অনেক সহ্য করেছি, এবার জঘন্য অপরাধ: প্রথম আলো প্রসঙ্গে কাদের

“আমরা সাংবাদিকদের সুখে দুখে আছি। সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতায় আমরাও বিশ্বাসী। এই স্বাধীনতা আমরা ক্ষুণ্ণ করতে চাই না। কিন্তু সাংবাদিকদের রেসপন্সিবল হতে হবে।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 April 2023, 09:16 AM
Updated : 2 April 2023, 09:16 AM

স্বাধীনতা দিবসে প্রথম আলোর আলোচিত সেই প্রতিবেদনে ‘জঘন্য অপরাধ’ হয়েছে বলে মনে করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

তিনি বলেছেন, ‘অনেক সহ্য করেছেন’ তারা; এবার ‘শাস্তি হওয়া উচিত’।

রোববার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির মিলনায়তনে ছাত্রলীগ আয়োজিত আলোচনায় অংশ নিয়ে এ কথা বলেন কাদের।

গত ১৭ মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০২তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে এই আলোচনার আয়োজন করে ক্ষমতাসীন দল সমর্থক ছাত্র সংগঠনটি।

এই আলোচনায় কাদেরের বক্তব্যে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পায় গত ২৬ মার্চ প্রথম আলো পত্রিকার সেই প্রতিবেদন। সরকার দেশের ‘গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন করছে’- এমন অভিযোগও অস্বীকার করেছেন তিনি।

আওয়ামী লীগ সব সময় গণমাধ্যমকর্মীদের ‘কল্যাণের চেষ্টা করছে’ দাবি করে কাদের বলেন, “আমরা সাংবাদিকদের সুখে দুঃখে আছি। সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতায় আমরাও বিশ্বাসী। এই স্বাধীনতা আমরা ক্ষুণ্ণ করতে চাই না। কিন্তু সাংবাদিকদের রেসপন্সিবল হতে হবে।”

প্রথম আলোর নাম উল্লেখ না করে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, “স্বাধীনতা দিবসে জাতীয় স্মৃতিসৌধের পাশে যারা একটা বাচ্চাকে ব্যবহার করে দিনমজুরের নামে একটা উদ্ধৃতি দিয়ে যে জঘন্য অপরাধ করেছে, এই জঘন্য অপরাধের শাস্তি তাদের পাওয়া উচিত। আমরা অনেক কিছু সহ্য করছি।”

সেই সংবাদ নিয়ে যা যা হয়েছে

প্রথম আলোর বিতর্ক তোলা সেই সংবাদে দিনমজুর জাকির হোসেনের নাম দিয়ে তার বক্তব্যে লেখা হয় “পেটে ভাত না জুটলে স্বাধীনতা দিয়া কী করুম। বাজারে গেলে ঘাম ছুটে যায়। আমাগো মাছ, মাংস আর চাইলের স্বাধীনতা লাগব।”

ওই মন্তব্য ধরে শিরোনাম করা হলেও ছবি দেওয়া হয় আরেক শিশুর, যার কথা প্রতিবেদনের ভেতরে ছিল। ওই ছবি ও শিরোনাম দিয়ে সোশাল মিডিয়ায় একটি কার্ড পোস্ট করা হয়, যা ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়।

পরে প্রথম আলো প্রতিবেদনটি থেকে সেই শিশুর ছবি সরিয়ে শিরোনাম বদলে দেয়। পাশাপাশি তাদের সোশাল মিডিয়ায় দেওয়া পোস্টও প্রত্যাহার করে।

পরদিন বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তুলে একাত্তর টেলিভিশনে একটি প্রতিবেদন প্রচার করা হয়। তাতে দাবি করা হয়, একটি শিশুকে ১০ টাকা দিয়ে সেই কথা বলানো হয়েছে। তবে যার নামে বক্তব্য ছাপা হয়েছে, সেই ‘জাকির হোসেনের’ তালাশ করেনি টেলিভিশনটি।

