সগিরা মোর্শেদ হত্যার বিচার ফের শুরু

তিন দশক আগে ঢাকার সিদ্ধেশ্বরীতে গৃহবধূ সগিরা মোর্শেদ হত্যা মামলায় তার ভাসুরসহ চারজনের বিচার শুরুর আদেশ দিয়েছে আদালত।

আদালত প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 Dec 2020, 07:29 AM
Updated : 2 Dec 2020, 12:50 PM

ঢাকা মহানগর দায়রা জজ কে এম ইমরুল কায়েশ বুধবার চার আসামির অব্যাহতির আবেদন নাকচ করে ১১ জানুয়ারি সাক্ষ্যগ্রহণের দিন রাখেন।

আসামিরা হলেন সগিরা মোর্শেদের ভাসুর ডা. হাসান আলী চৌধুরী (৭০), তার স্ত্রী সায়েদাতুল মাহমুদা ওরফে শাহিন (৬৪), শাহিনের ভাই আনাছ মাহমুদ রেজওয়ান (৫৯) ও মারুফ রেজা (৫৯)।

কাঠগড়ায় দাঁড়ানো আসামিদের অভিযোগ পড়ে শোনানো হলে তারা নিজেদের নির্দোষ দাবি করেন।

ত্রিশ বছর আগের চাঞ্চল্যকর সগিরা মোর্শেদ হত্যা মামলায় শুনানির জন্য বুধবার কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয় মামলার আসামি নিহতের ভাশুর ডা. হাসান আলী চৌধুরী, তার শ্যালক আনাস মাহমুদ এবং ভাড়াটে খুনি হিসেবে সন্দেহভাজন মারুফ রেজাকে। ছবি: মোস্তাফিজুর রহমান

এ সময় মামলার প্রধান আসামি ডা. হাসান চৌধুরী এবং সায়েদাতুল মাহমুদা শাহিনের পক্ষে নিয়েজিত আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল অসুস্থ থাকায় তাদের পক্ষের অপর আইনজীবী এহসানুল হক সমাজী হাজির ছিলেন। অপর আসামি মারুফ রেজার পক্ষে তার নতুন নিয়োজিত আইনজীবী সৈয়দ রেজাউর রহমান গঠন শুনানি করেন।

আসামিপক্ষের আইনজীবী এহসানুল হক সমাজী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, মামলায় মিন্টু ওরফে মিন্টু মণ্ডলের বিরুদ্ধে আগেই চার্জ গঠন হয়েছে। তিনি আদালতে উপস্থিত ছিলেন।

আসামি সায়েদাতুল মাহমুদা শাহিনকে আদালত এদিন পাসপোর্ট জমা দেওয়ার শর্তে মামলার আগামী তারিখ পর্যন্ত জামিন দিয়েছে বলেও আইনজীবী সমাজী জানান।

মামলার বিবরণে জানা যায়, ১৯৮৯ সালের ২৫ জুলাই ভিকারুননিসা নূন স্কুল থেকে মেয়েকে আনতে গিয়ে সিদ্ধেশ্বরী রোডে মোটরবাইকে আসা ছিনতাইকারীদের গুলিতে নিহত হন সগিরা মোর্শেদ।

ওই দিনই রমনা থানায় অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা করেন সগিরা মোর্শেদের সালামের স্বামী সালাম চৌধুরী। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী রিকশাচালক ছিনতাইয়ের ঘটনায় জড়িত হিসেবে মন্টু ও মারুফ রেজাকে শনাক্ত করলে তাদের গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

বেইলি রোডের বাসিন্দা মারুফ রেজা এখন একজন আবাসন ব্যবসায়ী। তিনি এরশাদ সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল মাহমুদুল হাসানের ভাগ্নে।

ত্রিশ বছর আগের চাঞ্চল্যকর সগিরা মোর্শেদ হত্যা মামলায় শুনানির জন্য বুধবার কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয় মামলার আসামি সগিরা মোর্শেদের বড় জা সায়েদাতুল মাহমুদাকে। ছবি: মোস্তাফিজুর রহমান

