‘উপন্যাসটি নন্দনতাত্ত্বিক জায়গা থেকে চমৎকার হলেও ভাবাদর্শিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি থেকে সন্তোষজনক নয়’ বলে মনে করেন কোনো কোনো সাহিত্যবোদ্ধা।
Published : 22 Mar 2025, 09:03 AM
আশির দশক; পুরান ঢাকার শ্যামাপ্রসাদ চৌধুরী লেনের যুবক আবদুল মজিদের স্যান্ডেলের ফিতে যখন ফট করে ছিঁড়ে যায়, তখন আবদুল মজিদ শুনতে থাকে সেই কণ্ঠস্বর। বদু মওলানা ফিরে এসেছে।
১৯৭১ সালে ঢাকার লক্ষ্মীবাজারে বদরুদ্দিন ওরফে বদু মাওলানা চালিয়েছিল নির্মম ধ্বংস ও হত্যাযজ্ঞ। কিশোর আবদুল মজিদের বোন মোমেনাসহ আরও অনেককে নির্মমভাবে হত্যা করেছিল বদু।
স্বাধীন বাংলাদেশে সাধারণ ক্ষমার সুযোগ নিয়ে পরবর্তী সময়ে রাষ্ট্রীয় ও রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতায় পুনর্বাসিত হয়েছে তারা। মুক্তিযুদ্ধোত্তর বাংলাদেশের এই কাহিনিই আছে ‘জীবন ও রাজনৈতিক বাস্তবতা’ উপন্যাসের ছত্রে ছত্রে।
শহীদুল জহিরের লেখা এই উপন্যাসটি বাংলা সাহিত্যে মুক্তিযুদ্ধের নির্মমতার পাশাপাশি যুদ্ধোত্তর বাংলাদেশের জনমানুষের জীবনের বাস্তবতাও তুলে এনেছে বলে মনে করছেন সাহিত্য বিশ্লেষকরা।
তবে ‘উপন্যাসটি নন্দনতাত্ত্বিক জায়গা থেকে চমৎকার হলেও ভাবাদর্শিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি থেকে সন্তোষজনক নয়’ বলে মনে করেন কোনো কোনো সাহিত্যবোদ্ধা।
শহীদুল জহির নিজে অবশ্য এ নিয়ে খুব বেশি বলেননি। এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, “আমার ভয় ছিল পাঠক এটা বুঝবে কি বুঝবে না। এটা অনেক সময় লেখক হিসেবে আমার ভয় থাকে।”
লেখা আছে অশ্রুজলে বলা হয়ে থাকে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কালোত্তীর্ণ সাহিত্য খুব একটা হয়নি। তবে যা হয়েছে, তা-ও নেহায়েত কম নয়। যুদ্ধকালীন এবং যুদ্ধোত্তর সময়ে রচিত সেই সব কবিতা, গল্প, উপন্যাস ও নাটকের কয়েকটি নিয়ে এই বিশেষ আয়োজন। তৃতীয় পর্ব শহীদুল জহিরের ‘জীবন ও রাজনৈতিক বাস্তবতা’ উপন্যাস নিয়ে। |
প্রথম উপন্যাস ‘জীবন ও রাজনৈতিক বাস্তবতা’ দিয়ে শহীদুল জহির সাহিত্যে ‘জাদু বাস্তবতা’র জন্য খ্যাতি কুড়ালেও এতে জীবনের নিদারুণ বাস্তবতাও।
কবে লেখা?
