“অনির্দিষ্টকালের জন্য ‘ক্লোজ ডাউন’ তিতুমীর কর্মসূচি ঘোষণা করছি; কলেজে কোনো পাঠদান ও পরীক্ষা কার্যক্রম চলবে না,” বলেন আন্দোলনকারীদের এক শিক্ষার্থী।
Published : 19 Nov 2024, 12:34 AM
রাজধানীর মহাখালীতে সড়ক ও রেলপথ আটকে অবরোধ-বিক্ষোভের পর অনির্দিষ্টকাল সরকারি তিতুমীর কলেজে ক্লাস-পরীক্ষা ও পাঠদান কার্যক্রম বন্ধের ঘোষণা দিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা; তারা এই কর্মসূচির নাম দিয়েছেন, ‘ক্লোজ ডাউন তিতুমীর কলেজ’।
তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় রূপান্তরের দাবিতে সোমবার দিনভর বিক্ষোভের পর রাতেও বিক্ষোভ করেন কলেজটির শিক্ষার্থীরা।
পরে রাত ৯টার দিকে কলেজ গেইটে সংবাদ সম্মেলন করে নতুন কর্মসূচি দিয়ে তারা মহাখালী-গুলশান সংযোগ সড়ক ছাড়েন।
সংবাদ সম্মেলনে গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী আমিনুল ইসলাম বলেন, “তিতুমীর কলেজ ক্যাম্পাসে আগামীকাল মঙ্গলবার থেকে কোনো পাঠদান ও পরীক্ষা চলবে না। এদিন থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ‘ক্লোজ ডাউন’ তিতুমীর কর্মসূচি ঘোষণা করছি। কলেজে কোনো পাঠদান ও পরীক্ষা কার্যক্রম চলবে না।”
সংবাদ সম্মেলন থেকে প্রথমে সোমবারের মতই রেল ও সড়ক পথ আটকে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার কর্মসূচি দেন আমিনুল। পরে একই সংবাদ সম্মেলন থেকে আন্দোলনকারী আরেক শিক্ষার্থী মাহমুদুল হাসান ওই কর্মসূচি প্রত্যাহারের কথা জানান।
মাহমুদুল বলেন, “আমরা রেলগেইটে আগামীকাল মঙ্গলবার অবস্থান নিচ্ছি না। সোমবার সকাল ১১টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত আমাদের শিক্ষার্থীরা অবরোধ কর্মসূচি পালন করেছেন। যেহেতু মঙ্গলবার তারা (সরকার) আমাদের সঙ্গে বসার ঘোষণা দিয়েছেন, তাই আমরা শিক্ষার্থীদের রাস্তায় নামিয়ে জনভোগান্তি সৃষ্টি করতে চাচ্ছি না। তবে কাল (মঙ্গলবার) থেকে তিতুমীর কলেজের গেইট অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ থাকবে।
“আমরা আগামীকাল মঙ্গলবার রাজপথ অবরোধ করছি না। ‘বারাসাত ব্যারিকেড কর্মসূচি’ শুধু আজকের (সোমবার) জন্য ছিল না। এটি এমন নয় আজকে বন্ধ হয়ে গেল। রিপিট করছি, জনদুর্ভোগ এড়াতে দেশের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে আমরা রেলপথ অবরোধ করছি না। আমরা মহাখালীতে অবস্থান নিচ্ছি না, তিতুমীর ক্যাম্পাস গেইটে অবস্থান নেব। সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় থাকব। সিদ্ধান্ত যদি না আসে (কমিশন গঠনের) তাহলে পূর্বঘোষিত জায়গায় ফেরত যাব।”
অবরোধে দিনভর ভোগান্তি
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সরকারি তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের দাবিতে সোমবার বেলা ১১টায় মহাখালীর আমতলী, কাঁচাবাজার ও রেলক্রসিংয়ে শত শত শিক্ষার্থী জড়ো হন। তারা তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরে কমিশন গঠনের দাবি জানান।
