শিগগিরই অভিযোগপত্র আদালতে দাখিলের কথা বলছেন মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন।
Published : 10 Mar 2025, 05:14 PM
‘ক্ষমতার অপব্যবহার ও অনিয়মের মাধ্যমে’ রাজউকের পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে ৬০ কাঠার প্লট বরাদ্দ নেওয়ার অভিযোগে করা ছয়টি মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্য মিলিয়ে সাতজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র অনুমোদন দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
সংস্থাটির মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন বলেন, সোমবার এসব অভিযোগপত্র অনুমোদন দেওয়া হয়। শিগগিরই সেগুলো আদালতে দাখিল করা হবে।
ছয়টি মামলার আসামিরা হলেন- সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ (পুতুল), বোন শেখ রেহানা, ভাগ্নি ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ সিদ্দিক, আজমিনা সিদ্দিক ও ভাগ্নে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক।
অনিয়মের মাধ্যমে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা পরিবারের সদস্যদের নামে পূর্বাচলে রাজউকের প্রতিটি ১০ কাঠা করে মোট ৬০ কাঠার প্লট বরাদ্দ দেওয়ার অভিযোগে মামলাগুলো করেছে দুদক।
ছয়টি মামলার মধ্যে গত ১৪ জানুয়ারি ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের বিরুদ্ধে দুটি মামলা করে দুদক। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ছেলে জয় ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবৈতিক তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা।
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলায় গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এবং রাজউকের কর্মকর্তাসহ আসামি মোট আটজন। জয়ের বিরুদ্ধে করা মামলায় তার মাসহ মোট ১৫ জনকে আসামি করা হয়।
দুদক কর্মকর্তা বলেছেন, শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সরকারের সর্বোচ্চ পদে দায়িত্ব পালনকালে নিজ ক্ষমতার অপব্যবহার করে পূর্বাচল প্রকল্পের কূটনৈতিক এলাকায় ২৭ নম্বর সেক্টরের ২০৩ নম্বর রাস্তায় প্লট নিজের ও ছেলে নাম বরাদ্দ নিয়েছেন। প্রাথমিক অনুসন্ধানে প্লট বরাদ্দের ক্ষেত্রে ‘অনিয়মের’ তথ্য পাওয়ার পর মামলা করেছে সংস্থাটি।
হাসিনা ও জয়ের বিরুদ্ধে মামলার আগে গত ১২ জানুয়ারি প্লট বরাদ্দের ক্ষেত্রে ক্ষমতার অপব্যবহার ও নিয়মের অভিযোগে পুতুলের বিরুদ্ধে প্রথম মামলা করে দুদক। ১৩ জানুয়ারি শেখ রেহানা ও তার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি এবং মেয়ে আজমিনা সিদ্দিক রূপন্তীর বিরুদ্ধে মামলা করে সংস্থাটি। এসব মামলায় শেখ হাসিনাকেও আসামি করা হয়েছে।
এ ছাড়া রেহানা ও তার ছেলে-মেয়ের বিরুদ্ধে করা মামলায় তার আরেক মেয়ে যুক্তরাজ্যের প্রতিন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিককে আসামি করা হয়।
শেখ হাসিনার মামলায় আরও ৭ আসামি
গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব পূরবী গোলদার, রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান মো: আনিছুর রহমান মিঞা, সাবেক সদস্য শফি উল হক, সাবেক সদস্য মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন, সদস্য (উন্নয়ন), অবসরপ্রাপ্ত মেজর (ইঞ্জিনিয়ার) সামসুদ্দীন আহমদ চৌধুরী, সদস্য মোহাম্মদ খুরশীদ আলম ও উপপরিচালক নায়েব আলী শরীফ।
জয়ের বিরুদ্ধে মামলায় আসামি যারা
গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো: সাইফুল ইসলাম সরকার, সিনিয়র সহকারী সচিব পূরবী গোলদার, অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) কাজী ওয়াছি উদ্দিন ও সচিব মো: শহীদ উল্লা খন্দকার।
