বুলবুল ছুরিকাঘাতের পর ওই ছাত্রী অসুস্থ হলে তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশের মাউন্ট এডোরা হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করা হয়।
Published : 26 Jul 2022, 10:02 PM
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী বুলবুল আহমেদের হত্যার ঘটনায় তার সঙ্গে থাকা এক ছাত্রীকে নিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে পুলিশ।
ঘটনার প্রায় ২৪ ঘণ্টার মাথায় মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের ওই ছাত্রীকে নিয়ে ঘটনাস্থলে যায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। পরে তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের কার্যালয়ে নিয়ে আসা হয়।
খুনের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেশ ও নির্দেশনা পরিচালক আমিনা পারভীন মঙ্গলবার রাত সোয়া ৮টায় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ওই ছাত্রী জানিয়েছেন, তিনজন মাস্ক পরা লোক এসে বুলবুলকে ডেকে নিয়ে ছুরিকাঘাত করে।
ছাত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদ পর্বে থাকা এবং তার সঙ্গে ঘটনাস্থলে যাওয়া তদন্ত কমিটির এ সদস্য আরও জানান, ওই ছাত্রী তার মোবাইল ফোনের কল লিস্টও মুছে ফেলেছেন।
সোমবার সন্ধ্যায় ক্যাম্পাসের ভেতরে অজ্ঞাত হামলাকারীর ছুরিকাঘাতে প্রাণ হারান বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী বুলবুল আহমেদ। এ সময় তার সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের ওই ছাত্রী সঙ্গে ছিলেন। বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের সামনের টিলায় বুলবুলকে আহত অবস্থায় পাওয়া যায়। হাসপাতালে নেওয়ার পর তার মৃত্যু হয়।
বুলবুল আহতের ঘটনার পর ওই ছাত্রী অসুস্থ হলে তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশের মাউন্ট এডোরা হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করা হয়।
ছাত্র উপদেশ ও নির্দেশনা পরিচালক আমিনা পারভীন বলেন, “আজও তাকে আমরা হাসপাতালে দেখে এসেছি বেলা ৩টার দিকে। এরপর বিকালে সে হাসপাতাল থেকে চলে এসেছে। তাকে হাসপাতালের ছাড়পত্রও দেওয়া হয়নি।”
হাসপাতাল থেকে চলে আসার পর ওই ছাত্রীকে বিশ্ববিদ্যালয়ের এককিলো রোডের যাত্রী ছউনিতে বসে থাকতে দেখে পুলিশ সদস্যরা। ওই সময় তারা ছাত্রীকে প্রক্টরের কার্যালয়ে নিয়ে যায়। পরে সাড়ে ৭টার দিকে সেখান থেকে তাকে ঘটনাস্থলে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে ৮টা পর্যন্ত তারা ছিলেন। পরে তাকে আবার প্রক্টর কার্যালয়ে নিয়ে আসা হয়। সেখানেই জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।
তদন্ত কমিটির সদস্য আমিনা পারভীন বলেন, “আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা চাচ্ছিলেন যে, এখন যেমন সময় আছে, এই সময়ে নিয়ে গেলে হয়তো সে বিষয়টি আরও ভালোভাবে বলতে পারবে। কারণ গতকাল রাতে সাড়ে ৭টার সময়ই ঘটনা ঘটেছিল।"
“ছাত্রীর ভাষ্য, বুলবুল আর সে ঘটনাস্থলে বসেছিলেন। হঠাৎ করে ওই স্থানে তিনজন লোক আসেন। তাদের সবার মাস্ক পরা ছিল। তারা এসে বুলবুলকে একটু দূরে সরে নিয়ে যায়। এ সময় ওই ছাত্রী অন্যদিকে তাকিয়ে কাউকে ডাকতে চেষ্টা করছিলেন। তারপর বুলবুলের দিকে তাকালে দেখেন, বুলবুলকে ছুরিকাঘাত করে অজ্ঞাতনামারা চলে যাচ্ছে।"
আমিনা পারভীন আরও বলেন, “ওই ছাত্রীর মোবাইলের কল লিস্ট চেক করেছি আমরা। সে সব কল লিস্ট ডিলিট করে দিয়েছে।”
"এখন আমরা ভাবছি তাকে কোথায় রাখা যায়। তাকে কি হলে রাখব নাকি অন্য কোথাও- এটা আমরা ভেবে দেখছি।"
ওই ছাত্রীকে সঙ্গে নিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শনের সময় সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের (এসএমপি) উপ-কমিশনার আজবাহার আলী শেখ, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ইশরাত ইবনে ইসমাইল, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ও সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।
এ ঘটনার বিচার চেয়ে রাতেই রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন বুলবুলের সহপাঠীরা। পরে প্রশাসনের আশ্বাসে সড়ক থেকে সরে যান তারা। পরে এ ঘটনায় রাতেই বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মুহাম্মদ ইশফাকুল হোসেন বাদী হয়ে সিলেটের জালালাবাদ থানায় মামলা করেন।
মামলায় বলা হয়, সোমবার সন্ধ্যা ৭টা ৪৫ মিনিটের দিকে বন্ধুদের নিয়ে ক্যাম্পাসের গাজীকালুর টিলা এলাকায় বেড়াতে গিয়ে দুষ্কৃতদের ছুরিকাঘাতে আহত হয় বুলবুল। রক্তাক্ত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারে নেওয়া হয়। পরে অ্যাম্বুলেন্সে করে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানে চিকিৎসকেরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ ঘটনায় মঙ্গলবার সকালে সন্দেহভাজন হিসেবে বহিরাগত তিনজনকে পুলিশ আটক করে বলে সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার বি এম আশরাফ উল্লাহ তাহের জানান।
আরও পড়ুন:
শাবির বুলবুলের গ্রামের বাড়িতে শোকের মাতম
বুলবুলের খুনিদের গ্রেপ্তারে ২৪ ঘণ্টার ‘আল্টিমেটাম’ শাবি শিক্ষার্থীদের
শাবি শিক্ষার্থী খুন: আশ্বাসে সড়ক ছাড়ল সহপাঠীরা, মামলা দায়ের