বাংলাদেশের জনসংখ্যা এখন ১৬ কোটি ৫১ লাখ ৫৮ হাজার

বর্তমানে দেশে পুরুষের চেয়ে নারীর সংখ্যা প্রায় ১৬ লাখ বেশি, ২০১১ সালে পরিস্থিতি ছিল উল্টো।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 July 2022, 06:18 AM
Updated : 27 July 2022, 06:18 AM

সরকারি হিসেবে ১১ বছরে দেশের জনসংখ্যা দুই কোটি ১১ লাখ বেড়ে ১৬ কোটি ৫১ লাখ ৫৮ হাজার ৬১৬ জন হয়েছে।

জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২ এর প্রাথমিক প্রতিবেদন বলছে, বর্তমানে দেশে পুরুষের চেয়ে নারীর সংখ্যা প্রায় ১৬ লাখ বেশি, ২০১১ সালে পরিস্থিতি ছিল উল্টো।

এক দশক আগের মতই দেশের বেশিরভাগ লোক এখনও গ্রামে বাস করে। কিন্তু গ্রামের জনসংখ্য যেখানে বেড়েছে ৩০ লাখের কম, সেখানে শহরের জনসংখ্যা প্রায় দুই কোটি।

বুধবার ঢাকার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর প্রথম ডিজিটাল জনশুমারি ও গৃহগণনার এই প্রাথমিক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।

গত ১৫ জুন সারা দেশে একযোগে জনশুমারি ও গৃহগণনা কার্যক্রম শুরু হয়। ২১ জুন সে কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও কয়েকটি জেলায় বন্যার কারণে তা ২৮ জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়। তার এক মাসের মাথায় পরিসংখ্যান ব্যুরোর প্রকল্প পরিচালক দিলদার হোসেন এ অনুষ্ঠানে তাদের প্রাথমিক প্রতিবেদনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন।

পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানের সভাপতিত্বে এ অনুষ্ঠানে জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন, পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক শামসুল আলমও উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, বর্তমানে মোট জনসংখ্যার মধ্যে পুরুষের সংখ্যা ৮ কোটি ১৭ লাখ ১২ হাজার ৮২৪ জন। আর নারীর সংখ্যা ৮ কোটি ৩৩ লাখ ৪৭ হাজার ২০৬। আর হিজড়ার আছেন ১২ হাজার ৬২৯ জন।

২০২১ সালের আদমশুমারি ও গৃহগণননায় দেশের জনসংখ্যা পাওয়া গিয়েছিল ১২ কোটি ৪৩ লাখ ৫৫ হাজার ২৬৩ জন।

সে সময় পুরুষ ছিলেন ৭ কোটি ২১ লাখ ৯ হাজার ৭৯৬ জন, নারী ছিলেন ৭ কোটি ১৯ লাখ ৩৩ হাজার ৯০১ জন। সে সময় ট্রান্সজেন্ডারদের আলাদাভাবে গণনা করা হয়নি।

তার আগে ২০০১ সালে দেশের জনসংখ্যা ছিল ১২ কোটি ৪৩ লাখ ৫৫ হাজার ২৬৩ জন। ১৯৯১ সালে ছিল ১০ কোটি ৬৩ লাখ ১৪ হাজার ৯৯২ জন। ১৯৮১ সালে ছিল ৮ কোটি ৭১ লাখ ১৯ হাজার ৯৬৫ জন। প্রথম আদমশুমারিতে ১৯৭৪ সালে দেশের জনসংখ্যা পাওয়া গিয়েছিল ৭ কোটি ১৪ লাখ ৭৯ হাজার ৭১ জন।

দিলদার বলেন, শুমারির তথ্য অনুযায়ী দেশে জনসংখ্যার বার্ষিক গড় বৃদ্ধির হার কমছে।

এবারের শুমারি অনুযায়ী জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১ দশমিক ২২ শতাংশ, যা ২০১১ সালে ছিল ১ দশমিক ৪৬ শতাংশ, ২০০১ সালে ছিল ১ দশমিক ৫৮ শতাংশ।

