“মুক্তিযোদ্ধাদের প্রজন্ম যারা থাকবেন তারা সবাই অনগ্রসর, এটা আমি মানতে রাজি না,” বলেন জিএম কাদের।
Published : 03 Jul 2024, 09:15 PM
শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীদের আন্দোলনের মধ্যে চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটার সমালোচনা করে জাতীয় সংসদে কথা বলেছেন বিরোধীদলীয় নেতা জিএম কাদের।
এই কোটা স্বাধীনতার মূল উদ্দেশ্যকে ধ্বংস করেছে বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
বুধবার সংসদের বাজেট অধিবেশনের সমাপনী বক্তব্যে জাতীয় জিএম কাদের বলেন, “আমার ব্যক্তিগত মত হল বীর মুক্তিযোদ্ধাদের পরবর্তী প্রজন্মের চাকরির জন্য বিশেষ বড় অংকের কোটা চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত করা স্বাধীনতার চেতনার নামে স্বাধীনতার মূল উদ্দেশ্য- বৈষম্যমুক্ত ন্যায়বিচার ভিত্তিক সমাজ গঠন- এই মূল উদ্দেশ্যকে ধ্বংস করে।”
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, “আগে নিয়োগের ক্ষেত্রে ৫৬ শতাংশ কোটা ছিল। ৪৪ শতাংশ মেধার ভিত্তিতে হতো। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে দাবি ছিল ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল করা হোক। মেধাভিত্তিক সমাজ হচ্ছে না, মেধাকে দাম দিতে হবে।
“মুক্তিযোদ্ধাদের আমরা দাম দেব। কিন্তু তাদের বংশ পরম্পরায় তাদের নাতি-নাতনিসহ সবাইকে দিতে হবে, বিষয়টি সম্পর্কে ছাত্রদের দ্বিমত আছে। তারা এর সাথে একমত হতে পারছে না।”
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জারি করা পরিপত্রে সরকারি দপ্তর, স্বায়ত্তশাসিত বা আধা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন করপোরেশনে চাকরিতে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে ৯ম থেকে ১৩তম গ্রেডে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল করা হয়।
মুক্তিযোদ্ধা কোটার পাশাপাশি বাতিল হয় ১০ শতাংশ করে নারী ও জেলা কোটাও।
তবে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে কোটা বাতিল হলেও তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির পদে কোটা ব্যবস্থা আগের মতই বহাল থাকবে বলে ওই পরিপত্রে বলা হয়।
ওই পরিপত্রের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০২১ সালে রিট করেন চাকরিপ্রত্যাশী ও মুক্তিযোদ্ধার সন্তান অহিদুল ইসলামসহ সাতজন। রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ২০২১ সালের ৬ ডিসেম্বর হাই কোর্ট রুল দেয়।
রুলে ওই পরিপত্র কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, সে বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়।
চূড়ান্ত শুনানি শেষে গত রুল অ্যাবসলিউট বা যথাযথ ঘোষণা করে রায় দেয় বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাই কোর্ট বেঞ্চ।
এর ফলে সরকারি দপ্তর, স্বায়ত্তশাসিত বা আধা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন করপোরেশনে চাকরিতে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে ৯ম থেকে ১৩তম গ্রেড মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলসংক্রান্ত পরিপত্র অবৈধ হয়ে গেছে।
এরপর থেকেই ২০১৮ সালের পরিপত্র পুনর্বহালের দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তিন দিন ধরে এই কোটা বাতিলের দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন।
বিরোধী দলীয় নেতা জিএম কাদের বলেন, “আন্দোলনের মুখে ২০১৮ সালে সব কোটা বাতিল করা হয়। এটা দাবি ছিল না। দাবি ছিল মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল, বাকিগুলো থাকবে। হঠাৎ করে ২০২১ সালে করা মামলার রায়ে বলা হয়েছে কোটা আগের মত থাকবে। এর ফলে ছাত্রদের আবার সমস্যা সামনে আসছে।”
তিনি বলেন, “সংবিধানে সুযোগ সুবিধার ক্ষেত্রে সাম্যের কথা বলা হয়েছে। সংবিধানে বলা আছে, নিয়োগ লাভের ক্ষেত্রে সুযোগের সমতা থাকবে। ধর্ম, বর্ণ, গোষ্ঠী, জন্মস্থানের কারণে কাউকে প্রজাতন্ত্রের কাজে নিয়োগে অযোগ্য হবেন না।
“সরকারকে অথরিটি দেওয়া হয়েছে, নাগরিকদের অনগ্রসর অংশের জন্য, অনগ্রসর অংশ যাতে প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিযুক্ত প্রতিনিধিত্ব করতে পারেন সেজন্য বিশেষ বিধান প্রণয়ন করা যাবে।”
জিএম কাদের বলেন, “কিন্তু মুক্তিযোদ্ধাদের প্রজন্ম যারা থাকবেন তারা সবাই অনগ্রসর, এটা আমি মানতে রাজি না। সংবিধানকে যদি মানতে হয় তাহলে মানতে হবে, অনগ্রসর যারা নন, মুক্তিযোদ্ধা সবাই অনগ্রসর বা এরকম পিছিয়ে পড়া অবস্থানে নেই। কাজেই বিষয়টি ওইভাবে দেখাটা সংবিধানসম্মত নয়।”
সর্বজনীন পেনশনের ‘প্রত্যয়’ স্কিম নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের আন্দোলন নিয়েও কথা বলেন বিরোধী দলীয় নেতা।
তিনি বলেন, 'আগে যেটা সর্বজনীন পেনশন স্কিম দেওয়া হয়েছিল সেটাতে খুব একটা সাড়া আসেনি যেকোনো কারণেই হোক। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নেতারা বেশিরভাগ সরকারের সমর্থক, সরকারের কাছের লোক। তারা মানতে চাইছেন না। অনেকে মনে করছেন সুযোগ সুবিধা আগের চেয়ে কম। অনেকে এটাও মনে করছেন না, তারপরও মানছেন না।
“বললে খারাপ শোনায়, সেটা হল মানুষের আস্থাহীনতা হচ্ছে, সরকার যেটা কমিট করছে আল্টিমেটলি সেটা দিতে পারবে কি না, দিবে কি না, মানুষ পাবে কি না। এটা বড় ধরনের একটা আস্থাহীনতা। এটা আমাদের সরকারের কারো জন্যই মঙ্গলজনক নয়।”