একুশে পদক পাওয়া আবৃত্তিশিল্পী ও শিক্ষক ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, “মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীনতাপ্রাপ্তি যে অনেক কষ্টের অর্জন- তারই ছন্দময় আবেগের প্রকাশ হলো ‘স্বাধীনতা তুমি’।”
Published : 20 Mar 2025, 08:35 AM
১৯৭১ সাল। নরসিংদীর পাড়াতলী গ্রামের পুকুরপাড়ে বসে কবি শামসুর রাহমান লিখেছিলেন সেই অমর কবিতা ‘স্বাধীনতা তুমি’। পরে চিত্রশিল্পী আবুল বারক আলভী সেই কবিতা পৌঁছে দিয়েছিলেন ভারতে এবং যুদ্ধকালীন সময়েই প্রথম ছাপা হয়েছিল ‘দেশ’ পত্রিকায়। সঙ্গত কারণেই কবির একটি ছদ্মনাম ব্যবহার করতে হয়েছিল, সেই নামটি ছিল ‘মজলুম আদিব’।
মুক্তিযুদ্ধের দিনগুলোতে এই কবিতা ছাড়াও ‘তোমাকে পাওয়ার জন্য হে স্বাধীনতা’সহ আরও অনেক কবিতা লিখেছিলেন শামসুর রাহমান। স্বাধীনতার পর সেই কবিতাগুলো নিয়ে প্রকাশ হয়েছিল তার কবিতার বই ‘বন্দী শিবির থেকে’।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে আছে শামসুর রাহমানের এই কবিতাগুলো। যুদ্ধোত্তর বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি আবৃত্তি হওয়া কবিতার মধ্যেও ‘স্বাধীনতা তুমি’ কবিতাটিকে বিবেচনা করেন অনেকে।
কবিতাটি লেখা হয়েছিল একাত্তরের এপ্রিল মাসের প্রথমার্ধে, যখন দেশজুড়ে পশ্চিম পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর দমনপীড়ন, নির্যাতন আর হত্যাযজ্ঞ চলছে। সে সময় শামসুর রাহমান ঢাকা ছেড়ে নিজ গ্রাম পাড়াতলীতে আত্মগোপন করেছিলেন।
একুশে পদক পাওয়া আবৃত্তিশিল্পী ও শিক্ষক ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, “মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীনতাপ্রাপ্তি যে অনেক কষ্টের অর্জন- তারই ছন্দময় আবেগের প্রকাশ হলো ‘স্বাধীনতা তুমি’।”
আর বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার পাওয়া কবি ও নাট্যকার শুভাশিস সিনহা মনে করেন, মুক্তি সংগ্রামের আপাত প্রত্যক্ষ মুক্তির আকাঙ্ক্ষার অন্তরালে মানুষের এক ধরণের আধ্যাত্মিক মুক্তির ইশারাও খুঁজতে চেয়েছে শামসুর রাহমানের ‘স্বাধীনতা তুমি’ কবিতাটি।
লেখা আছে অশ্রুজলে বলা হয়ে থাকে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কালোত্তীর্ণ সাহিত্য খুব একটা হয়নি। তবে যা হয়েছে, তা-ও নেহায়েত কম নয়। যুদ্ধকালীন এবং যুদ্ধোত্তর সময়ে রচিত সেই সব কবিতা, গল্প, উপন্যাস ও নাটকের কয়েকটি নিয়ে এই বিশেষ আয়োজন। প্রথম পর্ব শামসুর রাহমানের ‘স্বাধীনতা তুমি’ কবিতা নিয়ে। |
যেভাবে ছড়াল
