ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন: প্রথম আলো সম্পাদকের ৬ সপ্তাহের আগাম জামিন

স্বাধীনতা দিবসে এক সংবাদ প্রতিবেদনে ‘মিথ্যা, বিভ্রান্তিকর, জাতির জন্য মানহানিকর’ তথ্য-উপাত্ত প্রকাশ ও প্রচারের অভিযোগে মামলাটি করেছেন আইনজীবী মশিউর মালেক।

আদালত প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 April 2023, 10:08 AM
Updated : 2 April 2023, 10:08 AM

রমনা থানার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমানকে ছয় সপ্তাহের আগাম জামিন দিয়েছে হাই কোর্ট।

বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আমিনুল ইসলামের বেঞ্চ রোববার এই জামিন মঞ্জুর করে।

আগাম জামিনের শুনানির জন্য মতিউর রহমান এদিন আদালতে উপস্থিত হন। তার পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী ফিদা এম কামাল, ইমতিয়াজ মাহমুদ ও প্রশান্ত কর্মকার।

রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মো. মেহেদী হাসান চৌধুরী ও সুদীপ চ্যাটার্জি।

আইনজীবী প্রশান্ত কর্মকার বলেন, “শুনানীকালে আমরা আদালতকে বলেছি, প্রকাশিত খবরের সংশোধনী দেওয়া হয়েছে, তা হলে মামলা কেন হল। তাছাড়া বাদী প্রেস কাউন্সিলে যেতে পারতেন। এ ব্যাপারে বিচারক ‘তাইতো’ বলে সম্মতির কথা জানিয়েছেন।”

স্বাধীনতা দিবসে এক সংবাদ প্রতিবেদনে ‘মিথ্যা, বিভ্রান্তিকর, জাতির জন্য মানহানিকর’ তথ্য-উপাত্ত প্রকাশ ও প্রচারের অভিযোগে ২৯ মার্চ মধ্যরাতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলাটি করেন আইনজীবী মশিউর মালেক।

ওই মামলায় পত্রিকাটির নিজস্ব প্রতিবেদক শামসুজ্জামান শামসকে গ্রেপ্তার করে ইতোমধ্যে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া নাম উল্লেখ না করে একজন ‘সহযোগী ক্যামেরাম্যানকে’ আসামি করা হয়েছে মামলার এজাহারে।  

Also Read: জামিন নাকচ, সাংবাদিক শামস কারাগারে

Also Read: প্রথম আলো সম্পাদককে ‘হুকুমের আসামি’ করে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা

একজন শ্রমজীবী মানুষকে উদ্ধৃত করে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, “পেটে ভাত না জুটলে স্বাধীনতা দিয়া কী করুম। বাজারে গেলে ঘাম ছুটে যায়। আমাগো মাছ, মাংস আর চাইলের স্বাধীনতা লাগব।”

ওই মন্তব্য ধরে শিরোনাম করা হলেও ছবি দেওয়া হয় আরেক শিশুর, যার কথা প্রতিবেদনের ভেতরে ছিল। ওই ছবি ও শিরোনাম দিয়ে সোশাল মিডিয়ায় একটি কার্ড পোস্ট করা হয়, যা ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়। বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তুলে একাত্তর টেলিভিশনে একটি প্রতিবেদনও প্রচার করা হয়।

সোশাল মিডিয়ায় ওই ফেটোকার্ড ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতারা ওই প্রতিবেদনে ‘রাষ্ট্রবিরোধী’ উপাদান থাকার কথা বলন।

পরে প্রথম আলো প্রতিবেদনটি থেকে ছবি সরিয়ে শিরোনাম বদলে দেয়। পাশাপাশি তাদের সোশাল মিডিয়ায় দেওয়া পোস্টও প্রত্যাহার করা হয়। 

প্রতিবেদন প্রকাশের তিন দিন পর বুধবার সকালে খবর আসে, শামসকে তার সাভারের বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে ‘সিআইডি’ পরিচয় দিয়ে। প্রায় ৩০ ঘণ্টা পর তাকে আদালতে হাজির করা হয়।

Also Read: বিতর্কিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন আবার বিতর্কে

Also Read: ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন অবিলম্বে স্থগিত করুন: জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান

এর মধ্যে ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের নেতা মো. গোলাম কিবরিয়া তেজগাঁও থানায় শামসকে আসামি করে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা করেন। পরের রাতে রমনা থানায় মামলা করেন বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের নির্বাহী সভাপতি মশিউর মালেক।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৫, ৩১ ও ৩৫ ধারায় দায়ের করা এ মামলায় ‘প্রিন্ট, অনলাইন ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া ব্যবহার করে রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি ও সুনাম ক্ষুণ্ণ করার’ অভিযোগ আনা হয়েছে।

মলার এজাহারে বাদী মশিউর মালেক অভিযোগ করেছেন, স্বাধীনতা দিবসের দিনে প্রথম আলো ‘অসৎ উদশ্য নিয়ে পরিকল্পিতভাবে মিথ্যা ও রাষ্ট্রবিরোধী প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। তাতে জনমনে ‘অসন্তোষ’ সৃষ্টি হয়েছে এবং দেশে ‘অস্থিতিশীল পরিবেশ’ সৃষ্টি হয়ে ‘আইন শৃঙ্খলার অবনতি ঘটার উপক্রম’ হয়েছে।

শামসকে যেভাবে তুলে নেওয়া এবং মামলা দেওয়ার বিষয়টি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনকে নতুন করে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগঠনের পাশাপাশি জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধানও ওই আইন স্থগিত করে সংশোধনের আহ্বান করেছে, যাতে এ আইন সংবাদমাধ্যমের কণ্ঠরোধে ব্যবহার করা না হয়।