যুদ্ধাপরাধ: পুতিনকে গ্রেপ্তারে আইসিসির পরোয়ানা

ইউক্রেইনে যুদ্ধাপরাধের জন্য পুতিনকে দায়ী করে আইসিসির একজন বিচারক শুক্রবার এই আদেশ দেন।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 March 2023, 03:25 PM
Updated : 17 March 2023, 03:25 PM

ইউক্রেইনে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালত-আইসিসি।

রয়টার্স জানিয়েছে, ইউক্রেইনে যুদ্ধাপরাধ এবং শিশুদের ইউক্রেইন থেকে অবৈধভাবে রাশিয়ায় নিয়ে যাওয়ার অভিযোগে পুতিনকে দায়ী করে আইসিসির একজন বিচারক শুক্রবার এই আদেশ দেন।

সেখানে বলা হয়, ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি রশিয়া ইউক্রেইনে পুরোদমে আগ্রাসন শুরুর পর থেকে এসব অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। এটা বিশ্বাস করার ‘যৌক্তিক কারণ’ আদালতের আছে যে, পুতিন সরাসরি নিজে এবং অন্যদের সঙ্গে মিলে এসব অপরাধে সম্পৃক্ত ছিলেন। যারা ওই শিশুদের রাশিয়ায় নেওয়ার সঙ্গে জড়িত ছিল, তাদের তিনি থামাননি।

রাশিয়ার আগ্রাসন শুরুর পর থেকে সেখানে মানবাধিকার লঙ্ঘন ও ব্যাপক যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ করে আসছে ইউক্রেইন ও তাদের পশ্চিমা মিত্ররা। তবে মস্কো বরাবরই সে অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। 

পুতিন ছাড়াও রাশিয়ার শিশু অধিকার কমিশনার মারিয়া আলেক্সেইভনা লোভা-বেলোভার বিরুদ্ধেও একই অভিযোগে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে আইসিসি।

বিবিসি লিখেছে, গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করলেও কাউকে গ্রেপ্তার করার ক্ষমতা আইসিসির নেই। আর এই আদালতের আদেশ কেবল সেসব দেশের জন্যই খাটে, যারা এ আন্তর্জাতিক আদালত গঠনের জন্য চুক্তি ‘রোম সংবিধিতে’ সই করেছিল। 

আইসিসি গঠনের চুক্তিতে রাশিয়া সই করেনি। ফলে আইসিসির পরোয়ানায় রাশিয়া থেকে কাউকে প্রত্যর্পণের বাধ্যবাধকতাও দেশটির নেই।

সেই প্রসঙ্গ উল্লেখ করে রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, “আমাদের দেশের জন্য আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালতের ওই আদেশে অর্থহীন, এমনকি আইনি দৃষ্টিকোন থেকেও ওই আদেশ কোনো অর্থ বহন করে না। 

“রাশিয়া রোম সংবিধিতে স্বাক্ষরকারী দেশ নয়, আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালতেরও অংশীদার নয়। ফলে ওই আদালতের আদেশ মানার কোনো দায়ও আমাদের নেই।”

ওদিকে, রাশিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট এবং ইউক্রেইন যুদ্ধের কট্টর সমর্থক দিমিত্রি মেদভেদেভ এই গ্রেপ্তারি পরোয়ানাকে টয়লেট পেপারের সঙ্গে তুলনা করেছেন।

তবে আইসিসির এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে ইউক্রেইনের প্রসিকিউটর জেনারেল আন্দ্রেই কস্তিন বলেছেন, “এটা কেবল ইউক্রেইনের জন্য নয়, পুরো আন্তর্জাতিক আইনি কাঠামোর জন্যই একটি ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত।”

আর ইউক্রেইনের চিফ অব প্রেসিডেনশিয়াল স্টাফ আন্দ্রেই ইয়েরমাক বলেছেন, পুতিনের বিরুদ্ধে এই পরোয়ানা ‘কেবল শুরু’।

রয়টার্স জানায়, আইসিসি’র কৌসুলি করিম খান একবছর আগে ইউক্রেইনে রাশিয়ার সম্ভাব্য যুদ্ধাপরাধ, মানবতা-বিরোধী অপরাধ এবং গণহত্যা নিয়ে তদন্ত শুরু করেন।

