মোসাদ্দেক হোসেনের অপরাজিত ফিফটিতে শেষ সময়ের রোমাঞ্চে জিতে ঢাকার ক্লাব ক্রিকেটে ২৩তম শিরোপা জিতল আবাহনী লিমিটেড।
Published : 30 Apr 2024, 06:57 PM
ম্যাচ তখন গড়িয়েছে শেষ ওভারের রোমাঞ্চে। জয়ের জন্য আবাহনীর প্রয়োজন ৬ বলে ৯ রান। ড্রেসিং রুমের সামনে মাঠের বাউন্ডারির ঠিক পাশে দাঁড়িয়ে ক্রিকেটার-কর্মকর্তাদের প্রায় সবাই, সমর্থকগোষ্ঠীর কয়েকজন। রোমাঞ্চ আর উত্তেজনার সঙ্গে টেনশনও মিশে তাদের চোখেমুখে। সেই উদ্বেগটুকু দূর করে দিলেন মোসাদ্দেক হোসেন। টানা চার বলে দুটি করে নিয়ে রান দলকে নিয়ে গেলেন জয়ের কাছে। পরের বলটি ছক্কায় উড়িয়ে দলকে আনন্দে ভাসালেন আবাহনী অধিনায়ক।
ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে টানা দ্বিতীয়বার চ্যাম্পিয়ন হলো আবাহনী লিমিটেড। রোমাঞ্চকর লড়াইয়ে ম্যাচ জেতানো ফিফটিতে দলকে শেষের বৈতরণী পার করিয়ে শিরোপার হাসিতে মাঠ ছাড়লেন মোসাদ্দেক।
আবাহনীর চ্যাম্পিয়ন হওয়াটা অবশ্য একরকম অনুমেয়ই ছিল বেশ আগে থেকে। অপ্রতিরোধ্য পথচলায় টানা ১৪ জয়ে দুই ম্যাচ হাতে রেখেই কাঙ্ক্ষিত সাফল্য অর্জন করল ঢাকার ক্লাব ক্রিকেটের সফলতম দলটি।
বিকেএসপির ৪ নম্বর মাঠে মঙ্গলবার শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবকে ৪ উইকেটে হারায় আবাহনী। গত আসরেও শেখ জামালের বিপক্ষে জিতে প্রিমিয়ার লিগের ট্রফি ঘরে তুলেছিল তারা।
সব মিলিয়ে ঢাকার ক্লাব ক্রিকেটের শীর্ষ টুর্নামেন্টে আবাহনীর এটি ২৩তম শিরোপা। ২০১৩-১৪ মৌসুমে লিস্ট 'এ' স্বীকৃতি পাওয়ার পর তাদের ষষ্ঠ শিরোপা এটি। এই সময়ে অন্য কোনো দলের নেই একাধিক শিরোপা।
শেখ জামালের হয়ে এ দিন মাঠে নামেন সাকিব আল হাসান। যুক্তরাষ্ট থেকে দেশে ফিরে এক মাস পর মাঠে নেমে ব্যাট হাতে ৪৯ রান করেন তিনি, বল হাতে উইকেট নেন ১টি। তবে আবাহনীর জয় আটকাতে পারেননি।
জিতলেই নিশ্চিত চ্যাম্পিয়নশিপ, এই সমীকরণে খেলতে নেমে ২৬৮ রানের লক্ষ্য পায় আবাহনী। শুরুটা খুব ভালো না হলেও এনামুল হক ও আফিফ হোসেনের ফিফটিতে অনেকটা এগিয়ে যায় তারা। পরের পথটুকু পার করান মোসাদ্দেক।
জাতীয় দলের ক্যাম্প ও চোটাঘাত মিলিয়ে তারকাসমৃদ্ধ দলটি গুরুত্বপূর্ণ বেশ কজন ক্রিকেটারকে পায়নি এই ম্যাচে। তবু কাঙ্ক্ষিত জয় তারা ঠিকই আদায় করে নেয়।
আঁটসাঁট বোলিংয়ে স্রেফ ২৯ রানে ৩ উইকেট নেন রকিবুল হাসান। বোলিংয়ে ২ উইকেট নেওয়ার পর ২৪ রানের গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস খেলেন নাহিদুল ইসলাম। পরে আফিফ হোসেন ৮৩ ও এনামুল খেলেন ৬৭ রানের ইনিংস।
তবে অধিনায়কোচিত ইনিংসে ৪ ছক্কায় ৫৪ বলে ৫৩ রানের ইনিংস খেলে ম্যাচ সেরার পুরস্কার ওঠে মোসাদ্দেকের হাতে।
রান তাড়ায় শুরুতেই সাব্বির হোসেনের উইকেট হারায় আবাহনী। সুপার লিগে প্রথম ম্যাচ খেলতে নেমে নিজের দ্বিতীয় ওভারেই আঘাত হানেন সাকিব।
৫০ রানের জুটিতে শুরুর চাপ সামাল দেন মোহাম্মদ নাঈম শেখ ও এনামুল। কিন্তু কমে আসে রানের গতি। ৪২ বলে ২১ রান করে ফেরেন নাঈম।
তৃতীয় উইকেটে ১০২ বলে ১০৩ রানের জুটি গড়ে আবাহনীকে পথে ফেরান এনামুল ও আফিফ। টানা দ্বিতীয় ফিফটিতে ৮০ বলের ইনিংসে ৪ চারের সঙ্গে ২টি ছক্কা মারেন এনামুল।
