ভোটার খরা আর স্বতন্ত্র প্রার্থীর উপর হামলার মধ্যে ভোটে জয় হয়েছে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীর।
Published : 17 Jul 2023, 09:40 PM
ঢাকা-১৭ আসনে নিরুত্তাপ উপনির্বাচনে ভোটার খরার মধ্যে জয়ী হয়েছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোহাম্মদ এ আলী আরাফাত।
তিনি নৌকা প্রতীকে পেয়েছেন ২৮ হাজার ৮১৬ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাফুল আলম (হিরো আলম) পেয়েছেন ৫ হাজার ৬০৯ ভোট।
অন্য প্রার্থীদের মধ্যে জাতীয় পার্টির সিকদার আনিসুর রহমান লাঙ্গল প্রতীকে ১,৩২৮ ভোট পেয়েছেন। এছাড়া জাকের পার্টির কাজী রাশিদুল হাসান ৯২৩ ভোট (গোলাপ ফুল), তৃণমূল বিএনপির শেখ হাবিবুর রহমান ২০২ ভোট (সোনালি আঁশ), মুক্তিজোটের আক্তার হোসেন ৬৪ ভোট (ছড়ি), বাংলাদেশ কংগ্রেসের রেজাউল ইসলাম স্বপন ৪৩ ভোট (ডাব), স্বতন্ত্র তারেকুল ইসলাম ৫২ ভোট (ট্রাক) পেয়েছেন।
দিনভর ভোটগ্রহণের পর গণনা শেষে রাত ৯টায় বনানী বিদ্যা নিকেতন স্কুল অ্যান্ড কলেজে স্থাপিত ‘ফলাফল সংগ্রহ ও পরিবেশন কক্ষ’ থেকে রিটার্নিং কর্মকর্তা মুনীর হোসাইন খান এ ফল ঘোষণা করেন।
তিনি জানান, সম্পূর্ণ ব্যালট পেপারে নেওয়া এই নির্বাচনে ৩ লাখ ২৫ হাজার ২০৫ জন ভোটারের মধ্যে ৩৭ হাজার ৩৭ জন ভোট দিয়েছেন, বাতিল হয়েছে ৩৮৩ ভোট।
ফলে ভোটের হার দাঁড়িয়েছে ১১.৫১ শতাংশ। এর আগে করোনাভাইরাস সংক্রমণ আতঙ্কের মধ্যে ঢাকা-১০ আসনে উপনির্বাচনে ইভিএমে মাত্র ৫.২৮ শতাংশ ভোট পড়ার নজির রয়েছে।
ভোটকেন্দ্রে ভোটারের চেয়ে ‘সাংবাদিক বেশি’
আরাফাত আশাবাদী, চিন্তা শুধু ‘ভোটে অনীহা’ নিয়ে
ভোটকেন্দ্রে হিরো আলমের ওপর হামলা
ভোট শান্তিপূর্ণ, হিরো আলমের উপর হামলা কেন্দ্রের বাইরে: আলমগীর
সকালে ভোট দেওয়ার পর নৌকার প্রার্থী আরাফাত সাংবাদিকদের প্রশ্নে নিজের জয়ের বিষয়ে নিঃসংশয়ের কথা জানানোর সঙ্গে ভোটারদের অনীহার কথা বলেছিলেন।
বিএনপিসহ অধিকাংশ দলের বর্জনের মধ্যে অনুষ্ঠিত এই উপনির্বাচনে ভোটারদের অনাগ্রহের বিষয়টি ইসি কর্মকর্তারাও বুঝতে পারছিলেন। দিনভর ভোটচিত্র দেখে ভোটের হার ১২-১৫ শতাংশের মতো হবে বলে ধারণা দিয়েছিলেন নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীরও। তবে ভোটের প্রকৃত হার হয়েছে তারও কম।
আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য আকবর খান পাঠানের (চিত্রনায়ক ফারুক) মৃত্যুতে রাজধানীর ক্যান্টনমেন্ট, বনানী, গুলশান এলাকা নিয়ে গঠিত এ আসনে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের কয়েকমাস আগে উপনির্বাচন হল।
ভোটারদের অনাগ্রহের মধ্যে অনুষ্ঠিত এই উপনির্বাচনে যেটুকু উত্তাপ ছড়ায়, তা ছিল সোশাল মিডিয়ার কল্যাণে আলোচিত ডিজিটাল কনটেন্ট ক্রিয়েটর হিরো আলমকে নিয়ে।
প্রচারে নামার পরই বাধা পাওয়ার অভিযোগ তুলেছিলেন তিনি। সোমবার ভোটগ্রহণ শুরুর পর তিনি নানা অভিযোগ তোলেন। তারপর আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থীও অনিয়মের অভিযোগ তোলেন।
