক চিঠিতে সেলিনা হোসেনকে লেখেন, “হাঙর নদী গ্রেনেড কাল পেয়েছি। আমার আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানবেন। আমি কাল মাদ্রাজ যাচ্ছি একটা ডকুমেন্টারি ছবির ব্যাপারে, সঙ্গে আপনার বই নিচ্ছি। পড়ে অবশ্যই জানাব কেমন লাগল। বাংলাদেশে গিয়ে ছবি করার ইচ্ছে আছে। তবে এখনো যা খবর পাই, তাতে খুব ভরসা পাই না। আমার শুভেচ্ছা জানবেন।”
পরে ৭৮ সালে সেলিনা হোসেনকে আরেকটি চিঠি লিখেছিলেন সত্যজিৎ। তাতে তিনি লেখেন, “আপনার একটা চিঠি বেশ কিছুদিন আগে পেয়েছি, নানান ব্যস্ততাহেতু জবাব দেওয়া হয়নি। আপনার গল্প থেকে ছবি করার ইচ্ছে আছে, কিন্তু সেটা কবে পূরণ হবে জানি না। আমি আপাতত কিশোরদের জন্য একটা ছবি করছি। তারপর বছরের শেষে একটি সংগীতের ওপর ডকুমেন্টারি ছবি করব। আপনার গল্পের প্রয়োজন হলে আমি আপনাকে নিজেই লিখে জানাব।”
পর্দায় আনলেন চাষী নজরুল
‘হাঙ্গর নদী গ্রেনেড’ উপন্যাস থেকে সিনেমা পরিচালনা, শিল্প নির্দেশনা ও চিত্রনাট্য করেছেন পরিচালক চাষী নজরুল ইসলাম। বাংলাদেশ সরকারের অনুদানে নির্মিত চলচ্চিত্রটি ১৯৯৭ সালের ২১ নভেম্বর প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায়।
সিনেমাটিতে অভিনয় করেন সুচরিতা, সোহেল রানা, ইমরান, অরুণা, দোদুল, রাজীব, মিজু আহমেদসহ অনেকে।
সিনেমায় যে দৃশ্যটি অসংখ্য দর্শকের হৃদয় ছুঁয়ে আছে। তাতে দেখা যায়, বুড়ির (সুচরিতা) ঘরে আত্মগোপনে থাকা মুক্তিযোদ্ধাদের খোঁজে এসেছে পাকিস্তানি হানাদাররা। মুক্তিযোদ্ধাদের বাঁচাতে নিজের বাক ও শ্রবণপ্রতিবন্ধী পুত্রসন্তান রইছকে উৎসর্গ করেন মা।
রইছের হাতে বন্দুক ধরিয়ে দিয়ে ঘরের বাইরে পাঠান; বাড়ির আঙিনায় রইছের বুক ঝাঁজরা করে চলে যায় হানাদাররা। আমগাছের তলায় রইছের নিথর দেহ পড়ে থাকে। মুক্তিযোদ্ধাদের যুদ্ধে পাঠিয়ে নিথর সন্তানকে জড়িয়ে কান্নায় ভেঙে পড়ে বুড়ি।
সিনেমায় রইছের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন বিজয় চৌধুরী। মুক্তিযুদ্ধের পরের বছর জন্ম নেওয়া বিজয় যখন সিনেমাটিতে রইছ চরিত্রে অভিনয় করেন, তখন তার বয়স ছিল ২২ বছর।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বিজয় চৌধুরী বলেন, “এই সিনেমাটিতে অভিনয় করার পর অসংখ্য মানুষের ভালোবাসা পেয়েছি। অনেক মানুষ কেঁদেছেন সেই দৃশ্য দেখে। ‘হাঙর নদী গ্রেনেড’ সিনেমাটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক একটি চমৎকার চলচ্চিত্র।”
১৯৯৪ সালে মানিকগঞ্জের ঝিটকা গ্রামে সিনেমাটির দৃশ্য ধারণ করা হয়েছিল।