জিম্বাবুয়ে সিরিজের প্রস্তুতি ক্যাম্প শেষ করে আগের রাতে দলের সঙ্গে যোগ দেওয়া আফিফ ৫৫ বলে করেন পঞ্চাশ রান। এরপর এগোতে থাকেন তিন অঙ্কের দিকে। তবে থমকে যান ১৭ রান দূরে। তাইবুর রহমানের বলে ছক্কা ওড়াতে গিয়ে লং অফে ধরা পড়েন তিনি। ৮ চার ও ২ ছক্কায় সাজান তার ৮৮ বলের ইনিংস।
তখনও জয় থেকে ৫৫ রান দূরে আবাহনী। নাহিদুলের সঙ্গে মোসাদ্দেকের ৩৪ বলে ৩৫ রানের জুটিতে আরও কাছে যায় তারা। কিন্তু পরপর দুই ওভারে নাহিদুল ও তানজিম হাসান বিদায় নিলে চোখরাঙানি দেয় পরাজয়ের শঙ্কা।
৭ বলে ১৩ রান বাকি থাকতে ক্রিজে গিয়ে ব্যাটের বাইরের কানায় লেগে বাউন্ডারি পান রাকিবুল। ফলে কিছুটা সহজ হয় শেষ ওভারের সমীকরণ। যা দারুণভাবেই মেলান মোসাদ্দেক।
সকালে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে জিয়াউর রহমানের শেষের ঝড়ে লড়াইয়ের পুঁজি পায় শেখ জামাল। ৯ নম্বরে নেমে স্রেফ ৫৮ বলে ৮৫ রানের ইনিংস খেলেন অভিজ্ঞ এই অলরাউন্ডার। ৬ চারের সঙ্গে মারেন ৮টি ছক্কা।
শুরুটা একদমই ভালো হয়নি শেখ জামালের। ১৫ রানের মধ্যে ড্রেসিং রুমে ফেরেন তিন ব্যাটসম্যান। পাওয়ার প্লের ১০ ওভারে আসে মোটে ২৪ রান।
শুরুর চাপ সামলে ৭২ রানের জুটি গড়েন সৈকত আলি ও সাকিব আল হাসান। দশম ওভারের শেষ বলে প্রথম বাউন্ডারি মারেন সাকিব। পরের ওভারে তানভির ইসলামকে ওড়ান তিনি দুটি ছক্কায়।
রয়েসয়ে শুরু করা সৈকত পরের তিন ওভারে মারেন তিনটি চার। পরে রাকিবুলকে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে ড্রেসিং রুমের পথ ধরেন ৬৬ বলে ৪১ রান করা সৈকত। তার বিদায়ের পর পঞ্চাশের দিকে এগোতে থাকেন সাকিব।
কিন্তু তা ছুঁতে পারেননি অভিজ্ঞ অলরাউন্ডার। তানজিমের পায়ের ওপর করা স্লোয়ার বাউন্সার ডেলিভারিতে আগেই ব্যাট চালিয়ে শর্ট মিড উইকেটে ক্যাচ দেন তিনি। সমাপ্তি ঘটে ২ চার ও ৩ ছক্কায় ৫৬ বলে ৪৯ রানের ইনিংসের।
এরপর হতাশ করেন ইয়াসির আলি চৌধুরি, রবিউল ইসলামরা। নুরুল হাসান সোহান ৬৪ বলে ৪১ রান করে আউট হলে আরও চাপে পড়ে শেখ জামাল।
পরে দায়িত্ব নেন জিয়াউর। তার একের পর এক বাউন্ডারিতে তরতরিয়ে বাড়তে থাকে দলের রান। নবম উইকেট জুটিতে রিপন মণ্ডলের সঙ্গে স্রেফ ৪৪ বলে ৮২ রানের জুটি গড়ে তোলেন তিনি। তানভির ইসলামের পরপর দুই ওভারে একটি করে চার-ছক্কা মারেন তিনি।
শেষ ওভারে তানজিমের বলে মারেন টানা ৩টি ছক্কা। তার সৌজন্যেই লড়ার মতো রান পায় শেখ জামাল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত জয়ের জন্য যথেষ্ট হয়নি সেটি।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব: ৫০ ওভারে ২৬৭/৯ (সাইফ ১, সৈকত ৪১, ফজলে মাহমুদ ৪, তাইবুর ০, সাকিব ৪৯, সোহান ৪১, ইয়াসির ১৭, রবিউল ২, জিয়াউর ৮৫, রিপন ১৩*, শফিকুল ০*; তানভির ১০-১-৫১-০, তানজিম ১০-০-৬২-৩, নাহিদুল ৮-২-৩১-২, মোসাদ্দেক ৫-০-২৭-০, ফাহাদ ২-০-২৮-০, রকিবুল ১০-১-২৯-৩, সাব্বির ৪-০-৩৭-০)
আবাহনী লিমিটেড: ৪৯.৫ ওভারে ২৭৩/৬ (নাঈম ২১, সাব্বির ৬, এনামুল ৬৭, আফিফ ৮৩, মোসাদ্দেক ৫৩*, নাহিদুল ২৪, তানজিম ৫, রকিবুল ৪*; রবিউল ৭-১-৪৩-০, সাকিব ১০-০-৩৪-১, সাইফ ১-০-৪৯-১, তাইবুর ৯-০-৪৪-১, শফিকুল ৭.৫-০-৬০-২, রিপন ৬-০-৪০-১)
ফল: আবাহনী লিমিটেড ৪ উইকেটে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: মোসাদ্দেক হোসেন