বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার কর্মসূচি দিয়েছেন তারা।
Published : 18 Nov 2024, 07:26 PM
রাজধানীর মহাখালীতে দিনভর সড়ক ও রেলপথ অবরোধ শেষে দুই ঘণ্টার বিরতিতে আবার বিক্ষোভে নামা সরকারি তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করে রাতে সড়ক ছেড়েছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার কর্মসূচি ঘোষণা করে তারা সোমবার রাত ৯টার দিকে কলেজের সামনে মহাখালী-গুলশান সংযোগ সড়কের অবরোধ তুলে নেন।
এর আগে সন্ধ্যা ৬টার দিকে আবারও কলেজের সামনে মহাখালী-গুলশান সড়কে অবস্থান নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের দাবি জানাতে থাকেন তারা। এতে এ সড়কের দুই পাশে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। রাত ৮টার দিকেও তাদের বিক্ষোভ চালিয়ে যেতে দেখা গেছে।
শিক্ষার্থীদের দাবি, সন্ধ্যার পর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বিকালে দেওয়া আশ্বাস থেকে সরে এলে তারা আবার দাবি আদায়ে সড়কে নেমেছেন।
একই সময়ে সচিবালয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার দপ্তরের সামনে শিক্ষার্থীদের ১২ জন প্রতিনিধি অনশনও শুরু করেন। এসব শিক্ষার্থী তাদের দাবির বিষয়ে আলোচনা করতে সেখানে গিয়েছিলেন। রাতে এসব শিক্ষার্থীও অনশন শেষে সচিবালয় ত্যাগ করেছেন বলে অন্য শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন।
বনানী থানার ওসি রাসেল সারোয়ার বলেন, “আবারও কলেজের সামনে শিক্ষার্থীরা অবস্থান নিয়েছে। এর ফলে দুই পাশেই যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।”
সন্ধ্যায় কলেজের সামনে সড়কে নামা ইংরেজি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী হাবিবুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সকালে আন্দোলনের পর আমাদের ১২ জন প্রতিনিধি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে যায়। সেখানে তাদের তিন দিনের মধ্যে তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ের রূপান্তরের কমিশন গঠনের আশ্বাস দেওয়া হয়। তবে সন্ধ্যার পরে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা সে অবস্থান থেকে সরে আসেন। তারা বলছেন কমিটি গঠন হবে না।
”আমাদের ১২ জন প্রতিনিধি মন্ত্রণালয়ে অনশন শুরু করেছেন। আমরা সন্ধ্যার পর সড়ক অবরোধ করেছি। তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের কমিশন গঠন না হওয়া পর্যন্ত এ অবরোধ চলবে।"
এর আগে বেলা ১১টায় মহাখালীর আমতলী, কাঁচাবাজার ও রেলক্রসিংয়ে শত শত শিক্ষার্থী তাদের দাবি আদায়ের কর্মসূচি নিয়ে জড়ো হন।
সরকারি তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের দাবিতে শিক্ষার্থীরা সেখানে সড়ক ও রেলপথ অবরোধ করলে রাজধানীজুড়ে চরম যানজট সৃষ্টি হয়। তাতে দুর্ভোগে পড়েছেন যাত্রীরা।
সোমবার দুপুরে রাজধানীর কুর্মিটোলা থেকে বানানী পর্যন্ত রাস্তায় গাড়ি আটকে থাকতে দেখা যায়। এছাড়া বনানী থেকে তেজগাঁও, তেজগাঁও থেকে বনানী, মহাখালীর আমতলী থেকে জাহাঙ্গীরগেইট এবং মহাখালী থেকে গুলশান পর্যন্ত যান চলাচল বন্ধ ছিল। এসময় যাত্রীদের গাড়ি থেকে নেমে হেঁটে গন্তব্যে পৌঁছাতে দেখা যায়।
কমলাপুর থেকে রেল চলাচল বন্ধ হয়ে গেলে কমলাপুরে ট্রেনের অপেক্ষায় বিপাকে পড়েন হাজারো যাত্রী।
পরে ৫ ঘণ্টা বাদে বিকাল ৪টার দিকে শিক্ষার্থীরা অবরোধ তুলে নিলে সড়কে যান চলাচল ও ঢাকার সঙ্গে সারাদেশের রেল চলাচল স্বাভাবিক হয়।
তখন তিতুমীর কলেজের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী আমিরুল ইসলাম বলেন, “আমাদের শিক্ষার্থীদের মধ্যে কয়েকজন প্রতিনিধি হিসেবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে গিয়েছে। বৈঠকের পরে সিদ্ধান্ত সন্ধ্যায় সংবাদ সম্মেলন করে জানান হবে।"
সন্ধ্যার পরে মন্ত্রণালয় থেকে এ বিষয়ে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত না আসায় তিতুমীরের শিক্ষার্থীরা কলেজের সামনে মহাখালী-গুলশান সংযোগ সড়কে আবার অবস্থান নেন।
সন্ধ্যায় সড়কে আন্দোলনকারীদের একজন বাংলা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী রাজু আহমেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "আমাদের প্রতিনিধিদের মন্ত্রণালয় থেকে আসতে দেওয়া হচ্ছে না। তাদের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়ার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। কমিশন গঠন না হওয়া পর্যন্ত সড়ক অবরোধ চলবে।
"আমরা অ্যাম্বুলেন্স ও জরুরি পরিষেবার পরিবহন ছাড়া আর কাউকে যেতে দিচ্ছি না।"
সন্ধ্যা ৭টায় এ সড়কে আটকে পড়া গাড়িচালক সুলতান বলেন, "রাস্তার পরিস্থিতি স্বাভাবিক ছিল। হঠাৎ তারা বসে পরে। এখানে ৪৫-৫০ মিনিট বসে আছি।"
সিএনজি চালক মো. আলমগীর বলেন, "পৌনে এক ঘণ্টার বেশি সময় ধরে বসে আছি এখানে।"
এর আগে ব্যস্ততম সড়ক মহাখালী মোড়ে সকাল থেকে পাঁচ ঘণ্টা কর্মসূচি চলাকালে যান চলাচল বন্ধ থাকায় চরম বিপাকে পড়েন রাজধানীবাসী।
আন্দোলনকারীরা ট্রেন চলাচলও বন্ধ করে দেয়। এসময় একটি ট্রেনে ঢিল ছোড়ায় শিশুসহ কয়েকজন যাত্রী আহত হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুপুরে রেলক্রসিংয়ে অবস্থান নিয়ে একদল শিক্ষার্থী বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। তাদের দেখে উপকূল এক্সপ্রেসের লোকোমাস্টার ব্রেক কষেন। তবে ট্রেনটি থামে অবরোধস্থল পার হওয়ার পর।
সোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, শেষ মুহূর্তে শিক্ষার্থীরা রেল লাইন থেকে সরে যাওয়ায় অল্পের জন্য তারা প্রাণে বেঁচে যান। ততোক্ষণে কেউ কেউ ট্রেনটিকে লক্ষ্য করে পাথর ছুড়ে মারেন। তাতে শিশুসহ বেশ কয়েকজন যাত্রী আহত হন।
রেলের মহাপরিচালক সরদার সাহাদাত আলী বলেন, বেলা পৌনে ১২টার দিকে নোয়াখালী থেকে আসা উপকূল এক্সপ্রেস মহাখালী পার হচ্ছিল। এ সময় আন্দোলনকারীরা ট্রেনে পাথর নিক্ষেপ করলে কয়েকজন যাত্রী আহত হন।
“তারা ট্রেনে পাথর মারে। এতে পাঁচটি কোচের জানালার ২৯টি কাঁচ ভেঙে যায়। আর কয়েকজন যাত্রী আহত হন। আহতদের আমরা প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়েছি।"
আরও পড়ুন