শিক্ষার্থীরা মহাখালীতে সড়ক ও রেলপথ অবরোধ করলে রাজধানীজুড়ে চরম যানজট সৃষ্টি হয়। কুর্মিটোলা থেকে বানানী পর্যন্ত রাস্তায় গাড়ি আটকে থাকে। বনানী থেকে তেজগাঁও, তেজগাঁও থেকে বনানী, মহাখালীর আমতলী থেকে জাহাঙ্গীরগেইট এবং মহাখালী থেকে গুলশান পর্যন্ত যান চলাচল বন্ধ থাকে দীর্ঘ সময়। যাত্রীদের অনেকে গাড়ি থেকে নেমে হেঁটে গন্তব্যে ছোটেন।
দুপুরে মহাখালী রেলক্রসিংয়ে অবস্থান নেন আন্দোলনকারীরা। তারা রেললাইনে অবস্থান নিলে ‘উপকূল এক্সপ্রেস’ ট্রেনের লোকোমাস্টার ব্রেক কষেন। তবে ট্রেনটি থামে অবরোধস্থল পার হওয়ার পর।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়ানো ভিডিওতে দেখা যায়, ট্রেন ছুটে আসার মধ্যে আন্দোলনকারীরা রেল লাইন থেকে দ্রুত সরে যাওয়ায় বড় দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পান। আর এর মধ্যেই কেউ কেউ ট্রেনটিতে ঢিল ছোড়েন। তাতে এক শিশুসহ বেশ কয়েকজন যাত্রী হন। ফেইসবুকে রক্তাক্ত শিশু ও আহত যাত্রীদের ছবি ছড়িয়ে পড়ে।
রেলের মহাপরিচালক সরদার সাহাদাত আলী বলেন, “বেলা পৌনে ১২টার দিকে নোয়াখালী থেকে আসা উপকূল এক্সপ্রেস মহাখালী পার হচ্ছিল। এ সময় আন্দোলনকারীরা ট্রেনে পাথর নিক্ষেপ করলে কয়েকজন যাত্রী আহত হন।
“তারা ট্রেনে পাথর মারে। এতে পাঁচটি কোচের জানালার ২৯টি কাঁচ ভেঙে যায়। আর কয়েকজন যাত্রী আহত হন। আহতদের আমরা প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়েছি।”
অবরোধের কারণে কমলাপুর থেকে সারা দেশে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ঢাকার দিকে আসা ট্রেনগুলো ট্রেনগুলো বিভিন্ন স্টেশনে দাঁড়িয়ে যায়। ঘণ্টার পর ঘণ্টা ট্রেন না চলায় তারা দিনভর ব্যাপক ভোগান্তিতে পড়েন। ৫ ঘণ্টা বাদে বিকাল ৪টার দিকে শিক্ষার্থীরা রেল ও সড়ক থেকে সরে গেলে ফের বাস ও ট্রেন চলাচল শুরু হয়।
এর ঘণ্টা দুয়েক পর সন্ধ্যা ৬টার দিকে তিতুমীর কলেজের সামনে মহাখালী-গুলশান সড়কে অবস্থান নিয়ে দাবি জানাতে থাকেন শিক্ষার্থীরা। এতে সড়কের দুই পাশে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। রাত ৯টার দিকে সংবাদ সম্মেলনের পর তারা সড়ক ছাড়েন।
সংবাদ সম্মেলনে গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী আমিনুল ইসলাম বলেন, “দিনভর অবরোধ শেষে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে আলোচনার জন্য গেলে কর্মকর্তারা প্রথমে তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরে কমিশন গঠনের আশ্বাস দেন। পরে তারা বলেন, এ কলেজটি বিশ্ববিদ্যালয় রূপান্তরের উদ্যোগ নিলে অন্য ছয়টি কলেজও বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের দাবিতে আন্দোলনে নামবে। তারা কমিশন গঠনের বিষয়টি প্রেস রিলিজের মাধ্যমে জানানোর উদ্যোগ নিলেও এ ভয় দেখিয়ে সেটি আটকে দেন।
“আমরা যে ১৪ জন গিয়েছিলাম সেখানে অনশনে বসে যাই। পরে কর্মকর্তা জানান, মঙ্গলবার সকালে সরকারের সংশ্লিষ্টরা আমাদের বিষয়টি নিয়ে বসবেন ও সিদ্ধান্ত আমাদের জানাবেন। পরে কর্মকর্তাদের অনুরোধে কর্তৃপক্ষের প্রতি সম্মান জানিয়ে আমরা অনশন ভাঙি।”
দুপুরের অবরোধের সময় ট্রেনে ঢিল ছোড়ার ঘটনায় সংবাদ সম্মেলনে দুঃখ প্রকাশ করেন আমিনুল।
আরও পড়ুন-
অবশেষে সড়ক ছাড়লেন তিতুমীরের শিক্ষার্থীরা
অবরোধ: উপকূল এক্সপ্রেসে ঢিল নিক্ষেপ, শিশুসহ কয়েকজন আহত