মাঝরাতে পাশের বিপণি বিতানে জমজমাট কেনাবেচা চলছে আর দিনভর ভয়াবহ আগুন আর ধোঁয়ার কুণ্ডলিতে আচ্ছন্ন থাকা নিউ সুপার মার্কেটের ব্যবসায়ীদের দীর্ঘশ্বাস দীর্ঘ হচ্ছে।
Published : 16 Apr 2023, 01:53 AM
রোজার শেষ ১০ দিনে সবে কেনাবেচা জমছিল, মাঝ রাতের ক্রেতারাও আসছিলেন দলবেঁধে; এক সকালের আগুনে পাল্টে গেল চিত্র, নিউ মার্কেট এলাকায় ক্রেতা-বিক্রেতার গমগমে হাঁকডাকের বদলে ভেসে আসছে ফায়ার ইঞ্জিনের ঘর ঘর শব্দ।
ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের দীর্ঘচেষ্টা মধ্যরাত পেরিয়েও চলমান রয়েছে ঢাকার নিউ সুপার মার্কেটে; যেটি আগুনে পুড়েছে সকালে। শনিবার পৌনে ছয়টার দিকে লাগা ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড সাড়ে তিন ঘণ্টার চেষ্টায় নিয়ন্ত্রণে এলেও এখনও পুরোপুরি নেভেনি। বন্ধ দোকানের ভেতরে কাপড় থেকে বের হওয়া ধোঁয়া নেভাতে কাজ চলছে।
ঠিক রাত ১টায় আগুনে পোড়া নিউ সুপার মার্কেটের অদূরের বিপণি বিতানগুলোতে ঈদ বাজারের চিরচেনা চিত্রই দেখা গেল। নুরজাহান, গাউছিয়া, গ্লোব, নেহার ভবন বিপণি বিতান আংশিক খোলা, সেগুলোতে ক্রেতা সমাগম ভালোই। অথচ সকালের আগুনের পর দীর্ঘসময় ধোঁয়ার কুণ্ডলিতে আচ্ছন্ন থাকা নিউ সুপার মার্কেটের ব্যবসায়ীদের দীর্ঘশ্বাস দীর্ঘ হচ্ছে।
ব্যবসায়ীদের কাছে কাঙ্খিত বছরের সবচেয়ে বেশি কেনাকাটার মৌসুম রোজার ঈদের আগে আগুন কেড়ে নিয়েছে তাদের পুঁজির অনেকটাই। তবে ঝুঁকিপূর্ণ মার্কেটে অগ্নিনিরাপত্তার ঘাটতি রেখে দিনের পর দিন ব্যবসা করে যাওয়া তাদের উদাসীনতার ফল নয় কি?
এমন প্রশ্নও সামনে এসেছে ১১ দিনের মাথায় রাজধানী ঢাকার বড় কয়েকটি ব্যবসা কেন্দ্রের ভয়াবহ আগুনে।
নকশা বদলে কাঠামো ভেঙে বিপণি বিতানগুলোকে করে তোলা হয়েছে ঝুঁকিপুর্ণ, যেটি থেকে বাদ যায়নি নিউ সুপার মার্কেটেও। দিন দশেক আগেও পরির্দশনের পর নোটিস দিয়ে গেছে ফায়ার সার্ভিস। ঝুঁকি কমানোর দিকে তাদের সেই খেয়াল কই।
সকাল পৌনে ছয়টার দিকে লাগা এ আগুন সাড়ে তিন ঘণ্টার মাথায় নিয়ন্ত্রণে এলেও তা পুরোপুরি নিভতে আরও সময় লাগবে বলে জানাচ্ছে ফায়ার সার্ভিস। রাত ১১টাতেও মার্কেট থেকে ধোঁয়া উঠছিল আর তাতে পানি মারছিলেন দিনভর ছোটাছুটিতে ক্লান্ত ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা।
ঈদের আগে ব্যবসা শেষ
রোজার ঈদের আগে নিউ সুপার মার্কেটের ব্যবসায়ীরা নতুন পণ্য তুলেছিলেন দোকানে। আগুন লাগার পর ব্যবসায়ীদের হাহাকার শোনা যায় দিনভর।
সকাল বেলা আগুনের খবর পেয়েই যেসব দোকানি আসতে পেরেছেন, তাদের মরিয়া হয়ে ঈদের আগে দোকানে তোলা কাপড় সরাতে দেখা গেছে। তবে সবাই যে খুব বেশি রক্ষা করতে পেরেছেন আগুনের পর ধোঁয়ায় ছেয়ে যাওয়া বিপণি বিতানের চিত্র দেখেই বোঝা যায়।
সকালের দিকে মধ্যবয়সী আব্দুর রব মুন্সীকে টেনে ধরেও শান্ত করতে পারছিলেন না তার দোকানের কর্মচারীরা; প্রচণ্ড গরমে ঘেমে আর পানিতে ভিজে একাকার হয়েছেন, খুলে ফেলতে হয়েছে পরনের জামাটাও।
দোকান কর্মচারীদের একজনকে তিনি বলছিলেন, ‘ওই চল মাল বাইর করুম’; আরেকজনকে বলছিলেন, ‘যা বাইর করছস, সব রোদে দে’।