তিনি বলেন, ইউক্রেইনে চারবার সফরকালে তিনি শিশুদের বিরুদ্ধে অপরাধ এবং বেসামরিক অবকাঠামোকে হামলার নিশানা করার অভিযোগ খতিয়ে দেখেছেন।

এছাড়াও, গতমাসে ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাশিয়া তাদের নিয়ন্ত্রিত ক্রাইমিয়া উপদ্বীপে বিভিন্ন স্থানে অন্তত ৬ হাজার শিশুকে আটকে রেখেছে।

প্রতিবেদনে এমন অন্তত ৪৩ টি শিবির ও অন্যান্য স্থাপনা চিহ্নিত করা হয়েছে যেখানে ইউক্রেইনের শিশুদের আটকে রাখা হয়েছে। গতবছর ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া ইউক্রেইনে আগ্রাসন শুরুর পর থেকে ব্যাপক পরিসরে ধারাবাহিক নেটওয়ার্কের অংশ হিসাবে একাজ করে এসেছে; বলা হয়েছে প্রতিবেদনে।

গতবছর জুনে ইউক্রেইনের সাবেক প্রসিকিউটর জেনারেল রয়টার্সকে বলেছিলেন, আইসিসি শিশু অপহরণকে গণহত্যা হিসাবে বিচার করবে বলে তিনি আশা করেন।

তিনি আরও বলেছেন, তার কার্যালয়ের তদন্তনাধীন যুদ্ধাপরাধের ৭১ হাজার ‍রিপোর্টের মধ্যে আছে হাজার হাজার বেসামরিক লক্ষ্যবস্তুতে রাশিয়ার বিমান হামলার অভিযোগ।

রাশিয়া ইউক্রেইনে যুদ্ধাপরাধ করার কথা জোরগলাতেই অস্বীকার করে এসেছে। রাশিয়া বলছে, তারা ইচ্ছাকৃতভাবে বেসামরিক নাগরিকদেরকে হামলার নিশানা করেনি। যারা স্বেচ্ছায় ইউক্রেইন থেকে পালিয়ে যেতে চায় তাদেরকে মানবিক সাহায্য দেওয়া হচ্ছে বলেও সাফাই দিয়েছে রাশিয়া।

জাতিসংঘের গণহত্যা বিষয়ক কনভেনশনে বলা আছে, জোর করে কোনও একটি গোষ্ঠীর শিশুদেরকে আরেক গোষ্ঠীতে স্থানান্তর করা পাঁচটি কর্মের একটি- যেটিকে গণহত্যা হিসাবে বিচার করা যেতে পারে।

জাতিসংঘ-অনুমোদিত একটি তদন্ত সংস্থা ইউক্রেইনে ইচ্ছাকৃত হত্যা, নির্যাতন, শিশুদের চোখের সামনে তাদের প্রিয়জনকে ধর্ষণ এবং মৃতদেহের পাশে অন্যান্যদের আটকে রাখাসহ ব্যাপক পরিসরে রাশিয়ার যুদ্ধাপরাধ সংঘটনের অভিযোগ করার পর আইসিসি রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির এ পদক্ষেপ নিল।

চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং আগামী সপ্তাহেই মস্কো সফরে যাচ্ছেন-ঠিক এমন সময়েই এল এ গ্রেপ্তারি পরোয়ানা। আইসিসি’র এ পরোয়ানা জারির ফলে পুতিন এখন একজন ‘ওয়ান্টেড ব্যক্তি’ হিসাবে গণ্য হবেন।

আইসিসির পরোয়ানায় রাশিয়া থেকে কাউকে প্রত্যর্পণের বাধ্যবাধকতা দেশটির না থাকলেও এই পরোয়ানার কারণে পুতিন আন্তর্জাতিকভাবে অবাঞ্ছিত হয়ে পড়বেন। তার জন্য ভ্রমণ করা কঠিন হবে, বিশেষ করে আইসিসি আদালত গঠনের জন্য চুক্তি সই করা কোনও দেশ ভ্রমণ।

কারণ, আইসিসি সদস্য দেশগুলোর এই আদালতে অভিযুক্ত হওয়া কাউকে গ্রেপ্তার করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।