তনু হত্যার সাত বছরে তদন্ত সংস্থা বদলেছে চারটি আর পাঁচবার তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তন হয়েছে।
Published : 20 Mar 2023, 02:01 PM
কুমিল্লার কলেজছাত্রী সোহাগী জাহান তনু হত্যাকাণ্ডের সাত বছরেও খুনি শনাক্ত না হওয়ায় ক্ষোভ-আক্ষেপ প্রকাশ করে তার পরিবার জানিয়েছে, বিচার পাওয়ার আশা প্রায় ‘ছেড়েই’ দিয়েছেন তারা। তনুর মায়ের শঙ্কা, মৃত্যুর আগে বুঝি তিনি মেয়ের ‘খুনি’দের বিচার দেখে যেতে পারবেন না।
তনুর পরিবারের অভিযোগ, খুনের সাত বছরে তদন্ত সংস্থা চারটি বদলেছে আর পাঁচবার তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তন ছাড়া তদন্তে কোনো আশার আলো দেখতে পাননি তারা। শুরুতে থানা পুলিশ, পরে জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) এবং পরে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) দীর্ঘ সময় মামলাটি তদন্ত করেও কোনো কূল-কিনারা পায়নি।
তনুর সপ্তম মৃত্যুবার্ষিকীতে সোমবার জেলার মুরাদনগর উপজেলার বাঙ্গরা পশ্চিম ইউনিয়নের মির্জাপুর গ্রামে তাদের বাড়িতে মিলাদ মাহফিল ও দোয়া অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এ ছাড়া কুমিল্লা সেনানিবাসে তনুর বাসা এবং তার কলেজের সংগঠন ভিক্টোরিয়া কলেজ থিয়েটারেও (ভিসিটি) স্মরণ সভা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়।
তনুর মা আনোয়ারা বেগম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “জিন্দা লাশ হয়ে বেঁচে আছি, প্রায় সময়ই অসুস্থ থাকি- এরই মধ্যে কয়েকবার হাসপাতালেও গেছি। প্রতি মুহূর্তে মনে হয় এই বুঝি মরে গেলাম। আমার বয়স হয়েছে, অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে মৃত্যুর আগে তনুর খুনিদের বিচারটা দেখে যেতে পারবো না। নামাজে প্রতিদিন দোয়া করি- মেয়েকে যারা হত্যা করেছে, তাদের বিচার যেন আল্লাহ করেন। আমরা গরিব মানুষ, তাই বিচার পাওয়ার আশা এখন ছেড়েই দিয়েছি।“
২০২০ সালের ২১ অক্টোবর তনু হত্যা মামলা পিবিআইয়ে হস্তান্তর করে সিআইডি। মামলার তদন্তে আছেন পিবিআই সদর দপ্তরের পুলিশ পরিদর্শক মো. মজিবুর রহমান।
দুই বছরের বেশি সময় ধরে তদন্ত কর্মকর্তার সঙ্গে কোনো যোগাযোগ নেই জানিয়ে তনুর বাবা বলেন, “পিবিআই তদন্তভার পাওয়ার পর ভেবেছিলাম হত্যার বিচার পাবো। কিন্তু পিবিআইয়ের তদন্ত কর্মকর্তার সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ নেই দুই বছরের বেশি সময় ধরে। মামলা কী অবস্থায় আছে সেটাও জানি না আমরা।“
এদিকে মামলার কাজ ‘এগিয়েছে’ জানিয়ে তদন্ত কর্মকর্তা মজিবুর রহমান বলেন, “মামলাটি অধিক গুরুত্ব দিয়ে আমরা আন্তরিকভাবে তদন্ত করে যাচ্ছি। এরই মধ্যে বেশ কিছু অগ্রগতি আছে। তবে এখনই তা গণমাধ্যমে বলা ঠিক হবে না।“
তনুর পরিবারের অভিযোগ নিয়ে তার ভাষ্য, “আমি তদন্তভার নেওয়ার পর সিনিয়র অফিসারদের পরামর্শক্রমে একাধিকার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। তনুর পরিবার, স্কুলের শিক্ষকসহ কয়েকজনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। আমরা তদন্তে কোনো অবহেলা করছি না।“
তনু হত্যা মামলাটি বর্তমানে ‘হিমাগারে’ বর্ণনা করে জেলার সংস্কৃতিকর্মী খায়রুল আনাম বলেন, “মানুষের মনে এই হত্যাকাণ্ডের রেশ রয়ে গেছে। যেখানে পুরো দেশের মানুষ এই হতাকাণ্ডের বিচার দেখতে চায় সেখানে খুনিদের সামনে আনতে এত সময় লাগার কথা নয়।“
২০১৬ সালের ২০ মার্চ রাতে নাট্যকর্মী তনুর মরদেহ কুমিল্লা সেনানিবাস থেকে উদ্ধার করা হয়। সেনানিবাসের ভেতরে স্টাফ কোয়ার্টারে পরিবারের সঙ্গে থাকতেন তনু। হত্যাকাণ্ডের দিন সন্ধ্যায় ৩০০ গজ দূরে আরেকটি স্টাফ কোয়ার্টারে ছাত্র পড়াতে গিয়েছিলেন তিনি।
পরদিন কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তনুর লাশের প্রথম ময়নাতদন্ত হয়। ওই দিনই অজ্ঞাতদের আসামি করে কুমিল্লা কোতোয়ালি থানায় একটি হত্যা মামলা করেন তনুর বাবা।
মামলার তদন্তভার পুলিশ, ডিবি হয়ে সিআইডির হাতে যায়। আলামত সংগ্রহের পর সিআইডি জানায়, হত্যার আগে তনুকে ধর্ষণ করা হয়েছিল।
আদালতের নির্দেশে ২০১৬ সালের ৩০ মার্চ তনুর লাশ কবর থেকে তুলে দ্বিতীয়বার ময়নাতদন্ত করা হয়। দুই দফা ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে তনুর মৃত্যুর কারণ খুঁজে না পাওয়ার তথ্য জানায় কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগ।
এর পরের বছর ২০১৭ সালের মে মাসে সিআইডি তনুর পোশাক থেকে নেওয়া নমুনার ডিএনএ পরীক্ষা করে তিনজন পুরুষের শুক্রাণু পাওয়ার কথা গণমাধ্যমকে জানিয়েছিল। এ ছাড়া তনুর মায়ের সন্দেহ করা তিনজনকে ২০১৭ সালের ২৫ থেকে ২৭ অক্টোবর পর্যন্ত সিআইডির একটি দল ঢাকা সেনানিবাসে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল। তবে ওই সময়ে তাদের নাম গণমাধ্যমকে জানায়নি সিআইডি।
পুরনো খবর:
তনু হত্যা: ৬ বছরেও খুনি শনাক্ত না হওয়ায় ক্ষোভ স্বজনদের
তনু হত্যা: ডিএনএ প্রতিবেদনে ‘আটকে’ ময়নাতদন্ত