ঈদ সামনে এই ব্যবসায়ী নতুন পোশাক তুলেছিলেন নিউ সুপার মার্কেটের দক্ষিণ ভবনের দোতালায় নিজের ‘জিহান খাদি ঘর’ নামের দোকানে। আগুনে সেসব পুড়ে তার চোখের সামনে ছাই হয়েছে। ধোঁয়ার কুণ্ডলীর মধ্যেই কয়েকটি বস্তা বের করতে পেরেছেন তিনি। কিন্তু ঈদ সামনে এভাবে দোকান পুড়ে যাওয়ায় তার আহাজারি থামছিল না।
ঢাকার ব্যস্ততম বিপণি কেন্দ্র নিউ মার্কেট এলাকার ওভারব্রিজ সংলগ্ন নিউ সুপার মার্কেটে একেকটি দোকানের স্বত্ব (পজেশন) বিক্রি হয় প্রায় কোটি টাকায়। একেকটি দোকানের ভেতরে দুটি থেকে তিনটি পর্যন্ত পৃথক দোকান রয়েছে। দোকানের একপাশে একজন প্যান্ট বিক্রি করছে তো আরেক পাশে পাঞ্জাবি। বিক্রিও ভালো, মাস শেষে লাভও ভালো।
ঢাকা নিউ সুপার মার্কেট বণিক সমিতির আহ্বায়ক মারুফ হাসান বলেন, এ মার্কেটে এক হাজার ৩০০ দোকান রয়েছে। এর মধ্যে আগুনে প্রায় ৬০০ দোকান পুড়ে গেছে। আগুনের তাপ ও আগুন নেভানোর জন্য ব্যবহৃত পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আরও একশ দোকানের মালামাল।
ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক লে. কর্নেল রেজাউল করিম জানান, তিন তলা মার্কেটটি দোতলা ও তিন তলার বেশিরভাগ দোকান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে৷ তাদের ধারণা আড়াই থেকে তিনশ দোকান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন ঘটনাস্থলে সাংবাদিকদের বলেন, ঈদের আগে বঙ্গবাজার ও নিউ সুপার মার্কেটের আগুনের ঘটনায় সারা দেশের ঈদকেন্দ্রিক ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
শনিবার সারাদিনই সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড় থেকে নীলক্ষেত মোড় পর্যন্ত বিপণি বিতানগুলো বন্ধ ছিল। এখানে নিউমার্কেট, চন্দ্রিমা, গাউছিয়া, নূরজাহান মার্কেট, গ্লোব, ধানমণ্ডি হকার্সসহ অনেকগুলো বিপণি বিতান রয়েছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত বৃহস্পতিবার রাত থেকেই শুধু ঈদ বাজারের ভিড় শুরু হয়েছিল। দুদিনের মাথাতেই শনিবারের এ ঘটনায় তারা ঈদ বাজার নিয়ে শঙ্কায় পড়েছেন।
সোহাগ নামে নিউ সুপার মার্কেটের এক প্যান্ট বিক্রেতা জানান, ঈদ উপলক্ষে পাঁচ লাখ টাকা ঋণ করে মাল তুলেছিলেন। দুদিনে কিছু বিক্রি করেছেন। বাকি কিছু ভেজা অবস্থায় উদ্ধার করতে পেরেছেন। বেশির ভাগটাই আগুনে ছাই।
নাসিমা চৌধুরী দুটি দোকান চালাতেন দোতলায়। মালামাল ছাড়াও শুক্রবার বেচাবিক্রির টাকাও ক্যাশবাক্সে ছিল যা তিনি বের করতে পারেননি।
পাশের চন্দ্রিমা সুপার মার্কেটের দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মনজুর আহমেদ বলেন, এ এলাকার মার্কেটগুলোতে অন্তত পাঁচ হাজার দোকান আছে। আগুনে যারা পুড়েছে তাদের ক্ষতিতো হয়েছেই বাকিদেরও অনেক ক্ষতি হয়েছে। দোকান খুলতে যত দেরি হবে, ক্ষতির পরিমাণ তত বাড়বে।
নিউ মার্কেট দোকান মালিক সমিতির সভাপতি দেওয়ান আমিনুল ইসলাম শাহীন বলেন, রোজার শেষ ১০ দিনে সবচেয়ে ভালো বেচাকেনা হয়। এসময় তারা বিভিন্ন জায়গা থেকে ঋণ করে মাল তোলেন। পণ্যের সঙ্গে আগের রাতের বিক্রি করা ক্যাশও গেছে অনেকের। ঈদের বাজারে বেচাকেনা হয় ৫০ হাজার থেকে পাঁচ লাখ পর্যন্ত। অনেক রাত অবধি বেচাকেনা চলে। যে কারণে সবাই রাতে ক্যাশের টাকা স্থানান্তর করেন না। ঈদের আগে এ এক বিরাট দুর্যোগ।
