ধর্ষণের আলামত পরীক্ষা করে কুমিল্লার কলেজছাত্রী সোহাগী জাহান তনুর শরীরে পাওয়া নমুনা মিলিয়ে দেখতে দুই সেনা সদস্যসহ সন্দেহভাজনদের ডিএনএ সংগ্রহের কাজ শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
Published : 17 May 2016, 04:43 PM
মঙ্গলবার সিআইডির এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তারা সন্দেহভাজন কয়েকজনের তালিকা করে নমুনা সংগ্রহের কাজে হাত দিয়েছেন। পরে তনুর শরীর থেকে পাওয়া নমুনার সঙ্গে তা মিলিয়ে দেখা হবে।
গত ২০ মার্চ কুমিল্লা সেনানিবাসে তনুর লাশ পাওয়ার পর থানা পুলিশ ও ডিবির হাত ঘুরে তদন্তের দায়িত্ব পাওয়া সিআইডি কয়েক দফায় ঘটনাস্থলে গিয়ে আলামত সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য ঢাকায় নিয়ে আসে।
সোমবার এই তদন্ত সংস্থা জানায়, খুন হওয়ার আগে তনুকে ধর্ষণ করা হয়েছিল। ডিএনএ পরীক্ষায় কয়েকজন পুরুষের বীর্যের উপস্থিতিও পাওয়া গেছে।
অবশ্য প্রথম দফা ময়নাতদন্তের পর চিকিৎসকরা বলেছিলেন, তনুর মরদেহের ধর্ষণের আলামত তারা পাননি।
ওই সিআইডি কর্মকর্তা জানান, তনুর মা আনোয়ারা বেগম সন্দেহভাজন হিসেবে যাদের নাম বলেছিলেন, তালিকায় তারাও রয়েছেন।
গত মঙ্গলবার কুমিল্লার সিআইডি কার্যালয়ে সপ্তমবারের মতো জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গিয়ে তনুর ক্ষুব্ধ মা সাংবাদিকদের বলেন, কুমিল্লা সেনানিবাসের সার্জেন্ট জাহিদ ও সিপাহী জাহিদকে জিজ্ঞাসাবাদ করলেই সব তথ্য বেরিয়ে আসবে।
ওই দিন তনুর পরিবারের চার সদস্যসহ নয়জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে সিআইডি ঢাকার জ্যেষ্ঠ বিশেষ পুলিশ সুপার আবদুল কাহ্হার আকন্দের নেতৃত্বে একটি দল।
আবদুল কাহহার মঙ্গলবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ডিএনএ প্রতিবেদন পাওয়ার পর তারা একটা পর্যায়ে এসেছেন। এখন বাকি কাজ যতো দ্রুত শেষ করা যায়, সিআইডি সেদিকেই এগুচ্ছে।
এদিকে সকালে কুমিল্লা সিআইডি বিশেষ পুলিশ সুপার ড. নাজমুল করিম খান তনু হত্যা মামলার অগ্রগতি নিয়ে পর্যালোচনা সভা হয়।
দুপুরে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, “মামলার অগ্রগতি রয়েছে, শীগগিরই তনুর হত্যাকারীদেরকে আইনের আওতায় আনা হবে।”
ডিএনএ পরীক্ষা নিয়ে সিআইডির প্রতিবেদনের বিষয়ে তনুর বাবা এয়ার হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, “আমি চাই তনু হত্যার সাথে যারা জড়িত, সে যে-ই হোক তাদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি দেওয়া হোক।”
তনুর মা আনোয়ারা বলেন, “আমার বাসার সামনে আমার মেয়েকে মারল। কিন্তু এতোদিন হয়ে গেল ক্যান্টনমেন্ট এখনও তাদেরকে কেন ধরতে পারলো না।
“আমার মেয়েকে যারা ধর্ষণ করে হত্যা করেছে, তাদের কঠিন শাস্তি চাই।”
গত ২০ মার্চ কুমিল্লা সেনানিবাসে তনুর লাশ পাওয়ার প্রায় দুই মাস পর সোমবার সিআইডি কর্মকর্তা আবদুল কাহহার বলেন, “আমাদের ল্যাবে যে ডিএনএ টেস্ট করা হয়েছে, তাতে ধর্ষণের আলামত পাওয়া গেছে।”
সিআইডির কুমিল্লা ও নোয়াখালী অঞ্চলের দায়িত্বে থাকা বিশেষ সুপার নাজমুল করিম খান বলেন, “ডিএনএ পরীক্ষায় কয়েকজন পুরুষের বীর্যের উপস্থিতি পাওয়া গেছে।”
তনু হত্যাকাণ্ডের পর পুলিশ ধর্ষণের সন্দেহের কথা জানালেও ১৫ দিন পর কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের চিকিৎসক দল ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে সেই ধরনের আলামত না পাওয়ার কথা জানিয়েছিল।
এরপর আদালতের আদেশে কবর থেকে লাশ তুলে তনুর দ্বিতীয়বার ময়নাতদন্ত হয়। সেই পরীক্ষার প্রতিবেদন এখনও পাওয়া যায়নি বলে জানান সিআইডি কর্মকর্তা কাহহার।
ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের কর্মচারী ইয়ার হোসেনের মেয়ে ভিক্টোরিয়া কলেজের ছাত্রী তনুর খুনি কাউকে দুই মাসেও শনাক্ত কিংবা গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ, যা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা রয়েছে।
সেনানিবাসের এই হত্যাকাণ্ড ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চলছে বলেও বিভিন্ন মহল থেকে অভিযোগ উঠেছে; যদিও সেনাবাহিনী থেকে তদন্তে সব ধরনের সহায়তার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়।
সেনানিবাসের ভেতরে একটি স্টাফ কোয়ার্টারে পরিবারের সঙ্গে থাকতেন তনু। হত্যাকাণ্ডের দিন সন্ধ্যায় ৩০০ গজ দূরে আরেকটি স্টাফ কোয়ার্টারে ছাত্র পড়াতে গিয়েছিলেন তিনি।
সেখান থেকে না ফেরার রাতে ইয়ার হোসেন মেয়েকে খুঁজতে বের হন। দুই স্টাফ কোয়ার্টারের মাঝের অনেকটা নির্জন পথের ধারে ঝোঁপের মধ্যে অচেতন অবস্থায় তনুকে পান তিনি।
তনুকে পাওয়ার আগে খোঁজার সময় অপরিচিত কয়েক যুবককে দ্রুত সরে পড়তে দেখেছিলেন বলে ইয়ার হোসেন জানান।
নিম্নবিত্তের পরিবারের সন্তান তনু টিউশনী করে তার পড়ার খরচ জোগানোর পাশাপাশি নাট্য সংগঠনে যুক্ত ছিলেন।