জার্মানিতে ৪০ বছর: জার্মান অক্ষরের বিচিত্র উচ্চারণ!

জার্মানিতে এসে ভাষার বিষয়ে খেয়াল করলাম, এ ভাষায় শব্দের উচ্চারণ করতে গেলে প্রথমেই প্রয়োজন অক্ষর চেনা। তারপর জার্মান উচ্চারণ।

শাহ আলম শান্তি, জার্মানি থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 July 2017, 06:16 AM
Updated : 23 July 2017, 06:16 AM

জার্মান ভাষার সব অক্ষরই লাতিন শব্দ থেকে উদ্ভূত। তার মানে দেখতে চারটি অক্ষর বাদে সব অক্ষরই ইংরেজির মত। তবে উচ্চারণের পার্থক্য আছে। যেমন ইংরেজি ‘এ’কে বলা হয় 'আ', 'বি'কে বলা হয় 'বে', ‘সি’কে বলা হয় ‘সে', ‘ডি’কে বলা হয় 'ডে', ‘ই’কে বলা হয় 'এ' আর 'ডব্লিউ'কে বলা হয় 'ভে' এবং ‘ভি’কে বলা হয় ‘ফ'।

তাই যে দোকান থেকে আমরা শীতের কাপড় কিনেছিলাম, সেই দোকানকে আমরা তখন ‘উলওয়ারথ' উচ্চারণ করেছি। কিন্তু জার্মানিতে সেটাকে বলা হয় 'ভুলভরথ'। শীতের কাপড় যা কিনেছিলাম, সেটা কিনেছিলা ওই সস্তা দোকানটা থেকেই। কারণ আমাদের তখন খুব হিসেব করেই খরচ করতে হয়েছে।

আমরা যাকে 'ভক্সয়াগেন' বলে থাকি, সেটা এখানে বলা হয় 'ফল্কসভাগেন'। জার্মান ভাষায় ‘ফল্ক’কে বলা হয় 'জনতা' আর ‘ভাগেন’ মানে গাড়ি। এই গাড়ির নামকরণের সাথে তৎকালীন রাজনীতিরও একটা যোগসূত্রতা আছে। বহু বছর পর একদিন এর ইতিহাস আমি এখানে একটি টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে দেখেছিলাম।

এই সাক্ষাৎকারটি ছিল বর্তমান জার্মানির বিখ্যাত গাড়ি উৎপাদনকারী কোম্পানি ‘পোর্শে’র নাতী এরনেস্ট পিচের। তিনি জানালেন,  ১৯৩৩ সালে হিটলার ক্ষমতায় আসার পর একদিন তার দাদাকে ডেকে নিয়ে যান। হিটলার বলেন যে তিনি জনগণের জন্য এক গাড়ি বানাতে চান। আর জানতে চান যে এই গাড়ির মূল্য কত পড়বে?

এরনেস্ট পিচের দাদা একটু ভেবে উত্তর দেন যে এর দাম এক হাজার রাইস মার্ক হবে। হিটলার শুনে বলেন, না, এটা আমাদের দেশের জনগণের জন্য বেশি হয়ে যাবে। তারপর হিটলার বলেন, আপনি গাড়ি তৈরি করেন। বাকি গাড়ি প্রতি তিনশ' রাইস মার্ক আমি রাষ্ট্রীয় তহবিল থেকে দেব এবং গাড়ির নাম হবে 'ফল্কসভাগেন', অর্থ 'জনতার গাড়ি'।
জার্মান ভাষায় ইংরেজিতে যেমন ২৬টি অক্ষর আছে, সেখানে জার্মান ভাষায় আছে ৩০টি অক্ষর। এই বাড়তি চারটি হলো Ä, Ü, Ö ও ß। এই শব্দগুলোর উচ্চারণও ভিন্ন, যেমন ‘এ’র ওপর দুটো ফোটা থাকলে এটাকে জার্মান ভাষায় ‘আ’ না বলে 'এ'-ই বলা হয়।

সেরকম 'ইউ' এর ওপর দু'টো ফোটা থাকলে সেটাকে ‘উই’র মত উচ্চারণ করা হয়। ‘ও’ এর ওপর দু'টো ফোটা থাকলে সেটাকে একটু টেনে ডবল 'ও’-এর মত মতো উচ্চারণ করা হয়। আর 'ß’-এর চেহারা ইংরেজিতে একেবারেই অপরিচিত, এটাকে ডবল এস-এর মত উচ্চারণ করা হয়।

আমি ভাষা শেখার সময় প্রথম থেকেই যে কাজটি করেছি সেটা হলো, ইংরেজি অক্ষর বা শব্দের সাথে জার্মান শব্দের সাদৃশ্য খোঁজা। সে কারণে আমার শেখার গতি বেড়ে যেত।

যেভাবে দেখি না কেন, সেই ১৯৭৭ সালে আমার সামনে ছিল জার্মান ভাষার বার্লিনের প্রাচীরের মতই উঁচু প্রাচীর। সেই প্রাচীর, চায়নিজ গল্প ‘বোকা বুড়ো পাহাড় সরিয়েছিল’-এর মত একটু একটু ভেঙ্গে এগিয়েছি।
চলবে ...

লেখক: প্রবাসী বাংলাদেশি

এই লেখকের আরও পড়ুন-

প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ,আড্ডা,আনন্দ বেদনার গল্প,ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ,রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা probash@bdnews24.com। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন!