আগুন আর ছাড়াচ্ছে না জানালেও ফায়ার সার্ভিস বলছে, আগুন পুরোপুরি নেভাতে আরও সময় লাগবে।
Published : 15 Apr 2023, 11:14 AM
ঢাকা নিউ সুপার মার্কেটে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাতের চার ঘণ্টা পর আগুনের শিখা আর দেখা না গেলেও এখনও ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে আছে বিপণি বিতানটি।
শনিবার সকাল পৌনে ৬টা দিকে নিউ মার্কেট লাগোয়া তিন তলা নিউ সুপার মার্কেটে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়।
চার ঘণ্টা পর সকাল ১০টায় সেখানে আগুনের শিখা আর দেখা যাচ্ছে না। তবে ধোঁয়া বের হচ্ছে ভেতর থেকে।
ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মইন উদ্দিন সকাল ১০টার দিকে ঘটনাস্থলে সাংবাদিকদের বলেন, “আগুন নিয়ন্ত্রণে, কিন্তু অগ্নি নির্বাপণ হয় নাই। আমাদের সময় লাগবে।
“আমরা যতটুকু পারি, মালামাল যেন উদ্ধার করতে পারি, ব্যবসায়ীদের রক্ষা করতে পারি, সেটাই আমাদের প্রচেষ্টা।”
এরপর সকাল ১১টার দিকে মার্কেটের পেছনের অর্থাৎ পশ্চিম দিক থেকে অতিরিক্ত মাত্রায় কালো ধোঁয়া বের হওয়া শুরু করলে সেখানে পানি ছিটানো বাড়িয়ে দেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা।
ভবনে জমে থাকা ধোঁয়া বের করতে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা বাইরে থেকে মই বেয়ে উঠে জানালার কাচ ভেঙে দিচ্ছেন।
আগুন এখন আর না জ্বললেও পোশাক পুড়ে ধোঁয়া উড়ছে বলে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা জানিয়েছেন।
এই বিপণি বিতানের দোতলা থেকে আগুনের সূত্রপাত হয় বলে ধারণা করা হচ্ছে। মার্কেটের দোতলা ও তিন তলায় সবই পোশাকের দোকান।
আগুন নেভাতে ভেতরে গিয়ে ধোঁয়ায় ফায়ার সার্ভিসের ১২ জন কর্মী এবং একজন স্বেচ্ছাসেবক অসুস্থ হয়ে পড়েছেন বলে জানান ব্রিগেডিয়ার মইন।
অগ্নিকাণ্ড শুরুর পর দোকান মালিক ও কর্মীরা ভেতরে ঢুকে মালামাল বের করা শুরু করলেও ধোঁয়ার কারণে এখন আর ভবনের ভেতরে কাউকে ঢুকে দেওয়া হচ্ছে না। যেসব দোকানকর্মী পোশাক উদ্ধারে ভেতরে ঢুকেছেন, তাদের সবাইকে বেরিয়ে আসতে মাইকিং করা হচ্ছে।
আগুনে পুড়ে কারও হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, গভীর রাতে মার্কেট বন্ধ করে দেওয়ার পর ভেতরে কারও থাকার কথা না। আর মার্কেট খোলার আগেই ভোরে আগুন লাগে।
মার্কেটের দ্বিতীয় তলা থেকে আগুন ছড়িয়ে পড়ে বলে জানান নিউ মার্কেট থানার ওসি শফিকুল গণি সাবু।
কী কারণে আগুন লাগল, তা তাৎক্ষণিকভাবে জানাতে পারেনি ফায়ার সার্ভিস। দোতলা ও তিন তলায় থাকা অধিকাংশ দোকানের পোশাক পুড়েছে বলে ধারণা করা হলেও ক্ষয়ক্ষতির পুরো চিত্রও এখনও পাওয়া যায়নি।
ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার মইন বলেন, “আগুন লাগার প্রকৃত কারণ তদন্ত না করে বলা যাবে না।
