বছর চারেক বিরতিতে আরেকটি ক্রিকেট বিশ্বকাপ চলে এসেছে প্রায়। অস্ট্রেলিয়া-নিউ জিল্যান্ডে একাদশ বিশ্বকাপের খেলা মাঠে গড়ানোর আগে ফিরে দেখা যাক ১৯৭৯ সালের আসরটিকে।
Published : 01 Feb 2015, 02:05 PM
২০১১: বাংলাদেশেও বিশ্বকাপ, শিরোপা ভারতের
২০০৭: অস্ট্রেলিয়ার হ্যাটট্রিক শিরোপা, বাংলাদেশের সেরা সাফল্য
২০০৩: অস্ট্রেলিয়ার টানা দ্বিতীয় বিশ্বকাপ শিরোপা
১৯৯৯: অস্ট্রেলিয়ার হ্যাটট্রিক বিশ্বকাপের জয়ের সূচনা
১৯৯৬: শ্রীলঙ্কার আভিজাত্যে উত্তরণের কাহিনী
১৯৯২: পাকিস্তানের ক্রিকেটীয়-রূপকথা
১৯৮৭: উপমহাদেশে প্রথম বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার আধিপত্যের সূচনা
আবার স্বাগতিক ইংল্যান্ড; আবারও চ্যাম্পিয়ন ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ১৯৭৯ সালের বিশ্বকাপ যেন চার বছর আগের আসরেরই প্রতিচ্ছবি।
ইংল্যান্ডে বিশ্বকাপ আয়োজনের যুক্তি ছিল আগের মতো। ওই ইংলিশ গ্রীষ্মের দীর্ঘ দিন; আর অন্য যে কোনো দেশের চেয়ে আয়োজনের সক্ষমতা। ফরম্যাটও ছিল ১৯৭৫ সালের। টেস্ট খেলুড়ে ছয় দেশের সঙ্গে অন্য দুটি দেশের অংশগ্রহণে। তবে এখানে ব্যতিক্রম একটি ব্যাপার। চার বছর আগে শ্রীলঙ্কা ও পূর্ব আফ্রিকা বিশ্বকাপে খেলেছিল আমন্ত্রিত হিসেবে। এবার জুড়ে দেওয়া হয় বাছাইপর্ব পেরিয়ে আসার শর্ত। ১৯৭৯ সালে তাই প্রথমবারের মতো বসে আইসিসি ট্রফির আসর। তাতে অংশ নিয়েছিল বাংলাদেশও। কিন্তু ফাইনালে উঠতে পারেনি। দুই ফাইনালিস্ট শ্রীলঙ্কা ও কানাডা পায় দ্বিতীয় বিশ্বকাপের টিকেট।
ইংল্যান্ডে দ্বিতীয় বিশ্বকাপের আবহে সবচেয়ে বড় পরিবর্তন অবশ্য ওই আইসিসি ট্রফিতে নয়; বরং ক্যারি প্যাকারের ওয়ার্ল্ড সিরিজ কাপের প্রভাবে। বিদ্রোহী এ টুর্নামেন্টের আগুন ছড়িয়ে পড়েছিল ক্রিকেট-বিশ্বের সর্বত্র। রঙিন পোশাক, সাদা বল, রাতের ক্রিকেট- প্রচলিত সব প্রথাকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে পরিবর্তনের হাওয়া ছিল ওই ক্যারি প্যাকার ওয়ার্ল্ড সিরিজে। দর্শকরা দারুণভাবে লুফেও নিয়েছিল তা। কিন্তু ‘রক্ষণশীল’ আইসিসি তখনও সেই পরিবর্তনের স্রোতে গা ভাসায়নি।
প্যাকার সিরিজে খেলা ক্রিকেটারদের নিষিদ্ধ করা হয় প্রাথমিকভাবে। তবে ১৯৭৯ সালের বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও পাকিস্তান ঠিকই ‘বিদ্রোহী’ খেলোয়াড়দের নিয়ে গড়ে দল। ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া হাঁটেনি সে পথে। তাতে রং হারিয়ে সবচেয়ে বিবর্ণ অস্ট্রেলিয়া। ইয়ান চ্যাপেল, গ্রেগ চ্যাপেল, রডনি মার্শ, ডেনিস লিলিদের বাদ দিলে স্কোয়াডে আর থাকেন কে!
