কুমিল্লার কলেজছাত্রী সোহাগী জাহান তনু হত্যাকাণ্ডের ছয় বছরেও খুনি শনাক্ত না হওয়ায় এবং তদন্ত নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তার স্বজন ও সহপাঠীরা।
Published : 20 Mar 2022, 11:48 AM
তাদের অভিযোগ, চারটি তদন্ত সংস্থা পরিবর্তন আর পাঁচবার তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তন ছাড়া তদন্তে কোন আশার আলো দেখতে পাননি তারা। শুরুতে থানা পুলিশ, পরে জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) এবং পরে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) দীর্ঘ সময় মামলাটি তদন্ত করেও কোন কূল-কিনারা পায়নি।
তনুর ষষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকীতে জেলার মুরাদনগর উপজেলার মির্জাপুর গ্রামে তাদের বাড়িতে রোববার মিলাদ মাহফিল ও দোয়া অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
পুনরায় ময়নাতদন্তের জন্য বুধবার তনুর লাশ তোলা হয় কবর থেকে
এর দুইদিন পর ১৭ ডিসেম্বর তনুর বাবার সঙ্গে আবারও দেখা করেন পিবিআই সদস্যরা। ওইদিন সকাল ১০টা থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত তারা কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টে অবস্থান করে ঢাকায় ফিরে যান। এরপর গত বছরের শুরুতে আরেক দফা কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টে আসেন পিবিআই সদস্যরা।
তনুর মা আনোয়ারা বেগম বলেন, “বারবার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বদল ছাড়া আর কোনও আশার কথা শুনিনি। আর কতদিন মেয়ের খুনের বিচারের জন্য কাঁদবো জানি না। কতবার কত স্থানে গিয়ে সাক্ষ্য দিয়েছি, তার হিসেব নেই। তনুর মৃত্যুবার্ষিকী এলেই সাংবাদিকরা খোঁজ-খবর নেয়। এছাড়া আর কেউ খবর নেয় না।
তনু হত্যার প্রতিবাদ চলছে সারাদেশে, এই ছবিটি এই কলেজছাত্রীর জেলা কুমিল্লার চান্দিনার
তনুর বাবা ইয়ার হোসেন বলেন, “পিবিআই তদন্তভার পাওয়ার পর ভেবেছিলাম হত্যার বিচার পাব। কিন্তু এখনও খুনিরাই শনাক্ত হলো না। খুনিদের দ্রুত শনাক্ত করে বিচার হোক এটাই আমার কথা। খুনিদের বিচার না হলে মরেও শান্তি পাব না।”
তনুর ভাই আনোয়ার হোসেন রুবেল বলেন, “আমরা দুই ভাই বড়, তনু ছিল আমাদের একমাত্র ছোট বোন। তার স্মৃতিগুলো এখনো আমাদের কাঁদায়। বোনের খুনিরা শনাক্ত হলেও মনে শান্তি পেতাম। কিন্তু এখনও খুনিরা ধরা ছোঁয়ার বাইরে। এজন্য খুবই কষ্ট হচ্ছে।”
দীর্ঘ প্রায় এক বছরের বেশি হবে তদন্ত কর্মকর্তার সঙ্গে কোন যোগাযোগ নেই জানিয়ে তিনি বলেন, “আমরা শুধু জানি, পিবিআই সদর দপ্তরের পরিদর্শক মো. মজিবুর রহমান আমাদের তদন্ত কর্মকর্তা। এছাড়া আর কোন তথ্য আমাদের জানা নেই।”
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী মহিউদ্দিন আকাশ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “যতবার তদন্ত কর্মকর্তা বদল হয় ততবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন আর তনু পরিবারের সঙ্গে কথা বলে দায় সারেন তারা। প্রতিবারই একই ঘটনা ঘটেছে। আমাদের বিশ্বাস সঠিক তদন্ত হলে আরও আগেই খুনিরা ধরা পড়ত।”
কলেজছাত্রী তনুর খুনিদের গ্রেপ্তারের দাবিতে বিক্ষোভ চলছে সারাদেশে, প্রতিবাদী এই কর্মসূচি মঙ্গলবার ঢাকার শাহবাগে
“আমাদের তদন্ত এগিয়ে যাচ্ছে। হত্যায় জড়িত যে বা যারাই থাকুক, আশা করছি আমরা তদন্তের মাধ্যমেই সব কিছু সামনে আনতে পারবো।”
তনুর পরিবারের সঙ্গে তদন্ত কর্মকর্তারা যোগাযোগ আছে কিনা-এমন প্রশ্নে উত্তরে তিনি বলেন, “তদন্তের ক্ষেত্রে এটা কোন জরুরি বিষয় না। আমাদের তদন্ত অব্যাহত রয়েছে এবং আমরা খুব গুরুত্বের সঙ্গে মামলাটি তদন্ত করছি। এরপরও যদি পরিবার আমাদেরকে কোন তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করতে চায়, তাহলে যেকোন সময় দিতে পারে।”
২০১৬ সালের ২০ মার্চ রাতে নাট্যকর্মী তনুর লাশ কুমিল্লা সেনানিবাস থেকে উদ্ধার করা হয়। সেনানিবাসের ভেতরে একটি স্টাফ কোয়ার্টারে পরিবারের সঙ্গে থাকতেন তনু। হত্যাকাণ্ডের দিন সন্ধ্যায় ৩০০ গজ দূরে আরেকটি স্টাফ কোয়ার্টারে ছাত্র পড়াতে গিয়েছিলেন তিনি। পরদিন কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তনুর লাশের প্রথম ময়নাতদন্ত হয়। ওই দিনই অজ্ঞাতদের আসামি করে কুমিল্লা কোতোয়ালি থানায় একটি হত্যা মামলা করেন তনুর বাবা।
মামলার তদন্ত ভার পুলিশ, ডিবি হয়ে সিআইডির হাতে যায়। আলামত সংগ্রহের পর সিআইডি জানায়, হত্যার আগে তনুকে ধর্ষণ করা হয়েছিল।
তনুর মৃত্যুর পর বাবা-মার আহাজারি
২০১৭ সালের মে মাসে সিআইডি তনুর পোশাক থেকে নেওয়া নমুনার ডিএনএ পরীক্ষা করে তিনজন পুরুষের শুক্রাণু পাওয়ার কথা গণমাধ্যমকে জানিয়েছিল। এছাড়া তনুর মায়ের সন্দেহ করা তিনজনকে ২০১৭ সালের ২৫ থেকে ২৭ অক্টোবর পর্যন্ত সিআইডির একটি দল ঢাকা সেনানিবাসে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল। তবে ওই সময়ে তাদের নাম গণমাধ্যমকে জানায়নি সিআইডি।