দেখেও শিক্ষা নেননি তারা
ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, এক থেকে দেড় সপ্তাহ আগে পরিদর্শনের পর মার্কেটটিকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়েছিল। তবে ব্যবসায়ীরা ‘সেই নোটিসে’ খুব গুরুত্ব দিয়ে দৃশ্যমান পদক্ষেপ নিয়েছেন বলে জানা যায়নি।
আগুনের পর ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক লে. কর্নেল তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, “ফায়ার সার্ভিসের নিয়মিত কার্যক্রমের অংশ হিসেবে এ মার্কেট পরিদর্শন শেষে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছিল। মার্কেটটিতে অগ্নিঝুঁকি কমাতে কী কী করতে হবে, সে বিষয়ে তাদের কিছু নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছিল।”
এ বিষয়ে ঢাকা নিউ সুপার মার্কেট বণিক সমিতির আহ্বায়ক মারুফ হোসেন বলেন, “ফায়ার সার্ভিস নোটিস দিছিল। আমরা ধীরে ধীরে তাদের নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ আগায়ে নিচ্ছিলাম। কিছু জিনিসপত্র কেনাও হয়েছে। তবে পুরোপুরি তা বাস্তবায়ন করা হয়নি।”
কাঠামোর পরিবর্তন করে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মালিকানাধীন নিউ সুপার মার্কেট যখন করা হয়, তখন তা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ছিল না।
সেখানকার এক ব্যবসায়ী আবু ইউসুফ বলেন, “আগে মার্কেটটি এমনিই খোলামেলা ছিল। ৫-৬ বছর আগে দোতলার মার্কেটটি এসি করা হয়। পরে দুই বছর আগে নিচতলার মার্কেটটিও পুরোটা এসি করা হয়। তিনতলায় কোনো এসি ছিল না।”
খোলামেলা মার্কেটে বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা আটকে এসি করায় তা হিতে বিপরীত হয়েছে বলে মনে করছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা।
বাহিনীটির পরিচালক তাজুল বলেন, “মার্কেটটির দোকানগুলোর ফ্লোরে প্রচুর পরিমাণে মালামাল স্তূপ করে রাখা হয়। সেগুলো থেকে থেমে আগুন উঠছে, যার কারণে প্রচণ্ড ধোঁয়া হচ্ছে।
“কিন্তু সেখানে ভেন্টিলেশনের অবস্থা খুব খারাপ। ব্রিদিং অ্যাপারেটাস (অক্সিজেন সিলিন্ডার-মাস্ক) নিয়েও ভেতরে বেশিক্ষণ থাকতে পারছেন না ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।”
ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (উন্নয়ন ও প্রশিক্ষণ) লে. কর্নেল রেজাউল করিম সাংবাদিকদের বলেন, মার্কেটটির অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থা খুবই নাজুক ছিল। ব্যবসায়ীরা সিটি করপোরেশন থেকে একটি দোকান বরাদ্দ নিয়ে করিডোরে আরও দুই-তিনটি করে সাব-দোকান বানিয়ে রেখেছিলেন। এ কারণে করিডোরগুলো খুবই সংকীর্ণ হয়ে এক দোকান থেকে আরেক দোকানে কাপড়ের মাধ্যমে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে।
নিউ মার্কেট দোকান মালিক সমিতির সভাপতি শাহীন বলছেন, “নিউ সুপার মার্কেটের যে অংশটিতে আগুন লেগেছিল, সেটি কেন্দ্রীয়ভাবে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত করতে বায়ু চলাচল ব্যবস্থা জিপসাম বোর্ড দিয়ে বন্ধ করা হয়েছে।
“আগুন যেখান থেকেই লাগুক না কেন, জিপসাম বোর্ডের কারণে তা দ্রুত পুরো মার্কেটে ছড়িয়েছে।”
