ইভিএম প্রকল্পের জন্য ১৫ জানুয়ারি কোনো শেষ সীমা নয়: পরিকল্পনামন্ত্রী

“এটা ১৮ জানুয়ারি হতে পারে, ২০ জানুয়ারি হতে পারে, আবার আগামীকালও হতে পারে। আমরা খোলা মন নিয়ে আইন কানুনের আওতায় কথা বলছি,” বলেন এম এ মান্নান।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 Jan 2023, 02:44 PM
Updated : 10 Jan 2023, 02:44 PM

আগামী সংসদ নির্বাচনের জন্য ইলেক্ট্রনিক ভেটিং মেশিন (ইভিএম) কেনার প্রকল্প অনুমোদন দিতে ১৫ জানুয়ারি কোনো ‘শেষ সীমা নয়’ বলে মন্তব্য করেছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।

তিনি বলেছেন, “এটা ১৫ জানুয়ারিই হতে হবে… এটা কোনো লাল রেখা নয়। এটা ১৮ জানুয়ারি হতে পারে, ২০ জানুয়ারি হতে পারে, আবার আগামীকালও হতে পারে। আমরা খোলা মন নিয়ে আইন কানুনের আওতায় কথা বলছি।”

আগামী সংসদ নির্বাচনে দেড়শ আসনে ইভিএমে ভোট করার লক্ষ্য নিয়ে ৮ হাজার কোটি টাকার এক প্রকল্প সরকারকে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন, যা এখনও পাস হয়নি।

জানুয়ারির মধ্যভাগের মধ্যে তা পাস না হলে আগামী বছরের জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে ইভিএম নিয়ে ইসির পরিকল্পনা বাস্তবায়ন সম্ভব হবে না বলে রোববার আভাস দেন নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানা।

সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত নাথালি শুয়া মঙ্গলবার বিদায়ী সাক্ষাত করতে পরীকল্পনামন্ত্রীর দপ্তরে গেলে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন এম এ মান্নান। তখনই ইভিএম নিয়ে তার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন সাংবাদিকরা। 

প্রকল্পটির ব্যয় নির্ধারণ নিয়ে মতপার্থক্যের কারণ জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, “ইভিএম প্রকল্প নিয়ে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সার্বিক যোগাযোগ আছে। তাদের সচিব আর আমাদের সচিবের মধ্যে কথাবার্তা হয়। ইভিএম কেনার প্রকল্পের ব্যয় কমানো বাড়ানো– যা কিছুই করি, আলোচনা করেই করব। একতরফা কিছু করা হবে না। তাদের সঙ্গে আমাদের আলোচনা হচ্ছে, আরও হবে।”

মান্নান বলেন, “যদি এফোর্ডেবল হয়, আমরা এটার ব্যয় বহন করতে পারি, তাহলে অবশ্যই আমরা তাদেরকে সহযোগিতা দেব।”

নির্বাচন কমিশনের সকল প্রয়োজন আইনের আলোকে বিচার করা হবে এবং সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হবে বলেও মন্তব্য করেন পরিকল্পনামন্ত্রী।

আগামী বছরের জানুয়ারির শুরুতে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। সেই নির্বাচনে ৩০০ আসনের অর্ধেকে ভোটগ্রহণ ইভিএমে করার পরিকল্পনা ইসির।

১৫০ আসনে ইভিএমে ভোট করার লক্ষ্যে প্রায় দুই লাখ ইভিএম কেনা ও রক্ষণাবেক্ষণসহ আনুষঙ্গিক ব্যয়ের লক্ষ্যে ৮ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প তৈরি করে গত ১৯ অক্টোবর পরিকল্পনা কমিশনে পাঠায় ইসি। তবে পরিকল্পনা কমিশন কিছু পর্যবেক্ষণ দিয়ে সেই প্রস্তাব ফেরত পাঠিয়েছিল। পরে প্রস্তাব সংস্কার করে ফের পাঠানো হয় পরিকল্পনা কমিশনে।

জানুয়ারির শুরুতে এই প্রকল্প সরকার পাস না করলে দেড়শ আসনে যন্ত্রে ভোটগ্রহণ করা যাবে না বলে আগে বলেছিলেন সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল, রোববার তারই প্রতিধ্বনি তোলেন সহকর্মী রাশেদা।

তিনি বলেন, “প্রকল্পের অর্থ প্রাপ্তি সাপেক্ষে সর্বোচ্চ ১৫০ আসনে ইভিএম ব্যবহার করব বলে আমরা বলেছিলাম। মধ্য জানুয়ারির মধ্যে ইভিএমের নতুন প্রকল্প পাস না হলে ১৫০ আসনে এই যন্ত্র ব্যবহার করা যাবে না।”

প্রস্তাব পাস না হলে কী হবে- তার উত্তরে রাশেদা বলেন, “প্রকল্প পাস না হলে আমাদের কাছে বর্তমানে যা আছে, তাই দিয়েই ভোট করব। বাকিগুলোতে ব্যালটে যেতে হবে।”

