প্রসারিত দুহাত, ডানা মেলে ভেসে চলেছেন মাহমুদউল্লাহ। দিগ্বিদিক ছুটছে খুলনা টাইটানসের ক্রিকেটাররা। যেন দুদিন আগের দৃশ্য আবার! মাহমুদউল্লাহর মাথায় হাত, নিজের কীর্তি বিশ্বাস করতে পারছিলেন না যেন নিজেই। আবারও প্রতিপক্ষের মুঠো থেকে ছিনিয়ে নেওয়া জয়!
Published : 12 Nov 2016, 03:00 PM
আরও একটি অবিশ্বাস্য শেষ ওভার, আরও একবার নায়ক মাহমুদউল্লাহ। শেষ ওভারে আবারও নিলেন ৩ উইকেট। খুলনা টাইটানসকে এনে দিলেন ৪ রানের অভাবনীয় জয়। জয়ের কাছে গিয়েও হারল চিটাগং ভাইকিংস।
আগের ম্যাচে ৪৪ রানে অলআউটের দু:স্বপ্ন পেছনে ফেলল খুলনা আরেকটি রোমাঞ্চকর জয়ে। এর আগে রাজশাহী কিংসের বিপক্ষেও শেষ ওভারে ৭ রানের সমীকরণে দলকে জিতিয়েছিলেন মাহমুদুল্লাহ ৩ উইকেট নিয়ে।
তৃতীয় ম্যাচে খুলনার এটি দ্বিতীয় জয়। সমান ম্যাচে চিটাগংয়ের দ্বিতীয় হার।
অথচ এই ম্যাচের নায়ক হতে পারতেন মোহাম্মদ নবি। বল হাতে নিয়েছিলেন ৩ উইকেট। এরপর ব্যাটিংয়েও ধুঁকতে থাকা দলকে নিয়ে গিয়েছিলেন জয়ের দ্বারপ্রান্তে। চতুরঙ্গা ডি সিলভার সঙ্গে ৪ ওভারে তার ৪৫ রানের জুটিতেই কঠিন সমীকরণ সহজ বানিয়ে ফেলেছিল চিটাগং।
সব গড়বড় শেষ ওভারে। প্রথম বলে সিঙ্গেল নিলেন নবি। পরের বলটি শর্ট, অনেক বাইরে। কিন্তু চার মারার মতো সেই বলে কট বিহাইন্ড চতুরঙ্গা (১৪ বলে ১৯)। পরের বলে এলবিডব্লিউয়ের আবেদন থেকে বেঁচে গেলেন রাজ্জাক। ছক্কা মারার চেষ্টায় আউট হলেন পরের বলেই।
এর আগে মাঝারি পুঁজি নিয়েও খুলনাকে লড়াইয়ে রেখেছিলেন শফিউল ইসলাম ও কেভন কুপার।
রান তাড়ার শুরু থেকেই চিটাগংকে চেপে ধরে খুলনা। প্রথম দুই ওভারে ডানা মেলতে পারেনি তামিম ইকবাল ও ডোয়াইন স্মিথ। পরে আক্রমণে এসে দুজনকেই ফেরান কেভন কুপার। দুজনই আউট হয়েছেন ৩ রান করে, তুলে মারতে গিয়ে। তামিমের ক্যাচ মিড অনে, স্মিথের মিড অফে।
হাঁসফাঁস করতে থাকা চিটাগংয়ে টুটি চেপে ধরেন যেন শফিউল। ফিরিয়ে দেন শোয়েব মালিক ও এনামুল হককে। জহুরুল হক ও জাকির হাসান যখন জুটি গড়ার চেষ্টায়, তখন এই দুজনকেও ফেরান শফিউল। ক্যারিয়ারের প্রথমবার ৪ উইকেট নিয়ে শফিউল স্পর্শ করলেন টি-টোয়েন্টিতে ৫০ উইকেট।
সেই শফিউলের শেষ দুই বলে ছক্কা ও চার মেরেই ম্যাচের গতি বদলে দিতে থাকেন নবি। সঙ্গত ধরেন চতুরঙ্গাও। ৩ ওভারে যখন চাই ২৯ রান, মাহমুদউল্লাহর ওভারে ১২ রান নিয়েই দুজন দলকে এগিয়ে নেন জয়ের কাছে। কিন্তু শেষে পেরে উঠলেন না সেই মাহমুদউল্লাহর চাতুর্যের কাছেই।
