প্রযুক্তির দুনিয়ায় কাগুজে বইয়ের গুরুত্ব কমেছে- এই বক্তব্যের সাথে আমি কোনোভাবেই একমত নই।
Published : 10 Jan 2018, 10:10 AM
প্রযুক্তির উৎকর্ষের কারণে মানুষের হাতে হাতে যখন স্মার্টফোন কিংবা ট্যাব, তখন একটি পক্ষ বলতে শুরু করেছেন- মানুষ হয়তো এবার কাগজের বই থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে। কিন্তু তাতে বইয়ের প্রতি আমার ভালোবাসায় কোনো প্রভাব পড়েনি। আর এ কারণেই আমি লাইব্রেরি পছন্দ করি।
লাইব্রেরি বা পাঠাগাড়, যেখানে থরে থরে সাজানো থাকে বই। নীরব পরিবেশে বই পড়ার জন্যে এর চেয়ে ভালো জায়গা আর কিছুই হতে পারে না।
লাইব্রেরি ভবনটির বর্তমান নাম ‘দ্য স্টিফেন এ শাওয়ার্জম্যান বিল্ডিং’। বিশিষ্ট এক ব্যবসায়ীর নামে এই নামকরণ করা হয় ২০০৮ সালে। কেননা, এই ভবনটির সংস্কারে বড় অঙ্কের অর্থ দান করেছিলেন ‘দ্য ব্ল্যাকস্টোন’ গ্রুপের চেয়ারম্যান ও সিইও স্টিফেন এ শাওয়ার্জম্যান।
কেবল নিউ ইয়র্ক নয়, গোটা আমেরিকার জন্যেই এটি একটি ঐতিহাসিক ল্যান্ডমার্ক। যা দাঁড়িয়ে আছে মিডটাউন ম্যানহাটনে। ভবনটির নির্মাণ শুরু হয় ১৮৯৭ সালে। ১৯১১ সালের ২১ মে নিউ ইয়র্ক পাবলিক লাইব্রেরির এই কেন্দ্রীয় শাখাটির উদ্বোধন করা হয়।
‘কার্রের ও হেস্টিংস ফার্ম’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান ভবনটির নির্মাণ কাজ করেন। আর স্থপতি ছিলেন থমাস হেস্টিংস ও জন মার্ভিন কার্রের। এখন দেশের চারটি গবেষণা লাইব্রেরির নাম উল্লেখ করতে হলে উপরের দিকেই থাকবে ‘সেন্ট্রাল বিল্ডিংয়ে’-এর নাম।
ভবনটি নির্মাণ করা হয়েছে বেওস-আর্টস আর্কিটেকচার অনুযায়ী। যাকে বলা হয় ‘নিওক্লাসিক্যাল’ স্থাপত্য। বাইরে থেকেই ভবনটি সবাইকে আকৃষ্ট করে। ভেতরে ঢুকলে সেই ভালোলাগা আরও বেড়ে যায়।
লাইব্রেরির প্রধান আকর্ষণ বিখ্যাত ‘রোজ মেইন রিডিং রুম’। রুমটির নম্বর ৩১৫। এককথায়, এই রুমটি বিশাল ও রাজকীয়। ৫২ ফিট উঁচু। ছাদে সারি সারি রাজকীয় ঝাড়বাতি। সারিবদ্ধ পড়ার টেবিল। মাটির সাথে লেভেল করা সেলফে রাখা বই। রুমের পাশেই রয়েছে বেলকনি।
বিশাল জানালাগুলো এই লাইব্রেরির প্রাণ। ১৯৬৫ সালে ভবনটিকে ‘ন্যাশনাল হিস্টরিক ল্যান্ডমার্ক’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। পরের বছর জাতীয় ঐতিহ্য হিসেবে তালিকাভুক্ত হয় এই ভবন। ১৯৬৭ সালে নিউ ইয়র্ক সিটির ল্যান্ডমার্ক হিসেবে স্বীকৃতি পায় নিউ ইয়র্ক পাবলিক লাইব্রেরি।
পাবলিক লাইব্রেরির সৌন্দর্য বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে একবারে সাথেই লাগানো ‘ব্রায়ান্ট পার্ক’। লাইব্রেরির পেছন দিকে এটি একটি অসাধারণ নাগরিক উদ্যান। চারপাশে সুউচ্চ দালান দিয়ে ঘেরা। ১৭৯৪ সালের ৩ নভেম্বর জন্ম নেওয়া রোমান্টিক কবি, সাংবাদিক ও নিউ ইয়র্ক ইভিনিং পোস্টের দীর্ঘদিনের সম্পাদক উইলিয়াম কুলেন ব্রায়ান্টের নামে এই পার্কটির নাম রাখা হয়েছে।
যদিও পার্কটি ‘নিউ ইয়র্ক সিটি ডিপার্টমেন্ট অব পার্ক অ্যান্ড রিক্রিয়েশন’-এর আওতায়, কিন্তু এর কার্যক্রম পরিচালনা করে ‘ব্রায়ান্ট পার্ক কর্পোরেশন’। ব্রায়ান্ট পার্কে শিশু থেকে বুড়ো-সব বয়সী মানুষের জন্যে রয়েছে নানা কার্যক্রম। আছে বিনোদন ও শিক্ষামূলক নানা কর্মসূচি। বছর জুড়ে উৎসব আয়োজন লেগেই থাকে।
রয়েছে খেলাধুলার সুযোগ। স্যুভিনির কিংবা খাওয়া-দাওয়া, সবকিছুর ব্যবস্থা রয়েছে। শারীরিক ও মানসিক প্রশান্তির নানা সুযোগ আছে সেখানে। নাগরিক জীবনের ব্যস্ততার ফাঁকে মানুষ এই পার্কে যায় সুযোগ পেলেই। এটিকে বলা হয় একটি মডেল পার্ক। আর পার্কটি খুব গভীরভাবে মিশে আছে পাবলিক লাইব্রেরিটির সাথে।
লেখক :
ইয়োগা আর্টিস্ট ও লেখক
ছবি: আশরাফুন নাহার লিউজা
ইমেইল: [email protected]
লেখকের অন্যান্য লেখা:
প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ,আড্ডা,আনন্দ বেদনার গল্প,ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ,রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা [email protected]। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন! |