এ ছাড়া রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান মো: আনিছুর রহমান মিঞা, সাবেক সদস্য (এস্টেট ও ভূমি) মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, সদস্য তন্ময় দাস, (উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ), সাবেক সদস্য মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন, সদস্য (উন্নয়ন), অবসরপ্রাপ্ত মেজর (ইঞ্জিনিয়ার) সামসুদ্দীন আহমদ চৌধুরী, পরিচালক মো: কামরুল ইসলাম, সহকারী পরিচালক মাজহারুল ইসলাম, উপপরিচালক নায়েব আলী শরীফ ও পরিচালক মো: নুরুল ইসলাম।
দুই মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে শেখ হাসিনা নিজের মালিকানায় ও তার ছেলে, মেয়ে, বোন এবং বোনের দুই ছেলে-মেয়ের নামে ঢাকা শহরে বাড়ি বা ফ্ল্যাট বা আবাসন সুবিধা থাকার পরেও সেই তথ্য গোপন করে পূর্বাচল নতুন শহর আবাসন প্রকল্পের প্লট বরাদ্দ নিয়েছেন। এতে বরাদ্দ সংক্রান্ত আইন ও নীতিমালা লঙ্ঘন হয়েছে।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী তার দপ্তরসহ প্রকল্পের বরাদ্দ বিষয়ক দায়িত্বপ্রাপ্ত গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এবং রাজউকের কর্মচারীদের প্রভাবিত করে ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন।
পুতুলের মামলায় আরও আসামি
জাতীয় গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম সরকার, সিনিয়র সহকারী সচিব পুরবী গোলদার, অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) কাজী ওয়াছি উদ্দিন, সচিব মো: শহীদ উল্লা খন্দকার, রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান মো. আনিছুর রহমান মিঞা, সাবেক সদস্য (এস্টেট ও ভূমি) মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, সদস্য (প্রশাসন ও অর্থ) কবির আল আসাদ, সদস্য (উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ) তন্ময় দাস, সাবেক সদস্য (পরিকল্পনা) মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন, সাবেক সদস্য (উন্নয়ন) মেজর (ইঞ্জিনিয়ার) সামসুদ্দীন আহমদ চৌধুরী (অবসরপ্রাপ্ত), উপপরিচালক (এস্টেট ও ভূমি) মো. হাফিজুর রহমান, উপপরিচালক (চলতি দায়িত্ব) এস্টেট ও ভূমি, হাবিবুর রহমান, পরিচালক (এস্টেট ও ভূমি) শেখ শাহিনুল ইসলাম, সদস্য (এস্টেট ও ভূমি) মো. নুরুল ইসলাম।
রেহানার মামলার আসামি ১৫
রেহানার মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিক, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম সরকার, সিনিয়র সহকারী সচিব পূরবী গোলদার, অতিরিক্ত সচিব অলিউল্লাহ, অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) কাজী ওয়াছি উদ্দিন, রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান মিঞা, সাবেক সদস্য (এস্টেট ও ভূমি) মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, সদস্য (উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ) তন্ময় দাস, সাবেক সদস্য (পরিকল্পনা) মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন, সদস্য (উন্নয়ন) সামসুদ্দীন আহমদ চৌধুরী, সহকারী পরিচালক (এস্টেট ও ভূমি) মাজহারুল ইসলাম, উপপরিচালক (এস্টেট ও ভূমি) নায়েব আলী শরীফ, ও সাবেক পরিচালক নুরুল ইসলাম।
দুদক মামলায় বলেছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার দপ্তরসহ গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এবং রাজউকের কর্মকর্তাদের প্রভাবিত করে রেহানার নামে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে ১০ কাঠার প্লট বরাদ্দ দেন।
রাজউক, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন দপ্তরের নথি পর্যালোচনা করে দুদক দেখেছে, রেহানা তার আয়কর রিটার্নে ঢাকার সেগুনবাগিচায় একটি ফ্ল্যাট থাকার কথা উল্লেখ করেছেন। কোনাবাড়ীতে ১৬০ শতাংশ কৃষি জমি থাকার কথাও আয়কর রিটার্নে দেখিয়েছেন তিনি।
