মার্শা বার্নিকাটের গাড়িবহরে হামলা: প্রতিবেদন দিতে আরও এক মাস পেল ডিবি

এর আগে গত গত ১ জানুয়ারি এ মামলায় অধিকতর তদন্তের আদেশ দেয় আদালত।

আদালত প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 Feb 2023, 09:38 AM
Updated : 28 Feb 2023, 09:38 AM

ঢাকার মোহাম্মদপুরে সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাটের গাড়িবহরে হামলার ঘটনার করা মামলাটির অধিকতর তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে আগামী ৩০ মার্চ পর্যন্ত সময় দিয়েছেন বিচারক।

মঙ্গলবার ঢাকার মহানগর হাকিম মামুনুর রহমান সিদ্দিকী এ আদেশ দেন, এ আদালতেই মামলাটির বিচারকাজ চলছে।

মঙ্গলবার মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা ছিল ডিবি পুলিশের। কিন্তু প্রতিবেদন জমা না হওয়ায় বিচারক নতুন তারিখ ঠিক করে দেন।

এর আগে গত ১ জানুয়ারি এ মামলায় অধিকতর তদন্তের আদেশ দেয় একই আদালত। আদালত পুলিশের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা এস আই এশারত আলী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, সহকারী পুলিশ কমিশনার পদমর্যাদার নিচে নন- এমন একজন কর্মকর্তাকে মামলাটির তদন্তভার দিতে বলেছিলেন বিচারক।

মার্শা বার্নিকাটের গাড়িবহরে হামলার আড়াই বছরের মাথায় ২০২১ সালের ১৮ জানুয়ারি আদালতে ৯ জনের নামে অভিযোগপত্র দেন তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক মো. আব্দুর রউফ।

সেই অভিযোগপত্রের ৯ আসামি হলেন- নাইমুল হাসান, ফিরোজ মাহমুদ, মীর আমজাদ হোসেন, মো. সাজু ইসলাম, রাজিবুল ইসলাম রাজু, শহিদুল আলম খাঁন কাজল, তান্না ওরফে তানহা ওরফে মুজাহিদ আজমি তান্না, সিয়াম ও অলি আহমেদ ওরফে জনি।

২০২২ সালের ১ মার্চ তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের পর রাষ্ট্রপক্ষের বেশ কয়েকজনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়। সবশেষ গত ৪ ডিসেম্বর এ মামলায় ছয়জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়। সাক্ষী ড. বদিউল আলম মজুমদার, খুশি বেগম ও মাহবুবুল আলম মজুমদার তাদের জবানবন্দিতে ইশতিয়াক মাহমুদ নামের একজনের জড়িত থাকার কথা বলেন।

কিন্তু অভিযোগপত্রে তার নাম না থাকায় গত ২৭ ডিসেম্বর মামলাটির অধিকতর তদন্তের জন্য রাষ্ট্রপক্ষের তরফ থেকে আদালতের কাছে আবেদন করা হয়। শুনানি নিয়ে ১ জানুয়ারি অধিকতর তদন্তের আদেশ দেন বিচারক।

আগের অভিযোগপত্রে বলা হয়, ২০১৮ সালে ৪ আগস্ট রাতে ড. বদিউল আলম মজুমদারের ইকবাল রোডের বাসায় নৈশভোজের দাওয়াতে গিয়ে বার্নিকাট হামলার শিকার হন। ওই রাতে ‘নৈশভোজের নামে’ তিনি গণফোরামের সভাপতি কামাল হোসেনসহ আরও কয়েকজনের সঙ্গে ‘সরকারবিরোধী ষড়যন্ত্র করছিলেন বলে খবর পায়’ স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা।

আনুমানিক রাত ১১টায় ছাত্রলীগের নাইমুল হাসান ওরফে রাসেলের নেতৃত্বে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীদের একটি দল ইটপাটকেল ছোড়ে। তারা বার্নিকাটের গাড়ি ধাওয়া করলে তিনি দ্রুত ঘটনাস্থল ছাড়েন।

অভিযোগপত্রে পুলিশ বলেছিল, সুজনের সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারের বাড়িতেও সেই রাতে ঢিল ছোড়া হয়। জানালার কাচ ভাঙচুর করা ছাড়াও বদিউল, তার স্ত্রী ও ছেলে মাহবুব মজুমদারকে জীবননাশের হুমকি দেওয়া হয়। মাহবুবকে ধাক্কা দিয়ে আঘাত করেন আসামিরা। বাড়ির প্রধান গেট ধাক্কাধাক্কি করে ও ভয়ভীতি দেখিয়ে তারা চলে যান।

ওই ঘটনায় ওই বছর ১০ আগস্ট রাতে ড. বদিউল আলম মজুমদার বাদী হয়ে মোহাম্মদপুর থানায় মামলা দায়ের করেন।

সেখানে অভিযোগে বলা হয়, ওই রাতে ৩০-৪০ জন দুর্বৃত্ত বার্নিকাটের গাড়িতে হামলা করে। তারা ড্রাইভার ও বদিউলের ছেলের ওপর আক্রমণ করে। বার্নিকাটের গাড়ির পেছনে ধাওয়া করে এবং ঢিল ছোড়ে। এ সময় পিস্তল ও লাঠিসোঁটা নিয়ে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের গাড়িতে আগুন দেওয়ার উসকানি দেয় দুর্বৃত্তরা।

বার্নিকাটের গাড়ি দ্রুত বেগে স্থান ত্যাগ করার পর দুর্বৃত্তরা বাদী বদিউলের বাসায় হামলা চালায়। জানালার কাচ ভাঙচুর করে। বাসার গেট ভেঙে ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা করে।

ঘটনার দিন বদিউলের বাসায় বার্নিকাট ছাড়াও কামাল হোসেন, তার স্ত্রী হামিদা হোসেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা হাফিজ উদ্দিন আহমেদসহ বেশ কয়েকজন উপস্থিত ছিলেন। রাজধানীসহ সারাদেশে নিরাপদ সড়ক আন্দোলন চলছিল সে সময়।

সেই প্রেক্ষাপটের বর্ণনায় অভিযোগপত্রে বলা হয়, “২০১৮ সালে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও বিভিন্ন সংগঠন সরকারবিরোধী কর্মকাণ্ড চালায়। ওই বছরের ৪ অগাস্ট রাতে কামাল হোসেন ও কয়েকজন মিলে সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারের ইকবাল রোডের ১২/২ নম্বর বাড়িতে মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাটের বিদায়ী নৈশভোজ আয়োজন করেন।

“ড. বদিউল এবং ড. কামাল বিভিন্ন সময় সরকারের নানামুখী কঠোর সমালোচনা করে থাকেন। তারা দেশি-বিদেশি গণমাধ্যম ও সংস্থার কাছে সরকারবিরোধী বিরূপ মন্তব্য করে থাকেন।”