মুক্তিযুদ্ধের সময় শহীদুল জহির ছিলেন তরুণ। ফলে যুদ্ধদিনের নানা ঘটনা তার মনে গেথে থাকারই কথা। বিশ্ববিদ্যালয় জীবন থেকেই শহীদুল জহিরের বন্ধু ছিলেন কথাসাহিত্যিক মহীবুল আজিজ। তিনি এক লেখায় উল্লেখ করেছেন, ১৯৮৫ সালে শহীদুল জহির উপন্যাসটি লিখেছেন।
এই বিষয়ে জানতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ও কথাসাহিত্যিক মহীবুল আজিজকে ফোন করা হলে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “অনেক আগের ঘটনা। এখন সেভাবে মনে করে বলা কঠিন। আমার লেখাতে এ বিষয়ে কিছু তথ্য দিয়েছি।”
মহীবুল আজিজের লেখাটি শহীদুল জহির সমগ্রতে সংকলিত আছে। তিনি লিখেছেন, “চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় এলে আমরা একত্র হতাম। মাঝেমধ্যে শহীদ আমাকে ওদের মগবাজারের বাসায় নিয়ে যেত। ১৯৮২ সালে আমি উচ্চশিক্ষার জন্য বুলগেরিয়া গেলাম। ১৯৮৫ সালের অগাস্ট মাসে থিসিসের তথ্য সংগ্রহের জন্য আমি ঢাকায় এলাম এবং গ্রিন রোডে অফিসার্স ডরমেটরিতে শহীদের ওখানেই উঠেছিলাম। আমরা দুজন ওর জীর্ণশীর্ণ বিছানায় একসঙ্গেই ঘুমাতাম। সম্ভবত ওই সময়ে তার জীবন ও রাজনৈতিক বাস্তবতার সৃষ্টি।”
শহীদুল জহিরের উপন্যাস সমগ্রে যে তথ্য দেওয়া আছে, তাতে বলা হয়েছে ১৯৮৭ সালে ‘জীবন ও রাজনৈতিক বাস্তবতা’ উপন্যাসটি প্রথম প্রকাশ করে হাক্কানী পাবলিশার্স এবং পরে ১৯৯৪ সালে শিল্পতরু প্রকাশনী থেকেও উপন্যাসটি প্রকাশ করা হয়। তবে মাঝে এবং প্রথম প্রকাশের পরের বছর ১৯৮৮ সালেই মাওলা ব্রাদার্স উপন্যাসটির একটি সংস্করণ প্রকাশ করেছিল।
কতটা নির্মোহ?
১৯৮৫ সালের একদিন লক্ষ্মীবাজারের শ্যামাপ্রসাদ চৌধুরী লেনের বাসিন্দা যুবক আব্দুল মজিদ রায়সাহেব বাজারে যাওয়ার পথে কারকুন বাড়ি লেন থেকে বের হয়ে নবাবপুর রোডে উঠলে তার ডান পায়ের স্পঞ্জের স্যান্ডেলের ফিতে ফট করে ছিঁড়ে যায়। এভাবে এই কাহিনির শুরু।
কাহিনির শেষে দেখা যায়, আব্দুল মজিদ দৈনিক ইত্তেফাকে একটি বিজ্ঞাপন দিয়ে তার বাড়িটি বিক্রি করে লক্ষ্মীবাজার থেকে বসত উঠিয়ে চলে যায়, ফলে তার অস্তিত্বই যেন মুছে যায়।
শহীদুল জহির এইটুকু পরিসরে ফুটিয়ে তুলেছেন একাত্তরের নয় মাসে ঢাকা শহরের একটি মহল্লার সমগ্র জীবন। তখন কী ঘটেছিল, তারপর দেশ স্বাধীন হওয়ার দেড় দশক না পেরোতেই আব্দুল মজিদকে কেন তার বসতবাড়ি বিক্রি করে দিয়ে চলে যেতে হলো, এই নিদারুণ প্রশ্নের মধ্যে নিহিত রয়েছে স্বাধীন বাংলাদেশের রাজনীতির এক নিষ্করুণ বাস্তবতা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষক ও নাট্যকার শাহমান মৈশান মনে করেন, উপন্যাসটির মধ্যে থাকা চিহ্নগুলোর পাঠে কমপক্ষে এর দুটো মাত্রা লক্ষ্য করা যায়। আপাতভাবে একে নির্দিষ্ট কোনো রাজনৈতিক দলের মতাদর্শের প্রচারপত্র হয়ে ওঠেনি বলে সাব্যস্ত করা যায়। এর ফলে, উপন্যাসটি সাহিত্যের পাশাপাশি ইতিহাসেরও বিশেষ বয়ান হয়ে ওঠে।