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চে ঢাকায় অপারেশন সার্চলাইটের নামে হত্যা করা হয় অসংখ্য মানুষকে। এরপরই বাঙালি মুক্তিসংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ে। কেউবা আবার প্রাণ বাঁচাতে শহর ছেড়ে গ্রামে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছিল। কবি শামসুর রাহমান সে সময় আরও অনেকের মতোই অবরুদ্ধ সময় পার করছিলেন।
২৭ মার্চ কারফিউ শিথিল হলে ঢাকা ছেড়ে পরিবারের অন্য সদস্যদের নিয়ে কবি আশ্রয় নেন নরসিংদীর রায়পুরার পাড়াতলীতে, নিজের গ্রামে। কিন্তু কবির মনে তখন বেজে চলেছে স্বাধীনতা। দেশজুড়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নারকীয় তাণ্ডব কবির হৃদয়ের ক্ষতকে যেন বাড়িয়ে তুলেছে।
একাত্তরের এপ্রিল মাসের গোড়ার দিকে পাড়াতলী গ্রামে এক দুপুরে তিনি লিখে ফেললেন ‘স্বাধীনতা তুমি’ এবং ‘তোমাকে পাওয়ার জন্য হে স্বাধীনতা’ কবিতা দুটি।
শামসুর রাহমান একাধিক সাক্ষাৎকার ও আত্মজীবনীতে বলেছেন, এপ্রিলের ৭ বা ৮ তারিখে যখন তার মাথায় কবিতাগুলো এল, তখন চতুর্থ শ্রেণি পড়ুয়া চাচাত ভাইয়ের কাছ থেকে কাগজ ও কাঠপেনসিল চেয়ে নিয়ে একটানে লিখে ফেললেন এই দুটি কবিতা।
এরও কিছুদিন পর তিনি ঢাকায় ফিরে সেই কবিতাগুলো তুলে দিলেন মুক্তিযোদ্ধা হাবিবুল আলম বীর প্রতীক ও শাহাদাত চৌধুরীর (বিচিত্রা সম্পাদক) হাতে। পরে চিত্রশিল্পী আবুল বারক আলভীর মাধ্যমে সেই কবিতা পাঠানো হলো সাহিত্য সমালোচক ও প্রাবন্ধিক আবু সয়ীদ আইয়ুবের কাছে। যুদ্ধের দামামার মাঝেই একাত্তরের ২১ জুলাই ‘দেশ’ পত্রিকায় প্রথম ছাপা হয় ‘স্বাধীনতা তুমি’।
শামসুর রাহমানের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করেই ‘মজলুম আদিব’ ছদ্মনামটি দিয়েছিলেন আবু সয়ীদ আইয়ুব। এ নামের অর্থ নির্যাতিত লেখক।
চিত্রশিল্পী আবুল বারক আলভী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এটা তখন শাহাদাত ভাইয়ের মারফত আমার কাছে এসেছিল। আমি তখন কলকাতায় একটা কাজে গিয়েছিলাম। তারিখটা ঠিক মনে করতে পারছি না। এপ্রিলের মাঝামাঝি বা শেষ দিকে হবে হয়ত। তখনও মুক্তিযুদ্ধের ক্যাম্প শুরু হয়নি।
“কলকাতায় গিয়ে আবু সয়ীদ আইয়ুবের স্ত্রী গৌরী আইয়ুবের সঙ্গে আমার দেখা হয়েছিল। পরে উনার বাসায় নিয়ে গেলেন। এরপর কবিতাটি ছাপানোর উদ্যোগ নেওয়া হলো। কিন্তু কী নামে ছাপানো হবে? তা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হলো। শামসুর রাহমান তো তখন ঢাকায়। উনার নামে যদি এটা ছাপানো হয়, তাহলে উনার নিরাপত্তা হুমকির মধ্যে পড়তে পারে। নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে পরে ছদ্মনাম দেওয়া হলো ‘মজলুম আদিব’।”
কবিতাটির বিশেষত্ব কোথায়?
