প্রথম আলো সম্পাদককে ‘হুকুমের আসামি’ করে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা

প্রতিবেদক শামসুজ্জামান শামসকেও এ মামলায় আসামি করা হয়েছে, যাকে এক দিন আগে ‘সিআইডি পরিচয়ে’ তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 March 2023, 05:55 AM
Updated : 30 March 2023, 05:55 AM

স্বাধীনতা দিবসের এক সংবাদ প্রতিবেদনে ‘মিথ্যা, বিভ্রান্তিকর, জাতির জন্য মানহানিকর’ তথ্য-উপাত্ত প্রকাশ ও প্রচারের অভিযোগে প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান এবং নিজস্ব প্রতিবেদক শামসুজ্জামান শামসের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেছেন এক আইনজীবী।

রমনা থানার ওসি আবুল হাসান বলেন, আইনজীবী মশিউর মালেক বুধবার রাতে ডিজিটার নিরাপত্তা আইনে মামলাটি দায়ের করেন।

মামলায় সম্পাদক, প্রতিবেদনের পাশাপাশি একজন ‘সহযোগী ক্যামেরাম্যান’কে আসামি করা হয়েছে, তবে তার নাম উল্লেখ করা হয়নি। মামলার এজাহারে সম্পাদক মতিউর রহমানকে বলা হয়েছে ‘হুকুমের আসামি’। 

এছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ওই প্রতিবেদন ‘লাইক, শেয়ার, কমেন্টকারী আরও অজ্ঞাতদের’ সেখানে আসামি করা হয়েছে।

রমনা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আবু আনছারকে মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ওসি।

ওই প্রতিবেদনে ‘মিথ্যা ও মানহানিকর’ তথ্য প্রচারের অভিযোগে এর আগে তেজগাঁও থানায় আরেকটি মামলা করেন ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের নেতা মো. গোলাম কিবরিয়া। সেই মামলায় কেবল শামসকেই আসামি করা হয়।

তেজগাঁও থানার সেই মামলার খবর প্রকাশ্যে আসার আগেই বুধবার ভোর রাতে শামসকে তার সাভারের বাসা থেকে ‘সিআইডি পরিচয়ে’ তুলে নিয়ে যাওয়া হয়।

সিআইডি তাকে আটকের বিষয়টি স্বীকার না করলেও ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় একজন সাংবাদিক, শামসের বাড়িওয়ালা এবং পাশের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা বলেন, যারা শামসকে ধরে নিয়ে গেছেন, তারা সিআইডি পুলিশ হিসেবেই পরিচয় দিয়েছেন।

২৪ ঘণ্টার বেশি সময় পর বৃহস্পতিবার সকালে শামসকে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করার খবর জানান প্রসিকিউশন পুলিশের উপ কমিশনার মোহাম্মদ আনিসুর রহমান।

গত ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে প্রথম আলোর একটি প্রতিবেদনে একজন শ্রমজীবী মানুষকে উদ্ধৃত করে বলা হয়, “পেটে ভাত না জুটলে স্বাধীনতা দিয়া কী করুম। বাজারে গেলে ঘাম ছুটে যায়। আমাগো মাছ, মাংস আর চাইলের স্বাধীনতা লাগব।”

ওই মন্তব্য ধরে শিরোনাম করা হলেও ছবি দেওয়া হয় আরেক শিশুর, যার কথা প্রতিবেদনের ভেতরে ছিল। ওই ছবি ও শিরোনাম দিয়ে সোশাল মিডিয়ায় একটি কার্ড পোস্ট করা হয়, যা ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতারা ওই প্রতিবেদনে ‘রাষ্ট্রবিরোধী’ উপাদান থাকার কথা বলেন।

পরে প্রথম আলো প্রতিবেদনটি থেকে ছবি সরিয়ে শিরোনাম বদলে দেয়। পাশাপাশি তাদের সোশাল মিডিয়ায় দেওয়া পোস্টও প্রত্যাহার করা হয়।  

রমনা থানায় দায়ের করা মামলার এজাহারে বাদী মশিউর মালেক অভিযোগ করেছেন, স্বাধীনতা দিবসের দিনে প্রথম আলো ‘অসৎ উদশ্য নিয়ে পরিকল্পিতভাবে মিথ্যা ও রাষ্ট্রবিরোধী প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। তাতে জনমনে ‘অসন্তোষ’ সৃষ্টি হয়েছে এবং দেশে ‘অস্থিতিশীল পরিবেশ’ সৃষ্টি হয়ে ‘আইন শৃঙ্খলার অবনতি ঘটার উপক্রম’ হয়েছে।