তার ভাষ্য, “উপন্যাসটিতে লেখকের পক্ষপাতিত্ব আছে, তা হলো মুক্তিযুদ্ধের প্রতি। মুক্তিযুদ্ধ সংক্রান্ত অধিপতিশীল জাতীয়তাবাদী বয়ানকে খানিক প্রশ্ন করতে সক্ষম, যদিও তা বাইনারিজমের ফাঁদ থেকে শেষপর্যন্ত রক্ষা পায় না।”
শাহমান মৈশান বলেন, “মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে যে বাংলাদেশের জন্ম হলো, তা যদি অনুসন্ধান করতে হয় তাহলে নিশ্চিতভাবেই শহীদুল জহিরের জীবন ও রাজনৈতিক বাস্তবতা এক তাৎপর্যপূর্ণ উৎস।”
ইতিহাসের বয়ান নির্মাণের প্রভাবশালী ধারণা অনুযায়ী ‘ফ্যাক্ট’ই হলো ইতিহাস রচনার মূল সূত্র। কিন্তু সেই ধারণাও এখন পাল্টে যাচ্ছে উল্লেখ করে শাহমান মৈশান বলেন, এখন ফিকশনও ইতিহাস রচনার অন্যতম উৎস। বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্ম ইতিহাসের বোঝাপড়ার জন্য উপন্যাসটির বিশেষ গুরুত্ব আছে।
“উপন্যাসটি এক পরাস্ত মুক্তিযোদ্ধার গল্প। যে কিনা আমাদেরকে প্রশ্ন করছে। বাংলাদেশের জন্য যারা লড়াই করেছেন- তাদের বেদনা ও অন্তর্দহন আমরা কতটা অনুভব করতে পারছি? এভাবে এই উপন্যাস যেন মুক্তিযুদ্ধ নামক এক বেহাত বিপ্লবের আখ্যান হয়ে ওঠে।”
তবে ‘জীবন ও রাজনৈতিক বাস্তবতা’ মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী শক্তিকে প্রতিপক্ষ হিসেবে সাব্যস্ত করলেও, এই উপন্যাস মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী শাসকশ্রেণির ক্রমাগত রাজনৈতিক ব্যর্থতাকে চিহ্নিত করতে পারেনি বলেও মনে করেন শাহমান মৈশান।
“এই উপন্যাস সৃজনশীলতার ভাষা দিয়ে মতাদর্শিক সীমাবদ্ধতা যদি অতিক্রম করতে পারত, তবেই কেবল তা হতো পারত বাংলাদেশের সর্বজনের জীবন ও রাজনৈতিক বাস্তবতার বয়ান।”
অন্যদিকে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম বলছেন, আশির দশকের যে বাস্তবতা উপন্যাসে তুলে এনেছেন শহীদুল জহির, সেখানে তিনি আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটকে গুরুত্ব না দিয়ে, ভাবাদর্শিক ব্যাপারটিকে গুরুত্ব দিয়েছেন।
“ফলে নন্দনতাত্ত্বিক জায়গা থেকে এটি একটি চমৎকার অভিজ্ঞতা হলেও আমার বিবেচনায় ভাবাদর্শিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি থেকে সন্তোষজনক নয়। এরকম অনেক সাহিত্য আছে, যেগুলোতে আমি এই সংকট দেখতে পাই।”
এই উপন্যাসটি বোঝার জন্য আশির দশককে বোঝা জরুরি বলে মনে করেন মোহাম্মদ আজম।
তিনি বলেন, “উপন্যাসটিতে সমসাময়িকতার একটা প্রচণ্ড চিহ্ন আছে। মুক্তিযুদ্ধে যে শ্রেণিটা বাংলাদেশ রাষ্ট্রের বিরোধিতা করেছে, বাংলাদেশের শত্রু পাকিস্তানিদের পক্ষে কাজ করেছে, ওই পক্ষটা নানান রাজনৈতিক সমীকরণের মধ্য দিয়ে আশির দশকে আবার শক্তি সঞ্চয় করেছে। এই বাস্তবতার প্রেক্ষিতে উপন্যাসটি লেখা। শহীদুল জহির সেই পরিস্থিতিটা ব্যাখ্যা করেছেন।
