সগিরা মোর্শেদ হত্যা: ভাসুর-জাসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র

তিন দশক আগে ঢাকার ভিকারুননিসা নূন স্কুলের সামনে গৃহবধূ সগিরা মোর্শেদ সালাম হত্যাকাণ্ডে তার ভাসুর ও জাসহ চারজনকে আসামি করে অভিযোগপত্র চূড়ান্ত করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 Jan 2020, 09:36 AM
Updated : 17 Jan 2020, 11:50 AM

অভিযোগপত্রটি বৃহস্পতিবারই আদালতে জমা দেওয়া হবে বলে পিবিআইয়ের প্রধান ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার জানিয়েছেন।

দুপুরে রাজধানীর ধানমণ্ডিতে পিবিআই সদরদপ্তরে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ওই হত্যাকাণ্ডে জড়িত চার জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের আসামি করে আদালতে ‘চার্জশিট’ দেওয়া হচ্ছে।

এরা হলেন- সগিরার ভাসুর ডা. হাসান আলী চৌধুরী (৭০), তার স্ত্রী সায়েদাতুল মাহমুদা শাহিন (৬৪), শাহিনের ভাই আনাছ মাহমুদ রেজওয়ান (৫৯) ও মারুফ রেজা (৫৯)।

এরা সবাই হত্যাকাণ্ডে নিজেদের সম্পৃক্ততার বিষয়ে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন বলে আগেই জানানো হয়েছিল।

বনজ কুমার বলেন, বড় জায়ের ঈর্ষার কারণে খুন হয়েছিলেন সগিরা মোর্শেদ। পিবিআই তদন্ত করে হত্যার পেছনে আটনি ‘কারণ’ খুঁজে পেয়েছে।

   > সগিরা মোর্শেদের পরিবারের সঙ্গে আসামিদের পরিবারের সাংসারিক বিভিন্ন দ্বন্দ্ব।

   > আসামিরা তৃতীয় তলা থেকে বিভিন্ন ময়লা-আবর্জনা নিচে ফেললে সগিরার রান্নাঘর ও বারান্দায়

      পড়া নিয়ে দ্বন্দ্ব।

   > সগিরা মোর্শেদকে শাশুড়ির বেশি পছন্দ করা।

   > আসামি শাহিনের চেয়ে সগিরার শিক্ষাগত যোগ্যতা বেশি থাকা।

   > আসামিদের ফ্ল্যাট থেকে সগিরা মোর্শেদের ফ্ল্যাট সুন্দর ও গোছানো হওয়া।

   > তিন তলা ভবনের ছাদ ব্যবহার করা নিয়ে দ্বন্দ্ব।

   > আসামিকে শাহিনকে সগিরা মোর্শেদের ‘তুমি’ সম্বোধন নিয়ে মনোমালিন্য।

   > সগিরা মোর্শেদের কাজের মেয়ে জাহানুরকে মারধর নিয়ে দ্বন্দ্ব।

এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, এসব থেকে সগিরা মোর্শেদকে খুন করতে ওই সময় ২৫ হাজার টাকা দিয়ে আসামি মারুফ রেজাকে ভাড়া করা হয়।

আসামিদের জবানবন্দি অনুযায়ী, ১৯৮৯ সালের ২৫ জুলাই বিকালে স্কুল থেকে মেয়েকে আনতে রিকশায় করে ভিকারুননিসা নূন স্কুলের সামনে যাওয়া সগিরা মোর্শেদের পথ আটকান মটরসাইকেল আরোহী মারুফ ও রেজওয়ান।

হাতব্যাগ ছিনিয়ে নেওয়ার পর হাতের বালা নিতে উদ্যত হলে রেজওয়ানকে চিনে ফেলার কথা বলেন সগিরা, তারপরই তার বুকে গুলি চালিয়ে দেন মারুফ রেজা।

এখন আবাসন ব্যবসায়ী ও বেইলি রোডের বাসিন্দা মারুফ রেজা এরশাদ সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল মাহমুদুল হাসানের ভাগ্নে। ওই সময়ই তিনি গ্রেপ্তার হলেও তার নাম বাদ দিয়ে মন্টু নামে একজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দিয়েছিল পুলিশ।

এরপর বিচার শুরু হলেও সাক্ষ্যে মারুফ রেজার প্রসঙ্গ উঠে আসায় অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেন বিচারিক আদালত। কিন্তু উচ্চ আদালতে গিয়ে মামলা আটকে যায়। মারুফের আবেদনে ১৯৯১ সালের ২ জুলাই হাই কোর্ট মামলাটির অধিকতর তদন্তের আদেশ ও বিচারকাজ ছয় মাসের জন্য স্থগিত করার পাশাপাশি অধিকতর তদন্তের আদেশ কেন বাতিল করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করে।

পরের বছর ২৭ অগাস্ট জারি করা ওই রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ওই মামলার বিচারকাজ স্থগিত থাকবে বলে আরেকটি আদেশ দেয় হাই কোর্ট।

২৮ বছর আগের মারুফের ওই আবেদন গত বছর জুন খারিজ করে দিয়ে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের বেঞ্চ পিবিআইকে তদন্তের দায়িত্ব দেয়।

তদন্তের দায়িত্ব পেয়ে প্রথমে মামলার বাদী সগিরা মোর্শেদের স্বামী আব্দুস সালাম চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগ করে পিবিআই। অনেক চেষ্টার পর বের করা হয় সগিরাকে বহনকারী সেদিনের যুবক রিকশাচালককে।

তার মাধ্যমে হত্যাকারীদের একজন ডা. হাসানের শ্যালক আনাছ মাহমুদ রেজওয়ানকে শনাক্তের পর গত ১০ নভেম্বর রামপুরা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে বাকি তিনজনকেও গ্রেপ্তার করা হয়।

বনজ কুমার বলেন, পিবিআই গত বছরের ১৭ জুলাই মামলাটি তদন্ত শুরু করে। মামলার কিছু সবল দিক ও কিছু দুর্বল দিক পাওয়া গেছে। এক হাজার ৩০৯ পৃষ্ঠার প্রতিকেদন বৃহস্পতিবার আদালতে জমা দেওয়া হচ্ছে।

মামলার দুর্বল দিক বলতে গিয়ে তিনি বলেন, “হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত মটরসাইকেল, রিভলবার, যে রিকশায় সগিরা মোর্শেদ যাচ্ছিলেন সে রিকশা এবং সগিরা মোর্শেদের পরিহিত শাড়ি গহনা ও ব্যাগ উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।”

সগিরা মোর্শেদের স্বামী আব্দুস সালাম চৌধুরী ও সগিরা মোর্শেদের ছোট ভাই গাউসুল নেওয়াজ সাব্বির সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।

তদন্তের অগ্রগতিতে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে তারা বলেন, “পিবিআই তদন্ত করে যাদেরকে আসামি হিসেবে শনাক্ত করেছে; আমাদের সন্দেহের তালিকায়ও তারা ছিলেন।”