ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ আদালতে ২৪ মার্চ ছয়টি মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করে দুদক।
Published : 09 Apr 2025, 12:31 AM
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে ‘ক্ষমতার অপব্যবহার ও অনিয়মের’ মাধ্যমে রাজউকের পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে প্লট বরাদ্দ নেওয়ার অভিযোগে করা মামলার অভিযোগপত্র গ্রহণের শুনানি বৃহস্পতিবার শুরু হতে যাচ্ছে।
৬০ কাঠার ছয়টি প্লট বরাদ্দ নেওয়ার ক্ষেত্রে দুর্নীতির পৃথক ছয় মামলার অভিযোগপত্র দাখিলের ১৫ দিন পর ঢাকা মহনগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ আদালতে তিন ধাপে সেগুলো গ্রহণের শুনানি শুরু হচ্ছে।
দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদকের এক কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে এ তথ্য দিয়েছেন।
শুনানি শেষে অভিযোগপত্র গৃহীত হলে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে বিচার শুরু হবে।
গত ২৪ মার্চ ঢাকা মহানগরের জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ আদালতে পূর্বাচলে প্লট দুর্নীতির ছয় মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করে দুদক।
এসব মামলায় শেখ হাসিনা পরিবারের সাতজনকে আসামি করা হয়েছে। তারা হলেন- সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ (পুতুল), বোন শেখ রেহানা, ভাগ্নি ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ সিদ্দিক, আজমিনা সিদ্দিক রূপন্তী ও ভাগ্নে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক।
তাদের সঙ্গে আসামি করা হয়েছে রাজউক এবং গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের ১৬ কর্মকর্তা, যাদের নাম ছয় নাম মামলায় আলাদাভাবে এসেছে।
এ মামলাগুলোর মধ্যে ১০ এপ্রিল একটি, ১৩ এপ্রিল তিনটি ও ১৫ এপ্রিল তিনটির অভিযোগপত্র আদালতে শুনানির জন্য তোলা হবে।
দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা ও উপপরিচালক আকতারুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আদালতে অভিযোগপত্র জমা দিলে অভিযোগপত্র আদালতে গৃহীত হবে কি না তার জন্য শুনানি হয়। অভিযোগপত্র গৃহীত হলে আদালত পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।”
দুদক কর্মকর্তা বলেন, ১০ এপ্রিল আদালতে তোলা হবে শেখ হাসিনা ও তার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ (পুতুল) বিরুদ্ধে করা মামলার অভিযোগপত্র। এই মামলায় আসামি মোট ১৬ জন।
১৩ এপ্রিল আদালতে তোলা হবে দুইটি মামলার অভিযোগপত্র। এর একটিতে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বোন শেখ রেহানা, তার মেয়ে ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ সিদ্দিক ও শেখ হাসিনাসহ ১৫ জন আসামি।
অন্যটিতে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক, টিউলিপ সিদ্দিক, শেখ হাসিনাসহ আসামি ১৬ জন।
সেদিনই শেখ রেহেনার আরেক মেয়ে আজমিনা সিদ্দিক, টিউলিপ সিদ্দিক ও শেখ হাসিনার মামলার অভিযোপত্রও আদালত শুনবেন। এ মামলায় আসামি ১৬ জন।
১৫ এপ্রিল শেখ হাসিনাসহ আটজনের বিরুদ্ধে করা আরেকটি মামলার অভিযোগপত্র আদালতে তোলা হবে। একই দিন বাকি মামলাটিরও অভিযোগপত্র গ্রহণের শুনানি হবে, যেখানে আসামি শেখ হাসিনা ও তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়সহ ১৫ জন।
দুদকের মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন প্লট দুর্নীতির মামলার শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিলের তথ্য দিয়েছিলেন।
এর আগে গত ১০ মার্চ ছয় মামলায় শেখ হাসিনা পরিবারের সাতজনসহ মোট ২৩ জনকে আসামি করে অভিযোগপত্র অনুমোদন করা করে দুদক।