আর মা রেহানার কাছ থেকে গুলশানের তিনটি ফ্ল্যাট দানসূত্রে পাওয়ার কথা জানিয়েছেন রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি। তিনি ও তার বোন রূপন্তীর নামে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে ১০ কাঠা করে প্লট বরাদ্দ রয়েছে। এছাড়া রেহানার বড় বোন শেখ হাসিনা, ভাগ্নি পুতুল ও ভাগ্নে জয়ের নামেও পূর্বাচলে ১০ কাঠা করে প্লট রয়েছে। অথচ এসব তথ্য গোপন করে রেহানা পূর্বাচলে প্লট নিয়েছেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে এজাহারে।
দুদক বলছে, রাজউক এলাকায় রেহানা ও তার পরিবারের ফ্ল্যাট বা আবাসন সুবিধা থাকার পরও তা হলফনামায় গোপন করে পূর্বাচল নতুন শহর আবাসন প্রকল্পে প্লট বরাদ্দ সংক্রান্ত আইন, বিধি ও নীতিমালা ও আইনানুগ পদ্ধতি লঙ্ঘন করেছেন।
মামলার বিবরণ অনুযায়ী, ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ তার মা রেহানা, বোন রূপন্তী ও ভাই বোনের প্লট নিশ্চিতে খালা শেখ হাসিনার ওপর চাপ প্রয়োগ ও প্রভাব বিস্তার করেন। আর শেখ হাসিনা তার বোনের প্লট নিশ্চিতে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে রাজউকের চেয়ারম্যানকে নির্দেশনা দেন। প্লট বরাদ্দে বিধি লঙ্ঘনের প্রমাণ পাওয়ার কথা এজাহারে বলেছে দুদক।
ববির মামলায় আসামি ১৬
রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি ছাড়া অন্য আসামিরা হলেন- টিউলিপ সিদ্দিক, শেখ হাসিনা, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম সরকার, সিনিয়র সহকারী সচিব পূরবী গোলদার, অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) কাজী ওয়াছি উদ্দিন, সচিব শহীদ উল্লা খন্দকার, রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান মিঞা, সাবেক সদস্য (এস্টেট ও ভূমি) মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, সদস্য (উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ) তন্ময় দাস, সাবেক সদস্য (পরিকল্পনা) মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন, সদস্য (উন্নয়ন) সামসুদ্দীন আহমদ চৌধুরী, সহকারী পরিচালক (এস্টেট ও ভূমি) ফারিয়া সুলতানা, সহকারী পরিচালক (এস্টেট ও ভূমি) মাজহারুল ইসলাম, পরিচালক (এস্টেট ও ভূমি-২) শেখ শাহিনুল ইসলাম এবং উপপরিচালক (এস্টেট ও ভূমি) নায়েব আলী শরীফ।
মামলার বিবরণ অনুযায়ী, ববি তার আয়কর রিটার্নে তার চাচা তারিক আহমেদ সিদ্দিকের কাছ থেকে গুলশানের পাঁচটি ফ্ল্যাট পাওয়ার কথা জানিয়েছেন। তার মা-বোনের পূর্বাচলে প্লট রয়েছে। এছাড়া তার খালা শেখ হাসিনা এবং সাবেক এ প্রধানমন্ত্রীর ছেলেমেয়েরও প্লট রয়েছে পূর্বাচলে। এসব তথ্য গোপন করে ববি প্লট বরাদ্দ নিয়েছেন, যা পূর্বাচল নতুন শহর আবাসন প্রকল্পে প্লট বরাদ্দ সংক্রান্ত আইন, বিধি ও নীতিমালা ও আইনানুগ পদ্ধতির লঙ্ঘন।
এক্ষেত্রে তার বোন টিউলিপ খালা শেখ হাসিনাকে চাপ প্রয়োগ করে উল্লেখ করে এজাহারে বলা হয়েছে, সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী তার দপ্তরসহ গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এবং রাজউকের কর্মকর্তাদের প্রভাবিত করে ববির নামে প্লট বরাদ্দ করান।
রূপন্তীর মামলার আসামিও ১৬
ভাই ববির মতন রূপন্তীর মামলাতেও আসামির সংখ্যা ১৬। অন্যরা হলেন- টিউলিপ সিদ্দিক, শেখ হাসিনা, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম সরকার, অতিরিক্ত সচিব অলিউল্লাহ, অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) কাজী ওয়াছি উদ্দিন, রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান মিঞা, সাবেক সদস্য (এস্টেট ও ভূমি) মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, সদস্য (উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ) তন্ময় দাস, সাবেক সদস্য (পরিকল্পনা) মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন, সদস্য (উন্নয়ন) সামসুদ্দীন আহমদ চৌধুরী, সাবেক পরিচালক নুরুল ইসলাম, সহকারী পরিচালক (এস্টেট ও ভূমি) মাজহারুল ইসলাম, পরিচালক (এস্টেট ও ভূমি) কামরুল ইসলাম এবং উপপরিচালক (এস্টেট ও ভূমি) নায়েব আলী শরীফ।