কবি খালেদ হোসাইন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “স্বাধীনতা বা মুক্তি- ব্যাপারটির বিশালত্ব অনেক। আমাদের জীবনের নানা অনুষঙ্গে বা অনুভবে স্বাধীনতা নানাভাবে আছে। এই অনুভব রবীন্দ্রনাথ, নজরুলসহ অনেক কবির কবিতায় এসেছে। তবে শামসুর রাহমানের ‘স্বাধীনতা তুমি’ কবিতায় যেভাবে বর্ণনা করা হয়েছে, তা এক কথায় অসাধারণ।”
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের এই অধ্যাপক বলেন, “চিত্রকল্পে, উপমায় কবিতার লাইনগুলো যেকোনো মানুষের মধ্যে অনুভূতি তৈরি করে। মধ্যদুপুরে গ্রাম্য মেয়ের সাঁতার কিংবা কৃষকের মাঠে ফসলের হাসি আবার রবিঠাকুরের অজর কবিতা, নজরুলের ঝাঁকড়া চুলে সৃষ্টির যে উচ্ছ্বাস, তা এই কবিতায় অনন্যভাবে ওঠে এসেছে। এটি বাংলা সাহিত্যের একটি অনন্য কবিতা।”
কবি ও নাট্যকার শুভাশিস সিনহা বলেন, “কবিতাটি যুদ্ধের বীভৎস রূপের মধ্যেও স্বাধীনতার অনুষঙ্গকে খুঁজে ফিরেছে পতাকা শোভিত স্লোগান মুখর ঝাঁঝালো মিছিলের’ পাশাপাশি ‘রোদেলা দুপুরে মধ্যপুকুরে গ্রাম্য মেয়ের অবাধ সাঁতারে। বটের ছায়ায় তরুণ মেধাবী শিক্ষার্থীর শাণিত কথার ঝলসানি’ লাগা সতেজ ভাষণের পাশাপাশি উঠানে ছড়ানো মায়ের শাড়ির শুভ্র কাঁপনে। বন্ধুর হাতে জ্বলজ্বলে এক রাঙা পোস্টারের পাশাপাশি গৃহিণীর ঘন কালো খোলা চুলে।
“তাই শেষতক কবিতাটি প্রোপাগাণ্ডাময় হয়ে ওঠেনি, লড়াই সংগ্রামে অধিকার আদায়ের সকল উচ্চারণের সাথে শান্ত নিস্তরঙ্গ পল্লীজীবনের সৌন্দর্যও উপমায়িত হয়েছে।”
মুক্তি সংগ্রামের আপাত প্রত্যক্ষ মুক্তির আকাঙ্ক্ষার অন্তরালে এ কবিতা মানুষের এক ধরণের আধ্যাত্মিক মুক্তির ইশারাও খুঁজতে চেয়েছে উল্লেখ করে শুভাশিস সিনহা বলেন, “নগর-গ্রাম সেখানে একাকার, স্বাধীনতার জন্য উদ্বেল। ‘বন্দী শিবির থেকে’ বইয়ের নামেও বোঝা যায় মুক্তির আকাঙ্ক্ষা কতটা জাগরুক ছিল।
“আবুল হাসানের ‘উচ্চারণগুলি শোকের’, নির্মলেন্দু গুণের ‘স্বাধীনতা, উলঙ্গ কিশোর’, রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহর ‘কনসেনট্রেশান ক্যাম্প’ কবিতাগুলোও স্বাধীনতা বা মুক্তিযুদ্ধকে পোট্রেট করেছে, মোটা দাগে। তবে শামসুর রাহমানের ‘স্বাধীনতা তুমি’ স্বতঃস্ফূর্ত, সাবলীল বাকপ্রতিমায় সহজে পাঠককে ভাবযুক্ত করে, কবিতার গুণাবলী অক্ষুণ্ন রেখেই।”
স্বাধীন বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি পঠিত কবিতার মধ্যেও ‘স্বাধীনতা তুমি’ এবং ‘তোমাকে পাওয়ার জন্য হে স্বাধীনতা’ কবিতা দুটি অন্যতম বলে জানান আবৃত্তিশিল্পী ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়।