“উপন্যাসটি আমার কাছে নন্দনতাত্ত্বিক জায়গা থেকে ঠিক মনে হয়েছে, তবে ভাবদর্শিক জায়গা থেকে ঠিক তৃপ্তিদায়ক মনে হয়নি।”
এর কারণ হিসেবে মোহাম্মদ আজমের ভাষ্য, “রাষ্ট্র বা রাজনীতি যে ক্ষমতা কাঠামোতে কাজ করে। আমার ধারণা, এই উপন্যাসে শহীদুল জহির ঠিকমতো ধরতে পারেননি। দ্বিতীয়ত, মুক্তিযুদ্ধবিরোধী হিসেবে তিনি কেবল একটি শ্রেণিকেই চিহ্নিত করেছেন। আমি বলব এটা ইতিহাসের লঙ্ঘন, যা পরবর্তী বাংলাদেশের ইতিহাস তৈরিতে সংকট তৈরি করেছে।”
এ ধরণের বিষয়বস্তুকে নিয়ে লিখতে হলে রাষ্ট্রের ক্ষমতা সম্পর্ক বা ‘পাওয়ার রিলেশনের’ জায়গাগুলো বুঝতে হবে বলেও মনে করেন মোহাম্মদ আজম।
তিনি বলেন, “টাকা-পয়সার ভাগবাটোয়ারা এবং ক্ষমতার ভাগবাটোয়ারা যে ব্যাপার, তার সঙ্গে একটা শ্রেণিগত ব্যাপার আছে। এটা শুধুমাত্র ভাবাদর্শের ব্যাপার নয়। কিন্তু শহীদুল জহির উপন্যাসটিতে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ-বিপক্ষের ক্ষেত্রে শুধু একটি বিশেষ ভাবাদর্শকে প্রায়োরিটি দিয়েছেন।”
মঞ্চভ্রমণ
২০১৯ সালের মার্চ মাসে নাট্যসংগঠন ‘স্পর্ধা: ইনডিপেনডেন্ট থিয়েটার কালেকটিভ’ মঞ্চে আনে ‘জীবন ও রাজনৈতিক বাস্তবতা’। উপন্যাসটি মঞ্চে নির্দেশনা দেন অধ্যাপক সৈয়দ জামিল আহমেদ। ‘মুক্তিযুদ্ধের নাট্যোৎসব’ শিরোনামে টানা এই প্রযোজনাটির বেশ কয়েকটি প্রদর্শনী হয়েছিল।
নাটকটি দেখার পর নাট্যাঙ্গনেরই কেউ কেউ ইতিহাস বিকৃতির অভিযোগও তুলেছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের পর যুদ্ধাপরাধীদের সাধারণ ক্ষমার বিষয়টিকে নাটকে ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠেছিল।
তবে নাট্যনির্দেশক সৈয়দ জামিল আহমেদ তখন সংবাদমাধ্যমে বলেছিলেন, উপন্যাসটি হুবহু তিনি মঞ্চে নিয়ে এসেছেন। আর তিনি ইতিহাস বিকৃত হয়েছে বলেও মনে করেন না।
জামিল আহমেদের ভাষ্য ছিল, “আমার কাছে মনে হয়েছে, একাত্তর সালে রাজাকাররা যা করেছে, পাকিস্তানিরা যা করেছে, এই উপন্যাস থেকে নাটক আমাদের নতুন প্রজন্মকে জানিয়ে দেবে, যে আমাদের ক্ষতটা কোথায়। এজন্যই উপন্যাস থেকে নাটকটি করেছি।”
‘জীবন ও রাজনৈতিক বাস্তবতা’র মঞ্চভ্রমণে মোমেনা চরিত্রে অভিনয়ের পাশাপাশি নাটকটির পরিকল্পনায়ও যুক্ত ছিলেন মহসিনা আক্তার। তিনি নাট্যদল স্পর্ধার প্রতিষ্ঠাতাদের একজন।
মহসিনা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “নাটকটি আমরা যখন মঞ্চে এনেছি, তখন কেউ কেউ অভিযোগ করেছেন নাটকটিতে ইতিহাস বিকৃত করা হয়েছে। নাটকে দেখানো হয় সাধারণ ক্ষমার সুযোগ নিয়ে কীভাবে রাজাকারেরা পুনর্বাসিত হয়। একজন নেতা বলেন, ‘রাজনীতিতে চিরকালের বন্ধু আর শত্রু বলে কিছু নেই’। এটা নিয়ে আপত্তি তুলেছিলেন কেউ কেউ। আমরা মূলত উপন্যাসটিই মঞ্চায়ন করেছি।”