তবে সেসব ছাপিয়ে যায় ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার ঘণ্টা খানেক আগে বনানী বিদ্যানিকেতন স্কুল কেন্দ্রে হিরো আলমের উপর হামলার ঘটনা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ভোটকেন্দ্রের চৌহদ্দিতে স্কুলের মাঠে কয়েকজনের সঙ্গে সেলফি তুলছিলেন হিরো আলম। তখন হামলাকারীদের কয়েকজন এসে তাকে ঘিরে ধরেন এবং বলেন, ‘এটা টিকটক ভিডিও বানানোর জায়গা না’। এরপর হিরো আলমকে ধাওয়া শুরু করেন তারা।
তখন কেন্দ্রটির দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যরা হিরো আলমকে ঘিরে ধরে স্কুলের গেইটে দিয়ে আসেন। এরপর নৌকা প্রতীকের ব্যাজধারী একদল হিরো আলমকে ধাক্কা দিয়ে সড়কের ওপর ফেলে দিয়ে বেধড়ক পেটায়।
হামলায় আহত হিরো আলম হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়ে বাসায় ফিরে সংবাদ সম্মেলন করে বলেন, এরপর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে আর কোনো নির্বাচনে তিনি অংশ নেবেন না।
হিরো আলম এর আগে দুবার বগুড়া থেকে সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলেন। সর্বশেষ বগুড়া-৪ আসনে উপনির্বাচনে তাকে জোর করে হারান হয় বলে তিনি অভিযোগ তোলেন।
ভোটগ্রহণ শেষে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আরাফাত প্রতিদ্বন্দ্বী হিরো আলমের উপর হামলাকারীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান।
“যদি তারা আমাদের দলের কর্মী হয়, তাহলে দলের পক্ষ থেকে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমি চাই সত্যটা উন্মোচিত হোক,” বলেন তিনি।
হিরো আলমের উপর হামলার ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করলেও নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর দাবি করেছেন, ঘটনাটি ঘটেছে ভোট কেন্দ্রের বাইরে।
ভোট শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি বলেন, এই ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে পুলিশ ব্যবস্থা নেবে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) পক্ষ থেকে বলা হয়েেছ, হামলায় জড়িত থাকার অভিযোগে চারজনকে গ্রেপ্তার করেছেন তারা।
সার্বিকভাবে ভোটগ্রহণ সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হয়েছে বলে দাবি করেন নির্বাচন কমিশনার আলমগীর। তিনি বলেন, “নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হয়েছে। আমি নিজেও সকালে ৮-১০ কেন্দ্র পরিদর্শন করেছি, শান্তিপূর্ণ দেখেছি। আমাদের আরেক নির্বাচন কমিশনারও গেছেন। প্রত্যেকটি কেন্দ্রে শাান্তিপূর্ণ হয়েছে। সিসি ক্যামেরাও দেখেছি আমরা।”
উপনির্বাচনে জয়ী আরাফাত কয়েক মাসের জন্য সংসদে প্রতিনিধিত্ব করতে পারছেন। কেননা, আগামী ডিসেম্বর কিংবা জানুয়ারিতে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হবে।
রাজনীতিতে নবীন আরাফাত প্রথমবার ভোটে দাঁড়িয়েই জয়ী হলেন।
টেলিভিশন ‘টক শো’তে এসে পরিচিতি পাওয়া আরাফাত এখন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনিবাহী কমিটির সদস্য। সুচিন্তা ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান তিনি। কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের ট্রাস্টি বোর্ডে প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে রয়েছেন তিনি।
শিক্ষক আরাফাতের আয় বছরে সোয়া কোটি, ব্যবসায়ী আনিসুর পান ১৮ লাখ