বিজয় বলেন, “টানা প্রায় এক মাস সেখানে শুটিং করেছিলাম। মুক্তিযুদ্ধ তো দেখিনি। তবে সিনেমাটিতে অভিনয় করতে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধকে উপলব্ধি করেছি।”
চলচ্চিত্র নির্মাতা ও সংগঠক বেলায়াত হোসেন মামুন অবশ্য চাষী নজরুলের এই নির্মাণে খুব একটা সন্তুষ্ট নন। তিনি মনে করেন, ‘হাঙর নদী গ্রেনেড’ উপন্যাস অবলম্বনে ভবিষ্যতে আবারও কেউ চলচ্চিত্র নির্মাণ করবেন৷ কারণ, এই কাহিনিটির একটি সর্বকালীন মাত্রা আছে, যা মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক খুব কম উপন্যাস বা গল্পে দেখা যায়৷
মুভিয়ানা ফিল্ম সোসাইটির সভাপতি মামুন বলেন, “উপন্যাস হিসেবে ‘হাঙর নদী গ্রেনেড’ যে উচ্চতায় রয়েছে, যতটা মহত্তর সৃষ্টি, সে বিচারে চলচ্চিত্র হিসেবে এর অবস্থান আমার কাছে অনেকখানি ব্যর্থই মনে হয়৷ ছবিটির অভিনয়শিল্পীদের ‘অতি অভিনয়’ প্রবণতা ছবিটির যে গল্প তার মাঝে ঠিক প্রবেশ করতে দেয় না।
“এই উপন্যাস বা চলচ্চিত্রের গল্পটি সত্যের অনুগামী৷ কিন্তু চলচ্চিত্রটি সে সত্যের নির্মিতিতে সত্যানুসারী না হয়ে নির্মাতা চাষী নজরুল ইসলাম অনেকখানি ঢাকাই ছবির ছক অনুসরণ করে ‘যাত্রানুসারী’ ঢংয়ে গল্প তুলে ধরেছেন৷ এতে ছবিটির মান ও কাহিনির আবেগগত অভিঘাত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।”
চলচ্চিত্র সমালোচক বিধান রিবেরুর কাছে মুক্তিযুদ্ধের সিনেমার ক্ষেত্রে শিল্পমানের বিচারে ‘হাঙর নদী গ্রেনেড’ সিনেমাকে মাঝারি মানের মনে হয়েছে।
“এর চেয়ে আমি এগিয়ে রাখব নাসির উদ্দীন ইউসুফ পরিচালিত ‘একাত্তরের যীশু’ সিনেমাটিকে। যেটি শাহরিয়ার কবিরের গল্প থেকে নির্মিত হয়েছে। এছাড়া কথাসাহিত্যিক আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের 'রেইনকোট' গল্প অবলম্বনে 'মেঘমল্লার' নামে একটি সিনেমা নির্মাণ করেছেন জাহিদুর রহিম অঞ্জন। এই সিনেমাটিও আমার কাছে ভালো লেগেছে।”
‘হাঙর নদী গ্রেনেড’ কেন মাঝারী মানের সিনেমা তার ব্যাখ্যায় বিধান বলেন, “এই সিনেমায় দেখেছি যে খুবই উচ্চকিত অভিনয়, নান্দনিক জায়গা ও শিল্পমানের জায়গা থেকে আমার মনে হয়েছে কিছুটা দুর্বল।”
তবে বাংলাদেশের বাস্তবতায় মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে সিনেমা নির্মাণ করাটাই একটা লড়াই বলেও মনে করেন তিনি।
তার ভাষ্য, “আমাদের এখানে তো সিনেমা নির্মাণ করার পরিবেশই এখনো গড়ে ওঠেনি। ফলে মুক্তিযুদ্ধের সিনেমা নির্মাণের জন্য নানা রকম প্রতিকূলতাও জয় করতে হয়।”