তাদের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত বিপুল সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে দুদকে।
Published : 15 Oct 2024, 10:29 PM
আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আমির হোসেন আমু ও সাবেক খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলামের বিরুদ্ধে ওঠা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান করবে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক।
মঙ্গলবার তাদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা জানিয়েছেন দুদকের উপপরিচালক ও জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আকতারুল ইসলাম।
পাশাপাশি লক্ষ্মীপুর জেলার রামগতি উপজেলার মেয়র মেজবাহ উদ্দিন মেজু ও নেত্রকোণা জেলার মদন পৌরসভার মেয়র মো. আব্দুল হান্নান তালুকদারের বিরুদ্ধেও অনুসন্ধান শুরুর কথা জানিয়েছেন তিনি।
সাবেক আইন প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলামের বিরুদ্ধে দুদকে দেওয়া অভিযোগে বলা হয়েছে, নিজ নামে ও সন্তানদের নামে দেশে বিদেশে অঢেল সম্পদ গড়েছেন কামরুল ইসলাম। আইন প্রতিমন্ত্রী থাকাকালে নিম্ন আদালতে অধিকাংশ কর্মচারীর নিয়োগের ক্ষেত্রে দুর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা ঘুষ নিয়েছেন। দুর্নীতির মাধ্যমে ব্রাজিল থেকে নিম্নমানের গম ক্রয় করে সরকারি কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন।
তার বিরুদ্ধে অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, এই আওয়ামী লীগ নেতার নিজ নামে ঢাকার আজগর লেইনে চার তলা বাড়ি, মিরপুর আবাসিক এলাকায় দুটি ফ্ল্যাট, নিজ নামে মিরপুর হাউজিং এস্টেটে চার কাঠা জমি, নিউ টাউনে ১০ কাঠা জমি রয়েছে। তার দুটি টয়োটা ল্যান্ড ক্রুজার গাড়ি রয়েছে। আত্মীয় স্বজনের নামে-বেনামেও অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে প্রচুর জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদের মালিক হয়েছেন।
আমির হোসেন আমুর বিরুদ্ধে দুদকে আসা অভিযোগে বলা হয়, ঝালকাঠী-২ নির্বাচনি এলাকার বিভিন্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অফিস সহকারী, নৈশপ্রহরী ও আয়া নিয়োগে দুর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এ ছাড়া ঝালকাঠির এলজিইডি, শিক্ষা প্রকৌশল, গণপূর্ত অধিদপ্তরসহ সকল প্রতিষ্ঠানের ঠিকাদারি কাজে মোটা অঙ্কের টাকা অনৈতিকভাবে আদায় করতেন।
এছাড়া ধানমন্ডিতে প্লট ও কেয়ারি প্লাজায় দুটি ফ্ল্যাট কিনেছেন। সাভারের বাটপাড়া মৌজায় ৪৮ দশমিক ৭২ লাখ টাকা অকৃষি জমি এবং মিরপুর, রূপনগর ঢাকায় ১ কোটি ৩১ লাখ ৯৫ হাজার টাকা মূল্যের বাণিজ্যিক প্লট রয়েছে। তার একটি গাড়ি রয়েছে। এ ছাড়া তার নামে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা ও অন্যান্য বিনিয়োগ রয়েছে।
অভিযোগে আরও বলা হয়, আমুর নামে ১১ কোটি ৩২ লাখ ৪৩ হাজার ৮৩৮ টাকা টাকা এবং মোট স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ রয়েছে ২০ কোটি ৩২ লাখ ১০ হাজার ৮৩৮ টাকার। এসব সম্পদের বাইরেও দেশে-বিদেশে তার বিপুল সম্পদ রয়েছে।
ছাত্র-জনতার প্রবল গণআন্দোলনে গত ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতন ও অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর সাবেক মন্ত্রী-এমপি ও শীর্ষ আমলাদের বিরুদ্ধে অভিযোগে তৎপর হয়েছে দুদক। তাদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের অনুসন্ধান করছে দু্র্নীতিবিরোধী সংস্থাটি।
গত ১৪ আগস্ট ১৪ দলের সমন্বয়ক আমির হোসেন আমুর ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকে দলটির অন্য নেতাদের মত তারও হদিস মিলছে না।
অপরদিকে মেজবাহ উদ্দিন মেজুর বিরুদ্ধে দুদকে আসা অভিযোগে বলা হয়েছে, তিনি নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজে অনিয়ম ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রভাব খাটিয়ে নিজ ও অন্যদের নামে প্রচুর জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেছেন। তার নগদ টাকা, অকৃষি জমি এবং স্ত্রীর নামে জমি রয়েছে। রামগতি পৌরসভার বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্প না করে ভুয়া বিল ভাউচার দেখিয়ে বিল উত্তোলন ও বিভিন্ন বাজার ঘাট, নিজস্ব লোকের নিকট ইজারা দিয়ে অবৈধ উপায়ে অর্থ উপার্জন করেন। নিজ নামে, স্ত্রী ও অন্যান্য আত্মীয় স্বজনের নামে-বেনামে সম্পদ অর্জন করেছেন।
আর আব্দুল হান্নান তালুকদারের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার করে ও স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে দলীয় বা বিভিন্ন আত্মীয়স্বজনের মাধ্যমে অনিয়ম করে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। নেত্রকোণার মদনপুর পৌরসভার হাটবাজার যথাযথ নিয়ম না মেনে ঘনিষ্ঠজনদের ইজারা দিয়েছেন। তিনি ও তার ভাই মিলিতভাবে হাটবাজার ও স্ট্যান্ডসমূহের ইজারার অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা না দিয়ে আত্মসাৎ করেন। ক্ষমতার অপব্যবহার করে তিনি মদনপুর পৌরসভার একাধিক জমি কয়েক কোটি টাকা দিয়ে কিনেছেন, একাধিক স্থাপনা নির্মাণ করেছেন।
এছাড়া গ্রামের বাড়িতে কোটি টাকা খরচ করে আলিশান বাড়ি নির্মাণ করেছেন। দুই কোটি টাকা দিয়ে নিজ বাড়িতে প্রায় ৫ একর জায়গা কিনেছেন।