ভিকারুননিসা নূন স্কুল থেকে মেয়েকে আনতে গিয়ে সিদ্ধেশ্বরী রোডে আততায়ীর গুলিতে নিহত হন তিনি।
Published : 07 Feb 2024, 11:04 PM
সাড়ে তিন দশক আগের গৃহবধূ সগিরা মোর্শেদ হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করা হবে বৃহস্পতিবার।
গত ২৫ জানুয়ারি রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষে ঢাকার বিশেষ দায়রা জজ মোহাম্মদ আলী হোসাইন এ দিন ঠিক করে দেন।
সগিরার ভাসুর ডা. হাসান আলী চৌধুরী (৭১), জা সায়েদাতুল মাহমুদা ওরফে শাহিন (৬৫),শ্যালক আনাছ মাহমুদ রেজওয়ান (৬০), মারুফ রেজা (৬০) ও মন্টু মন্ডল ওরফে মিন্টু এ মামলারআসামি।
বাদীপক্ষের আইনজীবী ফারুক আহাম্মদ ও রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী রফিকুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, আসামিদের সর্ব্বোচ্চ শাস্তি হবে বলেই তারা আশা করছেন।
অন্যদিকে আসামিদের অন্যতমআইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল বলেছেন, অভিযুক্তরাখালাস পাবেন বলেই তার বিশ্বাস।
আসামিপক্ষে আরও ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সৈয়দ রেজাউর রহমান, এহসানুল হক সমাজী।
১৯৮৯ সালের ২৫ জুলাই ভিকারুননিসা নূন স্কুল থেকে মেয়েকে আনতে গিয়ে সিদ্ধেশ্বরী রোডে মোটরবাইকে আসা আততায়ীর গুলিতে নিহত হন সগিরা মোর্শেদ।
ওই দিনই রমনা থানায় অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা করেন সগিরা মোর্শেদের স্বামী সালাম চৌধুরী। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী রিকশাচালক ছিনতাইয়ের ঘটনায় জড়িত হিসেবে মন্টু ও মারুফ রেজাকে শনাক্ত করলে তাদের গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
বেইলি রোডের বাসিন্দা মারুফ রেজা একজন আবাসন ব্যবসায়ী। তিনি এরশাদ সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল মাহমুদুল হাসানের ভাগ্নে।
ওই সময় তাকে গ্রেপ্তার করা হলেও শেষ পর্যন্ত তার নাম বাদ দিয়েই অভিযোগপত্র দেয় গোয়েন্দা পুলিশ।
১৯৯১ সালের ১৭ জানুয়ারি আসামি মন্টুর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন ঢাকার প্রথম অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালতের বিচারক আবু বকর সিদ্দীক। সাক্ষ্য নেওয়া হয় সাতজনের।
সাক্ষ্য চলাকালে মারুফ রেজার প্রসঙ্গ উঠে আসায় রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনে ১৯৯১ সালের ২৩ মে অধিকতর তদন্তের আদেশ দেয় ঢাকার জজ আদালত।
ওই আদেশের বিরুদ্ধে মারুফ রেজার রিভিশন আবেদনে হাই কোর্ট ১৯৯১ সালের ২ জুলাই অধিকতর তদন্তের আদেশ ও বিচার কাজের ওপর ছয় মাসের স্থগিতাদেশ জারি করে। পাশাপাশি অধিকতর তদন্তের আদেশ কেন বাতিল করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করে।
পরের বছর ২৭ অগাস্ট জারি করা রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ওই মামলার বিচার কাজ স্থগিত থাকবে বলে আরেকটি আদেশ দেয় হাই কোর্ট।
মারুফের ওই আবেদন ২০১৯ সালের জুনে খারিজ করে দিয়ে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের বেঞ্চ পিবিআইকে তদন্তের দায়িত্ব দেয়।
তদন্তের দায়িত্ব পেয়ে প্রথমে মামলার বাদী সগিরা মোর্শেদের স্বামী আব্দুস সালাম চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগ করে পিবিআই। অনেক চেষ্টার পর বের করা হয় সগিরাকে বহনকারী সেদিনের যুবক রিকশাচালককে।
তার মাধ্যমে হত্যাকারীদের একজন ডা. হাসানের শ্যালক আনাছ মাহমুদ রেজওয়ানকে শনাক্তের পর ২০২০ সালের ১০ নভেম্বর রামপুরা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে গ্রেপ্তার করা হয় সগিরার ভাসুর ডা. হাসান আলী, তার স্ত্রী সায়েদাতুল মাহমুদা শাহিন ও মারুফ রেজাকে। তারাও আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
২০২০ সালের ২ ডিসেম্বর ঢাকা মহানগর দায়রা জজ কে এম ইমরুল কায়েশ ফের এই মামলার বিচার শুরুর আদেশ দেন। আসামিদের মধ্যে আনাস মাহমুদ এবং মারুফ রেজা কারাগারে, অন্যরা জামিনে।
এর আগে ঢাকার এক নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইবুনালে মামলা বাদী, সগিরা মোর্শেদের বোন ডা. দিলরুবা নুসরাত জাহান, মেয়ে সাদিয়া চৌধুরী, ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী রিকশাচালক আব্দুস সালামসহ ১২ জন সাক্ষ্য দিয়েছিলেন।
পিবিআই প্রধান ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার বলেছিলেন, ‘স্ত্রীর কথায় প্ররোচিত হয়ে’ ছোট ভাইয়ের বউকে শায়েস্তা করার জন্য ২৫ হাজার টাকায় সে সময় বেইলি রোড এলাকার ‘সন্ত্রাসী’ মারুফ রেজাকে ভাড়া করেছিলেন ডা. হাসান। মারুফকে সহযোগিতার জন্য স্ত্রীর ভাই রেজওয়ানকে তিনি দায়িত্ব দিয়েছিলেন।
পরিকল্পনা অনুযায়ী ১৯৮৯ সালের ২৫ জুলাই বিকালে সিদ্ধেশ্বরীতে সগিরা মোর্শেদের পথ আটকান মটরসাইকেল আরোহী মারুফ ও রেজওয়ান। হাতব্যাগ ছিনিয়ে নেওয়ার পর তার হাতের বালা নিতে উদ্যত হলে রেজওয়ানকে চিনে ফেলেন সগিরা, তারপরই তার বুকে গুলি চালিয়ে দেন মারুফ রেজা।
যুক্তিতর্ক শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী রফিকুল ইসলাম বলেন, “পারিবারিক অসুস্থ প্রতিযোগিতা, ঈর্ষাথেকে এ হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়। নিজের শ্বশুরবাড়ির ঘনিষ্ঠদের হাতে খুন হন বিত্তবান গৃহবধূ সগিরা মোর্শেদ।”
মামলাটিতে রাষ্ট্রপক্ষে ১৮ জন সাক্ষ্য দেন। আসামিপক্ষ থেকে কোনো সাফাই সাক্ষ্য দেওয়া হয়নি।
সগিরা মোর্শেদ হত্যার বিচার ফের শুরু
সগিরা মোর্শেদ হত্যা: অভিযোগ গঠনের বাকি শুনানি ২ ডিসেম্বর
সগিরা মোর্শেদ হত্যা: মামলা শিশু আদালতে নিতে মারুফের আবেদন খারিজ