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস ঘটনাস্থলে সাংবাদিকদের বলেন, “এখানে আমাদের যে মূল নকশা ও কাঠামো ছিল, তাতে অনেক পরিবর্তন করা হয়েছে। এখানে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে সব মুখ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। যে জায়গাগুলো উন্মুক্ত রাখার কথা, সেগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে এবং ব্যাপকভাবে এটার মূল নকশা পরিবর্তন করা হয়েছে।
“এভাবে সব বন্ধ করে দিলে পরিণতি কী ভয়াবহ হতে পারে সেটা আমরা দেখতে পাচ্ছি। আমি সবাইকে বলব আপনারা দেখেছেন আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর অবৈধ নকশা বহির্ভূত অনেক ভাঙচুর করেছি। এখনও অনেক ভাঙা বাকি আছে। আমি সংশ্লিষ্টদের বলব অবৈধভাবে নকশা পরিবর্তন করবেন না, নকশা বহির্ভূত কোনো স্থাপনা করবেন না।”
নাশকতা না দুর্ঘটনা?
১১ দিনের ব্যবধানে ঢাকার অন্যতম তিনটি বাণিজ্য কেন্দ্রে আগুন নাশকতা না দুর্ঘটনা সেই আলোচনাও উঠেছে জোরেসোরেই।
ঠিক ১১ দিন আগে গত ৪ এপ্রিল সকালে বঙ্গবাজারে আগুনের খবর এসেছিল। কিছুক্ষণের মধ্যেই টিন-কাঠের বঙ্গবাজারকে গ্রাস করে দাউদাউ আগুন। ছয় ঘণ্টা পরে আগুন নিয়ন্ত্রণে এলেও তা পুরোপুরি নেভাতে লেগে যায় তিন দিন। পুড়ে যায় ৩ হাজার ৫৪৮টি দোকান। এর ঠিক ১১ দিনের মাথায় ভোরবেলায় আবার আগুনের খবর। এবার সেখান থেকে তিন কিলোমিটার দূরের নিউ সুপার মার্কেট। বঙ্গবাজারের মতো দাউ দাউ আগুন জ্বলতে দেখা না গেলেও ধোঁয়া আর গরমে অতি কঠিন হয়ে ওঠে আগুন নেভানোর যুদ্ধ।
নিউ মার্কেটের ব্যবসায়ীরা সকাল থেকেই অভিযোগ করে আসছিলেন এটা নাশকতা। দুপুর নাগাদ একই রকম প্রশ্ন তুললেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শনিবার গণভবনে আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি মনোনয়ন বোর্ডের সভায় বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, “ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে প্রত্যেকটা মার্কেটকে বারবার সতর্ক করা হচ্ছে… তাদের মার্কেটের যে অবস্থা সেখানে যে কোনো সময় দুর্ঘটনা হতে পারে, কিন্তু এরপর পরপর চারটা ঘটনাকে যদি আমরা দেখি, তাহলে এটা কি আদতেই আসলেই কোনো দুর্ঘটনা না কি এর পেছনে কোনো কারসাজি আছে।”
বঙ্গবাজারের পর নিউ মার্কেটের আগুনটিও লেগেছে ভোরে। এটি নিয়েও সন্দেহ করছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, “ঠিক ছয়টার পর আগুনটা লাগছে। এটার উপর নজরদারিটা বাড়াতে হবে অন্যান্য মার্কেটগুলোকে সতর্ক থাকতে হবে।”
ঘটনাস্থলে গিয়ে ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালকও একই রকম সন্দেহের কথা জানান।
ঢাকা নিউ সুপার মার্কেটের অগ্নিকাণ্ড দুর্ঘটনা না কি নাশকতা- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, “আমি আপনাদের মাধ্যমে এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে গোয়েন্দা সংস্থা ও পুলিশকে আবেদন করব যে, এরকম কোনো কিছু আছে কি না খতিয়ে দেখার জন্য। খতিয়ে দেখাটা অতীব প্রয়োজন। একের পর এক কেন আগুন লাগছে।”
