“আমরা সবাই জেলে গেছি, বেশিরভাগকে রাতেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কই তখন তো কোনো প্রশ্ন আসেনি।”
Published : 02 Apr 2023, 08:18 PM
‘মাছ মাংস চালের স্বাধীনতা’ বিষয়ক আলোচিত প্রতিবেদনের জন্য প্রথম আলোর ক্ষমা চাওয়া উচিৎ বলে মনে করছেন সরকারের কর্তাব্যক্তিরা।
তা না করে সংবাদপত্রটি বিদেশে ‘অপপ্রচার চালাচ্ছে’ বলে অভিযোগ করেছেন তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ।
তিনি রোববার তার কার্যালয়ে বাংলাদেশ সংবাদপত্র পরিষদের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বলেন, “আজকে সমগ্র দেশের মানুষ প্রথম আলোর ঘটনার ব্যাপারে মুখ খুলেছে, প্রতিবাদ করছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট পত্রিকা ক্ষমা চায়নি, বরং এটার বিরুদ্ধে তারা আন্তর্জাতিক অঙ্গণে অপপ্রচার চালাচ্ছে।”
স্বাধীনতা দিবসে প্রথম আলোর এক প্রতিবেদনে দিনমজুর জাকির হোসেনকে উদ্ধৃত করে লেখা হয়েছিল- “পেটে ভাত না জুটলে স্বাধীনতা দিয়া কী করুম। বাজারে গেলে ঘাম ছুটে যায়। আমাগো মাছ, মাংস আর চাইলের স্বাধীনতা লাগব।”
ওই মন্তব্য ধরে প্রতিবেদনের শিরোনাম করা হলেও ছবি দেওয়া হয় আরেক শিশুর, যার কথা প্রতিবেদনের ভেতরে ছিল। ওই ছবি ও শিরোনাম দিয়ে সোশাল মিডিয়ায় একটি কার্ড পোস্ট করা হয়, যা ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়।
এর মধ্যে ২৯ মার্চ ভোরে ওই প্রতিবেদনের প্রতিবেদক শামসুজ্জামান শামসকে তার সাভারের বাসা থেকে সিআইডি ধরে নিয়ে যায়। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে তার বিরুদ্ধে দুটি মামলা হয়। এর একটিতে প্রথম আলো সম্পাদককেও আসামি করা হয়।
দেশের ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো এই মামলা এবং শামসকে গ্রেপ্তারের নিন্দা জানিয়ে আসছে।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, বিদেশি সংস্থাগুলোতে ‘দেন-দরবার’ করে বিবৃতি আনছে প্রথম আলো।
তিনি বলেন, “দ্রব্যমূল্য নিয়ে দেশে প্রতিদিন পত্রিকা, টিভি, অনলাইনে রিপোর্ট হয়েছে এবং হচ্ছে। মামলা তো দূরে থাক, কাউকে এ নিয়ে প্রশ্নও করা হয়নি। তাই শামসুজ্জামানকে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে লেখার কারণে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে যে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে, এটিও একটি অপরাধ।”
প্রথম আলোর বিরুদ্ধে বিভিন্ন সংগঠনের বিবৃতিতির উল্লেখ করে তিনি বলেন, “সারাদেশে এ নিয়ে প্রতিবাদ হচ্ছে। ফেডারেল ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি, ৫০ জন বিশিষ্ট নাগরিক, ঢাকা আইনজীবী সমিতি, এডিটরস গিল্ড, বাংলাদেশ সম্পাদক ফোরাম, সংবাদপত্র পরিষদ, আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরাসহ অনেকেই বিবৃতি দিয়েছে।”
প্রথম আলো সম্পাদককে ‘হুকুমের আসামি’ করে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা
জামিন নাকচ, সাংবাদিক শামস কারাগারে
বিতর্কিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন আবার বিতর্কে