ইসির হাতে এখন যতগুলো ইভিএম আছে, তা দিয়ে ৫০টি আসনে ভোটগ্রহণ করা যাবে বলে সিইসি ইতোপূর্বে জানিয়েছিলেন। তবে রাশেদা খানিকটা বাড়িয়ে বলেছেন, তাদের হাতে থাকা ইভিএম দিয়ে ৭০ থেকে ৮০টি আসনে ভোটগ্রহণ সম্ভব।

Also Read: প্রকল্প এখন পাস না হলে ইভিএমে দেড়শ আসনে ভোট সম্ভবপর হবে না: রাশেদা

Also Read: ইভিএমের জন্য ইসির ৮ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প

Also Read: হাতে থাকা ইভিএমেই ৫০ আসনে ভোট গ্রহণ সম্ভব: সিইসি

‘সুষ্ঠু নির্বাচন দেখিনি’

সুইজারল্যান্ডের বিদায়ী রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে পরিকল্পনামন্ত্রীর বৈঠকেও আগামী নির্বাচনের প্রসঙ্গ আসে। নাথালি শুয়া জানান, তার দেশ আগামী বছর বাংলাদেশে ‘অবাধ ও নিরপেক্ষ’ নির্বাচন দেখতে চায়।

বৈঠকের পর তিনি সাংবাদিকদের বলেন,”এদেশে আমার দায়িত্ব পালনকালে স্থানীয় সরকারসহ বেশ কিছু নির্বাচন আমি দেখেছি। সত্যি বলতে আমি এখানে সুষ্ঠু নির্বাচন দেখিনি।”

তিনি বলেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সুইজারল্যান্ডের শক্তিশালী উপস্থিতি রয়েছে। আইনের শাসন, মানবসম্পদ উন্নয়ন এবং মানবাধিকার সুরক্ষা সম্পর্কিত বিষয়গুলোতে সুইজারল্যান্ডের মৌলিক অবস্থান রয়েছে।

“আমি বলতে চাই, এটা আমাদের ডিএনএ এবং সংবিধানের অংশের মত। সুতরাং আমি একজন সুইস কূটনীতিক হিসেবে এটা আমার চাওয়া। এই সংকেত আমরা ধারাবাহিকভাবে দিয়ে যাব।”

নাথালি শুয়া বলেন, “আমি সত্যিই চাই আগামী বছর বাংলাদেশে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হোক, এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সংকেত এবং এটি বাংলাদেশের জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে মান্নান সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা চাই, জনগণ চায়, আমার দল চায়, সরকার চায় এবং সরকারপ্রধান চায় অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন। 

“আমরা যা করেছি, আমাদের জানামতে ফ্রি, ফেয়ারই করেছি। এখানে ওখানে যদি কিছু ব্যত্যয় ঘটে থাকে, এ জন্য ব্যবস্থা আছে, বিচার ব্যবস্থা আছে। সিস্টেমের ওপর দিয়ে, আইনের মাধ্যমে করতে হবে। আমাদের আইন আছে, নির্বাচনের আইন আছে, ওর বাইরে পা ফেলার কোনো অবকাশ নেই।”

সুইস ব্যাংকের কাছে কেন তথ্য চায়নি সরকার, ব্যাখ্যা চায় হাই কোর্ট

রাষ্ট্রপক্ষ-দুদকের সঙ্গে সুইস রাষ্ট্রদূতের বক্তব্য ‘সাংঘর্ষিক’: হাই কোর্ট

সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের রেকর্ড টাকা, এক বছরে বেড়েছে ৫৫%

সুইস ব্যাংকে কার কত টাকা, জানতে চায় হাই কোর্ট

সুইস ব্যাংক প্রসঙ্গ

বাংলাদেশে দায়িত্ব পালনকালে সুইস ব্যাংকে অর্থ জমা রাখা নিয়ে এক মন্তব্যের জন্য গতবছর আলোচনায় আসেন নাথালি শুয়া। এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেছিলেন, সুইস ব্যাংকের কাছে ‘সুনির্দিষ্ট তথ্য’ চায়নি বাংলাদেশ। পরে বিষয়টি আদালতেও গড়ায়।

রাষ্ট্রপক্ষ ও দুদকের বক্তব্য শুনে আদালত পরে বলে, রাষ্ট্রদূত যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা সরকার ও দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) বক্তব্যের সাথে ‘সাংঘর্ষিক’।

মঙ্গলবার এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বিদায়ী রাষ্ট্রদূত বলেন, “আমি মনে করি, বাংলাদেশের লোকজন স্বচ্ছতার সঙ্গেই সুইস ব্যাংকে টাকা রাখে।

“সুইজারল্যান্ড ওইসিডির (অর্গানাইজেশন ফর ইকোনমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট) নিয়ম রক্ষা করে চলতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা তা মেনেও যাচ্ছি।”

নাথালি শুয়া বলেন, “এ বিষয়ে আমরা খুবই আন্তরিকভাবে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি। বিশেষ করে বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সুইজারল্যান্ডের প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে তথ্য আদান প্রদান হচ্ছে। এবং দুপক্ষের মধ্যে খুবই কার্যকর যোগাযোগ চলমান রয়েছে।”