এর মধ্যে ২৯ মার্চ ভোরে ওই প্রতিবেদনের প্রতিবেদক শামসুজ্জামান শামসকে তার সাভারের বাসা থেকে সিআইডি ধরে নিয়ে যায়। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে তার বিরুদ্ধে দুটি মামলা হয়। এর একটিতে প্রথম আলো সম্পাদককেও আসামি করা হয়। গ্রেপ্তার শামসকে পাঠানো হয় কারাগারে।

দেশের ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো এই মামলা এবং শামসকে গ্রেপ্তারের নিন্দা জানিয়ে আসছে। অন্যদিকে প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমানকে গ্রেপ্তারের দাবি তুলেছে সরকার সমর্থক সংগঠনগুলো।

‘উন্নত বিশ্বে হলে লাইসেন্স বাতিল হত’

ওবায়দুল কাদেরের দাবি, সেই ফটোকার্ডে যে শিশুর ছবি ব্যবহার করা হয়েছে, তাকে ‘ঘুষ দিয়ে’ কথা বলিয়েছেন প্রথম আলোর কর্মী। তার মতে এটা ‘চাইল্ড এক্সপ্লয়টেশন’।

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, “শিশুর হাতে ১০ টাকা ঘুষ দিয়ে এ ধরনের কথা, পরে বললেন ভুল।…উন্নত গণতান্ত্রিক বিশ্বের কোনো দেশে এই ধরনের চাইল্ড এক্সপ্লয়টেশন হলে সেই মিডিয়া বা গণমাধ্যমের লাইসেন্স বাতিল করা হত। শেখ হাসিনা অনেক কিছু ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করছেন।

“কেউ কেউ বলেন, ভুল তো অপরাধ নয়। ঠিক আছে ভুল অপরাধ নয়। অপরাধকে নিছক ভুল বলে কি এড়িয়ে যাওয়া যায়? এটা জঘন্যতম অপরাধ। এটা চাইল্ড এক্সপ্লয়টেশন।”

প্রথম আলো ‘ভুল স্বীকার করে নিলেও’ কেন ক্ষমা চায়নি, সে প্রশ্নও তোলেন কাদের। তিনি বলেন, “অহংকারে বুদ হয়ে তারা তাদের বক্তব্যকে সমর্থন করে যাচ্ছে।”

মামলা সরকার করেনি

সাংবাদিকদের ‘ভয় দেখাতে’ প্রথম আলোর সম্পাদক ও সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে বলে ‘রিপোর্টার্স ইউদআউট বর্ডার’ নামের আন্তর্জাতিক সংগঠন যে অভিযোগ এনেছে, তা নিয়েও প্রতিক্রিয়া জানান ওবায়দুল কাদের।

তিনি বলেন, “তারা বিবৃতি দিয়েছে, সাংবাদিককে ভয় দেখাতে সরকার এই কাজটি করেছে, একটি পত্রিকার রিপোর্টারকে গ্রেপ্তার করেছে, তার বিরুদ্ধে মামলা করেছে। কিন্তু মামলা সরকার করেনি, মামলা বেসরকারিভাবে হয়েছে। কিন্তু অপরাধের কি কোনো শাস্তি নেই?”

সাংবাদিকদের স্বাধীনতার জন্য আওয়ামী লীগ ‘সব সময় কাজ করেছে’ দাবি করে কাদের বলেন, “আজকে বিএনপি সাংবাদিকদের স্বাধীনতার জন্য মায়াকান্না করে। অথচ এদেশে অসংখ্য সাংবাদিকের হত্যার হোতা তারা।

“সংবাদপত্রের অষ্টম ওয়েজ বোর্ডসহ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট যা কিছু করেছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করেছেন।”

ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন, সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনানও আলোচনায় বক্তব্য দেন। সভাপত্বি করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি মাজহারুল কবির শয়ন, সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত।