প্রাক-নিবন্ধনকারীদের অনেকেই ঝুঁকছেন ওমরাহর দিকে।
Published : 22 Jan 2024, 11:29 PM
বাংলাদেশ থেকে এ বছর এক লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জনের হজে যাওয়ার কোটা রয়েছে; কিন্তু নিবন্ধনের সময় দুই দফা বাড়িয়েও তেমন সাড়া মেলেনি।
গত ১৮ জানুয়ারি সময় শেষ হলেও নিবন্ধন করেছেন মাত্র ৫৩ হাজার ১৭৩ জন, যাদেরকে ২৯ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ব্যাংকে বাকি টাকা জমা দিয়ে নিবন্ধন সম্পন্ন করতে হবে। সেই শর্ত পূরণ করতে গিয়ে নিবন্ধনকারীর সংখ্যা আরও কমতে পারে।
এ বছর হজের নিবন্ধন শুরু হয় গত ১৫ নভেম্বর, যা ১০ ডিসেম্বর শেষ হওয়ার কথা ছিল। প্রত্যাশিত সাড়া না মেলায় সময় বাড়ানো হয় ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত, পরে সেই সময় ১৮ জানুয়ারি বাড়ানো হয়েছিল। এরপর আর সময় বাড়ানো হয়নি।
কোটা পূরণে এখন নতুন করে সময় বাড়ানো হবে কি না, সে বিষয়েও স্পষ্ট করে কিছু বলছেন না ধর্ম মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।
হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) সভাপতি এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কোটা থেকে নিবন্ধন অনেক কম,তা ঠিক। এখন সময় বাড়ানোর জন্য মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করব কি না, তা নিজেরাই বিশ্লেষণ করছি যে- সময় বাড়ালে কতজন নিবন্ধন করতে পারবে এবং হাবের কী লাভ হবে।”
পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে হাব পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
হজের কোটা পূরণ না হলে সৌদি আরব কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে পারে কি না, এমন প্রশ্ন করা হয়েছিল ধর্ম মন্ত্রণালয়ের এক সময়ের কর্মকর্তা মোহাম্মদ আনোয়ার হোসাইনকে।
ওই মন্ত্রণালয়ের ১৪ বছরের অভিজ্ঞতা ও নিজের বোঝাপড়া থেকে তিনি বলেন, “গত বছরও কোটা পূরণ হয়নি। যদি এ বছরও কোটা পূরণ না হয়, তাহলে সৌদি সরকার জানতে চাইতে পারে, ‘তোমাদের কী কী সুবিধা দিতে হবে’। তারা প্রমোট করতে চাইবে।”
নিবন্ধনে ভাটা কেন?
কোভিড মহামারীর কারণে ২০২০ ও ২০২১ সালে হজ করতে বিদেশ থেকে কারো সৌদি আরবে যাওয়ার সুযোগ হয়নি। তখন সীমিত পরিসরে পালিত হয় বিশ্বের মুসলমানদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বার্ষিক এই সম্মিলন।
এরপর ২০২২ সালে যে হজ হয়, তাতে সরকারি ব্যবস্থাপনায় মোট তিনটি প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়। প্যাকেজ-১ এ সর্বমোট খরচ চার লাখ ২৫ হাজার টাকা, প্যাকেজ-২ এ তিন লাখ ৬০ হাজার এবং প্যাকেজ-৩ এ তিন লাখ ১৫ হাজার টাকা। বেসরকারি প্যাকেজে তিন লাখ ৫৮ হাজার টাকা খরচ ঘোষণা করা হয়।
তবে পরের বছরই খরচে উল্লম্ফন ঘটে। সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজে খরচ নির্ধারণ করা হয় ৬ লাখ ৮৩ হাজার ১৮ টাকা এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় খরচ ধরা হয় ৬ লাখ ৭২ হাজার ৬১৮ টাকা।
তাতে কুলাতে না পেরে প্রাক-নিবন্ধনকারী অনেকেই আর নিবন্ধন করেননি। পরিস্থিতি এমন দাঁড়ায় যে আটবার সময় বাড়িয়ে এবং একদিনের বিশেষ সুযোগ দিয়েও কোটা পূরণে ৬ হাজার ৭০৭ জন ঘাটতি থেকে যায়।
বর্তমানে হজে যেতে হলে প্রথম ধাপে ৩৫ হাজার টাকা দিয়ে প্রাক-নিবন্ধন করতে হয়। সারা বছরই এই প্রাক-নিবন্ধন করা যায়। সেটি সম্পন্ন করলে একটি নম্বর দেওয়া হয়। ধারাবাহিকতা রক্ষা করে সেই নম্বর হজের জন্য নির্বাচিত হলে তা এসএমএস ও ওয়েবসাইটের মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হয়।
কেবল নির্বাচিত হলেই নিবন্ধন সম্পন্ন করা যায়। নিবন্ধনের জন্য ন্যূনতম দুই লাখ ৫ হাজার টাকা দিতে হয়। বাকি টাকা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পরিশোধ করতে হয়।
এবারের হজের জন্য খরচ কমিয়ে গত নভেম্বর প্যাকেজ ঘোষণা করে সরকার। সাধারণ প্যাকেজে হজ করতে ৫ লাখ ৭৮ হাজার ৮৪০ টাকা এবং বিশেষ প্যাকেজের মাধ্যমে ৯ লাখ ৩৬ হাজার ৩২০ টাকা ব্যয় ধরা হয়।
আর বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ৮৩ হাজার ২০০ টাকা কমিয়ে সাধারণ প্যাকেজ ৫ লাখ ৮৯ হাজার ৮০০ টাকা এবং বিশেষ প্যাকেজ ৬ লাখ ৯৯ হাজার ৩০০ টাকা ঠিক করে হাব। এরপরও অর্ধেকের বেশি কোটা এখনও পূরণ হয়নি।
নারায়ণগঞ্জ ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেল এজেন্সির মালিক আনোয়ার হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গত বছর একশর বেশি হজ যাত্রী পাঠালেও এবার এখনও পঞ্চাশজনও হয়নি। এভাবে কী করব, বুঝতে পারছি না।”
জয়পুরহাটের সেকান্দার টুরস অ্যান্ড ট্রাভেল এজেন্সির মালিক সেকান্দার আলী বললেন, গত বছর তার প্রতিষ্ঠানের হজযাত্রীর সংখ্যা ছিল ১৮০; সেখানে এবছর নিবন্ধন করেছেন ৫৩ জন।
“প্রায় দুইশজন প্রাক নিবন্ধন করেছেন, কিন্তু হজে যাওয়ার জন্য নিবন্ধন করছেন না।”
কেন মানুষ নিবন্ধন করছে না জানতে চাইলে সেকান্দার বলেন, “সবাই খরচের কথা চিন্তা করেই পিছিয়ে যাচ্ছে, আর বলছে আগামী বছর যাবে।”
আগের বছরের চাইতে এক লাখ টাকার মত খরচ কমলেও হজযাত্রীদের কাছে তা বেশিই ঠেকছে বলে মনে করছেন তিনি।
সিলেটের এক হজ এজেন্সির কর্ণধার বলেন, “এবছর ৭৮৬টি হজ এজেন্সিকে অনুমতি দিয়েছে সরকার, কিন্তু যাত্রী এভাবে কমে গেলে লাভের মুখ দেখা যাবে না।”
হজে খরচ বাড়ায় ওমরাহতে ঝোঁক
পুরান ঢাকার ব্যবসায়ী ইমাম হোসেন প্রাক-নিবন্ধন করলেও হজে যাবেন কি না সেই সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না।
তিনি বলেন, “ব্যবসার যে অবস্থা, তাই সিদ্ধান্ত নিতে পারছি না। তবে হজে না যেতে পারলেও ওমরাহয় যাব, কারণ দেড় লাখ টাকায় ওমরা যাওয়া যাবে।”
হজ এজেন্সি মালিক সেকান্দার আলীও বলছেন, তার প্রতিষ্ঠান থেকে প্রাক-নিবন্ধন করে যারা হজের জন্য নিবন্ধন করতে পারেননি, তারা ওমরাহ করতে আগ্রহী।
হজযাত্রী পাঠানোর সঙ্গে সম্পৃক্ত ঢাকার কেরাণীগঞ্জের মোস্তফা বলেন, “মোহাম্মদপুরের অমিত হাসানের এ বছর হজে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু স্ত্রী সন্তানসহ তিনজন ওমরাহ পালন করে এসে বলছেন, ‘একজনের হজের টাকায় তিনজন ওমরাহ পালন করে এসেছি, আল্লাহর ঘর তো দেখা হলো’।
“(খরচ কমাতে) হাসানের মত অনেকেই ওমরাহ পালন করছেন। অথচ তাদের হজে যাওয়ার কথা ছিল।”
চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ১৬ জুন হজ হতে পারে। সেজন্য যে ৫৩ হাজার ১৭৩ জন নিবন্ধন করেছেন, তাদের মধ্যে ৩ হাজার ৮০২ জন সরকারি ব্যবস্থাপনায়, বাকি ৪৯ হাজার ৩৭১ জন বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় যাওয়ার জন্য নিবন্ধন করেছেন।
কোটার চাইতে অর্ধেকেরও কম নিবন্ধন হওয়ার বিষয়ে ধর্মমন্ত্রী ফরিদুল হক খানের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়। কিন্তু নিবন্ধনের সময় বাড়ানো হবে কি না, সেই প্রশ্নের সরাসরি উত্তর তিনি দিতে চাননি।
মন্ত্রী বলেন, “মন্ত্রণালয় একটি তারিখ দিয়েছিল নিবন্ধনের, সে সময়তো শেষ হয়েছে। সুতরাং হজের এখনও অনেক কার্যক্রম বাকি রয়েছে।”
পুরনো খবর
আগামী বছর হজে যাওয়া যাবে পৌনে ৬ লাখ টাকায়