“আজকে সারা বিশ্বে, এমনকি যুক্তরাষ্ট্রেও ফিলিস্তিনিদের পক্ষে ব্যাপকভাবে আন্দোলন হচ্ছে। কিন্তু এই গণহত্যা বন্ধের কোনো ইশারা ইঙ্গিত দেখছি না।”
Published : 10 Apr 2025, 10:05 PM
ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলের গণহত্যার প্রতিবাদে ঢাকায় মিছিল করেছে বিএনপি; এই কর্মসূচি থেকে ঘৃণা আর সাহস নিয়ে ফিলিস্তিনের জনগণের পক্ষে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে দলটি।
বৃহস্পতিবার বিকালে নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ‘গাজা ও রাফায় গণহত্যার প্রতিবাদে ও ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি প্রকাশ’ ব্যানারে প্রতিবাদ কর্মসূচির আয়োজন করে দলটি।
কর্মসূচিতে যোগ দিতে আসা নেতাকর্মীদের ঢল নামে কাকরাইল থেকে ফকিরেরপুল পর্যন্ত পুরো সড়কে।
ঢাকা মহানগর বিএনপি, যুব দল, স্বেচ্ছাসেবক দল, কৃষক দল, মহিলা দল, ছাত্র দলসহ বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের হাজার হাজার নেতা-কর্মী ও সমর্থক মিছিলে যোগ দেন।
নেতা-কর্মীদের অনেকের হাতে ছিল বাংলাদেশ এবং ফিলিস্তিনের জাতীয় পতাকা।
মিছিলটি কাকরাইল, শান্তিনগর, মালিবাগ মৌচাক, মগবাজার, বাংলা মোটর হয়ে সোনারগাঁও মোড়ে গিয়ে শেষ হয়।
মিছিলের আগে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস ফিলিস্তিনিদের পাশে থাকার বিষয়ে দলের অঙ্গীকারের কথা ব্যক্ত করেন।
তিনি বলেন, “আমরা ফিলিস্তিনিদের পাশে আছি, থাকব। আমরা যদি কার্য্কর পদক্ষেপ না নেই, যদি জাতিসংঘ পদক্ষেপ না নেয়, যদি এই অপকর্মের সহযোগীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা আমরা না নিই, ইসরায়েলিদের এই অত্যাচার চলতেই থাকবে।”
মির্জা আব্বাস বলেন, “আমরা এটাও খেয়াল করেছি, শুধু ফিলিস্তিনে নয়, আমাদের প্রতিবেশী দেশেও মুসলমানদের অত্যাচার হচ্ছে। আমরা সেটার প্রতিবাদ করি না। ইনশাআল্লাহ যেখানে মুসলমানদের বিরুদ্ধে অত্যাচার করা হবে সেখানে আমরা প্রতিবাদ করব।”
‘মুসলিম বিশ্বের একতা জরুরি’
এখন ফিলিস্তিনের জনগণকে অত্যাচারিত হতে দেখলেও এটা যে এখানেই থেমে থাকবে সে ব্যাপারে সতর্ক করে মির্জা আব্বাস বলেন, “আজকে ফিলিস্তিনিদের নিধন করা, অত্যাচার করা হচ্ছে এটা আমরা ভাবতে পারি। আসলে বিষয়টা কিন্তু তা নয়।
“ওরা ধীরে ধীরে সারা বিশ্বের মুসলমানদের একসময় নিঃশেষ করে দেওয়ার চেষ্টা করছে।”
মুসলিম বিশ্বের যে সকল মোড়ল দেশ নিজেদের ‘রাজত্ব বাঁচানোর’ জন্য, নিজেরা ‘বেঁচে থাকার’ জন্য আজকে নেতৃত্ব দিচ্ছে না, তাদের প্রতি আল্লাহর ‘অভিশাপ নেমে আসবে’ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
মুসলিম বিশ্ব ঐক্যবদ্ধ হলে ইসরায়েল ফিলিস্তিনে এই অত্যাচার ‘চালাতে পারতো না’ বলেও মনে করেন মির্জা আব্বাস।
তিনি বলেন, “আজকে আমার মনে পড়ছে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের কথা… আমি কৃতজ্ঞচিত্রে তাকে স্মরণ করছি যিনি ইরাক-ইরান যুদ্ধ বন্ধে হস্তক্ষেপ করেছিলেন। আমি বিশ্বাস করি, যদি আজকে প্রেসিডেন্ট জিয়া বেঁচে থাকতেন এমন ভূমিকা নিতেন যে ইসরায়েল এই অপকর্ম করার সাহস করতো না।”
‘ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়ে বলেন, গাজায় নিরাপরাধ নারী-পুরুষ-শিশুদের হত্যার এই নৃশংসতা অবিলম্বে বন্ধ করা হোক।
“আমরা বিশ্বের সব মুসলিম দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানাই ঐক্যবদ্ধভাবে এই গণহত্যার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানো দরকার। যারা ইসরায়েলকে সমর্থন করে তাদের মত ও পথ পরিবর্তনের জন্য মুসলিম বিশ্ব যার যার মত ভূমিকা পালন করতে পারে।”
এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, “এটা কোনো মতেই গ্রহণযোগ্য না যে ক্রমাগতভাবে একটা জাতিসত্তাকে নিঃশেষ করে দেওয়ার জন্য এই খুন এই নৃশংসতা চালিয়ে যাওয়া হবে।”
যারা এই অপকর্ম সহ্য করে তারাও মানবতাবিরোধী অপরাধ করছে মন্তব্য করে নজরুল ইসলাম খান বলেন, “আমি দাবি করব, ইসরায়েলের এই মানবতাবিরোধী অপরাধ দমন করার জন্য যা কিছু করা প্রয়োজন তা করা উচিত।”
ইসরায়েলের পণ্য বয়কটের পক্ষে সমর্থন তুলে ধরে তিনি বলেন, “কিন্তু আমি দেখেছি, আমাদের দেশেও কিছু কিছু জায়গায় ইসরায়েলি প্রতিষ্ঠান বলে আক্রমণ করা হচ্ছে, সেখান থেকে কিছু জিনিস লুটপাট করা হচ্ছে। আমরা যেটা বর্জন করতে চাই সেটা কেড়ে নেওয়ার চেষ্টাও কিন্তু অপরাধ। কাজেই আমি অনুরোধ করব, আমাদের সবটুকু ঘৃণা দিয়ে, সব টুকু সাহস নিয়ে আমরা ফিলিস্তিনের জনগণের পক্ষে থাকব।”
‘১৮ কোটি মানুষ ফিলিস্তিনিদের পক্ষে’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, “জাতিধর্ম নির্বিশেষে যেকোনো মানুষকে হত্যা করা, এটা বড় অপরাধ। ফিলিস্তিনে সেই অপরাধ করছে ইসরায়েলিরা।”
তিনি মনে করেন, বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষ ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষ, দলমত নির্বিশেষে প্রত্যেকে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র ও ফিলিস্তিনিদের পক্ষে আর ইসরায়েলের বিপক্ষে।
তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, “আমাদের দেশে একটা সরকার আছে, যে নামে ডাকেন না কেন, সরকারের কাছ থেকে ফিলিস্তিনিদের সম্পর্কে এখনো আওয়াজ পাইলাম না কেন?
“আমাদের দেশে অনেক বুদ্ধিজীবী আছেন, সুশীল সমাজ আছে, তিনশ, পাঁচশ বিবৃতি বিভিন্ন সময়ে তারা দেন, এখনো তাদের ফিলিস্তিনিদের পক্ষে সাড়া মিলছে না কেন? কী কারণে?”
‘ইন্দো-মার্কিন ষড়যন্ত্রে ফিলিস্তিনিরা নির্যাতিত’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, “ইন্দো-মার্কিন ষড়যন্ত্রের কারণে ফিলিস্তিনি জনগণ গণহত্যা, নিপীড়নের শিকার হচ্ছে যুগের পর যুগ, দশকের পর দশক। তার কোনো প্রতিকার আমরা দেখছি না।”
তিনি বলেন, “জাতিসংঘের কোনো রেজুলেশনের তোয়াক্কা ইসরায়েলিরা করে না, জাতিসংঘের কোনো সিদ্ধান্ত তারা মেনে নেয় নাই। আজকে সারা বিশ্বে, এমনকি যুক্তরাষ্ট্রেও ফিলিস্তিনিদের পক্ষে ব্যাপকভাবে আন্দোলন হচ্ছে। কিন্তু এই গণহত্যা বন্ধের কোনো ইশারা ইঙ্গিত দেখছি না।”
মিছিলপূর্ব সংক্ষিপ্ত সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক রফিকুল আলম মজনু।
বিএনপির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর সঞ্চালনায় সমাবেশে দলের ঢাকা মহানগর উত্তর শাখার আহ্বায়ক আমিনুল হকও বক্তব্য রাখেন।
মিছিলে যোগ দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আজম খান, আবদুস সালাম পিন্টু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম ও আবুল খায়ের ভুঁইয়া, বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি ও আবদুস সালাম আজাদ, কেন্দ্রীয় নেতা রফিকুল ইসলাম, রকিবুল ইসলাম বকুল, শামীমুর রহমান শামীম, সাইফুল আালম নিরব, যুবদলের আবদুল মোনায়েম মুন্না, নুরুল ইসলাম নয়ন, স্বেচ্ছাসেবক দলের এসএম জিলানি, রাজীব আহসান, কৃষক দলের হাসান জাফির তুহিন, শহিদুল ইসলাম বাবুল, মহিলা দলের আফরোজা আব্বাস, সুলতানা আহমেদ, মুক্তিযোদ্ধা দলের ইশতিয়াক আজিজ উলফাত, সাদেক আহমেদ খান, তাঁতী দলের আবুল কালাম আজাদ, মৎস্যজীবী দলের আবদুর রহীম, ছাত্রদলের রাকিবুল ইসলাম বকুল ও নাছির উদ্দীন নাছির।