সম্প্রতি পড়া অপরাধ নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক এক প্রবন্ধের বরাত দিয়ে তিনি বলেছেন, অপরাধ নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ‘২০ নম্বর ফ্যাক্টর’। প্রথম ১৯টি বাদ দিয়ে ‘২০ নম্বর ধরে টানাটানি’ করলে হবে না।
Published : 04 Jul 2023, 04:01 PM
রাজধানী ‘ছিনতাইকারীমুক্ত’ না হওয়া পর্যন্ত পুলিশের অভিযান চলবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ঢাকার পুলিশ কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক।
তবে সম্প্রতি পড়া অপরাধ নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক এক প্রবন্ধের বরাত দিয়ে তিনি বলেছেন, অপরাধ নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ‘২০ নম্বর ফ্যাক্টর’। প্রথম ১৯টি বাদ দিয়ে ‘২০ নম্বর ধরে টানাটানি’ করলে হবে না।
ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে আহত ইনডিপেনডেন্ট টিভির সহকারী প্রযোজক রাকিবুল হাসান রানাকে দেখতে মঙ্গলবার ঢাকার জাতীয় অর্থপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে (পঙ্গু হাসপাতাল) গিয়ে এ মন্তব্য করেন গোলাম ফারুক। মহানগর পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন।
ঈদের ছুটির মধ্যে রাজধানীতে ছিনতাইকারীদের তৎপরতা নগরবাসীর মনে আতঙ্ক ছড়ায়। ছুটি থেকে ঢাকায় ফিরেই ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে প্রাণ হারান এক পুলিশ সদস্য। আর ঈদের রাতে হাতিরঝিলে রাকিবুল হাসান রানাকে ছুরি মেরে জিনিসপত্র নিয়ে যায় ছিনতাইকারীরা।
হাসপাতালে রানাকে দেখে এসে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন ডিএমপি কমিশনার। তিনি বলেন, দুটি ঘটনাতেই পুলিশ অপরাধীদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনতে সক্ষম হয়েছে। তাদের বিচারের জন্য আইনানুগ যা যা ব্যবস্থা নেওয়া দরকার, তা নেওয়া হচ্ছে।
“পুলিশ কনস্টেবলকে হত্যার ঘটনায় আমরা সবাইকে গ্রেপ্তার করেছি। তাদের জিজ্ঞাসাবাদের পর আদালতে নেওয়া হয়েছে।”
সাংবাদিক রানার ছিনতাইয়ের ঘটনায় তিনজন ছিল জানিয়ে গোলাম ফারুক বলেন, “ইতোমধ্যে দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের ব্যবহৃত মোটরসাইকেল ও ছিনতাইয়ে ব্যবহৃত চাপাতি উদ্ধার করা হয়েছে। পলাতক ব্যক্তিকেও খুব দ্রুতই ধরা হবে।”
রাজধানীকে ছিনতাইকারীমুক্ত না করা পর্যন্ত পুলিশের বিশেষ অভিযান চালানোর ঘোষণা দিয়ে কমিশনার বলেন “আমরা চেষ্টা করছি ঢাকা মহানগরকে ছিনতাই মুক্ত রাখার। এর জন্য যত কঠোর হওয়া দরকার আমরা হব, যতো পরিশ্রম আমাদের করা প্রয়োজন আমরা করব।”
ছিনতাইয়ে জড়িত থাকার অভিযোগে গত কয়েকদিনে দেড়শ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে তথ্য দেন তিনি।
ডিএমপি কমিশনার বলেন, “আমরা ঈদের আগেই অনেক ছিনতাইকারীকে গ্রেপ্তার করছিলাম। কিন্তু এরপরও দুঃখজনকভাবে বিষয়গুলো ঘটেছে। পুলিশ এসব বিষয়ে সর্বোচ্চ সতর্ক আছে।“