শহীদুল জহিরের দুটি রচনা নিয়ে কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে মহসিনার।
তিনি বলেন, “আমার সরাসরি কাজ করার অভিজ্ঞতা হয়েছে শহীদুল জহিরের ছোটগল্প ‘ইন্দুর বিলাই খেলা’ এবং উপন্যাস ‘জীবন ও রাজনৈতিক বাস্তবতা’ নিয়ে। দুইটারই বিষয়বস্তু মুক্তিযুদ্ধ এবং তার পরবর্তী বাংলাদেশ।”
‘জীবন ও রাজনৈতিক বাস্তবতা’ বোধের জায়গায় ব্যাপক পরিবর্তন এনেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “নাটকের আব্দুল মজিদ চরিত্রটি, যে কিনা ৭১ এ নির্যাতিত হয়েছিল। স্বাধীন দেশে তাকে আবার কেন অস্তিত্বের সংকটে পড়তে হয়, সেই প্রশ্নটিই মূলত বিষয়বস্তু।
“আব্দুল মজিদ ৭১ এ তার বোনকে বাঁচাতে ব্যর্থ হয় এবং পরবর্তীতে তার মেয়ের নাম রাখে মোমেনা। সেই মেয়েকে নিয়েও স্বাধীন দেশে নিজের ভিটা ছেড়ে অন্য পাড়ায় চলে যেতে বাধ্য হয়। এই ঘটনা আমাদের হৃদয়ে নাড়া দেয়।”
এখন কতটা প্রাসঙ্গিক?
সাহিত্যিক আহমাদ মাযহার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা যে জীবনে বসবাস করি, তা নানাভাবেই রাজনৈতিক বাস্তবতা। উপন্যাসের চরিত্র আব্দুল মজিদের স্যান্ডেলের ফিতা ফট করে ছিঁড়ে যাওয়ার মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের পরবর্তী পরিস্থিতির যে চিত্রকল্প তৈরি করেছেন শহীদুল জহির, তা বর্তমান বাস্তবতায় আবার ভিন্ন।”
আহমাদ মাযহার মনে করেন, বর্তমান বাস্তবতায় উপন্যাসটিকে মেলানো যাবে না, বরং নতুন দৃষ্টিভঙ্গিতে আরেকটা নতুন কিছু রচিত হতে পারে।
উদাহারণ টেনে তিনি বলেন, “মুক্তিযুদ্ধ যে জনআকাঙ্ক্ষা থেকে হয়েছিল, তা পূরণ হয়নি বলেই তো জন্ম হলো সাম্প্রতিক জুলাই গণ-অভ্যুথানের। এটা তো আরেকটা বাস্তবতা। যারা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে ছিলেন, বর্তমান বাস্তবতায় তাদের কারো কারো অবস্থানও তো পাল্টে গেছে ভিন্ন বিবেচনায়।
“ফলে আশির দশকের বাস্তবতায় বসে লেখা উপন্যাসটিতে এখনকার বাস্তবতা বোঝানো যাবে না। আমরা এখন আরেক পরিপ্রেক্ষিতের রাজনৈতিক বাস্তবতায় বাস করছি। এই বাস্তবতায় কতটা সঙ্গতি বিধান করতে পারছি, তা প্রশ্ন সাপেক্ষ। এই প্রশ্ন নিয়ে নতুন সাহিত্য রচিত হতে পারে।”
অন্যদিকে মহসিনা আক্তার মনে করেন, বর্তমান সময়েও ‘জীবন ও রাজনৈতিক বাস্তবতা’ উপন্যাস এবং নাটকটি ভীষণ প্রাসঙ্গিক।
তিনি বলেন, “উপন্যাসে আব্দুল মজিদের স্যান্ডেল যখন ফট করে ছিঁড়ে যায়, বস্তুত আবুল খায়ের যখন হরতাল সফল করার জন্য মহল্লাবাসীকে ধন্যবাদ দেয়- তা দেখে আব্দুল মজিদের হৃদয় ছিঁড়ে যায়।”
“এখন ২০২৫-এ এসে অনেক ঘটনা দেখে আমাদের হৃদয়ও আব্দুল মজিদের পায়ের স্যান্ডেলের মতোই ফট করে ছিঁড়ে যায়। এই বাস্তবতার কারণেই এই সময়েও উপন্যাসটি পাঠ করা এবং নাটকটির মঞ্চায়ন প্রাসঙ্গিক বলে মনে করি।”