ম্যাচের প্রথম দুই বলেই আব্দুর রাজ্জাককে চার মারেন রিকি ওয়েসেলস। পরের ওভারে শুভাশীষ রায় হজম করেন দুই চার। ওয়েসেলস ও হাসানুজ্জামান রান তুলছিলেন ওভারপ্রতি এগারোর বেশি। নবি আক্রমণে আসতেই বদলে যায় চিত্র।
প্রথম বলেই নবিকে স্লগ করে ডিপ মিড উইকেটে ক্যাচ দেন হাসানুজ্জামান। গত ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে কলাবাগান ক্রীড়া চক্রের হয়ে ৫৩ বলে ৯৫ রানের ইনিংস খেলে হইচই ফেলে দেওয়া ব্যাটসম্যান টি-টোয়েন্টি অভিষেকে ফিরলেন ৮ রানে।
ব্যাটিং অর্ডারে প্রমোশন পেয়ে তিনে নেমেছিলেন শুভাগত হোম। কিন্তু সুযোগটা কাজে লাগাতে পারেননি এই অলরাউন্ডার। নবির ওই ওভারেই ফিরেছেন বাজে এক শটে (৩)।
নবির জোড়া ধাক্কার পর রাজ্জাকের আঘাত। দারুণ এক আর্ম ডেলিভারিতে অভিজ্ঞ স্পিনার বোল্ড করে দেন ওয়েসেলকে (১৭ বলে ২৮)।
দলকে উদ্ধার করতে পারেনি মাহমুদউল্লাহও। অসাধারণ এক ক্যাচে খুলনা অধিনায়ককে ফিরিয়েছেন চিটাগং অধিনায়ক। তাসকিনের বাউন্সারে পুল খেলেছিলেন মাহমুদউল্লাহ। মিড উইকেট থেকে পেছন দিয়ে অনেকটা দৌড়ে আকাশে বলের দিক থেকে একবারও চোখ না সরিয়ে সামনে ঝাঁপিয়ে ক্যাচ নেন তামিম ইকবাল।
নিকোলাস পুরান তখনও পাচ্ছিলেন না টাইমিং। কিন্তু দারুণ ব্যাটিংয়ে আরিফুল এগিয়ে নেন খুলনাকে। দারুণ দুটি ছক্কা মারেন নবি ও শুভাশীষকে। শেষ ওভারে গিয়ে অবশেষে ছক্কা মারতে পারেন পুরান। স্কয়ার লেগ দিয়ে ওড়ান তাসকিনকে। তার পরও তার ২৯ রানের ইনিংসে লেগেছে ৩০ বল। ১৬ বলে অপরাজিত ২৫ আরিফুল।
শক্তিশালী চিটাগংয়ের সামনে ওই রানটাকে মনে হচ্ছিলো যথেষ্টর কমই। কিন্তু শেষে একজন মাহমুদউল্লাহ থাকলে ভয় কী! আবারও জিতলেন, জেতালেন সেই মাহমুদউল্লাহই।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
খুলনা টাইটানস: ২০ ওভারে ১২৭/৭ (ওয়েসেলস ২৮, হাসানুজ্জামান ৮, শুভাগত ৩, মাহমুদউল্লাহ ৬, অলক ২৩, পুরান ২৯, আরিফুল ২৫*, কুপার ০, মোশাররফ ১*; রাজ্জাক ১/২৩, শুভাশীষ ০/২৭, নবি ৩/২২, তাসকিন ২/১৭, মালিক ০/২৩, চতুরঙ্গা ০/১২)
চিটাগং ভাইকিংস: ২০ ওভারে ১২৩/৯(তামিম ৩, স্মিথ ৩, এনামুল ১৪, মালিক ৪, জাকির ৮, জহুরুল ২৫, নবি ৩৯, চতুরঙ্গা ১৯, রাজ্জাক ০, তাসকিন ০*; শুভাগত ০/২, জুনাইদ ০/২৭, কুপার ২/১৭, মোশাররফ ০/১৯, শফিউল ৪/২৮, মাহমুদউল্লাহ ৩/২৪)।
ফল: খুলনা টাইটানস ৪ রানে জয়ী
ম্যান অব দ্য ম্যাচ: মাহমুদউল্লাহ