বিশ্বকাপের ‘এ’ গ্রুপে ছিল ইংল্যান্ড, পাকিস্তান, অস্ট্রেলিয়া ও কানাডা। এর মধ্যে কেবল টেস্ট অঙ্গনের বাইরে থাকা দলটির বিপক্ষেই জেতে অস্ট্রেলিয়া। বাকি দুই ম্যাচ হেরে গ্রুপ পর্বে শেষ হয় প্রথম বিশ্বকাপ ফাইনালিস্টদের অভিযান। তিনটি ম্যাচ জিতেই সেমি-ফাইনালে ওঠে ইংল্যান্ড। দুই জয়ে তাদের সঙ্গী হয় পাকিস্তান।
দুর্দান্ত সেই জয়ের পরও কিন্তু সেমি-ফাইনালে যেতে পারেনি শ্রীলঙ্কা। নিউ জিল্যান্ডের কাছে হারায় এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে খেলা বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত হওয়ায় গ্রুপে তৃতীয় স্থান নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয় লঙ্কানদের। তিন ম্যাচ হারা ভারত বাড়ি ফেরে শূন্য হাতে। ওদিকে লঙ্কানদের সঙ্গে ম্যাচ ভেসে গেলেও বাকি দুই খেলার জয়ে গ্রুপে সবার ওপরে থেকে সেমি-ফাইনালে ওঠে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। দুই জয়ে নিউ জিল্যান্ড তাদের সঙ্গী হয় সেরা চারে।
গ্রুপ পর্বের ১২টি ম্যাচের মধ্যে বেশিরভাগই ছিল একপেশে; তবে সেমি-ফাইনাল হয়ে এল আনন্দদায়ী ব্যতিক্রম। নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে ইংল্যান্ডের রুদ্ধশ্বাস জয়টি মাত্র ৯ রানের। স্বাগতিকদের ২২১ রানের জবাবে ২১২ পর্যন্ত গিয়েছিল কিউইরা। একটি উইকেট অক্ষত তখনো, কিন্তু নির্ধারিত ৬০ ওভার যে শেষ! প্রথমবারের মতো তাই বিশ্বকাপ ফাইনালে ওঠে ইংল্যান্ড।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ফাইনালে ওঠে দ্বিতীয়বারের মতো। শেষ চারে পাকিস্তানের বিপক্ষে তাদের জয় ৪৩ রানের। তবে ফল যেমনটা বলছে, ম্যাচ কিন্তু মোটেও তেমন একপেশে ছিল না। আগে ব্যাটিং করা ক্যারিবিয়ানরা ইনিংস শেষ করে ছয় উইকেটে ২৯৩ রান তুলে। গর্ডন গ্রিনিজ-ডেসমন্ড হেইন্সের ১৩২ রানের উদ্বোধনী জুটি গড়ে দেয় যে ইনিংসের ভিত্তি। পাকিস্তানের রান কিন্তু এক সময় ছিল এক উইকেটে ১৭৬। ১০ রানে উদ্বোধনী জুটি ভেঙে গেলেও মাজিদ খান ও জহির আব্বাসের দারুণ ব্যাটিংয়ে দুর্দান্তভাবে খেলায় ফেরে পাকিস্তান। ম্যাচের পাল্লা তখন প্রবলভাবে হেলে তাদের দিকে। কলিন ক্রফটের আগুনের গোলায় রংবদল হয় আরেকবার। শুরুতে জহির (৯৩) ও খানিক পরে মাজিদকে (৮১) আউট করে ক্যারিবিয়ানদের মুখে হাসি ফোটান ওই ফাস্ট বোলার। ওই যে হোঁচট খেল পাকিস্তান, সেখান থেকে ফিরতে পারেনি আর। ২৫০ রানে অলআউট হয়ে যায় তারা।
