নবম সংসদ নির্বাচনে শতাধিক আসনে, দশম সংসদে ৫০টি আসনে এবং একাদশ সংসদ নির্বাচনে ২৫টি আসনের সীমানায় পরিবর্তন আসে।
Published : 05 Sep 2022, 12:59 AM
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কতটি আসনের সীমানায় পরিবর্তন আসবে, তা জনশুমারির চূড়ান্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর ঠিক করবে নির্বাচন কমিশন।
নবম সংসদ নির্বাচনে শতাধিক আসনে, দশম সংসদে ৫০টি আসনে এবং একাদশ সংসদ নির্বাচনে ২৫টি আসনের সীমানায় পরিবর্তন আসে।
গত ২৭ জুলাই প্রকাশিত ‘জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২’ এর প্রাথমিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশের মোট জনসংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১৬ কোটি ৫১ লাখ ৫৮ হাজার ৬১৬ জন।
জাতীয় সংসদের নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণ আইন অনুযায়ী, প্রতি জনশুমারির পর সংসদ নির্বাচনের জন্য সীমানা নির্ধারণ করার বাধ্যবাধকতা আছে।
নিয়ম হল, ভৌগোলিক অখণ্ডতা বজায় রেখে সর্বশেষ আদমশুমারি প্রতিবেদনের জনসংখ্যার যতদূর সম্ভব ‘বাস্তব বণ্টনের’ ভিত্তিতে সীমানা নির্ধারণ করতে হবে।
পরিসংখ্যান ব্যুরোর জনশুমারি বিভাগের প্রকল্প পরিচালক দিলদার হোসেন জানিয়েছেন, এ বছর ডিসেম্বরের মধ্যে তারা জনশুমারি চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশের জন্য কাজ করছেন।
আর সেই প্রতিবেদন হাতে পেলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তিনশ সংসদীয় আসনের সীমানা পুননির্ধারণের কাজ শুরু করার কথা বলছে নির্বাচন কমিশন।
ইসির সীমানা নির্ধারণ সংক্রান্ত কমিটির নেতৃত্বে থাকা নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর জানান, ইতোমধ্যে প্রাথমিক প্রতিবেদনের ভিত্তিতে জেলা, আসন, উপজেলা ও ওয়ার্ডভিত্তিক হালনাগাদ ভোটার তথ্য নিয়ে ‘হোম ওয়ার্ক’ শুরু করেছেন তারা।
কাজী হাবিবুল আউয়াল নেতৃত্বাধীন ইসি ২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে ২০২৪ সালের জানুয়ারির মধ্যে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আয়োজন করবে।
সবশেষ পাঁচ বছর আগে একাদশ সংসদ নির্বাচনের সময় ২৫টি আসনে সীমানার পুনর্বিন্যাস করা হয়েছিল।
২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরে ভোটের আট মাস আগে চূড়ান্ত পুনর্ধিারিত সীমানার গেজেট প্রকাশ করে ইসি।
সে বছর ১৪ মার্চ খসড়া প্রকাশ করে, দাবি-আপত্তি ও নিষ্পত্তি শেষে ৩০ এপ্রিল তিনশ আসনের গেজেট হয়।
নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর রোববার সাংবাদিকদের বলেন, ইসি সচিবালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সীমানা পুনর্নির্ধারণ সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য গুছিয়ে রাখতে বলা হয়েছে।
