সময় বাড়ালেও হজের নিবন্ধনে ভাটা

খরচ বাড়ায় সাড়া মিলছে না; নিবন্ধনের সময় ফের বাড়তে পারে।

কামাল তালুকদারবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 Feb 2023, 06:05 PM
Updated : 27 Feb 2023, 06:05 PM

হজে যেতে চলতি মাসের শুরুতে যে নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু হয়েছে, সেই সময় বাড়লেও প্রত্যাশিত সাড়া পাচ্ছেন না এজেন্সি মালিকরা।

এদের একজন দিনাজপুরের উলামা আউলিয়া হজ গ্রুপ বাংলাদেশের মালিক আহসান হাবিব। তার আশা ছিল ৫০০ হজযাত্রী নিবন্ধনের। কিন্তু সোমবার পর্যন্ত নিবন্ধন করাতে পেরেছেন ৫০ জনকে।

সিলেটের আকাবা ট্রেডিং করপোরেশনের মালিক আব্দুল কাইউমও হতাশা প্রকাশ করলেন। জানালেন, নিবন্ধন কিছু হয়েছে, তবে আশাব্যঞ্জক নয়। গত বছর ৫০ জন হজে পাঠাতে পারলেও এ বছর মাত্র কয়েকজন নিবন্ধন করেছেন।

এ বছরের নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু হয় ৮ ফেব্রুয়ারি, তা ২৩ ফেব্রুয়ারি শেষ হওয়ার কথা থাকলেও ২৮ ফেব্রুয়ারি বিকাল ৪টা পর্যন্ত বাড়ানো হয়।

এর একদিন আগে নিবন্ধনের গতি দেখে হতাশা প্রকাশ করেছেন হজ এজেন্সির মালিকরা; আর না যাওয়ার কারণও ব্যাখ্যা করলেন কয়েক হজযাত্রী।

এবার সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজে খরচ নির্ধারণ করা হয়েছে ৬ লাখ ৮৩ হাজার ১৮ টাকা এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় খরচ ধরা হয়েছে ৬ লাখ ৭২ হাজার ৬১৮ টাকা।

হজ প্যাকেজের খরচ বৃদ্ধির অন্যতম কারণ হিসেবে বিমান ভাড়ার কথা বলা হচ্ছে। গত বছর বিমান ভাড়া ধরা হয়েছিল এক লাখ ৪০ হাজার টাকা, আর এ বছর বিমান ভাড়া ধরা হয়েছে এক লাখ ৯৭ হাজার ৭৯৭টাকা।

গত বছর সরকারিভাবে দুটি প্যাকেজের মাধ্যমে হজ হয়। প্যাকেজ-১ এর ক্ষেত্রে এবার খরচ বেড়েছে ৯৬ হাজার ৬৭৮ টাকা, প্যাকেজ-২ এর ক্ষেত্রে এবার খরচ বেড়েছে এক লাখ ৬১ হাজার ৮৬৮ টাকা। বেসরকারিভাবে হজ পালনে গত বছরের তুলনায় এবার খরচ বেড়েছে এক লাখ ৪৯ হাজার ৮৭৪ টাকা।

দিনাজপুরের হজ এজেন্ট আহসান হাবিবের ভাষ্য, “কেউ বলছেন, এত টাকা দিয়ে যাব না; সামনের বছর দেখি। আবার কেউ অসুস্থ বলছে, আবার কেউ কেউ মারা গেছেন। কিন্তু অধিকাংশই টাকার বৃদ্ধির কারণে যেতে পারছেন না।”

সারাদেশের জনা বিশেক হজ এজেন্টের সঙ্গে কথা বলে একই ধরনের উত্তর মিললো।

জয়পুরহাটের আল সেকান্দার ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস এজেন্সির মালিক সেকান্দার আলী বললেন, “গত বছর ১৭৬ জনকে হজে পাঠিয়েছি। কিন্তু এ বছর এ পর্যন্ত নিবন্ধন করেছে ৩২ জন।”

বেশিরভাগ লোকই নিবন্ধন না করার পেছনে প্যাকেজ মূল্য বৃদ্ধিকে দায়ী করছেন বলে জানান তিনি।

খরচের কারণে নিরুৎসাহ

ঢাকার কেরাণীগঞ্জের কালিন্দী ইউনিয়নের চড়াইল গ্রামের বাসিন্দা গোলাম মোস্তফা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, স্বামী-স্ত্রী দুজন হজে যাওয়ার জন্য ৩০ হাজার ৭৫২ টাকা দিয়ে প্রাক-নিবন্ধন করেন, আর হজে যাওয়ার সম্ভাব্য সাল ছিল ২০২০ সালে।

“২০২০ সালে হজে যাওয়ার প্যাকেজ মূল্য ছিল সাড়ে তিন লাখ টাকার মত, আর স্বামী-স্ত্রী দুজনের পুরো হজ করতে ৮ লাখ টাকাই যথেষ্ট ছিল। কিন্তু এখন দুজনের হজেই খরচ হচ্ছে ১৪ লাখ আর বাড়তি আর এক লাখ টাকা ধরলে হবে ১৫ লাখ টাকা।