তিনি বলেন, “মুক্তিযুদ্ধকালীন বাংলাদেশে থেকেই কবি শামসুর রাহমান বেশ কিছু কবিতা লিখেছেন এবং পরে ‘বন্দী শিবির থেকে’ একটা বই প্রকাশ করেছেন। যুদ্ধকালীন সময়ে একজন কবির মনের অন্তর্দহনের পাশাপাশি জনজীবনের নানা স্বপ্ন-আকাঙ্ক্ষা ওঠে আসে কবিতায়। যুদ্ধকালীন সময়ে লেখা শামসুর রাহমানের দুটি কবিতা বিশেষভাবে বাংলাদেশের মানুষের হৃদয়কে স্পর্শ করেছে। স্বাধীনতা দিবস এবং বিজয় দিবসে দুটি কবিতায় অনেক বেশি আবৃত্তি করা হয়।”
ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “‘তোমাকে পাওয়ার জন্য হে স্বাধীনতা’ কবিতায় পাকিস্তানিদের আগমন, তাদের দ্বারা সাধারণ কিভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তা চিত্রময়তার মধ্য দিয়ে কবি ধরার চেষ্টা করেছেন। আর শেষের দিকে স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষার কথা বলেছেন। আর ‘স্বাধীনতা তুমি’ কবিতাটিতে নানান রকম উপমার মধ্য দিয়ে বোঝাতে চেয়েছেন, যে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি, সেই স্বাধীনতা কেমন। স্বাধীনতা যে আনন্দ এবং ভালো লাগার, তা চিত্রময়তায় শামসুর রাহমান তুলে এনেছেন। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে কবিতা দুটি জড়িয়ে আছে।”
জাতীয় কবিতা পরিষদের সভাপতি কবি মোহন রায়হান বলেন, “বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রেখেছে কারা? কৃষক-মজুর আর ছাত্ররা। শামসুর রাহমান ‘স্বাধীনতা তুমি’ কবিতায় তাদের কথা বলেছেন। স্বাধীনতা কেমন, তা বুঝতে হলে এই কবিতা পড়তে হবে। কবিতাটির সবশেষে বলছেন, স্বাধীনতা হচ্ছে- ‘যেমন ইচ্ছে লেখা আমার কবিতার খাতা’। গ্রাম্য মেয়ের অবাধ সাঁতার কিংবা কবির মুক্ত খাতার মধ্য দিয়ে শামসুর রাহমান আমাদের স্বাধীনতার একটি অমর কবিতা রচনা করেছেন।”
স্মৃতি সংরক্ষণের উদ্যোগ থমকে আছে
পাড়াতলী গ্রামের যে পুকুরপাড়ে বসে শামসুর রাহমান এই কবিতা লিখেছিলেন, সেই ইতিহাসকে সংরক্ষণে রাষ্ট্রীয় আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল বলে জানালেন কবির পুত্রবধূ টিয়া রাহমান। তবে তা পরে আর বাস্তবায়ন হয়নি।
২০০৯ সালে জেলা পরিষদের অর্থায়নে পাড়াতলী কলিম উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে নির্মিত হয়েছিল কবি শামসুর রাহমান পাঠাগার। তখন অবকাঠামো নির্মাণ ও কিছু আসবাব দেওয়া হলেও পরে আর জনবল ও বই না দেওয়ায় পাঠাগারটিও আলো ছড়াতে পারেনি।
টিয়া রাহমান বলেন, “আব্বুর অসংখ্য স্মৃতি পাড়াতলী গ্রামে। আর আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের সঙ্গেও তো জড়িয়ে আছে এই গ্রামটি। ‘স্বাধীনতা তুমি’, ‘তোমাকে পাওয়ার জন্য হে স্বাধীনতা’ কবিতার জন্যই তো এই বাড়িটা সংরক্ষণ করা জরুরি। কিন্তু সেটি করা হয়নি।”