পুলিশের ডেটাবেইজ অনুযায়ী ঢাকায় প্রায় ৬ হাজার ছিনতাইকারী আছে। ডেটাবেইজে তথ্য থাকার পরও বার বার তারা কীভাবে ছিনতাইয়ে জড়াচ্ছে, সেই প্রশ্ন রাখা হয়েছিল ঢাকার পুলিশ প্রধানের কাছে।
উত্তরে তিনি বলেন, “এদের প্রত্যেকে গ্রেপ্তার হয়েছে বলেই আমাদের ডেটাবেইজে নাম এসেছে। আমরা প্রত্যেককে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠিয়েছি। গ্রেপ্তারের পর একটা আইনি প্রক্রিয়া শুরু হয়। তাদের জামিন পাওয়ার অধিকারও রয়েছে। তারা আইনি প্রক্রিয়ায় জামিনে বের হয়ে আসে। এরপর তাদের আমরা আবার অন্য মামলায় গ্রেপ্তার করি।”
তাহলে আইন সংশোধন করা দরকার কি-না, সেই প্রশ্নে কমিশনার বলেন, “তা অপরাধ বিজ্ঞানী বা সমাজ বিজ্ঞানীরা বলতে পারবেন। সে বিষয়ে আপনারা (গণমাধ্যম) জনমত গড়ে তুলতে পারেন। আমাদের কাজ গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা। আমরা সেটা করছি।”
আইন সংশোধন না হলে ঢাকাকে ছিনতাইমুক্ত করা সম্ভব কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আইনের ফাঁকফোকর আছে কিনা অপরাধ বিজ্ঞানীরা বলতে পারবেন, আপনারা এসব বিষয়ে তুলে ধরেন। এ বিষয়ে আমি কোনো মন্তব্য করতে পারি না, কারণ আইন অনুযায়ী আমার যে ক্ষমতা দেওয়া আছে, আমি তা প্রয়োগ করছি। আপনারা এ বিষয়ে রিসার্চ করবেন।”
ছিনতাইকারীদের তৎপরতা বেড়ে গেলে ব্যর্থতার দায় পুলিশের ওপরই আসে, সেক্ষেত্রে বিদ্যমান আইন দিয়ে অপরাধ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব কি-না, তাও জানতে চাওয়া হয়েছিল ডিএমপি কমিশনারের কাছে।
জবাবে তিনি বলেন, এটাকে পুলিশের ব্যর্থতা বলা যাবে না, কারণ পুলিশের কাজ গ্রেপ্তার করা, আর তারা সেটা করছেন।
‘অপরাধের কারণ ও নিয়ন্ত্রণ’ শীর্ষক সমাজবিজ্ঞানের একটা প্রবন্ধ পড়ছিলেন জানিয়ে কমিশনার বলেন, “অপরাধ নিয়ন্ত্রণ ও কারণের মধ্যে অনেকগুলো বিষয় আছে, যার মধ্যে পুলিশ হল ২০ নম্বর। এর আগে ১৯টি বিষয় রয়েছে, যার কারণে মানুষ অপরাধী হয়, অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করা যায়। প্রথম ১৯টা বাদ দিয়ে ২০ নম্বরের পুলিশ ধরে টানাটানি করলেতো হবে না।”
সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে হাসপাতালের অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম জানান, রাকিবুল হাসান রানার মাথায় ২ জায়গায় জখম এবং দুই হাতে ধারালো অস্ত্রের কোপ রয়েছে। পর্যায়ক্রমে তাকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
“আগামীকাল তার দ্বিতীয় ধাপের অপারেশন হবে। তার সেরে ওঠা শতভাগ না হলেও শতভাগের যত কাছাকাছি যাওয়া সম্ভব হয় আমরা সেই চেষ্টা করছি।”
এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে পুলিশ জানায়, রাকিবুল হাসানকে কুপিয়ে ছিনতাইয়ের ঘটনায় দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা হলেন- সোহেল (৩০) ও ইউসুফ (২৪)।
এদের মধ্যে সোহেল ভাড়ার মোটরসাইকেল চালক আর ইউসুফ ইলেকট্রিশিয়ান। তাদের কাছ থেকে একটি হোন্ডা হর্নেট মোটরসাইকেল এবং দুটি চাপাতি উদ্ধার করা হয়েছে। তারা ‘পেশাদার ছিনতাইকারী’ বলে পুলিশের ভাষ্য।