পতাকা, সাইনবোর্ড, ইউনিফর্মসহ অন্যান্য সামগ্রীতে নতুন লোগো ব্যবহারের জন্য জেলা বা বিভিন্ন ইউনিটকে প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর।
Published : 11 Apr 2025, 03:04 PM
রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর পুলিশকে ‘খোলনলচে’ পাল্টে ফেলতে নানা ‘উদ্যোগের’ ধারাবাহিকতায় এবার বাহিনীর লোগোর পরিবর্তন আসছে।
‘পাল তোলা নৌকা’ বাদ দিয়ে ‘চূড়ান্ত’ হওয়া নতুন লোগো ইতোমধ্যে সব ইউনিটকে চিঠি দিয়ে অবগত করেছে পুলিশ সদর দপ্তর।
বৃহস্পতিবার পুলিশ সদর দপ্তরের অতিরিক্ত ডিআইজি (লজিস্টিকস) নাছিমা বেগমের সই করা চিঠিতে বলা হয়েছে, “বাংলাদেশ পুলিশের বিদ্যমান মনোগ্রাম/লোগো পরিবর্তনের গৃহীত সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে নতুন মনোগ্রাম/লোগো চূড়ান্ত করা হয়েছে। যা এরই মধ্যে কর্তৃপক্ষ কর্তৃক অনুমোদিত হয়ে প্রজ্ঞাপন জারির অপেক্ষায় রয়েছে।”
নতুন লোগোতে থাকছে পানিতে ভাসমান জাতীয় ফুল শাপলা। দুই পাশে ধান ও গমের শীষের মালা, যার উপরের অংশটি তিনটি পাটপাতা যুক্ত। আর নিচের সংযোগস্থলে বাংলায় লেখা থাকছে ‘পুলিশ’।
পতাকা, সাইনবোর্ড, ইউনিফর্মসহ অন্যান্য সামগ্রীতে নতুন লোগো ব্যবহারের জন্য জেলা বা বিভিন্ন ইউনিটকে প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দিয়ে পুলিশ সদর দপ্তর বলছে, প্রজ্ঞাপন হওয়া মাত্রই তা যথাযথভাবে ব্যবহার করতে হবে।
এর আগে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর পুলিশের লোগো পরিবর্তন করা হয়, যেটি বর্তমানে রয়েছে।
এই লোগোতে পাল তোলা নৌকার দুই পাশে রয়েছে গম ও ধানের শীষের মালা। উপরের অংশে একটি শাপলা, আর নিচে বাংলায় ‘পুলিশ’ লেখা রয়েছে।
প্রবল গণবিক্ষোভের মধ্যে গত অগাস্টে শেখ হাসিনার পদত্যাগের দিন থেকেই ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে হামলা-আক্রমণ ও হত্যার শিকার হন পুলিশ সদস্যরা। এরপর থেকে নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে ভয় ও আতঙ্কে কাজে ফেরেননি তারা। পরে কেউ কেউ থানায় ফিরলেও তারা সাদা পোশাকে ছিলেন। বিভিন্ন বিষয়ে ক্ষোভও প্রকাশ করে ১১ দফা দাবি দেন তারা।
এ পরিস্থিতিতে ১১ অগাস্ট সচিবালয়ে কর্মবিরতিতে থাকা পুলিশ সদস্যদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন অন্তর্বর্তী সরকারের তৎকালীন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন। বৈঠকে পুলিশ সদস্যদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বর্তমান ‘ইউনিফর্ম’ বদলানোর আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল।
পরদিন বাহিনীটির পোশাক ও লোগো পরিবর্তনে কমিটি গঠন করে সদর দপ্তর।
গত ২০ জানুয়ারি পুলিশের পোশাক পরিবর্তনের তথ্য দেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
সেদিন সচিবালকে এক বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের বলেন, “পোশাক পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত হয়ে গেছে। পুলিশের জন্য, র্যাবের জন্য এবং আনসারের জন্য। তিনটা সিলেক্ট করা হয়েছে। এটা ইমপ্লিমেন্ট হবে আস্তে আস্তে। একসাথে সব করা যাবে না।”
বৈঠকের শুরুতে বিভিন্ন পোশাক পরে ১৮ জন পুলিশ, আনসার ও র্যাব সদস্য উপস্থিত হন। সেখান থেকে তিনটি অনুমোদন দেওয়া হয়।
এর আগে গত ৩ অক্টোবর সাবেক স্বরাস্ট্র ও জনপ্রশাসন সচিব সফর রাজ হোসেনের নেতৃত্বে পুলিশ সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়।
১৪টি সুপারিশসহ গত ১৫ জানুয়ারি প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে প্রতিবেদন জমা দেন কমিশনের প্রধান সফর রাজ হোসেন।
যেখানে পুলিশের নিরপেক্ষতা ও জবাবদিহিতা বাড়াতে জোর দিয়ে পৃথক পুলিশ কমিশন গঠনসহ বলপ্রয়োগ, আটক, গ্রেপ্তার ও জিজ্ঞাসাবাদে আমূল পরিবর্তন আনার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়। একই সঙ্গে ভুক্তভোগী ও সাক্ষী সুরক্ষায় আইন প্রণয়ন এবং র্যাবের প্রয়োজনীয়তা পুনর্মূল্যায়নের সুপারিশ করা হয়।