ওই সময় তাকে গ্রেপ্তার করা হলেও শেষ পর্যন্ত তার নাম বাদ দিয়েই অভিযোগপত্র দেয় গোয়েন্দা পুলিশ।

১৯৯১ সালের ১৭ জানুয়ারি আসামি মন্টুর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন ঢাকার প্রথম অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালতের বিচারক আবু বকর সিদ্দীক। সাক্ষ্য নেওয়া হয় সাতজনের।

সাক্ষ্য চলাকালে মারুফ রেজার প্রসঙ্গ উঠে আসায় রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনে ১৯৯১ সালের ২৩ মে অধিকতর তদন্তের আদেশ দেয় ঢাকার জজ আদালত।

ওই আদেশের বিরুদ্ধে মারুফ রেজার রিভিশন আবেদনে হাই কোর্ট ১৯৯১ সালের ২ জুলাই অধিকতর তদন্তের আদেশ ও বিচার কাজের ওপর ছয় মাসের স্থগিতাদেশ জারি করে। পাশাপাশি অধিকতর তদন্তের আদেশ কেন বাতিল করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করে।

পরের বছর ২৭ অগাস্ট জারি করা রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ওই মামলার বিচার কাজ স্থগিত থাকবে বলে আরেকটি আদেশ দেয় হাই কোর্ট।

মারুফ রেজা

২৮ বছর আগের মারুফের ওই আবেদন গত বছর জুন খারিজ করে দিয়ে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের বেঞ্চ পিবিআইকে তদন্তের দায়িত্ব দেয়।

তদন্তের দায়িত্ব পেয়ে প্রথমে মামলার বাদী সগিরা মোর্শেদের স্বামী আব্দুস সালাম চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগ করে পিবিআই। অনেক চেষ্টার পর বের করা হয় সগিরাকে বহনকারী সেদিনের যুবক রিকশাচালককে।

তার মাধ্যমে হত্যাকারীদের একজন ডা. হাসানের শ্যালক আনাছ মাহমুদ রেজওয়ানকে শনাক্তের পর গত ১০ নভেম্বর রামপুরা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে গ্রেপ্তার করা হয় সগিরার ভাসুর ডা. হাসান আলী, তার স্ত্রী শাহিন ও মারুফ রেজাকে। তারাও আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।

এরপর চলতি বছর জানুয়ারিতে ওই চারজনের বাইরে আগের অভিযোগপত্রের আসামি মন্টু মণ্ডল ওরফে মিন্টুকে আসামির তালিকায় রেখে আদালতে সম্পূরক অভিযোগপত্র দেয় পিবিআই।

এ তদন্ত সংস্থার প্রধান ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার সে সময় বলেন, স্ত্রীর কথায় প্ররোচিত হয়ে ছোট ভাইয়ের বউকে শায়েস্তা করার জন্য ২৫ হাজার টাকায় সে সময় বেইলি রোড এলাকার ‘সন্ত্রাসী’ মারুফ রেজাকে ভাড়া করেছিলেন ডা. হাসান। মারুফকে সহযোগিতার জন্য স্ত্রীর ভাই রেজওয়ানকে তিনি দায়িত্ব দিয়েছিলেন।

পরিকল্পনা অনুযায়ী ১৯৮৯ সালের ২৫ জুলাই বিকালে সিদ্ধেশ্বরীতে সগিরা মোর্শেদের পথ আটকান মটরসাইকেল আরোহী মারুফ ও রেজওয়ান। হাতব্যাগ ছিনিয়ে নেওয়ার পর তার হাতের বালা নিতে উদ্যত হলে রেজওয়ানকে চিনে ফেলেন সগিরা, তারপরই তার বুকে গুলি চালিয়ে দেন মারুফ রেজা।