জবাব দিতে নেমে ইংল্যান্ড উদ্বোধনী জুটিতে তুলে ফেলে ১২৯ রান। তবে মাইক ব্রিয়ারলি ও বয়কট ব্যাটিং করছিলেন বড্ড ধীরে। দুই অঙ্কে পৌঁছতে ১৭ ওভার লাগিয়ে দেন বয়কট। চা-বিরতির কিছুক্ষণ পর রিচার্ডসের অফ স্পিনে ক্যাচ তুলে দিয়েছিলেন এই ইংলিশ ওপেনার। এমনিতে দুর্দান্ত ফিল্ডার ক্লাইভ লয়েডের মুঠো গলে পড়ে যায় বল।
“অনেকেই বলেন যে, আমি নাকি ইচ্ছে করে ক্যাচটি ফেলে দিয়েছি। যেন ওই ধীরগতির ব্যাটিংয়ে ইংল্যান্ডের পরাজয় ত্বরান্বিত হয়। এটি মিথ্যে। তবে অমনটা করলে তা ভালো কৌশলই হত। কেননা দুই ইংলিশ ওপেনার যত বেশি ওভার ক্রিজে কাটাচ্ছিলেন, তাদের কফিনে আরেকটি করে পেরেক ঠুকে দিচ্ছিল তা’- পরে স্মৃতিচারণা করেছেন ক্যারিবিয়ান অধিনায়ক।
তা লয়েড ইচ্ছে করে বয়কটের ক্যাচ ছাড়ুন আর নাই ছাড়ুন, ধীর ব্যাটিং ইংল্যান্ডকে হারের পথে নিয়ে যায়। ১২৯ রানের উদ্বোধনী জুটি ভাঙে ৩৯তম ওভারে। রানের জন্য ততক্ষণে হাঁস-ফাঁস শুরু হয় ইংল্যান্ড শিবিরে। সেটি তো আর ৩০ গজের ফিল্ডিং বাধ্যবাধকতার যুগ না। বাউন্ডারি লাইনে তাই যথেষ্ট সংখ্যক ফিল্ডার মজুদ রাখতে পারেন লয়েড। ইংলিশ ব্যাটসম্যানরা রানের জন্য ব্যাট চালিয়েছেন আর হয়েছেন আউট। এক সময় দুই উইকেট ১৮৩ রানে পৌঁছেছিল তারা, সেখান থেকে রানের পিছু ধাওয়া করতে গিয়ে ১১ রানে যায় শেষ আট উইকেট। ৩৮ রানে পাঁচ উইকেট নিয়ে ‘বিগ বার্ড’ জোয়েল গার্নার স্বাগতিকদের ৯২ রানে হারানোয় বড় ভূমিক রাখেন। তবে অসাধারণ অপরাজিত সেঞ্চুরির জন্য নায়কের আসনটা যে বরাদ্দ হয়ে ছিল ‘কিং’ রিচার্ডসের জন্যই!
সবচেয়ে বেশি রান:
খেলোয়াড় (দেশ) | ম্যাচ | রান | সেরা | গড় | ১০০/৫০ |
গর্ডন গ্রিনিজ (ও.ইন্ডিজ) | ৪ | ২৫৩ | ১০৬* | ৮৪.৩৩ | ১/২ |
ভিভ রিচার্ডস (ও.ইন্ডিজ) | ৪ | ২১৭ | ১৩৮* | ১০৮.৫০ | ১/০ |
গ্রাহাম গুচ (ইংল্যান্ড) | ৫ | ২১০ | ৭১ | ৫২.৫০ | ০/২ |
গ্লেন টার্নার (নিউ জিল্যান্ড) | ৪ | ১৭৬ | ৮৩* | ৮৮.০০ | ০/১ |
জন রাইট (নিউ জিল্যান্ড) | ৪ | ১৬৬ | ৬৯ | ৪১.৫০ | ০/১ |
সবচেয়ে বেশি উইকেট:
খেলোয়াড় (দেশ) | ম্যাচ | উইকেট | সেরা | গড় | ইকোনমি |
মাইক হেনড্রিক (ইংল্যান্ড) | ৫ | ১০ | ৪/১৫ | ১৪.৯০ | ২.৬৬ |
ব্রায়ান ম্যাকেঞ্জি (নিউ জিল্যান্ড) | ৪ | ৯ | ৩/২৪ | ১৫.৬৬ | ৩.০৭ |
আসিফ ইকবাল (পাকিস্তান) | ৪ | ৯ | ৪/৫৬ | ১৭.৪৪ | ৩.৩৪ |
ক্রিস ওল্ড (ইংল্যান্ড) | ৫ | ৯ | ৪/৮ | ১৭.৪৪ | ২.৭০ |
মাইকেল হোল্ডিং (ও.ইন্ডিজ) | ৪ | ৮ | ৪/৩৩ | ১৩.২৫ | ২.৫৮ |