“আইডেন্টিফিকেশনের জন্যই পরিবর্তন; মানুষের মনে প্রশ্ন উঠতেই পারে, এ নিয়ে আমাদের কোনো বক্তব্য নাই,” বলেন ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক।
Published : 09 Nov 2024, 11:29 PM
মেট্রোরেলের একক যাত্রার টিকেটের সংকট কাটাতে নতুন যে ২০ হাজার টিকেট কেনা হয়েছে, সেখানে নকশায় এসেছে পরিবর্তন।
পুরনো টিকেটে শহীদ মিনার, স্মৃতিসৌধ, সংসদ ভবন আর শাপলা ফুল থাকলেও নতুন টিকেটে শুধু মেট্রোরেলের ছবি রাখায় প্রশ্ন তুলছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারীরা। তাদের কেউ কেউ আপত্তি তুলেছেন কার্ডের রঙ নিয়েও।
তবে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ বলছে, এমআরটি পাস এবং আগের একক যাত্রীর টিকেট একইরকম হওয়ায় নিরাপত্তায় নিয়োজিত সদস্যের বিভ্রান্তি এড়াতে এমন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। দুই কার্ডের আলাদা পরিচিতি রাখার জন্যেই নকশায় পরিবর্তন আনা হয়েছে।
গত ১৪ অক্টোবর সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আবদুর রউফ সাংবাদিকদেরকে বলেন, একক যাত্রার ২ লাখ টিকেট নিয়ে গেছেন যাত্রীরা।
পরে তিনি জানান, একক যাত্রার টিকেট ছিল ৩ লাখ ১৩ হাজার। এর মধ্যে ১৩ হাজার নষ্ট হয়ে গেছে। আর ২ লাখ টিকেট যাত্রীরা নিয়ে গেছে। ফলে বর্তমানে ১ লাখ টিকেট রয়েছে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষের হাতে।
একক যাত্রার বিপুল পরিমাণ টিকেট না থাকায় স্টেশনে টিকেট কাটতে গিয়ে অপেক্ষায় থাকতে হয় যাত্রীদের। ভিড় বেশি হলেই টিকেট সংকটে যাত্রীর লাইন দীর্ঘ হয়।
এ অবস্থায় ডিএমটিসিএল ২০ হাজার একক যাত্রার টিকেট জাপানের সনি কোম্পানি থেকে এনেছে। গত সোমবার স্টেশনগুলোতে নতুন টিকেট ছাড়া হয়। এরপর থেকে বিভিন্ন ফেইসবুক গ্রুপে কার্ডের অবয়বে পরিবর্তন নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে।
পুরনো একক যাত্রার টিকেটে শহীদ মিনার, স্মৃতিসৌধ, সংসদ ভবন, শাপলা ফুলের মত জাতীয় প্রতীক ছিল। নতুন টিকেটে সেগুলো বাদ দিয়ে ওই অংশে শুধু মেট্রোরেলের ছবি যুক্ত করা হয়েছে।
পুরনো কার্ডের সব লেখা ইংরেজিতে থাকলেও নতুন কার্ডে বাংলা যুক্ত করা হয়েছে। বদল এসেছে টিকেটের রঙেও। আকাশি-নীল রঙের পরিবর্তে জলপাই-সবুজ রঙের কার্ড তৈরি করা হয়েছে।
মেট্রোর নিয়ে যাওয়া ২ লাখ টিকেট ফেরত পেতে স্টেশনে স্টেশনে বাক্স
বিষয়টি নিয়ে ফেইসবুকে এম এ সাগর নামে একজন লেখেন, “মেট্রোরেলের নতুন কার্ড থেকে জাতীয় বিষয়গুলো তুলে দেওয়া হয়েছে। রঙ করা হয়েছে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর পতাকার রঙে।”
মেট্রোরেলের যাত্রীদের একজন সজিব আহমেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “পুরনো টিকেটে বাংলাদেশের ঐতিহ্য জায়গা পেয়েছিল। সেগুলো বদলানো ঠিক হয়নি।
“তারা কেন সেগুলো বদলালো মাথায় আসছে না, দেশের জাতীয় বিষয়গুলো নিয়ে কারোর দ্বিমত থাকার কথা না। তারা কোন সমাজের প্রতিনিধিত্ব করে চেইঞ্জ আনল? আগেরটা স্মার্টও ছিল।”
সাকিবুর রহমান নামে আরেকজন বলেন, “শহীদ মিনার, স্মৃতিসৌধ, সংসদ ভবন, শাপলা কী দোষ করল রে ভাই? এগুলো রেখেও তো ডিজাইন করা যেত।”
টিকেটে পরিবর্তন আনতেই এর আগে একক যাত্রার টিকেট সংকট দেখানো হয়েছে বলেও অভিযোগ তুলেছেন ফেইসবুক ব্যবহারকারীদের কেউ কেউ।
এসব বিষয়ে ডিএমটিসিএলের উপ-মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) নাজমুল ইসলাম ভূইয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “নতুন একটা ডিজাইন করা হয়েছে; আর কিছু না। এমআরটি পাস আর সিঙ্গেল জার্নি একইরকম ছিল তো আগে, এ কারণে সিঙ্গেল জার্নিগুলো একটু ডিফারেন্ট করা হয়েছে।
“আগেরগুলোও (পুরনো একক যাত্রার টিকেট) চলবে, অনেক দেশে গিয়ে দেখেন মিনিমাম ১০ রকমের কার্ড আছে।”
মেট্রোরেল: ২ লাখ টিকেট যাত্রীদের পকেটে কীভাবে
মেট্রোরেল: একক যাত্রার আড়াই লাখ টিকেটের দুই লাখই নিয়ে গেছে যাত্রীরা
কার্ডের নকশায় পরিবর্তন নিয়ে ফেইসবুকে সমালোচনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আবদুর রউফের সঙ্গে কথা বলতে বলেন।
পরে ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুর রউফ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এমআরটি পাস ও একক যাত্রার কার্ড একইরকম হওয়ায় নিরাপত্তার দায়িত্বে যারা আছেন তারা বুঝতে পারে না কোনটা কোন কার্ড। তখন মানুষ নিয়ে যাচ্ছে। আইডেন্টিফিকেশনের জন্যেই পরিবর্তন।”
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার প্রশ্নে তিনি বলেন, “মানুষের মনে প্রশ্ন উঠতেই পারে; এ নিয়ে আমাদের কোনো বক্তব্য নাই। কিন্তু আমার ধারণা, এটার সঙ্গে এটা মেলানোর কোনো সুযোগ নাই।”
মেট্রোরেলে যাতায়াতে যাত্রীদের জন্য দুই ধরনের টিকেট রয়েছে। একটি দীর্ঘ মেয়াদে ব্যবহারের এমআরটি পাস, অপরটি একক যাত্রার টিকেট।
এমআরটি পাস কিনে শুধু রিচার্জ করে যাত্রীরা ট্রেনে চড়তে পারেন। যতক্ষণ কার্ডে টাকা থাকে ততক্ষণ ট্রেনে চড়া যায়। সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা রিচার্জের সুযোগ আছে।
অপরদকে একক যাত্রার টিকেট কেটে গন্তব্যে যাওয়া যায়। এ টিকেট মেশিনে ঢুকিয়ে বের হতে হয়। টিকেট মেশিনে দিলেই শুধু স্টেশন থেকে বের হওয়ার সুযোগ থাকে।