অবরোধের কারণে শাহবাগ মোড়ের চারপাশের রাস্তায় তীব্র যানজট তৈরি হয়। ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা।
Published : 03 Jul 2024, 04:43 PM
সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি নিয়ে ২০১৮ সালের পরিপত্র পুনর্বহালের দাবিতে দ্বিতীয় দিনের মত শাহবাগ মোড় অবরোধ করে বিক্ষোভে নেমেছেন হাজার হাজার শিক্ষার্থী ও চাকরি প্রত্যাশী।
বুধবার বেলা আড়াইটায় ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ ব্যানারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন শিক্ষার্থীরা।
মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তি ও গণতন্ত্র তোরণ, ভিসি চত্বর, রাজু ভাস্কর্য, দোয়েল চত্বর হয়ে হাই কোর্টের সামনে দিয়ে মৎস্য ভবন ঘুরে শাহবাগ এসে অবস্থান নেয়।
এতে শাহবাগ মোড়ের চারপাশের রাস্তায় তীব্র যানজট তৈরি হয়। ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা।
বিক্ষোভ কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীরা ‘১৮ এর হাতিয়ার গর্জে উঠুক আরেকবার,’ ‘কোটা না মেধা, মেধা মেধা’, ‘সারা বাংলায় খবর দে, কোটা প্রথার কবর দে’, ‘১৮ এর পরিপত্র পুনর্বহাল করতে হবে’, ‘সংবিধানের মূল কথা সুযোগের সমতা’, ‘কোটা প্রথা নিপাত যাক, মেধাবীরা মুক্তি পাক' ইত্যাদি স্লোগান দেন।
দেড় ঘণ্টা অবস্থানের পর বিকাল সোয়া ৫টা দিকে শাহবাগ মোড় থেকে সরে যান আন্দোলনকারীরা।
শাহবাগে অবস্থান কর্মসূচি শেষে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, “গত ৫ জুন হাইকোর্টের রায়ের পর থেকে আমাদের আন্দোলন চলমান। আমরা মাঝখানে আল্টিমেটাম দিয়েছিলাম, কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তাই আমাদের আবারও রাজপথে নেমে আসতে হয়েছে।
"আমরা স্পষ্ট বলে দিতে চাই, কোটা নিয়ে আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) হাই কোর্টের আপিল বিভাগে শুনানি হবে। আমরা আশা করব, সেই শুনানি শিক্ষার্থীদের পক্ষে হবে। আমরা যে চার দফা দিয়েছি, তার প্রথম দফা যেন আগামীকালের মধ্যেই পূরণ করা হয়। প্রথম দফা শেষে আমাদের বাকি দফাগুলো যাতে পর্যায়ক্রমে পূরণ করা হয়।"
বৃহস্পতিবার আবারও কর্মসূচি ঘোষণা দিয়ে নাহিদ বলেন, “আগামীকাল সকাল ১১টায় আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে অবস্থান নেব এবং যতক্ষণ না আমাদের পক্ষে রায় আসছে, আমাদের প্রথম দফা পূরণ হচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চালিয়ে যাব।"
চার দফা দাবি তুলে ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগেরশিক্ষার্থী শারজিস ইসলাম বলেন, “আমাদের চারটি দাবি রয়েছে। প্রথম দাবি, ২০১৮সালে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে মেধাভিত্তিক নিয়োগের জন্য একটি পরিপত্র জারি করেছিল। সম্প্রতি হাই কোর্ট তা বাতিল করেছে, সেটি পুনর্বহাল করতে হবে।
“আমাদের দ্বিতীয় দাবি হচ্ছে, একটি কমিশন গঠনের মাধ্যমে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য যৌক্তিক কোটা রাখতে পারবে। তৃতীয় দাবি, যারা কোটার ভিত্তিতে নিয়োগ পাবেন, তারা শুধু জীবনে একবারই এই সুযোগ পাবেন। আমাদের সর্বশেষ দাবি হচ্ছে, কোটার ভিত্তিতে নিয়োগের পর যেসব আসন শূন্য থাকবে, সেগুলোতে মেধা তালিকা থেকে নিয়ে পূরণ করতে হবে।”
স্বাধীনতার পরপরই সংবিধান হওয়ার আগে মুক্তিযোদ্ধাদের সরকারি দপ্তর, স্বায়ত্তশাসিত বা আধা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন করপোরেশনে ৩০ শতাংশ কোটা প্রবর্তন করা হয়। সংবিধান গৃহীত হওয়ার পর ১৫০ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী পূর্ববর্তী সব কার্যক্রমের বৈধতা দেওয়া হয়। সরকার পরে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদেরও কোটা সুবিধার আওতায় আনে।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জারি করা পরিপত্রে সরকারি দপ্তর, স্বায়ত্তশাসিত বা আধা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন করপোরেশনে চাকরিতে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে ৯ম থেকে ১৩তম গ্রেডে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল করা হয়।
মুক্তিযোদ্ধা কোটার পাশাপাশি বাতিল হয় ১০ শতাংশ করে নারী ও জেলা কোটাও।
তবে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে কোটা বাতিল হলেও তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির পদে কোটা ব্যবস্থা আগের মতই বহাল থাকবে বলে ওই পরিপত্রে বলা হয়।
ওই পরিপত্রের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০২১ সালে রিট করেন চাকরিপ্রত্যাশী ও মুক্তিযোদ্ধার সন্তান অহিদুল ইসলামসহ সাতজন। রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ২০২১ সালের ৬ ডিসেম্বর হাই কোর্ট রুল দেয়।
রুলে ওই পরিপত্র কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, সে বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়।
চূড়ান্ত শুনানি শেষে গত রুল অ্যাবসলিউট বা যথাযথ ঘোষণা করে রায় দেয় বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাই কোর্ট বেঞ্চ।
এর ফলে সরকারি দপ্তর, স্বায়ত্তশাসিত বা আধা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন করপোরেশনে চাকরিতে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে ৯ম থেকে ১৩তম গ্রেড মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলসংক্রান্ত পরিপত্র অবৈধ হয়ে গেছে।
এরপর থেকেই ২০১৮ সালের পরিপত্র পুনর্বহালের দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তিন দিন ধরে চলা আন্দোলনের মধ্যে মঙ্গলবারও শাহবাগ মোড় অবেরাধ করেন তারা।