মামলায় আসামি হিসেবে কারও নাম উল্লেখ করা হয়নি। এ ঘটনায় সাতজনকে এরই মধ্যে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
Published : 18 Jul 2023, 04:25 PM
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাফুল হোসেন আলম ওরফে হিরো আলমের ওপর হামলার ঘটনায় মামলা করেছেন তার সহকারী সুজন রহমান শুভ।
মঙ্গলবার দুপুরে বনানী থানায় করা এ মামলায় হত্যাচেষ্টার অভিযোগ আনা হলেও আসামি হিসেবে কারও নাম উল্লেখ করা হয়নি বলে জানিয়েছেন ওসি মোস্তাফিজুর রহমান।
আগের দিন ভোট শেষ হওয়ার আগে সোয়া ৩টার দিকে বনানী বিদ্যানিকেতন স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে গিয়ে হামলার শিকার হন হিরো আলম।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ভোটকেন্দ্রের চৌহদ্দিতে স্কুলের মাঠে কয়েকজনের সঙ্গে সেলফি তোলেন হিরো আলম। তখন হামলাকারীদের কয়েকজন এসে তাকে ঘিরে ধরেন এবং বলেন, ‘এটা টিকটক ভিডিও বানানোর জায়গা না।’
এরপর তারা হিরো আলমকে ধাওয়া শুরু করেন। তখন কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যরা হিরো আলমকে ঘিরে ধরে স্কুলের গেইটের দিকে নিয়া যান।
ভিডিওতে দেখা গেছে, স্কুল থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ সদস্যরা কেন্দ্রে ফিরে যায়, আর এই সুযোগে ধাওয়াকারীরা হিরো আলমকে ধাক্কা দিয়ে সড়কের ওপর ফেলে দেন।
এরপর একতারা প্রতীকের প্রার্থীর ওপর লাথি, কিলঘুষি, ধস্তাধস্তি চলে। নৌকার ব্যাজ পরা হামলাকারীদের কয়েকজনের হাতে লাঠিসোঁটাও ছিল। মারধরের মুখে দৌড়ে পালান হিরো আলম।
এজাহারে বলা হয়, “সোমবার নির্বাচনের দিন বিকেলে হিরো আলম, তার ব্যক্তিগত সহকারী পরান সরকার, প্রতিনিধি রাজীব খন্দকার, রনি ও আল আমিনসহ বনানী বিদ্যা নিকেতন কেন্দ্রে যান।
"বেলা পৌনে ৪টার দিকে কেন্দ্র পরিদর্শন শেষে বের হয়ে আসার সময় অজ্ঞাতনামা ১৫-২০ জন ব্যক্তি হত্যার উদ্দেশ্যে হিরো আলমের ওপর হামলা চালায়।"
এতে আরও অভিযোগ করা হয়, “তারা আলমকে এলোপাতাড়ি কিল, ঘুষি লাথি মারতে থাকে। এসময় দুজন আলমের কলার ধরে তার শ্বাসরোধ করার চেষ্টা করে, অপর একজন এসে আলমের তলপেটে লাথি দিলে তিনি রাস্তায় পড়ে যান। রাস্তায় পড়ে যাওয়ার পরেও তারা আলমকে মারধর ও টানাহেঁচড়া করে।”
হামলার পর রামপুরার বেটার লাইফ হাসপাতালে চিকিৎসা নেন হিরো আলম। সেখান থেকে ফিরে রাতে জানান, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে আর নির্বাচন করবেন না তিনি।
গ্রেপ্তার ৭
হিরো আলম মামলা করার আগেই এই ঘটনায় সাত জনকে গ্রেপ্তার করার কথা জানিয়েছে পুলিশ।
ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) হারুন অর রশিদ মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানিয়ে বলেছেন, ভিডিও দেখে আর যারা জড়িত, তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টাও চলছে।
গ্রেপ্তারদের রাজনৈতিক পরিচয় জানতে চাইলে এ পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, “রাজনৈতিক পরিচয় যাই থাক, সেটা বিবেচনায় আসবে না।”
নানামুখি প্রতিক্রিয়া
নির্বাচনের প্রার্থী হিরো আলমের ওপর এই হামলার ঘটনায় প্রতিক্রিয়া এসেছে যুক্তরাষ্ট্র ও জাতিসংঘের তরফেও।
সোমবার যুক্তরাষ্ট্রে এক ব্রিফিংয়ে দেশটির পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার বলেন, “গণতান্ত্রিক নির্বাচনে এ ধরনের রাজনৈতিক সহিংসতার কোনো স্থান নেই।
“যে কোনো সহিংসতার ঘটনার পূর্ণ, স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ তদন্ত এবং জড়িতদের জবাবদিহিতার আওতায় আনতে আমরা বাংলাদেশ সরকারকে উৎসাহিত করছি।”
ওই ঘটনার একটি খবর যুক্ত করে মঙ্গলবার এক টুইটে উদ্বেগ প্রকাশ করেন ঢাকায় জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি গোয়েন লুইস।
তিনি লিখেছেন, “ঢাকা-১৭ উপনির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাফুল আলমের ওপর হামলার ঘটনায় জাতিসংঘের বাংলাদেশ কার্যালয় উদ্বিগ্ন। সহিংসতা ছাড়াই প্রত্যেকের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার মৌলিক মানবাধিকার অবশ্যই নিশ্চিত ও সুরক্ষিত করতে হবে।”
এই ঘটনায় প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও। তিনি বলেছেন, ‘এই সরকার এখন হিরো আলমকেও সহ্য করতে পারছে না।’
২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে ভোটের দিন বগুড়া-৪ আসনেও হামলার শিকার হন হিরো। গত ফেব্রুয়ারিতে সেই আসনে উপনির্বাচনে অল্প ভোটে হেরে যান আলোচিত এই কনটেন্ট ক্রিয়েটর।
পুরনো খবর
হিরো আলমের ওপর হামলায় জাতিসংঘের উদ্বেগ
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ব্রিফিংয়ে হিরো আলম প্রসঙ্গ
এই সরকারের অধীনে আর ভোটে যাব না: হিরো আলম