সগিরা মোর্শেদ হত্যা: মামলা শিশু আদালতে নিতে মারুফের আবেদন খারিজ

তিন দশক আগের সগিরা মোর্শেদ হত্যা মামলায় অন্যতম আসামি মারুফ রেজার বিচার শিশু আদালতে স্থানান্তরের আবেদন উত্থাপিত হয়নি মর্মে খারিজ করে দিয়েছে হাই কোর্ট।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 Nov 2020, 08:32 AM
Updated : 10 Nov 2020, 08:32 AM

মঙ্গলবার শুনানির পর আদালত আদেশ দিতে না চাইলে আইনজীবী আবেদনটির ‘নট প্রেসড’ হিসেবে গণ্য করার আরজি জানান।

পরে বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের হাই কোর্ট বেঞ্চ আবেদনটি উত্থাপিত হয়নি মর্মে খারিজ করে দেয়।

আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী দেওয়ান আব্দুন নাসের। তার সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী আবুল কালাম আজাদ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. মনিরুল ইসলাম।   

সগিরা মোর্শেদ হত্যা মামলার বিচার শিশু আদালতে স্থানান্তর করতে আবেদন করলে গত ৭ সেপ্টেম্বর মহানগর দায়রা জজ কে এম ইমরুল কায়েশ তা খারিজ করে দেন।

পরে গত রোববার হাই কোর্টে রিভিশন চেয়ে আবেদন করেন আসামি মারুফ রেজার আইনজীবী, যেটি মঙ্গলবার খারিজ হলো।

আইনজীবী দেওয়ান আব্দুন নাসের বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সগিরা মোর্শেদ হত্যা মামলার আগের অভিযোগপত্রে মারুফকে আসামি করা হয় নাই। চলতি বছরের ১৫ জানুয়ারি তার নাম  যুক্ত করা হয়।

“জাতীয় পরিচয়পত্র ও পাসপোর্ট অনুযায়ী ঘটনার সময় মারুফের বয়স ছিল ১৬ বছর ১০ মাস ২৬ দিন। তাই মারুফ রেজার ক্ষেত্রে মামলাটি ২০১৩ সালের শিশু আইন অনুযায়ী শিশু আদালতে স্থানান্তর করার জন্য রিভিশন আবেদন করা হয়েছিল।”

তবে আবেদনটি আর কোনো বেঞ্চে তোলা হবে না বলে এই আইনজীবী জানান। ফলে মামলার অভিযোগ গঠনের ক্ষেত্রে কোনো বাধা থাকছে না বলেও তিনি জানান ।

সোমবার আসামির পক্ষের আইনজীবীর অসুস্থতা ও হাই কোর্টের রিভিশন আবেদনের কারণ দেখিয়ে সময় চাওয়ায় এই মামলায় বিচার শুরুর আদেশ দিতে পারেনি দ্রুত বিচার আদালত।

অভিযোগ গঠনের জন্য ২৬ নভেম্বর দিন রেখেছেন ঢাকার মহানগর দায়রা জজ কে এম ইমরুল কায়েশ। এর আগে আরও তিনবার এই মামলার অভিযোগ গঠনের শুনানি হয়নি।

মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, ১৯৮৯ সালের ২৫ জুলাই সগিরা মোর্শেদ সালাম ভিকারুননিসা নূন স্কুল থেকে মেয়েকে আনতে যাচ্ছিলেন। বিকাল ৫টার দিকে সিদ্ধেশ্বরী রোডে পৌঁছামাত্র মটরবাইকে আসা ছিনতাইকারীরা তার হাতের সোনার চুড়ি ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। তিনি দৌড় দিলে তাকে গুলি করা হয়। হাসপাতালে নেওয়ার পথেই সগিরা মারা যান।

৩১ বছর পরে গ্রেপ্তার সগিরার ভাসুর ডা. হাসান আলী চৌধুরী (৭০), তার স্ত্রী সায়েদাতুল মাহমুদা শাহিন (৬৪), শাহিনের ভাই আনাছ মাহমুদ রেজওয়ান (৫৯) ও মারুফ রেজা (৫৯) আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।

তাদের স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে মামলার তদন্ত সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টেগেশনের (পিবিআই) প্রধান ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার বলেছেন, স্ত্রীর কথায় প্ররোচিত হয়ে ছোট ভাইয়ের বউকে শায়েস্তা করার জন্য ২৫ হাজার টাকায় সে সময় বেইলি রোড এলাকার ‘সন্ত্রাসী’ মারুফ রেজাকে ভাড়া করেছিলেন ডা. হাসান। মারুফকে সহযোগিতার জন্য স্ত্রীর ভাই রেজওয়ানকে দায়িত্ব দেন।

পরিকল্পনা অনুযায়ী ১৯৮৯ সালের ২৫ জুলাই বিকালে স্কুল থেকে মেয়েকে আনতে রিকশায় করে ভিকারুননিসা নূন স্কুলের সামনে যাওয়া সগিরা মোর্শেদের পথ আটকান মটরসাইকেল আরোহী মারুফ ও রেজওয়ান। হাতব্যাগ ছিনিয়ে নেওয়ার পর তার হাতের বালা নিতে উদ্যত হলে রেজওয়ানকে চিনে ফেলার কথা বলেন সগিরা, তারপরই তার বুকে গুলি চালিয়ে দেন মারুফ রেজা।

এখন আবাসন ব্যবসায়ী ও বেইলি রোডের বাসিন্দা মারুফ রেজা এরশাদ সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল মাহমুদুল হাসানের ভাগ্নে। ওই সময়ই তিনি গ্রেপ্তার হলেও তার নাম বাদ দিয়ে মামলায় অভিযোগপত্র দিয়েছিল পুলিশ।

এরপর বিচার শুরু হলেও সাক্ষ্যে মারুফ রেজার প্রসঙ্গ উঠে আসায় অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেন বিচারিক আদালত। পরে উচ্চ আদালতে গিয়ে এই মামলা আটকে দেন মারুফ। পরে তদন্তকালে আসামি মিন্টু ও মারুফ গ্রেপ্তার হন। কিন্তু মারুফ রেজার নাম বাদ দিয়েই অভিযোগপত্র দেওয়া হয়।