পুলিশের মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনও এদিনের আগুনের ঘটনার পর রাজধানীতে ঘটে যাওয়া প্রতিটি অগ্নিকাণ্ডের কারণ খতিয়ে দেখার কথা জানিয়েছেন।
তবে ঘটনাস্থলে ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক সাংবাদিকদের একই প্রশ্নের জবাবে বলেন, “এখানে কোনো নাশকতা হয়েছে, এখন পর্যন্ত সেরকম কোনো আলামত পাওয়া যায়নি। তবে বিষয়গুলো তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।”
ঢাকার বিপণি বিতানগুলোর সামনে সাদা পোশাকে গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়ানোর কথা জানান তিনি।
নিউ সুপার মার্কেটের আগুন নাশকতা কি না তা খতিয়ে দেখতে র্যাবও মাঠে নেমেছে বলে জানান সংস্থাটির আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
আগুন ছড়িয়েছে যেসব কারণে
আগুন লাগার খবর পেয়ে তিন মিনিটের মাথায় ফায়ার সার্ভিসের প্রথম গাড়িটি সেখানে যায়। প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা চেষ্টার পর সকাল ৯টা ১০ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। তবে রাত পর্যন্ত ভবন থেকে ধোঁয়া উঠতে দেখা গেছে।
রাত ৮টার দিকে ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক রেজাউল সাংবাদিকদের বলেন, আগুন তখনও পুরোপুরি নির্বাপন করা যায়নি। ১২টি ইউনিট এখনও কাজ করছে। তবে তিনি সেখানে আর কোনো বড় দুর্ঘটনার শঙ্কা করছেন না বলে জানান।
মার্কেটের বণিক সমিতির আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সেখানে প্রচুর পোস্টার ও প্যানাফ্লেক্স ব্যানার ঝোলানো ছিল। এগুলোকেও আগুন ছড়িয়ে পড়ার অন্যতম কারণ হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, মার্কেটের ফলস ছাদ, উপরে প্লাস্টিক আইটেম ও ব্যানার-পোস্টারের কারণে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।
মার্কেটের ভেতরে বন্ধ দোকানের সাটার খুলে স্তুপ করে রাখা কাপড় ভিজিয়ে বা সরিয়ে আগুন নেভাতে হচ্ছে জানিয়ে ফায়ার সার্ভিসের এ পরিচালক বলেন, আগুন লাগার সময় মার্কেটের ভেতরের সব দোকানের শাটার বন্ধ ছিল। ফলে দোকানের ভেতরের জামাকাপড় বা ফেব্রিক্সগুলোতে এখন ধিকি ধিকি তুষের আগুনের (মোল্ডারিং অ্যাফেক্ট) মতো জ্বলছে।
প্রতিটি দোকানের শাটারগুলো খুলে খুলে পরীক্ষা করা হচ্ছে এবং পানি দিয়ে আগুন নেভানো হচ্ছে। যেহেতু একটি একটি করে দোকান পরীক্ষা করতে হচ্ছে তাই আগুন পুরোপুরি নেভাতে অনেক সময় লাগবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক জানান, মার্কেটের ভেতরে কাপড়ে আগুন ধরায় ধোঁয়া হচ্ছে। সেখানে কাজ করতেও বেগ পেতে হচ্ছে। আগুন পুরোপুরি নেভাতে সময় লাগবে।
অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাটি তদন্তে পাঁচ সদস্যের কমিটি করেছে ফায়ার সার্ভিস।
আরও পড়ুন:
নিউ সুপার মার্কেটে অগ্নিকাণ্ডে আশপাশের সব মার্কেট বন্ধ
আগুন ‘নিয়ন্ত্রণে’, তবে ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন নিউ সুপার মার্কেট
ভোরে একের পর এক আগুন বিরোধীদের নাশকতা কি না, সন্দেহ শেখ হাসিনার
অগ্নিকাণ্ডে নাশকতার প্রমাণ পেলে কঠোর ব্যবস্থা: আইজিপি
নিউ সুপার মার্কেটের আগুনে নাশকতার তদন্ত শুরু র্যাবের