“মেলায় বিভিন্ন জাতের পশুপাখি দেখলাম; ছবিও তুলেছি, ভালোই লাগছে,” বলেন এক দর্শনার্থী।
Published : 19 Apr 2024, 11:04 PM
একটি গরুর দাম হাঁকা হয়েছে এক কোটি টাকা! মুরগির দামও কম নয়, এক জোড়া কিনতেই গুনতে হবে ২৫ হাজার টাকা। এক লাখ ২০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে একটি কুকুর।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পুরাতন বাণিজ্য মেলার মাঠে দুদিনের প্রাণিসম্পদ প্রদর্শনীতে এসব দামি পশু-পাখি নিয়ে আসেন খামারি ও উদ্যোক্তারা।
মেলায় ঢাকার সাদিক অ্যাগ্রো যুক্তরাষ্ট্রের ব্রাহমা জাতের একটি গরু এনেছে, যেটির দাম হাঁকা হয়েছে কোটি টাকা। সেটি ঘিরে দর্শনার্থীদের আগ্রহ ছিল চোখে পড়ার মতো। গরুটির আনুমানিক ওজন ১৩০০ কেজি বলে জানানো হয়েছে। কিন্তু গরুর দাম কোটি টাকা কেন?
খামারের স্বত্বাধিকারী শাহ ইমরান হোসেন বললেন, “গরুটার দাম এক কোটি চাওয়া হচ্ছে, এটার অনেক কারণ আছে। এক নম্বর হচ্ছে, এই গরুটার ১১০ বছরের পেডিগ্রি (বংশ পরম্পরা লিপিবদ্ধ) আছে। আরেকটা বড় কারণ হচ্ছে এই গরুটার বাবা ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়ন ব্লাডলাইন।
“এটা হচ্ছে আমেরিকান ভিএইট নোবেল সিরিজ, ওদের সবচেয়ে বেস্ট সিরিজ এটা, এই সিরিজের গরু। এই জাতের গরু মোস্ট লেস কোলরেস্টরল যুক্ত মাংস উৎপাদনকারী গরু। তাছাড়া কম খাদ্য খেয়ে দ্রুত বড় হতে পারে। এটা মাংসের চিন্তা করে না, ওজনের চিন্তা করে না। বরং এই গরুটা বংশ মর্যাদাপূর্ণ গরু। এর জন্য দাম বেশি।”
ইমরান বলেন, “মেলায় আমরা গরু, ছাগল, উট, দুম্বা, ভেড়া, পাখি, ঘোড়, কুকুর- হেন কোনো প্রাণী নেই যে নিয়ে আসিনি। শুধু যে বেচাকেনা করার জন্য তা না, অনেক প্রাণী আছে মানুষ দেখে নাই। আজকে যেসব বাচ্চারা আসছে, এরা অনেকেই হয়তো উট দেখে নাই, কিছুক্ষণ পর গয়াল আসবে, সেটাও হয়ত অনেকে দেখে নাই৷
“তো, আমরা মনে করি এটা আমাদের মেলার একটা অর্জন। এই প্রাণিগুলোর সাথে শহুরে আগামী প্রজন্মকে পরিচয় করিয়ে দেওয়াটাও আমাদের একটা লক্ষ্য।”
আরেকটি স্টলে বিশাল ঝুঁটিওয়ালা ‘পলিশ ক্যাপ’ মুরগির দেখা মিলল। ইউরোপীয় জাতের এক জোড়া মুরগির দাম চাওয়া হচ্ছে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা।
আর ‘ক্যাটস অ্যান্ড ডগস’ স্টলে সাইবেরিয়ান হাস্কি জাতের একটি কুকুর বিক্রি হয়েছে এক লাখ ২০ হাজার টাকায়।
প্রতিষ্ঠানটির স্বত্বাধিকারী সালমান ফারসি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কাওলার আশিয়ান সিটি এবং পিংকি সিটিতে আমাদের সেন্টার আছে। আমরা মেইনলি কুকুরকে ট্রেনিং করাই। পাশাপাশি কিছু ব্রিডিং করি।
“আমি ২০ বছর ধরে এই লাইনে আছি। আর এই মেলায় আসাটা একটা গেট টুগেদারের মত। একটু কষ্ট হয়, বাট সব মিলিয়ে ভালোই লাগে।”
জার্মান শেফার্ড, ল্যাব্রাডর, হাস্কি, পোমেরানিয়ানসহ নানা জাতের কুকুর আছে এ স্টলে।