এবারের শুমারিতে ৮৫ হাজার ৯৫৭ জনের আংশিক তথ্য পাওয়া গেছে জানিয়ে দিলদার হোসেন বলেন, “আমাদের গণনাকারীরা ১৭ হাজার ৫০৭টি গৃহে গিয়ে এসব মানুষ সম্পর্কে আত্মীয় স্বজনদের কাছ থেকে জেনেছেন। তাদের আংশিক তথ্য পাওয়া গেছে। কিন্তু লিঙ্গ পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তাই লিঙ্গভিত্তিক জনসংখ্যার মধ্যে কিছুটা পার্থক্য রয়েছে।

এখন দেশের পল্লী এলাকার জনসংখ্যা ১১ কোটি ৩০ লাখ ৬৩ হাজার ৫৮৭ জন, যা মোট জনসংখ্যার ৬৮ দশমিক ৪৯ শতাংশ। আগের শুমারিতে ২০১১ সালে গ্রামাঞ্চলের জনংখ্যা পাওয়া গিয়েছিল ১১ কোটি ৪ লাখ ৬৩ হাজার ৫৮৭ জন,

আর শহরে এখন বাস করেন ৫ কোটি ২০ লাখ ৯ হাজার ৭২ জন বা মোট জনসংখ্যার ৩১ দশমিক ৫১ শতাংশ। আগের শুমারিতে শহরের জনসংখ্যা ছিল ৩ কোটি ৩৫ লাখ ৬৩ হাজার ১৮৩ জন।

দেশে মোট খানার সংখ্যা এখন (এক হাড়ির রান্না খেয়ে যারা একসঙ্গে থাকেন) ৪ কোটি ১০ লাখ ১০ হাজার ৫১টি। প্রতিটি খানায় গড়ে ৪ জন বাস করেন।

২০১১ সালে এই সংখ্যা ছিল ৩ কোটি ২০ লাখ ৬৭ হাজার ৭০০টি, তখন প্রতি খানার জনসংখ্যা ছিল গড়ে ৪ দশমিক ৪ জন।

দেশে মোট বাস গৃহের সংখ্যা ৩ কোটি ৫৯ লাখ ৯০ হাজার ৯৫১টি। এর মধ্যে পল্লী এলাকায় রয়েছে ২ কোটি ৭৮ লাখ ১১ হাজার ৬৬৭টি; আর শহর এলাকার বাসগৃহের সংখ্যা ৮১ লাখ ৭৯ হাজার ২৮৪টি।

জনসংখ্যার ঘনত্ব

বর্তমানে দেশে প্রতি বর্গ কিলোমিটারে ১,১১৯ জন মানুষ বাস করে। ২০১১ সালে এই সংখ্যা ছিল ৯৭৬ জন।

বৈবাহিক অবস্থা

বর্তমানে দেশের ১০ বছরের বেশি বয়সী জনসংখ্যার ৬৫ দশমিক ২৬ শতাংশ বিবাহিত, ২৮ দশমিক ৬৫ শতাংশ অবিবাহিত, ৫ দশমিক ৩১ শতাংশ বিধবা/বিপত্নিক, ০.৪২ শতাংশ তালাকপ্রাপ্ত এবং দাম্পত্য বিচ্ছিন্ন ০.৩৭ শতাংশ।

ধর্মভিত্তিক হার

গত ১১ বছরে দেশে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমান জনসংখ্যা আরও বেড়ে মোট জনংখ্যার ৯১ দশমিক ০৪ শতাংশ হয়েছে। ২০১১ সালের শুমারিতে এই হার ছিল ৯০ দশমিক ৩৯ শতাংশ।

অপরদিকে হিন্দু ধর্মাবলম্বীর সংখ্যা মোট জনসংখ্যার ৮ দশমিক ৫৪ শতাংশ থেকে কমে ৭ দশমিক ৯৫ শতাংশ হয়েছে।

একইভাবে বৌদ্ধ ধর্মানুসারী ০.৬২ শতাংশ থেকে কমে ০.৬১ শতাংশ, খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীর হার ০.৩১ শতাংশ থেকে কমে ০.৩০ শতাংশ হয়েছে।

