“আমরা মনে করি, কালকে আনসার বাহিনীর ছদ্মা আবরণে যারা এসেছিল, কোনো দাবি আদায়ের এজেন্ডা তাদের ছিল না।”
Published : 26 Aug 2024, 02:47 PM
ছাত্ররা জাতীয়করণের দাবিতে অবস্থান নিয়ে থাকা আনসার সদস্যদের ‘মোকাবিলা’ না করলে সচিবালয়ে ‘ভয়াবহ পরিস্থিতি’ হতে পারত বলে মন্তব্য করেছেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল।
আনসার সদস্যদের সঙ্গে সংঘর্ষে আহত শিক্ষার্থীদের দেখতে সোমবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে গিয়ে তিনি এ মন্তব্য করেন।
উপদেষ্টা বলেন, “আপনারা তাদের (আনসারদের) যুদ্ধাংদেহী মনোভাব দেখেছেন। তাদের দাবি ছিল এক্ষুণি রাত ১০টার সময় প্রজ্ঞাপন করে তাদের জাতীয়করণ করতে হবে।
“তারা (আনসার) এমন একটা অসম্ভব দাবি তুলেছিল, অবাস্তব এবং অসম্ভব দাবি করেছিল গণ্ডগোল করার জন্য, সারা সচিবালয় ঘেরাও করে রেখেছিল। হয়ত আরও অনেকে যোগ দিত। ভয়াবহ পরিস্থিতি হতে পারত।”
অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা বলেন, “যে জাগ্রত ছাত্রসমাজ স্বৈরাচারের পতন ঘটিয়েছে, তারা আবারও তাদের যে অপরিসীম ত্যাগের ভূমিকায় এই পুরো পরিস্থিতিটা মোকাবেলা করেছে।”
আনসারদের ‘দাবি আদায়ের উদ্দেশ্য ছিল না’ মন্তব্য করে অন্তর্বর্তী সরকারের এ উপদেষ্টা বলেন, “আমরা খুবই ব্যথিত এই ঘটনা দেখে। আমরা মনে করি, কালকে আনসার বাহিনীর ছদ্মা আবরণে যারা এসেছিল, কোনো দাবি আদায়ের এজেন্ডা তাদের ছিল না। দাবি আদায়ের এজেন্ডা হয় আলাপ-আলোচনার মধ্য দিয়ে।
“তারা বারবার আলাপ আলোচনা করে সম্মত হয়ে ফিরে গেছে। বারবার আমাদের ঘিরে রেখেছে। লাঠি তাদের স্টকে ছিল। এবং আপনারা দেখেছেন, তারা কী মারমুখীভাবে ছাত্রদের উপর… যে ছাত্ররা স্বৈরাচারের পতন ঘটিয়েছে, যারা আমাদের স্বপ্ন এবং যাদের ভবিষ্যতের প্রতিভূ হিসেবে দেখি ,তাদের রাস্তায় ফেলে কী নির্মমভাবে মেরেছে।”
ছাত্র জনতা ‘অপশক্তির ব্যাপারে জাগ্রত আছে’ মন্তব্য করে আসিফ নজরুল বলেন, “যারা অপশক্তির দোসর আছে, যারা বিভিন্ন ছদ্মাআবরণে ছাত্র জনতার বিপ্লবকে নস্যাৎ করতে চায়, তাদের জন্য একটা বার্তা দিয়েছে, যে এই দেশের ছাত্র সমাজ জাগ্রত রয়েছে।
“কোনো ষড়যন্ত্র সফল হবে না। যারা ষড়যন্ত্র করবে, যারা ছাত্র জনতার এই গণঅভ্যুত্থানকে দাবি আদায়ের ছদ্মাআবরণে বা বিভিন্ন অজুহাতে, বিভিন্ন ছদ্মাবরণে যারা এটাকে নস্যাৎ করতে চাইবে, তাদের বিরুদ্ধে তো আমরা প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা নেব, প্রচলিত আইনে, এছাড়া ছাত্র সমাজ যারা আছে তারা জাগ্রত আছে। এই ছাত্র সমাজকে পরাজিত করা এবং তাদেরকে বিভ্রান্ত করা যাবে না। এই মেসেজই দিতে চাই “
উপদেষ্টা বলেন, আনসাররা ছাত্রদের ওপর, সমন্বয়কদের ওপর, বিশেষ করে হাসনাত আবদুল্লাহর ওপর ‘বর্বর হামলা’ করেছে।
“সাধারণ মানুষকেও গুরুতরভাবে আঘাত করা হয়েছে। দুইজনকে অপারেশন করার প্রয়োজন হচ্ছে। হাসনাতের অবস্থা এখন মোটামুটি ভালো আছে, আরও ৪৮ ঘণ্টা অবজারভেশনে রাখতে হবে।”
দাবি আদায়ের আন্দোলন নিয়মতান্ত্রিক পথে করার আহ্বান রেখে তিনি বলেন, “যারা সঠিক পথে দাবি আদায়ের আন্দোলন করছেন, আপনাদের কাছে অনুরোধ, আপনারা বিবেচনা করে দেখবেন, ১৭ বছরের বৈষম্য এবং শোষণ ১৭ দিনে কী করা যায়? এটা একটু বিবেচনা করে দেখবেন। ধৈর্য ধরেন এবং নিয়মতান্ত্রিক পন্থায় দাবি জানান।”
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকারের কাছ থেকে দাবি আদায়ে পেশাজীবীদের বিভিন্ন পক্ষের আন্দোলনের মধ্যে গত বুধবার মাঠে নামে আনসার সদস্যরা। তারা আর দৈনিক ভাতার ভিত্তিতে কাজ করতে তারা রাজি নন, চাকরি জাতীয়করণ করার দাবি তাদের।
এই দাবিতে রোববার সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনের সড়কে অবস্থান নিয়ে সমাবেশ শুরু করেন আনসার সদস্যরা। পরে তারা সচিবালয় ঘেরাও করেন।
এই পরিস্থিতিতে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন সচিবালয়ের কর্মীরা। আনসারের প্রতিনিধিরা দুই দফা সচিবালয়ের ভেতরে গিয়ে সরকারের উপদেষ্টাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। দাবি পূরণের আশ্বাস পেলেও তারা তাৎক্ষণিকভাবে প্রজ্ঞাপন জারির দাবি তুলে অবস্থান ধরে রাখেন।
রাত ৯ টার দিকে সচিবালয়ের ভিতরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহর অবরুদ্ধ হওয়ার খবরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি থেকে মিছিল নিয়ে এসে একদল শিক্ষার্থী সচিবালয়ের সামনে গিয়ে আনসারদের ধাওয়া করেন। সেখানে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বেঁধে যায়।
পরে শিক্ষার্থী ও পুলিশ মিলে আনসারদের ছত্রভঙ্গ করে দেয় ওই এলাকা থেকে। রাতে ঘটনাস্থলে যায় সেনাবাহিনী। পরে দিনভর সচিবালয়ে অবরুদ্ধ থাকা ব্যক্তিরা বেরিয়ে আসেন।
সংঘর্ষে ৬০ জনের বেশি শিক্ষার্থী আহত হওয়ার তথ্য তুলে ধরে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হামলাকারী আনসারদের গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছে বৈষম্যিবরোধী ছাত্র আন্দোলন।