শামসুর রাহমান পুকুরপাড়ের যে গাছতলায় বসে ‘স্বাধীনতা তুমি’, ‘তোমাকে পাওয়ার জন্য হে স্বাধীনতা’ লিখেছিলেন, সেটি ছিল আমগাছ। এই আমগাছটি যে পুকুরের পাড়ে সেই পুকুরে ডুবেই ১৯৭৬ সালে মারা গিয়েছিল কবির কিশোরপুত্র ওয়াহিদুর রাহমান। কবি তাকে আদর করে ডাকতেন ‘মতিন’।
গাছটি পরে ঝড়ে ভেঙে পড়ে। ২০০৫ সালে কবি গ্রামে এসে আবার নতুন করে আমগাছের চারা লাগিয়েছিলেন। টিয়া রাহমান জানালেন, সেই আমগাছটি এখনো আছে।
আবৃত্তিশিল্পী ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, শামসুর রাহমানের কবিতার কারণে পাড়াতলী গ্রামও এখন ইতিহাসের অংশ হয়ে ওঠেছে। নতুন প্রজন্ম যেন সেই গ্রামে ঘুরতে গেলে শামসুর রাহমানের কবিতা লেখার ইতিহাসও জানতে পারে, তার সেই স্মৃতি সংরক্ষণ করা উচিত।
শানবাঁধানো সেই পুকুর ঘাট
দুই দশকের বেশি আগে শামসুর রাহমানের পাড়াতলীর বাড়িতে গিয়েছিলেন আলোকচিত্রী নাসির আলী মামুন। সেময় শামসুর রাহমানের বেশ কিছু ছবিও তুলেছিলেন তিনি।
মামুন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “শামসুর রাহমানের জন্ম কিন্তু পুরান ঢাকার মাহুতটুলিতে। পরে তিনি শ্যামলীতে থাকতেন। গ্রামে মূলত বেড়াতেই যেতেন। আর মুক্তিযুদ্ধের সময় আশ্রয় নিয়েছিলেন সেই গ্রামে। ওই বাড়িটি তাদের পৈত্রিক ভিটা। আমি শামসুর রাহমানের সঙ্গে সেই গ্রামে যখন গিয়েছিলাম, তখন মেঘনা নদীর সেই উত্তাল ঢেউ দেখেছি।”
‘তোমাকে পাওয়ার জন্য হে স্বাধীনতা’ কবিতায় শামসুর রাহমান লিখেছিলেন, ‘মতলব মিয়া, মেঘনা নদীর দক্ষ মাঝি, গাজী গাজী বলে যে নৌকা চালায় উদ্দাম ঝড়ে’। যখন নদী পার হচ্ছিলাম, আমার সেই কবিতার কথা মনে পড়ছিল। উত্তাল মেঘনা পেরিয়ে ছায়া সুনিবীড় গ্রাম। আমি তো অনেক আগে গিয়েছিলাম। এখন কেমন আছে, জানা নেই। তবে তখনই সেই বাড়ি দেখলেই বোঝা যেত- খুবই বনেদী পরিবার।”
পাড়াতলীর পুকুরের সেই শানবাঁধানো ঘাটকে ‘বাংলাদেশের ইতিহাসের অংশ’ হিসেবে বর্ণনা করে নাসির আলী মামুন বলেন, “এই পুকুরের শানবাঁধানো ঘাটে বসেই তো শামসুর রাহমান সেই অমর দুটি কবিতা রচনা করেছেন। আবার এই পুকুরে ডুবেই মারা গেছেন শামসুর রাহমানের ছেলে মতিন। পুকুর ঘাটে আমি শামসুর রাহমানের কিছু ছবি তুলেছিলাম। এই পুকুরঘাটে এলেই শামসুর রাহমান অন্যরকম হয়ে যেতেন। সন্তানের শোক আর স্বাধীনতার আনন্দ মিশে আছে এই পুকুর ঘাটে।”
শামসুর রাহমানের স্মৃতি সংরক্ষণে আরো মনোযোগী হওয়া উচিত বলে মনে করেন নাসির আলী মামুন।
তিনি বলেন, “শুধুমাত্র পাড়াতলী নয়, পুরান ঢাকার মাহুতটুলির জন্মভিটা, আর শ্যামলীর বাড়িটিও সংরক্ষণ করা উচিত। এটা যে কেবল রাষ্ট্রীয় উদ্যোগেই করতে হবে, তা নয়। বেসরকারিভাবেও ধণাঢ্য ব্যক্তিরা এগিয়ে এসে এটি করতে পারেন। নতুন প্রজন্মের এই ইতিহাস জানা উচিত।”