ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে রোববার সকাল থেকেই খুলনা উপকূলে দমকা হাওয়া ও গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি শুরু হয়েছে। দিনভর থেমে থেমে বৃষ্টি হয়েছে।
Published : 27 May 2024, 01:07 AM
ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে উত্তাল হয়ে উঠেছে উপকূলের নদ-নদী। মেঘলা আকাশের সঙ্গে মাঝেমধ্যে দমকা হাওয়া ও বৃষ্টি হচ্ছে। সন্ধ্যার মধ্যেই আশ্রয়কেন্দ্রগুলো মানুষ ও গবাদি পশুতে পরিপূর্ণ হয়ে যায়।
খুলনার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) নাজমুল হুসেইন খান জানান, খুলনায় ৬০৪টি আশ্রয়কেন্দ্র রয়েছে। ঘূর্ণিঝড় শুরুর পর রোববার মধ্য রাত পর্যন্ত এসব আশ্রয়কেন্দ্রে লক্ষাধিক মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। তাদের জন্য পর্যাপ্ত শুকানো খাবার সরবরাহ করা হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে রোববার সকাল থেকেই খুলনা উপকূলে দমকা হাওয়া ও গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি শুরু হয়েছে। দিনভর থেমে থেমে বৃষ্টি হয়েছে।
রোববার সকাল থেকেই উপকূলীয় মানুষদের নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য সাইক্লোন শেল্টারে যাওয়ার জন্য মাইকিং করা হয়। দুপুরের পর থেকেই উপকূলীয় এলাকার মানুষেরা সাইক্লোন শেল্টারে আশ্রয় নেওয়া শুরু করে।
রেমালের প্রভাবে উঁচু জোয়ারে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েন খুলনার দুর্যোগপ্রবণ উপকূলীয় উপজেলা দাকোপ, কয়রা, পাইকগাছা ও বটিয়াঘাটার মানুষ।
কয়রা উপজেলার দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আছের আলী বলেন, “ঘূর্ণিঝড় আর জলোচ্ছ্বাস হলে যে কয়টা জনপদ বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে, খুলনার কয়রা তার মধ্যে অন্যতম। দুর্যোগে প্রতিবছর প্লাবিত হয়ে এ উপজেলায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা বাড়ে।”
রোববার রাতে আছের আলী বলেন, “যেভাবে নদীতে পানি বাড়ছে তাতে রাতের জোয়ারে ঝুঁকিপূর্ণ বেঁড়িবাধ যে কোনো মুহূর্তে ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।”
তিনি জানান, কয়রা উপজেলার কাঠকাটা লঞ্চঘাট, উত্তর বেদকাশী ও দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়নের কয়েক স্থানে বেড়িবাঁধ উপচে পানি প্রবেশ করেছে লোকালয়ে। বেড়িবাঁধের উপর মাটি দিয়ে পানি আটকানোর চেষ্টা করেছেন স্থানীয় মানুষ।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী-২ আশরাফুল আলম বলেন, জোয়ারে নদীতে পানি এবং পানির চাপ বেড়েছে। কোথাও বাঁধের সমস্যা হলে তাৎক্ষণিকভাবে বালুর বস্তা পাঠিয়ে স্থানীয় মানুষের সহায়তায় পানি আটকানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।
এদিকে স্থানীয়দের অভিযোগ, দুর্যোগ এলেই বাঁধ নিয়ে তোড়জোড় শুরু হয় প্রতিবছর সংস্কারে ব্যয় হয় কোটি কোটি টাকা। এর পরও পানি বাড়লেই ভেঙে যায় সেই বাঁধ। আবারও সংস্কারের নামে চলে শত শত কোটি টাকা লুটপাট।
কয়রা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সভাপতি বিদেশ রঞ্জন মৃধা বলেন, পরিকল্পিত ও স্থায়ী বাঁধ নির্মিত না হওয়ায় প্রতি বছর ভাঙন দেখা দেয়। এ জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের গাফিলতিই দায়ী।
বিদেশ বলেন, যখন জোয়ারের পানি বাঁধ উপচে পড়ার উপক্রম হয়, তখন স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁধ মেরামতে ঝাঁপিয়ে পড়েন এলাকাবাসী। এ সময় বাঁধ মেরামতে উদ্যোগ নেয় কর্তৃপক্ষ। এতে ঠিকাদার-পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের লাভ হলেও একদিকে কাজের ব্যয় বাড়ে, অন্যদিকে মূল ঠিকাদার থেকে একাধিকবার হাত বদল হয়ে কাজ হয় নিম্নমানের।
বিদেশ আরও বলেন, উপকূলে চিংড়ি চাষের কারণে যথেচ্ছভাবে বেড়িবাঁধ ছিদ্র করে কৃষিজমিতে নোনাপানি তোলেন চাষিরা। এতে বাঁধ মারাত্মকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ছে। যে কারণে বাঁধ টিকছে না।
তবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা দাবি করছেন, নদীর গতিপথ পরিবর্তন ও কম খরচে প্রকল্প বাস্তবায়ন হওয়ায় বেড়িবাঁধ টিকছে না।