২০২৪ সালের ৫ অগাস্ট অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বোন শেখ রেহানাকে নিয়ে ভারতে চলে যান। তখন থেকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী সেখানেই আছেন। তার পরিবারের অন্য সদস্যরাও বিদেশে অবস্থান করছেন।
ক্ষমতার পালাবদলের পর শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে ‘দুর্নীতির’ অনুসন্ধান শুরু করে দুদক।
এছাড়া শেখ হাসিনা, তার সরকারের মন্ত্রী, এমপি ও দলের শীর্ষ সারির নেতাদের বিরুদ্ধে হত্যা, হত্যাচেষ্টা, গণহত্যার কয়েক’শ মামলা হয়েছে। জয়, পুতুল, রেহানা ও ববিকেও সহিংসতার ঘটনায় করা মামলার আসামি করা হয়েছে।
প্লট দুর্নীতির ছয়টি মামলার মধ্যে গত ১৪ জানুয়ারি ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের বিরুদ্ধে দুটি মামলা করে দুদক। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ছেলে জয় ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবৈতনিক তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা।
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলায় গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এবং রাজউকের কর্মকর্তাসহ আসামি মোট আটজন। জয়ের বিরুদ্ধে করা মামলায় তার মাসহ মোট ১৫ জনকে আসামি করা হয়।
দুদক কর্মকর্তা বলেছেন, শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সরকারের সর্বোচ্চ পদে দায়িত্ব পালনকালে নিজ ‘ক্ষমতার অপব্যবহার’ করে পূর্বাচল প্রকল্পের কূটনৈতিক এলাকায় ২৭ নম্বর সেক্টরের ২০৩ নম্বর রাস্তায় নিজের ও ছেলে নামে প্লট বরাদ্দ নিয়েছেন।
প্রাথমিক অনুসন্ধানে প্লট বরাদ্দের ক্ষেত্রে ‘অনিয়মের’ তথ্য পাওয়ার পর মামলা করেছে সংস্থাটি।
হাসিনা ও জয়ের বিরুদ্ধে মামলার আগে গত ১২ জানুয়ারি প্লট বরাদ্দের ক্ষেত্রে একই অভিযোগে পুতুলের বিরুদ্ধে প্রথম মামলা করে দুদক।
১৩ জানুয়ারি শেখ রেহানা, তার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি ও মেয়ে আজমিনা সিদ্দিক রূপন্তীর বিরুদ্ধে মামলা করে সংস্থাটি। এসব মামলায় শেখ হাসিনাকেও আসামি করা হয়েছে।
এ ছাড়া রেহানা ও তার ছেলে-মেয়ের বিরুদ্ধে করা মামলায় তার আরেক মেয়ে যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রতিমন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিককে আসামি করা হয়।
এসব মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে শেখ হাসিনা নিজের মালিকানায় ও তার ছেলে, মেয়ে, বোন এবং বোনের দুই ছেলে-মেয়ের নামে ঢাকা শহরে বাড়ি বা ফ্ল্যাট বা আবাসন সুবিধা থাকার পরেও সেই তথ্য গোপন করে পূর্বাচল নতুন শহর আবাসন প্রকল্পের প্লট বরাদ্দ নিয়েছেন। এতে বরাদ্দ সংক্রান্ত আইন ও নীতিমালা লঙ্ঘন হয়েছে।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী তার দপ্তরসহ প্রকল্পের বরাদ্দ বিষয়ক দায়িত্বপ্রাপ্ত গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এবং রাজউকের কর্মচারীদের প্রভাবিত করে ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন।
মামলার বিবরণ অনুযায়ী, ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ তার মা রেহানা, বোন আজমিনা সিদ্দিক ও ভাই ববির প্লট নিশ্চিতে খালা শেখ হাসিনার ওপর চাপ প্রয়োগ ও প্রভাব বিস্তার করেন।
আর শেখ হাসিনা তার বোনের প্লট নিশ্চিতে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে রাজউকের চেয়ারম্যানকে নির্দেশনা দেন।
তার আগে অক্টোবর মাসে শেখ হাসিনার পরিবারের ছয় সদস্যের নামে পূর্বাচলে প্লট বরাদ্দে অনিয়ম নিয়ে সংবাদমাধ্যমে আসা অভিযোগ তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করে দেয় হাই কোর্ট।
একইসঙ্গে এ কমিটিকে আওয়ামী লীগ সরকারের গত ১৫ বছরে (২০০৯ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে) রাজউকের প্লট বরাদ্দে অনিয়মের অভিযোগও তদন্ত করতে বলা হয়।