পূর্বাচলে ‘প্লট দুর্নীতির’ ছয় মামলার মধ্যে প্রথম মামলার অভিযোগপত্র আমলে নিয়ে পরোয়ানা জারি করল আদালত।
Published : 10 Apr 2025, 12:05 PM
ঢাকার পূর্বাচলে প্লট বরাদ্দে দুর্নীতির অভিযোগে দুদকের করা এক মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলসহ ১৮ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত।
দুদকের দেওয়া অভিযোগপত্র আমলে নিয়ে ঢাকা মহানগরের জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ জাকির হোসেন গালিব বৃহস্পতিবার পরোয়ানা জারির এ আদেশ দেন।
পরোয়ানা জারি হওয়া অপর আসামিরা হলেন- জাতীয় গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম সরকার, জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব পুরবী গোলদার, অতিরিক্ত সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন, সচিব মো. শহীদ উল্লা খন্দকার, রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যানের পিএ মো. আনিছুর রহমান মিঞা, রাজউকের সাবেক সদস্য মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, কবির আল আসাদ, তন্ময় দাস, মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন, মেজর (ইঞ্জি.) সামসুদ্দীন আহমদ চৌধুরী (অব.), মো. নুরুল ইসলাম, পরিচালক শেখ শাহিনুল ইসলাম, উপপরিচালক মো. হাফিজুর রহমান, হাবিবুর রহমান, মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন এবং শরীফ আহমেদ।
আদালতে দুদকের প্রসিকিউশন বিভাগের সহকারী পরিচালক আমিনুল ইসলাম বলেন, “১৮ আসামির বিরুদ্ধে চার্জশিট গ্রহণ করেছেন আদালত। তারা পলাতক থাকায় আদালত গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন। পরোয়ানা তামিল বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আগামী ৪ মে দিন রাখা হয়েছে।”
‘ক্ষমতার অপব্যবহার ও অনিয়মের’ মাধ্যমে রাজউকের পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে প্লট বরাদ্দ নেওয়ার অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে ছয়টি মামলা হয়েছে।
এর মধ্যে পুতুল ও তার মা শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে করা মামলার অভিযোগপত্র গ্রহণ করে আদালত গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করল।
এর আগে গণহত্যা, গুম ও শাপলা চত্বরে হত্যার অভিযোগে তিন মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করলেও দুর্নীতি মামলায় এই প্রথম তাকে গ্রেপ্তারের আদেশ দিল আদালত।
২০২৪ সালের ৫ অগাস্ট গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হয় শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার। সে দিন ভারতে পালিয়ে যান তিনি। তার পরিবারের অন্যরাও দেশের বাইরে।
তাদের নামে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে ছয়টি প্লট বরাদ্দে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে গত ডিসেম্বরে অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। পরে কয়েক ধাপে ছয়টি মামলা করা হয়, যার মধ্যে পুতুলের প্লট নিয়ে মামলাটি করা হয় চলতি বছরের ১২ জানুয়ারি।
দুদকের সহকারী পরিচালক আফনান জান্নাত কেয়া দণ্ডবিধি, ১৮৬০ এর ১৬১/১৬৩/১৬৪/৪০৯/১০৯ ধারাসহ দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭ এর ৫(২) ধারায় মামলাটি দায়ের করেন।
মামলার এজাহারে বলা হয়, পুতুলের নিজের বা তার পরিবারের অন্য সদস্যদের মালিকানায় ঢাকা শহরে রাজউকের এলাকায় বাড়ি বা ফ্ল্যাট বা আবাসন সুবিধা রয়েছে। এ তথ্য ‘গোপন’ করে রাজউকের আরেক প্রকল্প পূর্বাচল নতুন শহরের ২৭ নম্বর সেক্টরের ২০৩ নম্বর রাস্তার ১৭ নম্বর প্লট বরাদ্দ নিয়েছেন পুতুল। সরকারের সর্বোচ্চ পদে থাকাকালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ ক্ষেত্রে দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারীদের ‘প্রভাবিত ও ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন’।
এজাহারে বলা হয়, আসামিরা একে অন্যের সঙ্গে ‘যোগসাজশ করে নিজেরা লাভবান হয়ে ও অন্যকে লাভবান করার জন্য’ পুতুলের নামে প্লট বরাদ্দ নিয়েছেন। এক্ষেত্রে তাদের বিরুদ্ধে ঘুষ লেনদেনের অভিযোগও আনা হয়েছে।
মামলাটি তদন্ত করে গত ১০ মার্চ অভিযোগপত্র দাখিল করেন আফনান জান্নাত কেয়া। এজাহারের ১৬ আসামির সঙ্গে আরো দুজনের নাম যোগ করে মোট ১৮ জনের বিরুদ্ধে ওই অভিযোগপত্র আদালতে জমা দেন তিনি।
বাকি পাঁচব মামলাতেও ইতোমধ্যে অভিযোগপত্র জমা দিয়েছে দুদক। আগাসী ১৩ এপ্রিল দুটি এবং ১৫ এপ্রিল তিনটি অভিযোগপত্র আদালতে তোলা হবে গ্রহণযোগ্যতার শুনানির জন্য।
শেখ হাসিনাকে এই ছয় মামলাতেই আসামি করা হয়েছে। এছাড়া তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, বোন শেখ রেহানা, ভাগ্নি ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ সিদ্দিক, আজমিনা সিদ্দিক রূপন্তী ও ভাগ্নে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিকের নাম রয়েছে আসামির তালিকায়।
আরও পড়ুন:
শেখ পরিবারের নামে রাজউকের প্লট বরাদ্দে 'অনিয়ম' তদন্তে কমিটি