তবে তিনি বলেন, “এখন শুষ্ক মৌসুম চলছে, বাতাসে আর্দ্রতা অনেক কম। মার্কেট এবং দোকান সৌন্দর্য করার জন্য অনেক বড় বড় পাওয়ারের লাইট ব্যবহার করে থাকি। এসব কারণে অগ্নিকাণ্ড হতে পারে।"
গাউছিয়া মার্কেট থেকে ঢাকা নিউ মার্কেট সংযোগ ফুটব্রিজটি ভেঙে ফেলার কাজ চলছে এখন। সেই ভাঙার কাজের সময়ও আগুন লাগতে পারে বলে ব্যবসায়ীদের অভিযোগ। তারা তা ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালককেও জানিয়েছেন।
রোজার ঈদের আগে নিউ সুপার মার্কেটের ব্যবসায়ীরা নতুন পণ্য তুলেছিলেন দোকানে। আগুন লাগার পর ব্যবসায়ীদের হাহাকার শোনা যায় মার্কেটের সামনে।
আগুনের খবর পেয়েই যেসব দোকানি আসতে পেরেছেন, তাদের মরিয়া হয়ে ঈদের আগে দোকানে তোলা কাপড় সরাতে দেখা গেছে।
আগুন নেভাতে ফায়ার সার্ভিসের ২৮টি ইউনিট কাজ করছে। তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনী এবং বিজিবির সদস্যরাও।
আগুন নেভানোর কাজটি নির্বিঘ্ন করতে বাইরে কাজ করছে পুলিশ। মিরপুর রোডসহ আশপাশের সড়কগুলোকে যান চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে পুলিশ।
উৎসুক মানুষের ভিড়ে অগ্নি নির্বাপন ও উদ্ধার কাজ ব্যাহত হচ্ছে বলে ভিড় সরাতে কাজ করছে পুলিশ।
অগ্নিকাণ্ডের পরে উৎসুক জনতার কারণে আগুন নির্বাপণে সমস্যার কথা তুলে ধরে ফায়ার সার্ভিসের ডিজি মইন বলেন, “ এই জনসমাগমের কারণে কাজে খুবই ব্যাঘাত ঘটে, ব্যাহত হয়। উৎসুক জনতা একটু যেন দূরে থাকেন, আমাদের জানমালের ক্ষয়ক্ষতি কমানোর সুযোগ দেন।
ঈদের আগে ঢাকার পোশাকের অন্যতম বড় বিপণি কেন্দ্র বঙ্গবাজারে আগুনের ঘটনার রেশের মধ্যেই নিউ সুপার মার্কেটে বড় ধরনের এ অগ্নিকাণ্ডের খবর এলো।
১১ দিন আগে এমনি এক সকালে লাগা আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে বঙ্গবাজারের টিন ও কাঠের তৈরি তিন তলা মার্কেট। লাগোয়া বিপণি বিতানগুলোও বাদ যায়নি ভয়াবহ সেই আগুন থেকে।
তারপর গত বৃহস্পতিবার রাতে আগুনে পুরান ঢাকার নবাবপুরের ২০টি গুদাম পুড়ে যায়।
বারবার আগুন লাগছে, এটা কোনো নাশকতা কি না, তা জরুরি ভিত্তিতে তদন্ত করে দেখার আহ্বান জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালবক ব্রিগেডিয়ার মইন।
তিনি বলেন, “একের পর এক কেন আগুন লাগছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অনুরোধ করব তারা যেন বিষয়টি খতিয়ে করে দেখেন।”
ঝুঁকিপূর্ণ মার্কেটগুলোর বিষয়ে রোববার প্রেস ব্রিফিং করা হবে বলে জানান ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক।
তিনি বলেন, “আগামীকাল ১টায় ফায়ার সার্ভিস সদর দপ্তরে একটা প্রেস ব্রিফিং করব, যেখানে ঝুঁকিপূর্ণ মার্কেট সম্পর্কে আমরা আপনাদের অবহিত করব।”