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন: প্রথম আলো সম্পাদকের ৬ সপ্তাহের আগাম জামিন
সাংবাদিক শামসকে ভোররাতে গ্রেপ্তার নিয়ে হাছান মাহমুদ বলেন, “মামলা হওয়ার পর গ্রেপ্তার করা হয়েছে। রাত ৪টায় অনেক সংসদ সদস্যকেও গ্রেপ্তার করা হয়। আমরা সবাই জেলে গেছি, বেশিরভাগকে রাতেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কই তখন তো কোনো প্রশ্ন আসেনি।
“সুতরাং রাজনীতিবিদ, মন্ত্রী, এমপি যারা ছিলেন, তাদেরসহ সবাইকে রাতে গ্রেপ্তার করা যাবে কিন্তু একজন সাংবাদিক যদি রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বকে কটাক্ষ করে, একজন শিশুকে এক্সপ্লয়েট করে আমাদের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব খাটো করে, তাকে গ্রেপ্তার করা যাবে না এমন আইন তো নাই।”
তথ্যমন্ত্রী হিসেবে নিজে সব সময় সাংবাদিকদের সুরক্ষা দিতে কাজ করেন বলেও দাবি করেন হাছান মাহমুদ।
বিএসপির সভাপতি ও প্রবীণ রাজনীতিক মোজাফফর হোসেন পল্টু বলেন, “প্রথম আলো বিভিন্ন সময় নেগেটিভ সংবাদগুলো সবচেয়ে আগে প্রকাশ করে। আমার বক্তব্য হলো, প্রকাশ করতে পারেন, কিন্তু এর একটা যৌক্তিকতা থাকতে হবে। বিরোধিতার জন্য বিরোধিতা করা সংবাদপত্রের নীতিমালা নয়।”
বিএসপির সাধারণ সম্পাদক এম জি কিবরিয়া চৌধুরী বলেন, “স্বাধীনতাকে যারা মানে না, তারা দেশকেও মানে না। কেউ বাংলাদেশে সাংবাদিকতা করবেন আর দেশকে মানবেন না, এটা হয় না।”
দেশের উন্নয়ন অগ্রগতি নিয়ে সারাবিশ্বে প্রশংসা হচ্ছে উল্লেখ করে হাছান মাহমুদ বলেন, “মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী জুলিয়া ভালস বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রগতির প্রশংসা করে বক্তব্য দিয়েছেন। আজকে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় সেটি ছাপা হয়েছে। বাংলাদেশের অগ্রগতিকে স্বীকৃতি দিতে মার্কিন কংগ্রেসে বিল উপস্থাপন করা হয়েছে।”
বিএনপির চলমান কর্মসূচি প্রশ্নে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ বলেন, “আমরা কখনও শুনি নাই, দেখিও নাই যে পবিত্র রমজানের মধ্যে রাজনৈতিক কর্মসূচি দিয়ে রাস্তায় ব্যারিকেড তৈরি করে পুলিশের সাথে সংঘর্ষ করে।
“তারা ইসলামের কথা বলে অথচ রমজানের পবিত্রতা নষ্ট করে তারা কর্মসূচি পালন করছে, যেটি অনভিপ্রেত, দুঃখজনক এবং তাদের সাম্প্রতিক কর্মসূচিগুলো তাদের অপরাজনীতির বহিঃপ্রকাশ।”
তথ্যমন্ত্রীর হাতে প্রণব মুখার্জির জীবনী গ্রন্থ
সভা শেষে প্রেস ক্লাব অব ইন্ডিয়ার প্রেসিডেন্ট গৌতম লাহিড়ীর পাঠানো তার সদ্য প্রকাশিত ‘প্রণব মূখার্জি : রাজনীতির ভেতর ও বাহির’ গ্রন্থটি মন্ত্রীর হাতে তুলে দেন তরুণ সাংবাদিক জাকওয়ান হুসাইন।
বিএসপি সদস্য রফিক উল্লাহ সিকদার, কামরুজ্জামান জিয়া, শেখ মঞ্জুর বারী মঞ্জু, ফরিদ আহম্মদ বাঙ্গালী, অশোক ধর, মো. জাহিদুর রহমান, টিএম শওকত আলী, মোর্শেদ মজুমদার, মো. আনোয়ার হোসেন আকাশ, নূরুন নাহার, মো. মফিজুর রহমান খান বাবু, মোহাম্মদ আরফিন, সোহানা তাহমিনা, কাজী আনোয়ার কামাল, মো. জসিম উদ্দিন সভায় উপস্থিত ছিলেন।