বেড়েছে সাক্ষরতার হার

নতুন শুমারিতে দেশের ৭ বছরের বেশি বয়সীদের সাক্ষরতার হার ৭৪ দশমিক ৬৬ ভাগে উন্নীত হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। ২০১১ সালের শুমারিতে এই হার ছিল ৫১ দশমিক ৭৭ শতাংশ।

বর্তমানে দেশের ৭৬ শতাংশ পুরুষ, ৭২ দশমিক ৮২ শতাংশ নারী এবং ৫৩ দশমিক ৬৫ শতাংশ হিজড়ার সাক্ষরজ্ঞান রয়েছে।

মোবাইল ফোন ব্যবহারকারী

দেশে ৫ বছরের বেশি বয়সীদের মধ্যে ৫৫ দশমিক ৮৯ শতাংশ মানুষ মোবাইল ফোন ব্যবহার করে। এর মধ্যে ৬৬ দশমিক ৫৩ শতাংশ পুরুষ, ৪৫ দশমিক ৫৩ শতাংশ নারী।

আবার ১৮ বছরের বেশি বয়সী মানুষের মধ্যে ৭২ দশমিক ৩১ শতাংশ মানুষ মোবাইল ব্যবহার করে। তাদের ৮৬ দশমিক ৭২ শতাংশ পুরুষ, ৫৮ দশমিক ৮৩ শতাংশ নারী।

ইন্টারনেট ব্যবহারকারী

৫ বছরের বেশি বয়সী মানুষের মধ্যে ৩০ দশমিক ৬৮ শতাংশ ইন্টারনেট ব্যবহার করে। আবার ১৮ বছরের বেশি বয়সীদের ৩৭ দশমিক ০১ শতাংশ মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করেন।

খাবার পানির প্রধান উৎস

দেশের ৮৫ দশমিক ৬৬ শতাংশ মানুষ গভীর বা অগভীর টিউবওয়েলের পানি পান করেন। ট্যাপ বা পাইসে সরবরাহ করা পানি পান করেন ১১ দশমিক ৭৪ শতাংশ মানুষ। ০.৫৯ শতাংশ মানুষ বোতল বা জারের পানি পানি করেন।

এখনও ০.৮৯ শতাংশ মানুষ পুকুর নদী খাল লেকের পানি, ০.৩৫ শতাংশ মানুষ কুয়ার পানি, ০.১২ শতাংশ মানুষ ঝরনা বা ছরার পানি এবং ০.৪২ শতাংশ মানুষ বৃষ্টির পানি পান করেন।

টয়লেট সুবিধা

দেশের ৫৬ দশমিক ০৪ শতাংশ মানুষ পানি ঢেলে নিরাপদ নিষ্কাশন সংবলিত টয়লেট ব্যবহার করেন। পানি ঢেলে অনিরাপদ টয়লেট ব্যবহার করেন ১২ দশমিক ৮৬ শতাংশ।

স্ল্যাবসহ পিট ল্যাট্রিন বা ভেন্টিলেটেড ইম্প্রুভড ল্যাট্রিন ব্যবহার করেন ২১ দশমিক ৭২ শতাংশ মানুষ। এছাড়া স্ল্যাব ছাড়া পিট ল্যাট্রিন বা উম্মুক্ত পিট ল্যাট্রিন ব্যবহার করেন ৪ দশমিক ০৮ শতাংশ। কাঁচা, ঝুলন্ত ল্যাট্রিন ব্যবহার করেন ৪ দশমিক ০৭ শতাংশ মানুষ। ১ দশমিক ২৩ শতাংশ মানুষ কাজ সারেন খোলা জায়গায়।

বিদ্যুৎ সুবিধা

দেশের মোট জনসংখ্যার ৯৭ দশমিক ৬১ শতাংশ নাগরিক জাতীয় গ্রিডের মাধ্যমে বিদ্যুৎ পাচ্ছেন। সৌর বিদ্যুৎ ব্যবহার করেন ১ দশমিক ৪৫ শতাংশ মানুষ। ০.১৯ শতাংশ মানুষ অন্যান্য উৎসের (যেমন জেনারেটর) বিদ্যুৎ পেলেও ০.৭৫ শতাংশ মানুষ কোনো ধরনের বিদ্যুৎ সুবিধার বাইরে।