“এত টাকা আমাদের চিন্তায়ও ছিল না। মাত্র দুবছরের ব্যবধানে দ্বিগুণ বেড়ে যাওয়ায় হজে যাওয়া সম্ভব নয়।”

হজে যেতে ইচ্ছুক সাদেকুর রহমান নামের এক ব্যাংকার বললেন, “হজে সাধারণত মধ্যবিত্ত মানুষ বেশি যায়। খুব বড় লোক কিন্তু হজে বেশি যায় না। হঠাৎ এভাবে প্যাকেজ মূল্য বৃদ্ধির কারণে মানুষের মধ্যে আগ্রহ অনেক কমে গেছে।”

নাটোরের হজ এজেন্ট জরিনা ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরসের মালিক জহিরুল ইসলাম বললেন, “বিমান ভাড়া কম হলেই নিবন্ধনের গতি বাড়ত।

“অন্য সময় বিমানগুলো ৭০ শতাংশ যাত্রী বহন করে, আর হজের যাত্রী ফুল বহন করে। কিন্তু হজের যাত্রীদের কাছ থেকে সিঙ্গেল ট্রিপের দোহাই দিয়ে বিমান ভাড়া বেশি নিচ্ছেন। এছাড়া ডলার ও রিয়ালের মূল্য বৃদ্ধির কারণেও এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।”

Also Read: হজে যেতে নিবন্ধন শুরু ৮ ফেব্রুয়ারি

Also Read: হজে নিবন্ধন করা যাবে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত

নিবন্ধনে ভাটা

এ বছর চাঁদ দেখা সাপেক্ষে ২৭ জুন হজ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশ থেকে এক লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন হজ করতে যেতে পারবেন। তার মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ১৫ হাজার আর এক লাখ ১২ হাজার ১৯৮ জন বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজ করতে যাবেন।

মন্ত্রণালয়ের হজ সম্পর্কিত ডেটায় দেখা যায়, সোমবার পর্যন্ত সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজে যাওয়ার জন্য নিবন্ধন করেছেন ৭ হাজার ১৯০ জন। আর বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজে যাওয়ার জন্য নিবন্ধন করেছেন মাত্র ১৮ হাজার ৬০৬ জন।

সোমবার শেষ ঘণ্টায় (বিকাল ৩-৪টা) সরকারি ব্যবস্থাপনায় কোনো হজযাত্রী নিবন্ধন করেননি। তবে এ দিনে নিবন্ধন করেছেন ১৩৪ জন।

বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজে যাওয়ার জন্য সোমবার শেষ ঘণ্টায় ৫০১ জন নিবন্ধন করেছেন, আর পুরোদিনে করেছেন ৩ হাজার ৪৩২ জন।

এদিকে হজ যেতে সরকারিভাবে প্রাক-নিবন্ধন করেছেন ৮ হাজার ৫২০ জন, আর বেসরকারিভাবে নিবন্ধন করেছেন ২ লাখ ৪২ হাজার ৭৭৩ জন।

নিবন্ধন ধীরে হলেও হজযাত্রীর কোটা পূরণ হওয়া নিয়ে কোনো সংশয় দেখছেন না ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান দুলাল।

সোমবার রাতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “নিবন্ধনের আরও একদিন বাকি রয়েছে। দেখা যাক কী হয়।”

নিবন্ধনে ভাটা পড়ার পেছনে খরচ বৃদ্ধিকে সবাই দায়ী করছেন, এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, “সবার সঙ্গে বসে মিটিং করে সব ধরনের হিসাব-নিকাশ করেই প্যাকেজ নির্ধারণ করা হয়েছে।”

চুক্তি অনুযায়ী কোটা পূরণ না হলে কি কম হজযাত্রী যাবে, এ প্রশ্নের উত্তরে ফরিদুল হক বলেন, “সময় আরও আছে, দেখা যাক কী হয়।”

বর্তমানে হজে যেতে হলে প্রথম ধাপে প্রাক-নিবন্ধন করতে হয়। সারা বছরই এই প্রাক-নিবন্ধন করা যায়, যেটি সম্পন্ন করলে একটি নম্বর দেওয়া হয়। ধারাবাহিকতা রক্ষা করে সেই নম্বর হজের জন্য নির্বাচিত হলে তা এসএমএস ও ওয়েবসাইটের মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হয়। কেবল নির্বাচিত হলেই নিবন্ধন সম্পন্ন করা যায়।

হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) সহ-সভাপতি মাওলানা ইয়াকুব শরাফতী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সব ঠিক হয়ে যাবে। হজযাত্রীরা ভেঙ্গে ভেঙ্গে ধীরে ধীরে টাকা দেয়।

“কোটার দ্বিগুণ মানুষ প্রাক-নিবন্ধন করে রেখেছে। সুতরাং কোটা পূরণ হবে।”

ধর্ম মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মার্চ মাসের ১৫ তারিখ পর্যন্ত নিবন্ধনের সময় বাড়তে পারে, আর তখন সব ঠিক হয়ে যাবে।”

এ বছর শতভাগ হজযাত্রীর ইমিগ্রেশন ঢাকায় হবে, থাকছে না ৬৫ বছরের বয়সসীমা। তবে ১২ বছরের কম বয়সী কেউ হজে যেতে পারবে না।