সিলেটের কদমতলী এলাকার বারাকাহ অ্যাগ্রোর স্বত্বাধিকারী আবুল কাশেম চৌধুরী এসেছেন মেলায়।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ঢাকার মেলায় প্রথম এসেছি, এসে ভালোই লাগছে। আমি চারটি গাড়ল ও ৩টি গরু নিয়ে এসেছি। এর মধ্যে ৩টি গাড়ল বিক্রি হয়ে গেছে। আর গরু বিক্রি হয়ে গেছে দু'টি।
“গাড়লগুলো প্রতিটি ৫০ থেকে ৫৫ হাজার টাকায় বিক্রি করেছি। প্রায় ৬৫ কেজি ওজন প্রতিটির।”
চট্টগ্রাম থেকে হলস্টেইন ফ্রিজিয়ান জাতের ১২৫০ কেজি ওজনের গরু নিয়ে এসেছেন মোয়াজ্জম হোসেন।
তিনি বলেন, “আমরা চট্টগ্রামের কর্ণফুলী এলাকা থেকে এসেছি। এই অ্যাগ্রোর নাম শাহ আমানত অ্যাগ্রো। ১২৫০ কেজি ওজনের এই গরুটির দাম ২০ লাখ টাকা।”
দর্শনার্থীদের উচ্ছ্বাস
মেলার শেষদিন শুক্রবার মিরপুর-১৩ নম্বর থেকে দুই মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে এসেছেন লৌহজং উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম।
তিনি বললেন, “প্রাণীর প্রতি ভালোবাসা থেকে এসেছি। সেই সাথে আমাদের দেশে প্রাণিসম্পদের যে সক্ষমতা তারা (সন্তানরা) দেখবে এবং ভবিষ্যতে হয়ত আগ্রহী হবে। এখানে দুম্বা, ঘোড়া, উট-ওরা দেখেছে; উচ্ছ্বসিত হয়েছে। এগুলো তো আমাদের দেশে বাণিজ্যিকভাবে হয় না।”
পাখির স্টলের সামনে ছবি তুলছিলেন মিরপুরের বাসিন্দা ফরিদা মল্লিক।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা সপরিবারে এসেছি। মেলায় বিভিন্ন জাতের পশুপাখি দেখলাম। ছবিও তুলেছি। ভালোই লাগছে।”
মিরপুরের এলাকার আরেক সরকারি কর্মকর্তা মেয়েকে নিয়ে এসেছেন মেলায়। নিজের নাম বলতে না চাইলেও কন্যার নাম জানালেন নাবিহা মুমতাহিনা।
ওই কর্মকর্তা বলেন, “এখানে বাচ্চাকে নিয়ে আসছি। অনেক ধরনের প্রাণী দেখেছে। দেখে খুশি খুব। বড় সাইজের গরু তো সচরাচর দেখা যায় না। এরপর পাখি দেখল, ঘোড়া দেখল। ও খুবই খুশি।”
প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ ও প্রদর্শনীর অংশ হিসেবে ঢাকাসহ ৬৪টি জেলার ৪৬৬টি উপজেলায় এ প্রদর্শনী হচ্ছে।
ঢাকায় অনুষ্ঠিত কেন্দ্রীয় প্রদর্শনীতে ‘প্রায় ৪০০টি’ স্টল স্থান পেয়েছে। প্রাণিসম্পদের উন্নয়নে ব্যবহৃত বিভিন্ন প্রযুক্তি, ঔষধ সামগ্রী, টিকা, প্রাণিজাত পণ্য উৎপাদন ও সংরক্ষণ সরঞ্জাম, মোড়কসহ পণ্য বাজারজাতকরণ প্রযুক্তির স্টলও রয়েছে।
এছাড়া ৭টি প্যাভিলিয়নে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর, বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা প্রতিষ্ঠান, প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্প, এলআরআই, কেন্দ্রীয় গো-প্রজনন ও দুগ্ধ খামার অংশগ্রহণ করেছে।
এ আয়োজনে সহযোগিতা করেছে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্প, বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মারস অ্যাসোসিয়েশন (বিডিএফএ) এবং বাংলাদেশ পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিল (বিপিআইসিসি)।