মামলার বিবরণ অনুযায়ী, রূপন্তী তার আয়কর রিটার্নে বড় বোন টিউলিপের কাছ থেকে ঢাকার গুলশানে ফ্ল্যাট পাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। তার মা-ভাইয়ের পূর্বাচলে প্লট রয়েছে। এছাড়া তার খালা শেখ হাসিনা এবং সাবেক এ প্রধানমন্ত্রীর ছেলেমেয়েরও প্লট রয়েছে পূর্বাচলে। এসব তথ্য গোপন করে রূপন্তী প্লট বরাদ্দ নিয়েছেন, যা পূর্বাচল নতুন শহর আবাসন প্রকল্পে প্লট বরাদ্দ সংক্রান্ত আইন, বিধি ও নীতিমালা ও আইনানুগ পদ্ধতির লঙ্ঘন।
এক্ষেত্রে তার বোন টিউলিপ খালা শেখ হাসিনাকে চাপ প্রয়োগ করেন বলে এজাহারে অভিযোগ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী তার দপ্তরসহ গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এবং রাজউকের কর্মকর্তাদের প্রভাবিত করে রূপন্তীর নামে প্লট বরাদ্দ করান।
২০২৪ সালের ৫ অগাস্ট গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হয় শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার। সে দিন ভারতে পালিয়ে যান তিনি। তার পরিবারের অন্যরাও দেশের বাইরে।
তারপর ২৬ ডিসেম্বর সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও তার পরিবারের পাঁচ সদস্যের নামে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে ছয়টি প্লট বরাদ্দে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান শুরু করে দুদক।
পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের ২৭ নম্বর সেক্টরের কূটনৈতিক জোনের ২০৩ নম্বর সড়কের আশপাশের এলাকায় শেখ হাসিনা, তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, ছোট বোন শেখ রেহানা এবং তার ছেলে-মেয়ে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ও আজমিনা সিদ্দিকের নামে প্লটগুলো বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
শেখ হাসিনা ১০ কাঠার প্লট (প্লট নম্বর ০০৯) বরাদ্দ পেয়েছেন। ২০২২ সালের ৩ অগাস্ট তার নামে রাজউক প্লটের বরাদ্দপত্র দেয়।
সজীব ওয়াজেদ জয় (প্লট নম্বর ০১৫) এবং মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলও (প্লট নম্বর ০১৭) ১০ কাঠা করে প্লট পেয়েছেন।
জয়ের বরাদ্দপত্র ২০২২ সালের ২৪ অক্টোবর দেওয়া হয় এবং ১০ নভেম্বর মালিকানা সংক্রান্ত রেজিস্ট্রি সম্পন্ন হয়। পুতুলের বরাদ্দপত্র দেওয়া হয় ওই বছরের ২ নভেম্বর।
শেখ রেহানাও ১০ কাঠার প্লট (প্লট নম্বর ০১৩) বরাদ্দ পেয়েছেন। তার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিকের (প্লট নম্বর ০১১) এবং মেয়ে আজমিনা সিদ্দিকের (প্লট নম্বর ০১৯) নামেও একই পরিমাণের প্লট বরাদ্দ হয়েছে।
তার আগে অক্টোবর মাসে শেখ হাসিনার পরিবারের ছয় সদস্যের নামে পূর্বাচলে প্লট বরাদ্দে অনিয়ম নিয়ে সংবাদমাধ্যমে আসা অভিযোগ তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করে দেয় হাই কোর্ট।
একইসঙ্গে এ কমিটিকে আওয়ামী লীগ সরকারের গত ১৫ বছরে (২০০৯ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে) রাজউকের প্লট বরাদ্দে অনিয়মের অভিযোগও তদন্ত করতে বলা হয়।
ছাত্র-জনতার প্রবল আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার সরকারের মন্ত্রী, এমপি ও দলের শীর্ষ সারির নেতাদের বিরুদ্ধে হত্যা, হত্যাচেষ্টা, গণহত্যার কয়েক’শ মামলা হয়েছে। জয়, পুতুল, রেহানা ও ববিকেও সহিংসতার ঘটনায় করা মামলার আসামি করা হয়েছে।
আরও পড়ুন-
‘ক্ষমতার অপব্যবহার করে’ পূর্বাচলে শেখ হাসিনা ও জয়ের প্লট, দুই মামলা দুদকের
'ক্ষমতার অপব্যবহার' করে পূর্বাচলে পুতুলের প্লট, দুদকের মামলা
রেহানা ও ছেলেমেয়ের প্লটে অনিয়ম: দুদকের ৩ মামলায় হাসিনাও আসামি