“আমরা তথ্য সংগ্রহ শুরু করে দিয়েছি। ঘর গোছানো বলা যায়। কোন এলাকায় কত জনসংখ্যা, ভোটার কত ছিল; এ বছরের প্রাথমিক জনশুমারি অনুযায়ী জনসংখ্যার তথ্য বসাতে বলেছি। এ বছরের মার্চের চূড়ান্ত ভোটার তালিকার তথ্য প্রসেস করতে বলেছি। ওইসব দেওয়া হলে আমরা মোটামুটি রেডি থাকব। পরিসংখ্যান ব্যুরো থেকে ফাইনাল রিপোর্ট পেলে যাতে সময় না লাগে।”
এ নির্বাচন কমিশনার জানান, প্রশাসনিক অখণ্ডতা বজায় রেখে জনসংখ্যাকে যতদূর সম্ভব গুরুত্ব দিয়ে সীমানা নির্ধারণ করতে হবে। জনশুমারির প্রাথমিক প্রতিবেদন অনুযায়ী গড়ে প্রতি আসনে জনসংখ্যা হতে পারে সাড়ে ৫ লাখ মত।
“পরিসংখ্যান ব্যুরো থেকে জেলাভিত্তিক জনসংখ্যার তথ্য দেওয়া হচ্ছে, আমাদের তথ্য দরকার ওয়ার্ড পর্যন্ত। এটার ভিত্তিতে আমাদের কাজ করতে হবে। কোন ওয়ার্ডে কত জনসংখ্যা, ভোটার। ভোটার আমাদের কাছে আছে; ওয়ার্ড, উপজেলাভিত্তিক ড্রাফট তালিকা দেওয়ার জন্যে অনুরোধ করেছি।”
শেষ পর্যন্ত কতটি আসনের সীমানা বদলাবে, ইসির পূর্ণাঙ্গ বিশ্লেষণ শেষ হওয়ার পরই তা বলা যাবে। তবে প্রাথমিক প্রতিবেদন দেখে জেলাওয়ারি যে জনংখ্যাটা আসছে, তাতে খুব বড় পরিবর্তন এবার প্রয়োজন হবে বলে মনে করছেন না এ নির্বাচন কমিশনার।
পাঁচ বছরে যেসব প্রশাসনিক এলাকার নতুন বিন্যাস হয়েছে, সেসব তথ্য দিতে ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসকদের চিঠি দিয়েছে ইসি।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ইসির যাবতীয় কর্মপরিকল্পনার ‘রোডম্যাপ’ও চূড়ান্ত করে ফেলা হয়েছে।
এ কর্মপরিকল্পনায় সীমানা পুননির্ধারণ, নতুন দলের নিবন্ধনসহ অন্তত নয়টি অগ্রাধিকারমূলক কাজের সময় ধরে বাস্তবায়নসূচি রয়েছে।
নির্বাচন কমিশনার আলমগীর বলেন, “নির্বাচনের রোডম্যাপে টোটাল নির্বাচনী ম্যানেজমেন্ট থাকবে। রোডম্যাপও চূড়ান্ত। এখন প্রকাশের অপেক্ষা।”
১৯৮৪, ১৯৯১ সালের পর ২০০৮ সালে সংসদীয় আসনে ব্যাপক পরিবর্তন আনা হয়। ওই বছর নবম সংসদ নির্বাচনের জন্য ১৩৩ আসনে সীমানা পরিবর্তনের প্রস্তাব করে ইসি।
শেষ পর্যন্ত তৎকালীন এটিএম শামসুল হুদার কমিশন সর্বশেষ আদমশুমারি অনুযায়ী জনসংখ্যার আনুপাতিক হার মেনে আঞ্চলিক অখণ্ডতা ও প্রশাসনিক সুবিধা বিবেচনায় নিয়ে জিআইএস পদ্ধতি অনুসরণ করে শতাধিক সংসদীয় আসনে পরিবর্তন আনে।
এরপর কাজী রকিবউদ্দিন আহমদ কমিশন দশম সংসদ নির্বাচনে ৮৭ আসনে পরিবর্তন আনার প্রস্তাব করে আগের ইসির পদাঙ্ক অনুসরণ করে ৫০টি আসনে ছোটখাটো পরিবর্তন আনে।
সবশেষে কে এম নূরুল হুদা কমিশন সীমানার খসড়ায় ৪০ আসনে পরিবর্তনের প্রস্তাব করে; পরে ২৫টি আসনে ছোটোখাটো পরিবর্তন এনে একাদশ সংসদ নির্বাচন করে।
আরও পড়ুন:
সংসদীয় আসন সীমানা নির্ধারণে নতুন আইন পাস
বাংলাদেশের জনসংখ্যা এখন ১৬ কোটি ৫১ লাখ ৫৮ হাজার
সংসদীয় আসন বিন্যাসে ‘প্রাধান্য পাবে’ ভোটার সংখ্যাও
সংসদীয় সীমানায় বড় পরিবর্তনের পরিকল্পনা নেই ইসির